সদ্যজাত সন্তানকে পাঁচতলা থেকে কেন ফেলে দিলো কিশোরী মা

জন্ম নেয়ার পর নিজ সন্তানকে পাঁচতলা ভবন থেকে নিচে ফেলে দিয়েছে বিউটি আক্তার (১৬) নামে এক কিশোরী গৃহপরিচারিকা। লোক লজ্জার ভয়ে এই কিশোরী মা তার সন্তান ফেলে দিয়েছে বলে সে নিজেই স্বীকার করেছে। নবজাতকটি দ্বিতীয় তলার কার্নিশে আটকে পড়ে প্রাণে বেঁচে যায়। রাজধানীর বেইলি রোডে আজ সোমবার সকালে এ ঘটনা ঘটে। পরে দুপুরে স্থানীয়দের খবরের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ ছেলে শিশু সন্তানটিকে উদ্ধার করে মগবাজারের আদ-দ্বীন হাসপাতালে নিয়ে যায়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিউটি আক্তার জানান, তার পিতার নাম আবু বকর প্রামাণিক। তাদের গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার নওকর গ্রামে। ঢাকায় বেইলি রোডের ২৬ নম্বর প্রোপার্টিজ ম্যানশনের পাঁচতলায় আজমল হক ও ফিরোজা হকের বাসায় নয় বছর ধরে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করেন তিনি। শিশু বয়সে ওই বাসায় আসে বিউটি। ৯-১০ মাস আগে কুমিল্লায় বড় বোন লিপি আক্তারের বাসায় বেড়াতে যান তিনি। সেখানে তার বোনের স্বামী নীরব ঘুমের ওষুধ খাইয়ে তাকে ধর্ষণ করেন। পরে তিনি গর্ভবতী হয়ে পড়েন। কিন্তু এ কথা তিনি কাউকে জানতে দেননি। লোক লজ্জার ভয়ে গৃহকর্ত্রীকেও একথা জানাননি তিনি। এই সময় শারীরিক অনেক কষ্ট হয় তার। সারাক্ষণ তার দুশ্চিন্তায় কাটতো। কি করবেন মাঝেমধ্যে ভেবে পেতেন না। আত্মহননের কথাও মনে আসতো। কি করা উচিত কিছুই বুঝতে পারতেন না। সোমবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বেইলি রোডের ওই বাসাতেই তিনি ছেলে সন্তান প্রসব করেন। প্রসবের সময় কেউ তার কাছে ছিলো না। প্রসবের পর জানাজানির ভয়ে তিনি সন্তানটিকে পাঁচতলার উপর থেকে নিচে ফেলে দেন। তিনি ভেবেছিলেন এভাবেই হয়তো লজ্জার হাত থেকে বাঁচা যাবে।
এদিকে, ছেলে সন্তানটি দ্বিতীয় তলার কার্নিশে আটকে যায়। সেখানে বসে শিশুটি ক্ষীণ কণ্ঠে কান্নাকাটি করছিলো। কান্নার শব্দ শুনতে পেয়ে স্থানীয়রা ছুটে গিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। খবর দেয় পুলিশকে। বিষয়টি নিয়ে এ্যাপার্টমেন্টের লোকজন আলোচনায় বসে। পরে শনাক্ত হয় ওই বাসা থেকে এই ঘটনা ঘটেছে। সেখান থেকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় বিউটিকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়।
পুলিশ জানায়, স্থানীয়দের খবরের পরিপ্রেক্ষিতে সন্তানটিকে উদ্ধার আদ-দ্বীন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। বিউটিকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সেখানে পুলিশ পাহারায় বিউটি ভর্তি আছে।
গৃহকর্তা আজমল হকের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, তারা এ কয়েক মাসে বুঝতেই পারেননি যে বিউটি গর্ভবতী। এমন কোনো ধারণাও তাদের ছিল না। বিউটি স্বাভাবিকভাবেই ঘরের সব কাজকর্ম করে আসছিলো বলে গৃহকর্তা উল্লেখ করেন।

No comments

Powered by Blogger.