লন্ডনে শেক্সপিয়ারকে অন্যভাবে স্মরণ
মঞ্চে আলো জ্বলতেই দেখা যায়, মাটি খোঁড়ার বেলচা হাতে দাঁড়িয়ে একজন। মুখে বিদ্রূপের হাসি। বেলচাটা এহাত-ওহাত করছেন। মাঝে মাঝে ঠোকর দিচ্ছেন মেঝেতে। সঙ্গে কবিতার সুরে বাক্য আওড়িয়ে যাচ্ছেন, ‘জীবনে তো অনেক মানুষের জন্য কবর খুঁড়লাম। তবে আজ নাকি এক মস্ত বড় কবি মারা গেছেন! তাঁকে কবর দিতে হবে!’ মঞ্চে আসেন আরও একজন। আবৃত্তির ঢঙে চলে দুজনের কথোপকথন। এক কান দু কান করে খবর ছড়িয়ে পড়ে, উইলিয়াম শেক্সপিয়ার মারা গেছেন। এমনিভাবে শুরু হয় ইংরেজ মহাকবি উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের স্মরণ আয়োজন। ২৩ এপ্রিল ছিল উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের ৪০০তম প্রয়াণ দিবস। এ দিন যুক্তরাজ্যে বসবাসরত ১২টি ভিন্ন সংস্কৃতির ১২ জন কবির সংগঠন ‘বার্ড উইদাউট বর্ডার’ পূর্ব লন্ডনের রিচমিক্সে এই স্মরণ অনুষ্ঠান আয়োজন করে। সংগঠনটির অন্যতম সদস্য বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কবি শামীম আজাদ। উল্লেখ্য, শেক্সপিয়ারের সমসাময়িক কবিদের বলা হতো ‘বার্ড’ (বিএআরডি)। যখন শেক্সপিয়ারকে কবর দেওয়ার জন্য আনা হলো, তখন ঘটে বিপত্তি। কারণ, এ কোনো দেহাবশেষ নয়, এ যে আস্ত এক পাণ্ডুলিপি, যাতে আছে শেক্সপিয়ারের সারা জীবনের কর্ম। শেক্সপিয়ারের এই অবশিষ্টাংশ পুঁতে ফেলা উচিত কি না, তা নিয়ে চলে কবিদের বিতর্ক। কেউ বললেন, শেক্সপিয়ার যেখানে ৪০০ বছর ধরে একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি, তখন কবি, লেখক কিংবা অনুবাদকেরা সাহিত্যের ভান্ডারে যুক্ত করেছেন অজস্র হীরা-মুক্তা। তাই শেক্সপিয়ারের কর্ম পুঁতে ফেললে কিছু আসে-যায় না। অন্যজন বললেন, শেক্সপিয়ারের সৃষ্টি সৃজনশীল ভাবনার এক অতল উৎস। আমাদের সুখ, দুঃখ কিংবা স্থানচ্যুতির প্রতি মুহূর্ত প্রতিফলন হয়ে আছে তাঁর কর্মে। তাই একে কবর দেওয়া ঠিক হবে না। আসলে এ কোনো বিতর্ক ছিল না, ছিল শেক্সপিয়ারকে নিয়ে স্বরচনায় কবিদের মুনশিয়ানার প্রকাশ ঘটানোর চেষ্টা। পুরো আয়োজনকে মোহনীয় করে তোলে ঢোল আর বেহালার পরিবেশনা। কবিদের বিতর্ক শেষে হলভর্তি দর্শকের মতামত জানতে চাওয়া হয়। তাঁরা সমস্বরে বললেন, শেক্সপিয়ারকে কবর দেওয়া ঠিক হবে না। ফলে শেষবারের মতো কবিরা একে একে সেই পাণ্ডুলিপি ঘেঁটে দেখলেন, তাতে সংরক্ষণের মতো ভালো কিছু আছে কি না। এরপর তাঁরা নিজ নিজ ভাষায় ভাষান্তর করা শেক্সপিয়ারের নাটক আর কবিতার অংশবিশেষ পাঠ করেন। কবি শামীম আজাদ বাংলায় পরিবেশন করেন ‘সনেট নম্বর ৭৩’। মঞ্চের উপস্থাপক আর্না পলমেয়ার বললেন, ‘বাহ্! শেক্সপিয়ার তো কোনো নির্দিষ্ট দেশ বা জাতির নয়; তাঁর অস্তিত্ব দেখছি সব ভাষায়!’ মঞ্চের পেছনের পর্দায় ভেসে থাকা উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের ছবির দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, ‘তিনি কোন দেশের জাতীয় পোশাক পরে আছেন কে জানে!’ সমবেত কণ্ঠে ‘শেক্সপিয়ারকে বন্দী করতে পারেনি কবর’ গান দিয়ে শেষ হয় কবিদের অন্য রকম এই আয়োজন। তার আগে উপস্থাপকের এক প্রশ্নে যেন উদাস হয়ে যায় পুরো মিলনায়তন। তিনি জানতে চান, শেক্সপিয়ারের ৫০০তম প্রয়াণ দিবস পালনে কে কে উপস্থিত থাকবেন?
No comments