জিয়া ও বিএনপি by ডক্টর এস এম সরোয়ার রহমান
১৯
জানুয়ারি মুক্তিযুদ্ধের মহান ঘোষক শহীদ জিয়ার ৮০তম জন্মবার্ষিকী। ১৯৩৬
সালের এমনই একটি দিনে বগুড়ার গাবতলীর বাগবাড়ীতে যে শিশুটির জন্ম হয়েছিল,
তখন কে জানত এ শিশু বড় হয়ে তার প্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতার ঘোষণা দেবেন,
বাংলাদেশের সফল রাষ্ট্রপতি হবেন? বিশ্ব ইতিহাসে শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ
ঘটনা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ। শহীদ জিয়া বিচ্ছিন্ন প্রতিরোধ যুদ্ধকে রূপদান
করেছিলেন একটি সমন্বিত মুক্তিযুদ্ধে। মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা থেকে শুরু করে
বাংলাদেশী জাতি এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্রের উত্থান ও বিনির্মাণে তিনি কালজয়ী
অবদান রেখে গেছেন। আত্মপরিচয়ের সংজ্ঞা নিয়ে আমরা যখন ছিলাম
কিংকর্তব্যবিমূঢ়, তখন ইতিহাসের যুক্তিসিদ্ধ ও বিজ্ঞানভিত্তিক বিশ্লেষণ নিয়ে
তিনি জাতিকে দিয়েছেন সত্তার এক সুস্পষ্ট পরিচিতি। রাজনৈতিক নেতৃত্বের
দেউলিয়াপনায় সমাজে চলছিল অস্থিরতা, সৃষ্টি হয়েছিল বৈষম্য। সামন্ত সমাজের
নকল নবাবীর পরিণতিতে আমরা দেখেছি একদলীয় শাসন, দুর্নীতি ও দুঃশাসন। জিয়াউর
রহমান বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে সম্প্রসারণবাদ ও
আধিপত্যবাদবিরোধী লড়াইয়ে বটবৃক্ষের মতো বৃহৎ রাষ্ট্রের পাশে তালতরুর মতো
শির উঁচু করে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি গঠন করেছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল
বিএনপি। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিএনপি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। যখন বিরোধী
দলের ওপর সরকারি দলের দমন-নির্যাতন শুরু হয় তখন মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে
আদর্শবিহীন সুযোগসন্ধানীরা।
বাংলাদেশে গণতন্ত্র, ভোটের অধিকার ও মানবাধিকার ভূলুণ্ঠিত, আইনশৃঙ্খলা বিপর্যস্ত, জাতীয় জীবনে সততা ও ন্যায়নিষ্ঠা নির্বাসিত। এই পরিপ্রেক্ষিতে জিয়ার সৈনিকদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে। প্রতিরোধ করতে হবে সুযোগসন্ধানীদের। জনগণকে সাথে নিয়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে জিয়াউর রহমান রাজনীতিকে গ্রহণ করেছিলেন জীবনধারারূপে। তার কাছে- politics is not a profession or job, it is a way of life. এই দর্শন ও বিশ্বাসই তাকে নিয়ে গিয়েছিল গণমানুষের কাছাকাছি।
শহীদ জিয়ার রাজনৈতিক দর্শন ও কর্মপরিকল্পনাকে সামনে রেখে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনগুলোকে এগিয়ে যেতে হবে। রাষ্ট্রপতি জিয়া বলতেন, ‘আদর্শের ভিত্তিতে সংগঠন গড়ে তুলতে হবে, তা না হলে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা যাবে না। তাই সংগঠনে যারা থাকবেন, তাদেরকে পার্টির আদর্শ অবশ্যই জানতে হবে, বুঝতে হবে এবং সেটা বিশ্বাস করতে হবে এবং সেই বিশ্বাসে উদ্বুদ্ধ হয়ে আদর্শকে বাস্তবায়ন করতে হবে। আমাদেরকে আদর্শের চালনি দিয়ে এখন বেছে নিতে হবে আপনাদেরকে।’ জিয়া রাজনৈতিক ক্লাসে প্রায়ই বলতেন, ‘আমি না থাকতে পারি, প্রেসিডেন্ট কে হলো না হলো তাতে কিছু যায় আসে না এবং আপনি এমপি না থাকলে তাতেই বা কী হলো? কিন্তু এ দেশ এ জাতি থাকবে, চিরদিন থাকবে। এ জন্য চাই সিস্টেম। তাই আমরা পার্টিকে একটা সিস্টেমের মধ্যে দীর্ঘকাল চালাতে চাই।’
শহীদ জিয়ার বক্তব্যকে ধারণ করে সংগঠন গোছানোর সময় এসেছে। সুশিক্ষিত রাজনৈতিক কর্মীবাহিনী ছাড়া সংগঠনিক ও রাজনৈতিকভাবে টিকে থাকা যায় না। বিএনপি একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। সুতরাং তার একটা প্রডাক্ট আছে, আর তা হচ্ছে তার মতবাদ বা আদর্শ। এর গ্রাহক হচ্ছে তার সমর্থক বা ভোটাররা। দল বা প্রতিষ্ঠানের প্রডাক্ট বা মতবাদের গ্রাহক বাড়ানোর চাপ ও প্রত্যাশা আছে। বিএনপির রাজনীতিকে তার সমর্থক ও ভোটারদের মধ্যে দৃঢ়ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠা করতে হলে সৎ, আদর্শবান নেতৃত্ব দিয়ে দলকে সংগঠিত করতে হবে। গতানুগতিক রাজনীতি পরিহার করে একবিংশ শতাব্দীর ছাত্র ও যুবসমাজ, কৃষক-শ্রমিকের চাহিদামাফিক রাজনীতি ও সাংগঠনিক কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করে ব্যাপক জনসচেতনতার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
আজ গণতন্ত্র রক্তাক্ত। সেই গণতন্ত্র বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব নিয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া। জিয়ার প্রদর্শিত পথেই জনগণ বেগম জিয়ার পাশে রয়েছেন। চলমান সঙ্কটে তার সাথে বিদেশ থেকে পাশে দাঁড়িয়েছেন তারেক রহমান। জাতীয় সঙ্কটে গণতান্ত্রিক উত্তরণে তাদের প্রতি অবিচল আস্থা রাখার মধ্য দিয়েই জিয়ার আদর্শের প্রতি প্রকৃত সম্মান প্রদর্শন করতে হবে।
বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী রাজনীতির একটি উজ্জ্বলতম অধ্যায়ের নাম জিয়া। স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে জাতীয় ইতিহাসের এক ক্রান্তিলগ্নে তাকে এ পথে আসতে হয়েছিল। কিন্তু অদৃষ্টের নির্মম পরিহাস, এ জাতি তাকে হারিয়েছে এমন একসময়ে যখন তারই প্রয়োজন ছিল সবচেয়ে বেশি। জিয়া আজো বেঁচে আছেন তার কর্মের মাধ্যমে, গণতন্ত্রের দিশারীরূপে বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় শহীদ জিয়ার সততা, অনন্যসাধারণ বক্তিত্ব ও ন্যায়বোধ জাতির মানসলোকে ধ্রুবতারার মতো ভাস্বর হয়ে আছে, থাকবে চিরদিন।
শহীদ জিয়ার আদর্শকে সামনে রেখে দেশনেত্রী বেগম জিয়া বিএনপিকে সংগঠিত করে বিরাজমান সঙ্কটাবস্থা কাটিয়ে উঠবেন, এ দেশের মানুষ তা বিশ্বাস করে।
শহীদ জিয়ার রৌদ্রকরোজ্জ্বল ইতিহাসের প্রতি অবশ্যই আমার দায়বদ্ধতা থাকতে হবে। বাংলাদেশের ভূরাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এই দূরদর্শী রাষ্ট্রনায়ক যে দর্শন রেখে গেছেন, তা আনাগত দিনগুলোতে নতুন প্রজন্মের পাথেয়।
লেখক : আইনজীবী
sarwarrahman.hr@gmail.com
বাংলাদেশে গণতন্ত্র, ভোটের অধিকার ও মানবাধিকার ভূলুণ্ঠিত, আইনশৃঙ্খলা বিপর্যস্ত, জাতীয় জীবনে সততা ও ন্যায়নিষ্ঠা নির্বাসিত। এই পরিপ্রেক্ষিতে জিয়ার সৈনিকদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে। প্রতিরোধ করতে হবে সুযোগসন্ধানীদের। জনগণকে সাথে নিয়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে জিয়াউর রহমান রাজনীতিকে গ্রহণ করেছিলেন জীবনধারারূপে। তার কাছে- politics is not a profession or job, it is a way of life. এই দর্শন ও বিশ্বাসই তাকে নিয়ে গিয়েছিল গণমানুষের কাছাকাছি।
শহীদ জিয়ার রাজনৈতিক দর্শন ও কর্মপরিকল্পনাকে সামনে রেখে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনগুলোকে এগিয়ে যেতে হবে। রাষ্ট্রপতি জিয়া বলতেন, ‘আদর্শের ভিত্তিতে সংগঠন গড়ে তুলতে হবে, তা না হলে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা যাবে না। তাই সংগঠনে যারা থাকবেন, তাদেরকে পার্টির আদর্শ অবশ্যই জানতে হবে, বুঝতে হবে এবং সেটা বিশ্বাস করতে হবে এবং সেই বিশ্বাসে উদ্বুদ্ধ হয়ে আদর্শকে বাস্তবায়ন করতে হবে। আমাদেরকে আদর্শের চালনি দিয়ে এখন বেছে নিতে হবে আপনাদেরকে।’ জিয়া রাজনৈতিক ক্লাসে প্রায়ই বলতেন, ‘আমি না থাকতে পারি, প্রেসিডেন্ট কে হলো না হলো তাতে কিছু যায় আসে না এবং আপনি এমপি না থাকলে তাতেই বা কী হলো? কিন্তু এ দেশ এ জাতি থাকবে, চিরদিন থাকবে। এ জন্য চাই সিস্টেম। তাই আমরা পার্টিকে একটা সিস্টেমের মধ্যে দীর্ঘকাল চালাতে চাই।’
শহীদ জিয়ার বক্তব্যকে ধারণ করে সংগঠন গোছানোর সময় এসেছে। সুশিক্ষিত রাজনৈতিক কর্মীবাহিনী ছাড়া সংগঠনিক ও রাজনৈতিকভাবে টিকে থাকা যায় না। বিএনপি একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। সুতরাং তার একটা প্রডাক্ট আছে, আর তা হচ্ছে তার মতবাদ বা আদর্শ। এর গ্রাহক হচ্ছে তার সমর্থক বা ভোটাররা। দল বা প্রতিষ্ঠানের প্রডাক্ট বা মতবাদের গ্রাহক বাড়ানোর চাপ ও প্রত্যাশা আছে। বিএনপির রাজনীতিকে তার সমর্থক ও ভোটারদের মধ্যে দৃঢ়ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠা করতে হলে সৎ, আদর্শবান নেতৃত্ব দিয়ে দলকে সংগঠিত করতে হবে। গতানুগতিক রাজনীতি পরিহার করে একবিংশ শতাব্দীর ছাত্র ও যুবসমাজ, কৃষক-শ্রমিকের চাহিদামাফিক রাজনীতি ও সাংগঠনিক কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করে ব্যাপক জনসচেতনতার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
আজ গণতন্ত্র রক্তাক্ত। সেই গণতন্ত্র বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব নিয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া। জিয়ার প্রদর্শিত পথেই জনগণ বেগম জিয়ার পাশে রয়েছেন। চলমান সঙ্কটে তার সাথে বিদেশ থেকে পাশে দাঁড়িয়েছেন তারেক রহমান। জাতীয় সঙ্কটে গণতান্ত্রিক উত্তরণে তাদের প্রতি অবিচল আস্থা রাখার মধ্য দিয়েই জিয়ার আদর্শের প্রতি প্রকৃত সম্মান প্রদর্শন করতে হবে।
বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী রাজনীতির একটি উজ্জ্বলতম অধ্যায়ের নাম জিয়া। স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে জাতীয় ইতিহাসের এক ক্রান্তিলগ্নে তাকে এ পথে আসতে হয়েছিল। কিন্তু অদৃষ্টের নির্মম পরিহাস, এ জাতি তাকে হারিয়েছে এমন একসময়ে যখন তারই প্রয়োজন ছিল সবচেয়ে বেশি। জিয়া আজো বেঁচে আছেন তার কর্মের মাধ্যমে, গণতন্ত্রের দিশারীরূপে বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় শহীদ জিয়ার সততা, অনন্যসাধারণ বক্তিত্ব ও ন্যায়বোধ জাতির মানসলোকে ধ্রুবতারার মতো ভাস্বর হয়ে আছে, থাকবে চিরদিন।
শহীদ জিয়ার আদর্শকে সামনে রেখে দেশনেত্রী বেগম জিয়া বিএনপিকে সংগঠিত করে বিরাজমান সঙ্কটাবস্থা কাটিয়ে উঠবেন, এ দেশের মানুষ তা বিশ্বাস করে।
শহীদ জিয়ার রৌদ্রকরোজ্জ্বল ইতিহাসের প্রতি অবশ্যই আমার দায়বদ্ধতা থাকতে হবে। বাংলাদেশের ভূরাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এই দূরদর্শী রাষ্ট্রনায়ক যে দর্শন রেখে গেছেন, তা আনাগত দিনগুলোতে নতুন প্রজন্মের পাথেয়।
লেখক : আইনজীবী
sarwarrahman.hr@gmail.com
No comments