অভিবাসন কীভাবে সমৃদ্ধি বয়ে আনতে পারে
উন্নয়ন
নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের অগ্রাধিকার কী হওয়া উচিত, তা চিহ্নিত করার
লক্ষ্যে গবেষণা করছে কোপেনহেগেন কনসেনসাস সেন্টার। অর্থনৈতিক উন্নতির
পাশাপাশি সামাজিক, স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত উন্নয়নের ওপরও জোর দিচ্ছে
সংস্থাটি। বাংলাদেশের জন্য ভিশন ২০২১ অর্জনে এই গবেষণাভিত্তিক কিছু নিবন্ধ
প্রকাশ করছে প্রথম আলো। আজ প্রকাশ করা হলো সপ্তমটি। বিদেশে বসবাস ও
কর্মরত প্রবাসীরা রেমিট্যান্স হিসেবে গত বছর প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার কোটি
টাকা বাংলাদেশে পাঠিয়েছেন, যেখানে বিদেশি দাতা সংস্থাগুলো এ দেশে ২৫ হাজার
কোটি টাকা ব্যয় করেছে। অর্থাৎ প্রবাসীরা তার চার গুণেরও বেশি টাকা এক বছরে
পাঠিয়েছেন। দেশের মোট কর্মক্ষম জনসংখ্যার প্রায় ৫ শতাংশ এখন অভিবাসী
শ্রমিক, প্রতিবছর আরও প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ বিদেশে যাওয়ার জন্য দেশ ছাড়ছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, তাঁরা পরিবার ও পরিজনের কাছে যে টাকা
পাঠান, তা দেশের জিডিপির ৭ দশমিক ৪ শতাংশের সমান। ২০০১ থেকে ২০১৫ সাল
পর্যন্ত এর পরিমাণ ছিল সর্বমোট ৯ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা। বিদেশি
অভিবাসীদের কাছ থেকে এই রেমিট্যান্স পাওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশের মানুষ তার
সর্বোত্তম ব্যবহার করতে পারেন না। অভিবাসনের অনানুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া খুবই
ব্যয়বহুল, আর মধ্যস্থতাকারীদের জন্য তা আরও জটিল হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশে
রেমিট্যান্স নিয়ে আসার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অবদান যাঁদের, সেই কম দক্ষ
অভিবাসী শ্রমিকেরা কীভাবে বিদেশে তাঁদের আয় বাড়াতে পারেন এবং আরও বেশি
সুযোগ-সুবিধা পেতে পারেন? এটাসহ আরও অনেক চ্যালেঞ্জের সমাধান দিতে পারে
বাংলাদেশ প্রায়োরিটিজ। (বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের গবেষণা ও মূল্যায়ন
বিভাগের সহযোগিতায় কোপেনহেগেন কনসেনসাস সেন্টার গবেষণা ও পরামর্শবিষয়ক
প্রকল্প বাংলাদেশ প্রায়োরিটিজ গঠন করে। এ প্রকল্পে বাংলাদেশ, আশপাশের
অঞ্চলসহ সারা বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ডজন খানেক অর্থনীতিবিদ কাজ করছেন।
বাংলাদেশ উন্নয়নের জন্য যে টাকাটা ব্যয় করছে, কীভাবে তার সর্বোচ্চ কল্যাণ
নিশ্চিত করা যায়—এ বিষয়েই তাঁরা গবেষণা করছেন এবং পরামর্শ দিচ্ছেন।)
নতুন গবেষণায় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, কীভাবে অভিবাসন-প্রক্রিয়া সাশ্রয়ী ও অভিবাসীদের আরও দক্ষ করা যায়। গবেষক ও ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকোনমেট্রিক্সের প্রভাষক ওয়াসেল বিন শাদাত ও লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নবিষয়ক গবেষণা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী মাহমুদুর রহমান বিভিন্ন প্রস্তাব যাচাই করে দেখেছেন। প্রস্তাবগুলোর মধ্যে যেটি সবচেয়ে প্রতিশ্রুতিশীল ছিল সেটি হচ্ছে, বিদ্যমান ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের (ইউডিসি) সাহায্য নিয়ে অভিবাসন-প্রক্রিয়াকে আনুষ্ঠানিক রূপ দেওয়া।
বাংলাদেশে অভিবাসনের গড় খরচ হচ্ছে ১ লাখ ৬৮ হাজার ৯০০ টাকা থেকে শুরু করে ২ লাখ ১৬ হাজার ৬০০ টাকার মধ্যে, যেটা অনেক বাংলাদেশির তিন বছরের আয়ের সমান। বিদেশে কাজ করে অভিবাসীদের এই খরচ ওঠাতে প্রায় দুই বছর সময় লেগে যায়। এত বেশি খরচ হওয়ার একটি কারণ হলো, একাধিক স্তরের মধ্যস্থতাকারীরা অভিবাসী শ্রমিকদের ভিসা ও অন্যান্য ফি বাবদ জোর করে অতিরিক্ত অর্থ দিতে বাধ্য করে। বেশির ভাগ কম দক্ষ শ্রমিকদের অভিবাসন-প্রক্রিয়া সম্পর্কে অথবা যে দেশে তাঁরা যাচ্ছেন, সেই দেশ সম্পর্কে খুব সামান্যই ধারণা থাকে, যার সুযোগ নেয় এই মধ্যস্থতাকারীরা। তবে ইউডিসির মাধ্যমে প্রক্রিয়াটি আনুষ্ঠানিক করা হলে তা অসাধারণ কল্যাণ বয়ে আনতে পারে। ইতিমধ্যেই আনুষ্ঠানিক অভিবাসনের ব্যাপারে মানুষের মধ্যে বেশ কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশ সরকার মালয়েশিয়ার সঙ্গে সরকারি পর্যায়ে (জি-টু-জি) আনুষ্ঠানিকভাবে জনসম্পদ রপ্তানির চুক্তি স্বাক্ষরের পর প্রায় ১৪ লাখ মানুষ ইউডিসির মাধ্যমে অনলাইনে নিবন্ধন করেছিলেন। উভয় দেশের বেসরকারি খাতকে নিযুক্ত করার মাধ্যমে জি-টু-জি প্রক্রিয়াকে জি-টু-জি প্লাসে বর্ধিত করা হয়েছে। বর্তমান গবেষণায় ইউডিসি লাখ লাখ কম দক্ষ শ্রমিককে আনুষ্ঠানিক অভিবাসন-প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংযুক্ত করার ক্ষেত্রে যে ভূমিকা রাখতে পারে, সে ব্যাপারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। বাংলাদেশে বর্তমানে ৪ হাজার ৫০০ শর বেশি ইউডিসি কাজ করছে। তারা লক্ষাধিক বাংলাদেশি নাগরিককে সরকারি ও বেসরকারি সেবা দিচ্ছে। এ ধরনের সেবা দেওয়ার অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ইউডিসিকে অভিবাসনের সঙ্গে যুক্ত করা হলে এই প্রক্রিয়া সহজসাধ্য হবে, তার খরচও কমে আসবে। যাঁদের জীবনে অভিবাসনের প্রয়োজনীয়তা সবচেয়ে বেশি, অর্থাৎ গ্রামাঞ্চলের মানুষের কাছে এই আনুষ্ঠানিক অভিবাসনের সেবা পৌঁছে দিতে হলে ইউডিসির একটি অভিবাসন ‘বিভাগ’ খুলতে হবে, সঙ্গে লাগবে কয়েকটি টেবিল ও কয়েকজন কর্মচারী। একটি ইউডিসির অভিবাসন দপ্তরে বিদেশে যেতে ইচ্ছুক শ্রমিকদের নানা সেবা দেওয়া যেতে পারে, যার মধ্যে আছে মৌলিক ফর্ম, ছবির শনাক্তকরণ থেকে শুরু করে কর্মসংস্থানের তথ্য ও ভিসা প্রক্রিয়াকরণ, প্রিন্টিং ও ইন্টারনেট সেবা। সরকারের ভর্তুকি বা ইউডিসির আয় দিয়ে এটা পরিচালনা করা সম্ভব। আর ইউডিসি কিন্তু অনায়াসে সরকারের ফি সংগ্রহ করতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা হিসাব করে দেখেছেন, প্রতিটি ইউডিসিতে একটি করে অভিপ্রায়ণ বিভাগ চালু করতে ১ লাখ ৭২ হাজার ৮০০ টাকার প্রাথমিক বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে, পরিচালনা বাবদ বার্ষিক খরচ হবে ৪৪ হাজার ৫০০ টাকা। বাংলাদেশের ৪ হাজার ৫০০টি ইউডিসির জন্য সর্বমোট খরচ হবে অগ্রিম ৭৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা, তার সঙ্গে প্রতিবছর কার্যপরিচালনা বাবদ ২০ কোটি ৩০ লাখ টাকা লাগবে।
কিন্তু এখান থেকে ভালো সুবিধাই পাওয়া যাবে। কম করে হলেও ইউডিসি ৫০ হাজার ব্যক্তিকে সেবা দেবে, অর্থাৎ ইউডিসিপ্রতি প্রায় ১১ জন। মানে প্রথম বছর এই পরিমাণ মানুষ মালয়েশিয়া যাওয়ার সুযোগ পাবেন, পরবর্তী বছরগুলোতে এই সংখ্যা দাঁড়াবে ৫-১০ হাজার। ফলে একজন ব্যক্তির অভিবাসনের খরচ কমে ৩৬ হাজার ৫০০ টাকা হবে, এতে প্রায় ৮৩ শতাংশ খরচ বাঁচবে। অভিবাসনের বাকি খরচের তিন-চতুর্থাংশের বেশি যাবে বিমানভাড়ায়। আর মধ্যস্থতাকারী না থাকলে ভিসা খরচ ১ লাখ ১৭ হাজার টাকা থেকে মাত্র ১ হাজার ৯২ টাকায় নেমে আসবে, যা ভিসার প্রকৃত খরচ। সবচেয়ে আশার কথা, ইউডিসির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অভিবাসন-প্রক্রিয়াকে আনুষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হলে প্রতি এক টাকা ব্যয়ের বিপরীতে ৪০ টাকা সমমূল্যের উপকার হবে। তবে এটাও সত্যি যে মালয়েশিয়ার সঙ্গে বর্তমানে যে প্রক্রিয়াটি অনুসরণ করা হচ্ছে, তা আমাদের আশা মেটাতে পারেনি। এ কারণেই গবেষকদের আশা হচ্ছে, ইউডিসির মাধ্যমে এই প্রক্রিয়ার উন্নতিসাধন করে আন্তর্জাতিক অভিবাসনকে আরও কার্যকর করা গেলে প্রতি এক টাকা ব্যয়ের বিপরীতে ২২ টাকা সমমূল্যের উপকার হবে। যাঁরা বিদেশে যাবেন, তাঁদের কারিগরি দক্ষতা বাড়ানোর দিকেও নজর দিতে হবে। বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অভিবাসীরা প্রধানত শ্রমিক, বাবুর্চি বা নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে কাজ করেন। উদাহরণস্বরূপ, ২০০৫ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত সৌদি আরবে যে কর্মীরা কাজ করতে গেছেন, তাঁদের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ ‘কম দক্ষ’ ছিল, আর মাত্র ৪ শতাংশ তথাকথিত ‘কিছুটা দক্ষ’ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত ছিল। কম দক্ষ শ্রমিকদের শুধু উপার্জনই কম নয়, তাঁদের নিয়োগকারীদের সঙ্গে দর-কষাকষির ক্ষমতাও কম। অভিবাসীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা দেওয়া হলে তাঁদের জ্ঞান ও যোগ্যতা বাড়বে, ফলে তাঁরা আরও ভালো চাকরির সুযোগ পাবেন। যেমন, প্রশিক্ষণ পেলে তাঁরা রংমিস্ত্রি অথবা কাঠমিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতে পারবেন, অথবা পর্যাপ্ত শিক্ষা পেলে তাঁরা তত্ত্বাবধায়ক বা নার্স হওয়ারও সুযোগ পাবেন। অভিবাসী শ্রমিকদের প্রশিক্ষণে এক টাকা ব্যয় করা হলে তিন টাকার সুফল পাওয়া যাবে।
ইংরেজি থেকে অনূদিত
ড. বিয়ন লোমবোর্গ: কোপেনহেগেন কনসেনসাস সেন্টারের প্রেসিডেন্ট। টাইম ম্যাগাজিনের মূল্যায়নে তিনি বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তির একজন।
নতুন গবেষণায় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, কীভাবে অভিবাসন-প্রক্রিয়া সাশ্রয়ী ও অভিবাসীদের আরও দক্ষ করা যায়। গবেষক ও ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকোনমেট্রিক্সের প্রভাষক ওয়াসেল বিন শাদাত ও লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নবিষয়ক গবেষণা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী মাহমুদুর রহমান বিভিন্ন প্রস্তাব যাচাই করে দেখেছেন। প্রস্তাবগুলোর মধ্যে যেটি সবচেয়ে প্রতিশ্রুতিশীল ছিল সেটি হচ্ছে, বিদ্যমান ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের (ইউডিসি) সাহায্য নিয়ে অভিবাসন-প্রক্রিয়াকে আনুষ্ঠানিক রূপ দেওয়া।
বাংলাদেশে অভিবাসনের গড় খরচ হচ্ছে ১ লাখ ৬৮ হাজার ৯০০ টাকা থেকে শুরু করে ২ লাখ ১৬ হাজার ৬০০ টাকার মধ্যে, যেটা অনেক বাংলাদেশির তিন বছরের আয়ের সমান। বিদেশে কাজ করে অভিবাসীদের এই খরচ ওঠাতে প্রায় দুই বছর সময় লেগে যায়। এত বেশি খরচ হওয়ার একটি কারণ হলো, একাধিক স্তরের মধ্যস্থতাকারীরা অভিবাসী শ্রমিকদের ভিসা ও অন্যান্য ফি বাবদ জোর করে অতিরিক্ত অর্থ দিতে বাধ্য করে। বেশির ভাগ কম দক্ষ শ্রমিকদের অভিবাসন-প্রক্রিয়া সম্পর্কে অথবা যে দেশে তাঁরা যাচ্ছেন, সেই দেশ সম্পর্কে খুব সামান্যই ধারণা থাকে, যার সুযোগ নেয় এই মধ্যস্থতাকারীরা। তবে ইউডিসির মাধ্যমে প্রক্রিয়াটি আনুষ্ঠানিক করা হলে তা অসাধারণ কল্যাণ বয়ে আনতে পারে। ইতিমধ্যেই আনুষ্ঠানিক অভিবাসনের ব্যাপারে মানুষের মধ্যে বেশ কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশ সরকার মালয়েশিয়ার সঙ্গে সরকারি পর্যায়ে (জি-টু-জি) আনুষ্ঠানিকভাবে জনসম্পদ রপ্তানির চুক্তি স্বাক্ষরের পর প্রায় ১৪ লাখ মানুষ ইউডিসির মাধ্যমে অনলাইনে নিবন্ধন করেছিলেন। উভয় দেশের বেসরকারি খাতকে নিযুক্ত করার মাধ্যমে জি-টু-জি প্রক্রিয়াকে জি-টু-জি প্লাসে বর্ধিত করা হয়েছে। বর্তমান গবেষণায় ইউডিসি লাখ লাখ কম দক্ষ শ্রমিককে আনুষ্ঠানিক অভিবাসন-প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংযুক্ত করার ক্ষেত্রে যে ভূমিকা রাখতে পারে, সে ব্যাপারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। বাংলাদেশে বর্তমানে ৪ হাজার ৫০০ শর বেশি ইউডিসি কাজ করছে। তারা লক্ষাধিক বাংলাদেশি নাগরিককে সরকারি ও বেসরকারি সেবা দিচ্ছে। এ ধরনের সেবা দেওয়ার অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ইউডিসিকে অভিবাসনের সঙ্গে যুক্ত করা হলে এই প্রক্রিয়া সহজসাধ্য হবে, তার খরচও কমে আসবে। যাঁদের জীবনে অভিবাসনের প্রয়োজনীয়তা সবচেয়ে বেশি, অর্থাৎ গ্রামাঞ্চলের মানুষের কাছে এই আনুষ্ঠানিক অভিবাসনের সেবা পৌঁছে দিতে হলে ইউডিসির একটি অভিবাসন ‘বিভাগ’ খুলতে হবে, সঙ্গে লাগবে কয়েকটি টেবিল ও কয়েকজন কর্মচারী। একটি ইউডিসির অভিবাসন দপ্তরে বিদেশে যেতে ইচ্ছুক শ্রমিকদের নানা সেবা দেওয়া যেতে পারে, যার মধ্যে আছে মৌলিক ফর্ম, ছবির শনাক্তকরণ থেকে শুরু করে কর্মসংস্থানের তথ্য ও ভিসা প্রক্রিয়াকরণ, প্রিন্টিং ও ইন্টারনেট সেবা। সরকারের ভর্তুকি বা ইউডিসির আয় দিয়ে এটা পরিচালনা করা সম্ভব। আর ইউডিসি কিন্তু অনায়াসে সরকারের ফি সংগ্রহ করতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা হিসাব করে দেখেছেন, প্রতিটি ইউডিসিতে একটি করে অভিপ্রায়ণ বিভাগ চালু করতে ১ লাখ ৭২ হাজার ৮০০ টাকার প্রাথমিক বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে, পরিচালনা বাবদ বার্ষিক খরচ হবে ৪৪ হাজার ৫০০ টাকা। বাংলাদেশের ৪ হাজার ৫০০টি ইউডিসির জন্য সর্বমোট খরচ হবে অগ্রিম ৭৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা, তার সঙ্গে প্রতিবছর কার্যপরিচালনা বাবদ ২০ কোটি ৩০ লাখ টাকা লাগবে।
কিন্তু এখান থেকে ভালো সুবিধাই পাওয়া যাবে। কম করে হলেও ইউডিসি ৫০ হাজার ব্যক্তিকে সেবা দেবে, অর্থাৎ ইউডিসিপ্রতি প্রায় ১১ জন। মানে প্রথম বছর এই পরিমাণ মানুষ মালয়েশিয়া যাওয়ার সুযোগ পাবেন, পরবর্তী বছরগুলোতে এই সংখ্যা দাঁড়াবে ৫-১০ হাজার। ফলে একজন ব্যক্তির অভিবাসনের খরচ কমে ৩৬ হাজার ৫০০ টাকা হবে, এতে প্রায় ৮৩ শতাংশ খরচ বাঁচবে। অভিবাসনের বাকি খরচের তিন-চতুর্থাংশের বেশি যাবে বিমানভাড়ায়। আর মধ্যস্থতাকারী না থাকলে ভিসা খরচ ১ লাখ ১৭ হাজার টাকা থেকে মাত্র ১ হাজার ৯২ টাকায় নেমে আসবে, যা ভিসার প্রকৃত খরচ। সবচেয়ে আশার কথা, ইউডিসির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অভিবাসন-প্রক্রিয়াকে আনুষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হলে প্রতি এক টাকা ব্যয়ের বিপরীতে ৪০ টাকা সমমূল্যের উপকার হবে। তবে এটাও সত্যি যে মালয়েশিয়ার সঙ্গে বর্তমানে যে প্রক্রিয়াটি অনুসরণ করা হচ্ছে, তা আমাদের আশা মেটাতে পারেনি। এ কারণেই গবেষকদের আশা হচ্ছে, ইউডিসির মাধ্যমে এই প্রক্রিয়ার উন্নতিসাধন করে আন্তর্জাতিক অভিবাসনকে আরও কার্যকর করা গেলে প্রতি এক টাকা ব্যয়ের বিপরীতে ২২ টাকা সমমূল্যের উপকার হবে। যাঁরা বিদেশে যাবেন, তাঁদের কারিগরি দক্ষতা বাড়ানোর দিকেও নজর দিতে হবে। বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অভিবাসীরা প্রধানত শ্রমিক, বাবুর্চি বা নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে কাজ করেন। উদাহরণস্বরূপ, ২০০৫ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত সৌদি আরবে যে কর্মীরা কাজ করতে গেছেন, তাঁদের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ ‘কম দক্ষ’ ছিল, আর মাত্র ৪ শতাংশ তথাকথিত ‘কিছুটা দক্ষ’ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত ছিল। কম দক্ষ শ্রমিকদের শুধু উপার্জনই কম নয়, তাঁদের নিয়োগকারীদের সঙ্গে দর-কষাকষির ক্ষমতাও কম। অভিবাসীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা দেওয়া হলে তাঁদের জ্ঞান ও যোগ্যতা বাড়বে, ফলে তাঁরা আরও ভালো চাকরির সুযোগ পাবেন। যেমন, প্রশিক্ষণ পেলে তাঁরা রংমিস্ত্রি অথবা কাঠমিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতে পারবেন, অথবা পর্যাপ্ত শিক্ষা পেলে তাঁরা তত্ত্বাবধায়ক বা নার্স হওয়ারও সুযোগ পাবেন। অভিবাসী শ্রমিকদের প্রশিক্ষণে এক টাকা ব্যয় করা হলে তিন টাকার সুফল পাওয়া যাবে।
ইংরেজি থেকে অনূদিত
ড. বিয়ন লোমবোর্গ: কোপেনহেগেন কনসেনসাস সেন্টারের প্রেসিডেন্ট। টাইম ম্যাগাজিনের মূল্যায়নে তিনি বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তির একজন।
No comments