জাপার সরকার ছাড়ার বিষয়ে ঐকমত্য
রওশনপন্থীদের ছাড়াই জাপার প্রেসিডিয়ামের বৈঠক।
দলের কো-চেয়ারম্যান ও মহাসচিব নিয়োগের বৈধতা; ২৬ এপ্রিল দলের জাতীয় কাউন্সিল।
জাতীয় পার্টিতে কোনো দ্বন্দ্ব নেই- দলের চেয়ারম্যান এরশাদের মুখে এ কথাটি বার বার উচ্চারিত হলেও বাস্তবতা তার উল্টো। এরশাদ সরকার ছাড়ার কথা বললেও তার স্ত্রী ও সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন বলছেন ভিন্ন কথা। জাপা সরকারে থাকবে বলে এরশাদকে তিনি সাফ জানিয়েও দিয়েছেন। সরকারে থাকা না থাকা এবং পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও নতুন মহাসচিব নিয়োগের বৈধতা দিতে গতকাল দলের প্রেসিডিয়ামের বৈঠক ডাকা হলেও তাতে যোগ দেননি রওশনপন্থীরা। ফলে দুই ধারায় বিভক্ত দলের বিভাজন আরো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ সরকার থেকে বেরিয়ে এসে সত্যিকারের বিরোধী দল হিসেবে জাপাকে প্রতিষ্ঠা করতে চান। অন্যদিকে সংসদে বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ সরকারে থেকেই বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করতে চান। এ নিয়ে এখন দুই ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়েছে দলটি। এটি আরো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে গতকালের প্রেসিডিয়ামের বৈঠকে। দলের একাংশের (রওশনপন্থীদের) মতামত উপো করেই বৈঠকে দলের কো-চেয়ারম্যান হিসেবে জি এম কাদের ও মহাসচিব হিসেবে এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারের নিয়োগকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। যদিও বৈঠক শেষে দলের কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, জাতীয় পার্টিতে এরশাদ আমাদের পিতার মতো। রওশন আমাদের মাতার মতো। উনি (রওশন এরশাদ) অফিসিয়াল কাজে ব্যস্ত থাকায় আজকের বৈঠকে আসতে পারেননি।
গতকাল এরশাদের বনানীর রাজনৈতিক কার্যালয় রজনীগন্ধায় বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য রওশন এরশাদের অনুপস্থিতিতেই পার্টির প্রেসিডিয়ামের বৈঠকে দলের কো-চেয়ারম্যান ও মহাসচিব পদে নতুন নিয়োগ অনুমোদন দেয়া হয়েছে। একই সাথে বৈঠকে আগামী ১৬ এপ্রিল জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন পরিচালনার জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে একটি কমিটি এবং জেলা পর্যায় কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বৈঠকে পার্টির চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সভাপতিত্ব করেন।
এ দিকে জাতীয় পার্টির এরশাদপন্থী অংশের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যরা বৈঠক করে মন্ত্রিসভা থেকে বেরিয়ে আসার বিষয়ে একমত হয়েছেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন পার্টির কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের। তিনি বলেছেন, বৈঠকে উপস্থিত সবাই রাজনীতির স্বার্থে সরকার থেকে বেরিয়ে আসাটা অত্যন্ত জরুরি বলে মত দিয়েছেন। চেয়ারম্যানের (এরশাদ) নির্দেশনা অনুযায়ী পরে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে। পার্টির ৪০ জনের বেশি প্রেসিডিয়াম সদস্যের মধ্যে পার্টি চেয়ারম্যান এরশাদসহ তার সমর্থক ২১ জন প্রেসিডিয়াম সদস্য এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদসহ অন্যরা বৈঠকে যোগ দেননি।
এরশাদ ছাড়াও বৈঠকে পার্টির কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের, মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার এমপি, এম এ সাত্তার, আবুল কাশেম, গোলাম হাবিব দুলাল, আলহাজ সাহিদুর রহমান ট্যাপা, অ্যাডভোকেট শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, অধ্যাপিকা মাসুদা এম রশিদ চৌধুরী, সৈয়দ মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা, হাবিবুর রহমান, সুনীল শুভ রায়, এস এম ফয়সল চিশতী, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, আজম খান, এ টি ইউ তাজ রহমান ও সোলায়মান আলম শেঠ উপস্থিত ছিলেন।
অপর দিকে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না রওশন ছাড়াও পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, সম্প্রতি মহাসচিবের পদ থেকে ছিটকে পড়া জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু এমপি, কাজী ফিরোজ রশিদ, শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা, বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী ও ফখরুল ইমামসহ কয়েকজন প্রেসিডিয়াম সদস্য।
গতকাল দুপুর পৌনে ১২টায় শুরু হয়ে বৈঠক চলে আড়াইটা পর্যন্ত। প্রায় ৩ ঘণ্টা চলা এই বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সামনে আসেননি পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ। তার পরিবর্তে সাংবাদিকদের সামনে আসেন তার ভাই ও দলের কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টিতে এরশাদ আমাদের পিতার মতো। রওশন আমাদের মাতার মতো। উনি (রওশন এরশাদ) অফিসিয়াল কাজে ব্যস্ত থাকায় আজকের বৈঠকে আসতে পারেননি। দলের মন্ত্রীদের মন্ত্রিত্ব ছাড়ার বিষয়ে জি এম কাদের বলেন, প্রেসিডিয়ামের সদস্যদের সবাই প্রকৃত বিরোধীদলের ভূমিকা নিতে মন্ত্রিত্ব ছাড়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন পার্টির চেয়ারম্যান।
পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, আজকের সভায় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নিয়োগকৃত জাপার কো-চেয়ারম্যান পদে জি এম কাদের ও মহাসচিব পদে আমার নিয়োগকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, দেশের উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার জন্য আমরা পার্লামেন্টে ও পার্লামেন্টের বাইরে ভূমিকা রাখতে চাই। এ জন্য জাতীয় পার্টিকে তৃণমূল থেকে সংগঠিত করার উদ্যোগ নেয়া হবে। ১৬ এপ্রিল দলের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে এক মাসের মধ্যে ৪০ জেলার কাউন্সিল সম্পন্ন করা হবে।
উল্লেখ্য, রওশনপন্থীদের বিরোধিতার মধ্যেই সম্প্রতি এরশাদ নিজের ভাই জি এম কাদেরকে পার্টির কো-চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেন, মহাসচিব পদে ফিরিয়ে আনেন দীর্ঘদিনের আস্থাভাজন রুহুল আমিন হাওলাদারকে। যদিও এ নিয়োগকে কেন্দ্র করে দলে নতুন করে বিদ্রোহের মুখে পড়েন এরশাদ। এর আগে বিভিন্ন সময়ে জাতীয় পার্টির সদস্যদের মন্ত্রিসভা থেকে বেরিয়ে আসার বিষয়টি আলোচনায় এলেও জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের আপত্তির কারণে তা ধোপে টেকেনি। এ নিয়ে দলে বিদ্রোহের মধ্যেও এরশাদ বলেন, তিনি তার সিদ্ধান্তে মৃত্যু পর্যন্ত অটল থাকবেন। আর গত ২৬ জানুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে সাবেক মন্ত্রী জি এম কাদের বলেন, জাতীয় পার্টির অবস্থান জনগণের কাছে অস্পষ্ট। কারণ জাতীয় পার্টি একদিকে বিরোধী দল, আবার অন্য দিকে সরকারের মন্ত্রিসভায় আছে। তাই দলের অবস্থান জনগণের কাছে স্পষ্ট করতেই আমাদের সরকার থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তবে সেটি প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনা করেই। অন্য দিকে দশম সংসদের দুই বছর পূর্তির আগের দিন প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠক করে রওশন সাফ জানিয়ে দেন, তারা সরকারেই থাকছেন।
বিয়ের দাওয়াতেও আলাদা এরশাদ-রওশন : এ দিকে দলের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহিম ও দলের সংসদ সদস্য মেহজাবীন মোরশেদ দম্পতির ছেলের বিয়েতে যোগ দিতে আলাদাভাবে চট্টগ্রাম যান পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ ও তার স্ত্রী বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ। শুক্রবার সকাল ও বিকেলে পৃথক বিমানে তারা চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছেন। আলাদা ফাইটে এলেও দু’জনকেই বিমানবন্দরে স্বাগত জানান চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালি আসনের সংসদ সদস্য ও দলের মহাসচিব পদ থেকে সরিয়ে দেয়া জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু।
এরশাদ ও রওশনকে বিমানবন্দর থেকে নগরীর পাঁচতারকা র্যাডিসন ব্লুু হোটেলে নিয়ে আসেন দলের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহিম এবং নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইয়াকুব। রাতে এই হোটেলেই মুরাদ ও মেহজাবীন দম্পতির ছেলে সামির সিকান্দরের বিয়ের অনুষ্ঠান হয়। এতে পানিসম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় হুইপ তাজুল ইসলাম ও জিয়াউদ্দিন বাবলুও যোগ দেন। একই হোটেলে এরশাদ-রওশন পাশাপাশি কে অবস্থান করলেও তাদের মধ্যে কোনো কথা হয়নি বলে জানান স্থানীয় নেতারা।
সরকারি ‘সুবিধায়’ জাতীয় পার্টি সুসংগঠিত হবে : চুন্নু
অপর দিকে মন্ত্রিসভায় থাকার পে যুক্তি দেখিয়ে জাতীয় পার্টির অপর প্রেসিডিয়াম সদস্য ও শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, সরকারি সুবিধায় দলকে সুসংগঠিত করার সুযোগ পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, আমরা সরকারি যে সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছি, তাতে দলকে সুসংগঠিত করা সম্ভব হচ্ছে। মন্ত্রিসভা ছাড়ার কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কি নাÑ জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, জাতীয় পার্টি এখনও মন্ত্রিসভা থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে দলের প্রেসিডিয়াম ও সংসদীয় বোর্ড যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে, আমরা তা মেনে নেবো। তবে আপাতত এ ধরনের কোনো সম্ভাবনা নেই বলেও জানান। তিনি বলেন, প্রকৃত বিরোধী দল বলতে যদি বোঝায় সংসদে গিয়ে মারামারি করা, সরকারকে গালাগালি করা, লাগাতার সংসদ বর্জন করাÑ তবে এ ধরনের বিরোধী দল আমরা হতে চাই না। আমরা চাই, সংসদে ভালো পরিবেশ বজায় থাকবে, সরকার ভালো করলে আমরা সহযোগিতা করব, আর সরকার যদি জনস্বার্থবিরোধী কাজ করে সে েেত্র আমরা প্রতিবাদ করব। নবম জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, যে বিরোধীদলীয় নেতা পাঁচ বছরের মধ্যে ১০ দিন সংসদে উপস্থিত থাকেন, এরকম বিরোধী দল আমরা হতে চাই না।
দলের কো-চেয়ারম্যান ও মহাসচিব নিয়োগের বৈধতা; ২৬ এপ্রিল দলের জাতীয় কাউন্সিল।
জাতীয় পার্টিতে কোনো দ্বন্দ্ব নেই- দলের চেয়ারম্যান এরশাদের মুখে এ কথাটি বার বার উচ্চারিত হলেও বাস্তবতা তার উল্টো। এরশাদ সরকার ছাড়ার কথা বললেও তার স্ত্রী ও সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন বলছেন ভিন্ন কথা। জাপা সরকারে থাকবে বলে এরশাদকে তিনি সাফ জানিয়েও দিয়েছেন। সরকারে থাকা না থাকা এবং পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও নতুন মহাসচিব নিয়োগের বৈধতা দিতে গতকাল দলের প্রেসিডিয়ামের বৈঠক ডাকা হলেও তাতে যোগ দেননি রওশনপন্থীরা। ফলে দুই ধারায় বিভক্ত দলের বিভাজন আরো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ সরকার থেকে বেরিয়ে এসে সত্যিকারের বিরোধী দল হিসেবে জাপাকে প্রতিষ্ঠা করতে চান। অন্যদিকে সংসদে বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ সরকারে থেকেই বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করতে চান। এ নিয়ে এখন দুই ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়েছে দলটি। এটি আরো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে গতকালের প্রেসিডিয়ামের বৈঠকে। দলের একাংশের (রওশনপন্থীদের) মতামত উপো করেই বৈঠকে দলের কো-চেয়ারম্যান হিসেবে জি এম কাদের ও মহাসচিব হিসেবে এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারের নিয়োগকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। যদিও বৈঠক শেষে দলের কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, জাতীয় পার্টিতে এরশাদ আমাদের পিতার মতো। রওশন আমাদের মাতার মতো। উনি (রওশন এরশাদ) অফিসিয়াল কাজে ব্যস্ত থাকায় আজকের বৈঠকে আসতে পারেননি।
গতকাল এরশাদের বনানীর রাজনৈতিক কার্যালয় রজনীগন্ধায় বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য রওশন এরশাদের অনুপস্থিতিতেই পার্টির প্রেসিডিয়ামের বৈঠকে দলের কো-চেয়ারম্যান ও মহাসচিব পদে নতুন নিয়োগ অনুমোদন দেয়া হয়েছে। একই সাথে বৈঠকে আগামী ১৬ এপ্রিল জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন পরিচালনার জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে একটি কমিটি এবং জেলা পর্যায় কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বৈঠকে পার্টির চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সভাপতিত্ব করেন।
এ দিকে জাতীয় পার্টির এরশাদপন্থী অংশের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যরা বৈঠক করে মন্ত্রিসভা থেকে বেরিয়ে আসার বিষয়ে একমত হয়েছেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন পার্টির কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের। তিনি বলেছেন, বৈঠকে উপস্থিত সবাই রাজনীতির স্বার্থে সরকার থেকে বেরিয়ে আসাটা অত্যন্ত জরুরি বলে মত দিয়েছেন। চেয়ারম্যানের (এরশাদ) নির্দেশনা অনুযায়ী পরে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে। পার্টির ৪০ জনের বেশি প্রেসিডিয়াম সদস্যের মধ্যে পার্টি চেয়ারম্যান এরশাদসহ তার সমর্থক ২১ জন প্রেসিডিয়াম সদস্য এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদসহ অন্যরা বৈঠকে যোগ দেননি।
এরশাদ ছাড়াও বৈঠকে পার্টির কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের, মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার এমপি, এম এ সাত্তার, আবুল কাশেম, গোলাম হাবিব দুলাল, আলহাজ সাহিদুর রহমান ট্যাপা, অ্যাডভোকেট শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, অধ্যাপিকা মাসুদা এম রশিদ চৌধুরী, সৈয়দ মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা, হাবিবুর রহমান, সুনীল শুভ রায়, এস এম ফয়সল চিশতী, মীর আব্দুস সবুর আসুদ, মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, আজম খান, এ টি ইউ তাজ রহমান ও সোলায়মান আলম শেঠ উপস্থিত ছিলেন।
অপর দিকে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না রওশন ছাড়াও পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, সম্প্রতি মহাসচিবের পদ থেকে ছিটকে পড়া জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু এমপি, কাজী ফিরোজ রশিদ, শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা, বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী ও ফখরুল ইমামসহ কয়েকজন প্রেসিডিয়াম সদস্য।
গতকাল দুপুর পৌনে ১২টায় শুরু হয়ে বৈঠক চলে আড়াইটা পর্যন্ত। প্রায় ৩ ঘণ্টা চলা এই বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সামনে আসেননি পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ। তার পরিবর্তে সাংবাদিকদের সামনে আসেন তার ভাই ও দলের কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টিতে এরশাদ আমাদের পিতার মতো। রওশন আমাদের মাতার মতো। উনি (রওশন এরশাদ) অফিসিয়াল কাজে ব্যস্ত থাকায় আজকের বৈঠকে আসতে পারেননি। দলের মন্ত্রীদের মন্ত্রিত্ব ছাড়ার বিষয়ে জি এম কাদের বলেন, প্রেসিডিয়ামের সদস্যদের সবাই প্রকৃত বিরোধীদলের ভূমিকা নিতে মন্ত্রিত্ব ছাড়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন পার্টির চেয়ারম্যান।
পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, আজকের সভায় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নিয়োগকৃত জাপার কো-চেয়ারম্যান পদে জি এম কাদের ও মহাসচিব পদে আমার নিয়োগকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, দেশের উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার জন্য আমরা পার্লামেন্টে ও পার্লামেন্টের বাইরে ভূমিকা রাখতে চাই। এ জন্য জাতীয় পার্টিকে তৃণমূল থেকে সংগঠিত করার উদ্যোগ নেয়া হবে। ১৬ এপ্রিল দলের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে এক মাসের মধ্যে ৪০ জেলার কাউন্সিল সম্পন্ন করা হবে।
উল্লেখ্য, রওশনপন্থীদের বিরোধিতার মধ্যেই সম্প্রতি এরশাদ নিজের ভাই জি এম কাদেরকে পার্টির কো-চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেন, মহাসচিব পদে ফিরিয়ে আনেন দীর্ঘদিনের আস্থাভাজন রুহুল আমিন হাওলাদারকে। যদিও এ নিয়োগকে কেন্দ্র করে দলে নতুন করে বিদ্রোহের মুখে পড়েন এরশাদ। এর আগে বিভিন্ন সময়ে জাতীয় পার্টির সদস্যদের মন্ত্রিসভা থেকে বেরিয়ে আসার বিষয়টি আলোচনায় এলেও জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের আপত্তির কারণে তা ধোপে টেকেনি। এ নিয়ে দলে বিদ্রোহের মধ্যেও এরশাদ বলেন, তিনি তার সিদ্ধান্তে মৃত্যু পর্যন্ত অটল থাকবেন। আর গত ২৬ জানুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে সাবেক মন্ত্রী জি এম কাদের বলেন, জাতীয় পার্টির অবস্থান জনগণের কাছে অস্পষ্ট। কারণ জাতীয় পার্টি একদিকে বিরোধী দল, আবার অন্য দিকে সরকারের মন্ত্রিসভায় আছে। তাই দলের অবস্থান জনগণের কাছে স্পষ্ট করতেই আমাদের সরকার থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তবে সেটি প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনা করেই। অন্য দিকে দশম সংসদের দুই বছর পূর্তির আগের দিন প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠক করে রওশন সাফ জানিয়ে দেন, তারা সরকারেই থাকছেন।
বিয়ের দাওয়াতেও আলাদা এরশাদ-রওশন : এ দিকে দলের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহিম ও দলের সংসদ সদস্য মেহজাবীন মোরশেদ দম্পতির ছেলের বিয়েতে যোগ দিতে আলাদাভাবে চট্টগ্রাম যান পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ ও তার স্ত্রী বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ। শুক্রবার সকাল ও বিকেলে পৃথক বিমানে তারা চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছেন। আলাদা ফাইটে এলেও দু’জনকেই বিমানবন্দরে স্বাগত জানান চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালি আসনের সংসদ সদস্য ও দলের মহাসচিব পদ থেকে সরিয়ে দেয়া জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু।
এরশাদ ও রওশনকে বিমানবন্দর থেকে নগরীর পাঁচতারকা র্যাডিসন ব্লুু হোটেলে নিয়ে আসেন দলের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহিম এবং নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইয়াকুব। রাতে এই হোটেলেই মুরাদ ও মেহজাবীন দম্পতির ছেলে সামির সিকান্দরের বিয়ের অনুষ্ঠান হয়। এতে পানিসম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় হুইপ তাজুল ইসলাম ও জিয়াউদ্দিন বাবলুও যোগ দেন। একই হোটেলে এরশাদ-রওশন পাশাপাশি কে অবস্থান করলেও তাদের মধ্যে কোনো কথা হয়নি বলে জানান স্থানীয় নেতারা।
সরকারি ‘সুবিধায়’ জাতীয় পার্টি সুসংগঠিত হবে : চুন্নু
অপর দিকে মন্ত্রিসভায় থাকার পে যুক্তি দেখিয়ে জাতীয় পার্টির অপর প্রেসিডিয়াম সদস্য ও শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, সরকারি সুবিধায় দলকে সুসংগঠিত করার সুযোগ পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, আমরা সরকারি যে সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছি, তাতে দলকে সুসংগঠিত করা সম্ভব হচ্ছে। মন্ত্রিসভা ছাড়ার কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কি নাÑ জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, জাতীয় পার্টি এখনও মন্ত্রিসভা থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে দলের প্রেসিডিয়াম ও সংসদীয় বোর্ড যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে, আমরা তা মেনে নেবো। তবে আপাতত এ ধরনের কোনো সম্ভাবনা নেই বলেও জানান। তিনি বলেন, প্রকৃত বিরোধী দল বলতে যদি বোঝায় সংসদে গিয়ে মারামারি করা, সরকারকে গালাগালি করা, লাগাতার সংসদ বর্জন করাÑ তবে এ ধরনের বিরোধী দল আমরা হতে চাই না। আমরা চাই, সংসদে ভালো পরিবেশ বজায় থাকবে, সরকার ভালো করলে আমরা সহযোগিতা করব, আর সরকার যদি জনস্বার্থবিরোধী কাজ করে সে েেত্র আমরা প্রতিবাদ করব। নবম জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, যে বিরোধীদলীয় নেতা পাঁচ বছরের মধ্যে ১০ দিন সংসদে উপস্থিত থাকেন, এরকম বিরোধী দল আমরা হতে চাই না।
No comments