সাড়ে ১৮ হাজার কিলোমিটার দূরের লেস্টার সমর্থক
যখন লেস্টারকে এভাবে কেউ চেনেনি, তখনো লেস্টারের স্কার্ফটা এভাবেই উঁচিয়ে ধরতেন রড ডি লেসলে |
অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশে যদি কখনো লেস্টার সিটির জার্সি গায়ে কোনো পেঙ্গুইনকে দেখা যায়, তাহলে অন্য কথা। আর না হলে নিউজিল্যান্ডের রড ডি লিসলেই যে সবচেয়ে দূরে থাকা একনিষ্ঠ লেস্টার সমর্থক, সেটি বোধ হয় বলাই যায়! রাগবি-পাগল দেশের এক প্রত্যন্ত শহর টকোরোয়া, লেস্টার থেকে যে শহরের দূরত্ব প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার কিলোমিটার। ফুটবল সমর্থকই সেখানে হাতে গোনা, যাঁরা আছেন তাঁরাও বেশির ভাগই ইউরোপের সব নামীদামি ক্লাবের সমর্থক। সেই টকোরোয়ার ডি লিসলে কিনা গত ৪২ বছর ধরে মজে আছে লেস্টারের প্রেমে! তো কীভাবে জন্মাল লেস্টারের প্রতি তাঁর এই ভালোবাসা? ৫৫ বছর বয়সী ডি লিসলে নিজেই শোনালেন গল্পটা, ‘১৯৭৪ সালে আমাদের সাদা-কালো টেলিভিশনে আমি লিভারপুল-লেস্টারের একটা ম্যাচ দেখছিলাম। খেলাটা উপভোগ করার জন্য আমাকে যেকোনো একটা দলকে সমর্থন দিতে হতো। আমি লেস্টারকে বেছে নিলাম, কারণ ওদের নামটা শুনতে বেশি ভালো লাগছিল।’ সে-ই শুরু। এখন যেমন চাইলেই ফেসবুক-টুইটারে অন্য লেস্টার সমর্থকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন, অনলাইন স্ট্রিমিং করে খেলা দেখতে পারছেন, ফ্যান-ফোরামে ভাব বিনিময় করতে পারছেন, ওই সময় তো এসব কিছুই ছিল না। আসলে প্রত্যন্ত ওই শহরে বাইরের দুনিয়ার ফুটবলের খবর পাওয়াই খুব কষ্টসাধ্য ছিল। জাহাজে করে ফুটবল সাময়িকী শুট আসত, সেটি হাতে পৌঁছাতে পৌঁছাতে তিন মাস পুরোনো হয়ে যেত। গত ৪২ বছরে অনেক দুঃসময় গেছে লেস্টারের। কখনো লড়তে হয়েছে অবনমন এড়াতে, কখনো নেমে গেছে দ্বিতীয় বিভাগে, এমনকি তৃতীয় বিভাগেও। কিন্তু সেই যে সাদা-কালো টেলিভিশনে খেলা দেখে লেস্টারের প্রেমে পড়েছিলেন, সেটিতে ভাটা পড়েনি একটুও। এমনকি গত মৌসুমেও তো প্রিমিয়ার লিগ থেকে অবনমন এড়াতে লড়ছিল ক্লাবটি। সেই লেস্টারই এ মৌসুমে রূপকথা লিখে প্রিমিয়ার লিগে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে। ডি লিসলের কাছে এটা তো স্বপ্নের মতো ব্যাপার। আর তাই সেই ইতিহাসের সাক্ষী হতে মৌসুমে দলের শেষ দুটি ম্যাচ দেখতে ডি লিসলে চলে আসছেন ইংল্যান্ডে। আসছেন তো ঠিকই। কিন্তু শেষ মুহূর্তে যদি কোনো নাটকীয়তায় শিরোপা জিততে না পারে লেস্টার! মন ভেঙে যাবে না তো? ডি লিসলে কিন্তু হাসিমুখে জানিয়ে দিলেন, তিনি সেটির জন্যও তৈরি আছেন, ‘এখনো যেকোনো সময় সব ভজকট লেগে যেতে পারে। দেখা গেল, সাধারণ একটা মৌসুমের মতোই হয়ে গেল শেষে। আপনি যখন লেস্টারের মতো একটা দলের সমর্থক হবেন, সব হাসিমুখে মেনে নেওয়ার জন্য তৈরি থাকতে হবে। যদিও এখান থেকে যদি ওরা শিরোপা জিততে না পারে, সেটি হবে খুব হতাশার।’
No comments