ওয়ান ইলেভেনের কুশীলবরা কেন এখনও বহাল তবিয়তে
প্রধানমন্ত্রীর
প্রতি প্রশ্ন রেখে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, ওয়ান ইলেভেন
ষড়যন্ত্র ছিল, এটা বিশ্বাস করলে কুশীলবদের কেন বিচারের আওতায় আনা হচ্ছে না-
কুশীলবদের গুটি কয়েক তো দেশেই আছেন। তারা কেন এখনও বহাল তবিয়তে? তারা কেন
বাইরে আছেন, ভেতরে নেই? যারা দেশে আছেন তাদের ধরা হয় না কেন? খালেদা জিয়া
বলেন, তাদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা হোক। আমি বলব- সরকারের যদি
সততা থাকে, সত্যি যদি প্রধানমন্ত্রী এটা মিন করে থাকেন, তাদের ধরে দেখিয়ে
দেবেন, প্রমাণ করে দেবেন। উনি এটা মিন করছেন, সত্যি বলছেন। খালেদা জিয়া
বলেন, মাহফুজ আনামতো স্বীকার করেছেন। গতকাল রাতে বিগত আন্দোলনে চট্টগ্রাম
জেলায় নিহত ও আহত বিএনপি নেতাকর্মীদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ
অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান
প্রতিষ্ঠিত জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে সাড়ে ১০টায় বিএনপি
চেয়ারপারসনের গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ অনুষ্ঠান হয়। খালেদা জিয়া বলেন,
তখন ডিজিএফআইয়ের প্রধান ছিলেন মেজর জেনারেল সৈয়দ ফাতেমী আহমেদ রুমি। তিনি
এখন দেশেই আছেন। লে. জেনারেল মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী তো অস্ট্রেলিয়ায় ছিলেন।
কতবার এক্সটেনশন পেয়েছেন। কার মাধ্যমে পেয়েছেন? এই সরকারের মাধ্যমে। কেন
তাকে ধরা হয় না? এখন তো দেশেই আছেন। হাসান মাশহুদ চৌধুরী যিনি এন্টি
করাপশনে ছিলেন তিনিও দেশেই আছেন শুনেছি। সে দুর্নীতি দমন কমিশনে এসব মামলা
করেছে। তাদের কেন ধরা হয় না? সরকারের যদি এতই সিনসিয়ারিটি থাকে, তাহলে
তাদের ধরে দেখিয়ে দেবেন ওয়ান ইলেভেনের প্রতি তাদের সচেতনতা আছে। খালেদা
জিয়া বলেন, ওয়ান ইলেভেনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দায়ী। সেদিন তিনি
ওই অবৈধ সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, এ সরকার আমাদের আন্দোলনের ফসল।
কিসের জন্য? ক্ষমতায় যেতে হবে, তাদের সঙ্গে আতাঁত করার জন্যে? এটার কোন
দরকার ছিল না। তিনি ওই অবৈধ সরকারের হাত ধরে ক্ষমতায় এসেছেন। খালেদা জিয়া
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ইঙ্গিত করে বলেন, উনি নিজে বলেছেন, মাইনাস টু
ফর্মূলা। আমরা যদি একসঙ্গে থাকতাম, তাহলে ওয়ান ইলেভেন ওয়ালাদের কিচ্ছু করার
সাহস ছিল না। সরকার এবং বিরোধী দল, দেশের রাজনৈতিক দলগুলো, বিশেষ করে বড়
দুইটি পার্টি বিএনপি-আওয়ামী লীগসহ অন্যদের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক থাকলে কেউ
অবৈধভাবে ক্ষমতা কেড়ে নিতে পারবে না। অন্যায়ভাবে কাউকে কারাগারেও নিতে
পারবে না। ওয়ান ইলেভেনের পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে খালেদা জিয়া বলেন, ওয়ান
ইলেভেনের সরকার ছিল অবৈধ সরকার। সেই সময়ের কথা প্রধানমন্ত্রী এখন উঠিয়েছেন।
ওয়ান ইলেভেনের সেনা সমর্থিত ফখরুদ্দিন আহমেদের শপথ গ্রহন অনুষ্ঠানে শেখ
হাসিনা গিয়েছিলেন। গণমাধ্যমের সবাই সব দেখেছেন। উনি সাংবাদিকদের বলেছেন,
আমাদের আন্দোলনের ফসল। তার মানে উনি এটা করিয়েছেন। তার অর্থ তিনি
গণতন্ত্রকে শেষ করে দিয়ে অবৈধভাবে অগণতান্ত্রিক সরকারের হাত ধরে ক্ষমতায়
আসতে চান। উনি বাদ পড়তে পারেন না। কারণ যদি অন্যায় না করে থাকি তাহলে কিসের
ভয়। শেখ হাসিনা তাদের সঙ্গে কাকুতি-মিনতি করে ১১ মাসে বেরিয়েছেন। সে সময়
নিজের কারাবাসের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, আর আমি বলেছিÑ আমি
আপস করবো না। ওয়ান ইলেভেনের কুশীলবদের সঙ্গে রীতিমতো ফাইট করেছি। বলেছি-
তোমাদের কথা মতো আমি চলবো না। আমার একটা নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি আছে। আমি
জনগণের সঙ্গে বেঈমানি করে কিছু করতে পারবো না। দেশের মানুষের সঙ্গে বেঈমানি
করতে পারবো না। সেজন্য আমি দেশ ছেড়ে কোথাও যাইনি। জেলখানায় ছিলাম। সেখানে
আমি ১ বছর ৮ দিন ছিলাম। শেখ হাসিনার প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া বলেন, উনি ১১ মাস
পর বেরিয়ে বিদেশে চলে গেলেন, হাতে মেন্দি-টেন্দি লাগিয়ে। উনি যেসব কাজ
করেছেন, এটা ঠিক করেননি। এরশাদের সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন, এখন এরশাদ
বলছে মাইনাস থ্রি। ও তো দালাল, সব সময় দালালিই করেছে। বিএনপির সিনিয়র ভাইস
চেয়ারম্যান তারেক রহমান অপপ্রচারের শিকার হয়েছেন দাবি করে খালেদা জিয়া
বলেন, তখন তো তার অনেক অবৈধ টাকার কথা বলা হয়েছিল। কই সে টাকা। এখন অনেক
কষ্ট করে লন্ডনে ছোট্ট একটি বাসায় থাকে তারেক রহমান। কেউ তার একটি অবৈধ
টাকার প্রমান দিতে পারেনি। আসলে অবৈধ টাকা থাকলে তা কেউ হজম করতে পারে না।
বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর দমন-পীড়নের সমালোচনা করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন,
এখন তো দেশে কোন আন্দোলন নেই। তারপরও দেশ মোটেই ভালো নেই। প্রতিনিয়ত মানুষ
ধরছে। আমাদের লোকজন জামিন পাচ্ছে, আবার জেল গেইট থেকে নতুন মামলা দিয়ে
কারাগারে নিয়ে যাচ্ছে। এগুলো কি? বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকার জন্য সবই
করছে। তারা যতদিন বেঁচে থাকবেন ততদিন ক্ষমতায় থাকতে চান। আমি বলব এ সরকার
ওয়ান ইলেভেনের লোকদের থেকেও খারাপ কাজ করছে। এরজন্য একদিন তাদেরকে জবাব
দিতে হবে। আল্লাহ আছেন। তিনি সব কিছু দেখছেন। সব কিছুর মালিক তিনি। মানুষের
চোখের পানি তিনি দেখছেন, তিনিই এসবের বিচার করবেন। আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ
নির্বাচন প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া বলেন, এটা নামমাত্র নির্বাচন। নির্বাচন
নির্বাচন খেলা। গণতন্ত্রকে তারা হাস্যস্পদ করে ফেলেছে। কারণ এই সরকার
জনগণের রায় নিয়ে ক্ষমতায় আসেনি। তারা অবৈধভাবে সরকারে আছে। প্রধান বিচারপতি
এস কে সিনহার বক্তব্য উদ্ধৃতি করে খালেদা জিয়া বলেন, বর্তমান সরকার
সংবিধানের কথা বলে মুখে ফেনা তুলে। কিন্তু তারাই সংবিধান মানছে না। প্রধান
বিচারপতি যেগুলো বলেছেন, অবসরের যাওয়ার পরে আর রায় লেখার সুযোগ থাকে না।
তার মানে সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক অবসরে যাওয়ার আগে যে
রায়টা দিয়েছেন, ওইটি কার্যকর। অর্থাৎ আরও দুইটি টার্ম তত্ত্বাবধায়ক
সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে। আমাদের দাবিও সেখানে। খালেদা জিয়া বলেন, ২০১৪
সালে কোন নির্বাচন হয়নি। কাজেই আমাদের দাবি আরেকটা নির্বাচন হতে হবে
নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। তাদের যদি কোন ভয় না থাকে, তাহলে সকলকে সমান সুযোগ
দিয়ে সব দলের অংশ গ্রহনের একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন দিন। তিনি বলেন, আওয়ামী
লীগের দেশপ্রেম নেই। সেই জন্য তারা লুটপাট, জমি দখল, টেন্ডারবাজী এগুলো
নিয়ে আছে।
তরুণদের হাতে নেতৃত্ব দেব
আন্দোলনে ত্যাগী নেতা-কর্মীদের মূল্যায়নের আশ্বাস দিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেন, এখানে কথা উঠেছে, যারা আন্দোলন-সংগ্রামে অংশগ্রহন করেছিল, তাদেরকে দলে ভালো ভালো জায়গা দিতে হবে। আমিও করতে চাই, কিন্তু আমাকে সহযোগিতা করতে হবে। সত্যিকারভাবে যারা কাজ করেছে, তাদের নামগুলো আমাকে দিতে হবে। ছাত্রদল ও যুবদলের ছেলেরা এখন ছোট নয়। এখন কিন্তু তাদের দলের দায়িত্ব নেয়ার সময় এসে গেছে। খালেদা জিয়া বলেন, আমি বলবÑ বয়স্ক নেতা যারা আছেন, তারা দলকে অনেক দিয়েছেন। তাদের বয়স হয়েছে, এখন তাদেরকে আমরা উপদেষ্টা পরিষদে নিয়ে তরুনদের সামনে আনব। যাতে তারা দেশ ও দলের জন্য কাজ করতে পারে- এটা আমার ইচ্ছা। আমি সবার সহযোগিতা চাই। অনুষ্ঠানের শুরুতে আন্দোলনে নিহত চট্টগ্রাম মহানগরের পাঁচলাইশের শোলকবহরের হুমায়ুন কবিরের স্ত্রী জেসমিন আক্তার এবং আন্দোলনে আহত পাহাড়তলীর সাগরিকার দক্ষিন কাট্টলীর আরাফাত, ইয়াছির, রাজিব, সরাইপাড়ার বদরুল আলম, চাঁন্দগাঁওয়ের নওশাদ আল জামসেদুর রহমান ও খুলশীর ঝাউতলার শাহ আলম মুনের হাতে আর্থিক অনুদানের চেক তুলে দেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। আন্দোলনে আহত নেতা-কর্মীদের সহযোগিতায় দলের বিত্তবানদের এগিয়ে আসারও আহ্বান জানান বিএনপি চেয়ারপারসন। সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ডা. ফারহাদ হালিম ডোনারের সভাপতিত্বে সাক্ষাৎ অনুষ্ঠানে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম খান, সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আকবর খোন্দকার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আল মোজাদ্দেদী ও সাংবাদিক নেতা কাদের গনি চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
তরুণদের হাতে নেতৃত্ব দেব
আন্দোলনে ত্যাগী নেতা-কর্মীদের মূল্যায়নের আশ্বাস দিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেন, এখানে কথা উঠেছে, যারা আন্দোলন-সংগ্রামে অংশগ্রহন করেছিল, তাদেরকে দলে ভালো ভালো জায়গা দিতে হবে। আমিও করতে চাই, কিন্তু আমাকে সহযোগিতা করতে হবে। সত্যিকারভাবে যারা কাজ করেছে, তাদের নামগুলো আমাকে দিতে হবে। ছাত্রদল ও যুবদলের ছেলেরা এখন ছোট নয়। এখন কিন্তু তাদের দলের দায়িত্ব নেয়ার সময় এসে গেছে। খালেদা জিয়া বলেন, আমি বলবÑ বয়স্ক নেতা যারা আছেন, তারা দলকে অনেক দিয়েছেন। তাদের বয়স হয়েছে, এখন তাদেরকে আমরা উপদেষ্টা পরিষদে নিয়ে তরুনদের সামনে আনব। যাতে তারা দেশ ও দলের জন্য কাজ করতে পারে- এটা আমার ইচ্ছা। আমি সবার সহযোগিতা চাই। অনুষ্ঠানের শুরুতে আন্দোলনে নিহত চট্টগ্রাম মহানগরের পাঁচলাইশের শোলকবহরের হুমায়ুন কবিরের স্ত্রী জেসমিন আক্তার এবং আন্দোলনে আহত পাহাড়তলীর সাগরিকার দক্ষিন কাট্টলীর আরাফাত, ইয়াছির, রাজিব, সরাইপাড়ার বদরুল আলম, চাঁন্দগাঁওয়ের নওশাদ আল জামসেদুর রহমান ও খুলশীর ঝাউতলার শাহ আলম মুনের হাতে আর্থিক অনুদানের চেক তুলে দেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। আন্দোলনে আহত নেতা-কর্মীদের সহযোগিতায় দলের বিত্তবানদের এগিয়ে আসারও আহ্বান জানান বিএনপি চেয়ারপারসন। সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ডা. ফারহাদ হালিম ডোনারের সভাপতিত্বে সাক্ষাৎ অনুষ্ঠানে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম খান, সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আকবর খোন্দকার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আল মোজাদ্দেদী ও সাংবাদিক নেতা কাদের গনি চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
No comments