দ্য পারপেল প্রিন্স
একটি দুর্বোধ্য প্রতীক প্রিন্সকে করে রেখেছিল আরও রহস্যময়। ওই প্রতীকের আদলে তৈরি মঞ্চে রাজপুত্রের মতো এসে দাঁড়াতেন তিনি। অনেক দিন পর্যন্ত তাঁর জামার কলারে ও হাতায় আঁকা ওই চিহ্নের মানে খুঁজে পায়নি কেউ। মাইকেল জ্যাকসনের পরে প্রিন্সের মতো এমন ফ্যাশন আইকনও খুব বেশি পায়নি সংগীতবিশ্ব। রোলার কোস্টারের মতো ক্যারিয়ার যখন উত্থান-পতনে দোদুল্যমান, তখন ১৯৯৩ সালে প্রিন্স রজার নেলসন নাম ছোট করে হয়ে যান প্রিন্স। আর ধারণ করেন নারী ও পুরুষের জ্যোতিষশাস্ত্রীয় এই ০)+> চিহ্নটি। একসময় সমালোচকেরা আবিষ্কার করলেন—এটি প্রেমের প্রতীক। প্রিন্সের শুরুর দিকের অ্যালবামগুলো শ্রোতাদের মনোযোগ কাড়েনি। তাতে দমে যাননি তিনি। তাঁর প্রিন্স, ডার্টি মাইন্ড, কনট্রোভারসরি অ্যালবামগুলোর বেশির ভাগ গানই ছিল ফিউশন। প্রিন্স ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেন গত শতকের আশির দশক থেকে। ১৯৮৪ সালে ‘পারপেল রেইন’ গানটির মাধ্যমে নতুন করে আবিষ্কৃত হন এই শিল্পী। একে একে ১৯৯৯, পারপল রেইন ও দ্য টাইম অ্যালবামগুলোর পর সংগীতপিপাসুরা খুঁজে পান সংগীতের নতুন রাজকুমারকে। এরপর টানা সাড়ে তিন দশক সংগীতবিশ্বকে রক, ফাংক ও জ্যজে ডুবিয়ে রাখেন প্রিন্স। ১৯৭৯ সালে ব্যান্ড ‘দ্য রেেভাল্যুশন’ গঠন করেন। তবে শুরুর দিকে রেকর্ড কোম্পানি খুঁজে পাচ্ছিলেন না। একপর্যায়ে ১৯৯২ সালে ইতিহাসের সব থেকে স্মরণীয় রেকর্ডিংয়ের চুক্তিটি করেন ওয়ার্নার ব্রাদার্সের সঙ্গে। এক শ মিলিয়ন ডলারের এ চুক্তির বাইরে টেলিভিশন, চলচ্চিত্র, বই ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করার স্বাধীনতা ছিল তাঁর। যা মাইকেল জ্যাকসন ও ম্যাডোনার ছিল না। মাইকেল জ্যাকসন ও ম্যাডোনার রেকর্ডিংয়ের চুক্তিটি ছিল মাত্র ৬০ মিলিয়ন ডলার বা তার কিছু বেশি। ‘আই ওয়ানা বি ইয়োর লাভার’, ‘ডু মি বেবি’, ‘সেক্সুয়ালিটি’, ‘হোয়েন ডোভস ক্রাই’, ‘কিস’, ‘লেসট গো ক্রেজি’, ‘মোস্ট বিউটিফুল গার্ল ইন দ্য ওয়ার্ল্ডসহ বহু জনপ্রিয় গান গেয়েছেন এই শিল্পী। ৩৫ বছরে প্রকাশ করেছেন ৩৯টি অ্যালবাম। যার প্রায় সবগুলো গানই তাঁর নিজের লেখা। জিতেছেন সাতটি গ্র্যামি। ১৯৮৪ সালে পার্পল রেইন ছবির গানের জন্য অস্কার এবং ২০০৭ সালে হ্যাপি ফিট-এর ‘সং অব দ্য হার্ট’ গানটির জন্য গোল্ডেন গ্লোব পেয়েছেন প্রিন্স। আর তাঁর বিক্রীত রেকর্ডের পরিমাণ ১০ কোটিরও বেশি। কনসার্টে তাঁর পরিবেশনা মুগ্ধ করত বিশ্বের সংগীতপ্রেমীদের। গান গাওয়া, গান লেখা ছাড়া বেশ কয়েকটি বাদ্যযন্ত্রও বাজাতেন তিনি। সংগীত প্রযোজনা ছাড়াও অভিনয় ও চলচ্চিত্র পরিচালনাও করেছেন প্রিন্স। ২১ এপ্রিল মারা যান বিশ্বসংগীতের এই বরপুত্র।
No comments