কাজী আরেফ হত্যাকাণ্ড- আজ মধ্যরাতেই তিন খুনির ফাঁসি কার্যকর by আ.ফ.ম নুরুল কাদের
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন আসামি |
মহান
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) প্রতিষ্ঠাতা
সভাপতি কাজী আরেফ আহমেদসহ ৫ জাসদ নেতা হত্যা মামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত তিন
আসামীর ফাঁসির রায় আজ রাতেই কার্যকর হচ্ছে। যশোরের পুলিশ সুপার আনিসুর
রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত তিন আসামী আনোয়ার হোসেন, রাশেদুল ইসলাম ঝন্টু ও হাবিবুর রহমান হাবি যশোর কারাগারে কনডেম সেলে বন্দী রয়েছে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আজ বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে আসামীদের ফাঁসি কার্যকর হবে বলে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
যশোরের পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান জানান, তিনিসহ জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জন কারা কর্তৃপক্ষের চিঠি পেয়েছেন। ফাঁসির রায় কার্যকর নির্বিঘ্নে করতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার শাহজাহান আহমেদ জানান, তিনজনের ফাঁসি কার্যকরের সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এক আসামীর পরিবার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, শুক্রবার সকাল ৮টায় জেল গেটে উপস্থিত হয়ে মরদেহ গ্রহণ করতে বলেছে কারা কর্তৃপক্ষ। এদিকে ফাঁসি কার্যকর হবে এমন সংবাদে খুশি নিহতের পরিবার ও জাসদের নেতাকর্মীরা।
১৯৯৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারী কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার আড়িয়া ইউনিয়নের কালিদাসপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে সন্ত্রাসবিরোধী এক জনসভায় জাসদ কেন্দ্রীয় সভাপতি জাতীয় নেতা কাজী আরেফ আহমেদ, জেলা জাসদের সভাপতি লোকমান হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব আলী, স্থানীয় জাসদ নেতা ইসরাইল হোসেন ও শমসের মন্ডল একদল সন্ত্রাসীর গুলিতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন। ঘটনার দিনই পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটি পরদিন সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়। দীর্ঘ তদন্ত শেষে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকান্ডের সাড়ে পাঁচ বছর পর ২০০৪ সালের ৩০ আগষ্ট কুষ্টিয়ার জেলা ও দায়রা জজ আদালত ১০ আসামীর ফাঁসি ও ১২ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ডের রায় দেন। রায়ের বিরুদ্ধে আসামীপক্ষ আপিল করলে ২০০৮ সালের ৫ আগষ্ট হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ নিম্ন আদালতের মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ১০ আসামীর মধ্যে ৯ জনের ফাঁসির আদেশ বহাল রাখেন। অপর আসামী এলাজ উদ্দিন হাইকোর্টে মামলা চলাকালে মৃত্যুবরণ করেন। একই সাথে যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত ১২ আসামীর সাজা মওকুফ করে মহামান্য হাইকোর্ট। এরপর হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে ফাঁসির তিন আসামী রাশেদুল ইসলাম ঝন্টু, আনোয়ার হোসেন ও হাবিবুর রহমান হাবি সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন। ২০১১ সালের ৭ আগস্ট প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে শুনানি শেষে আপিলকারী ফাঁসির ৩ আসামীসহ ৯ জনের সাজা বহাল রাখেন।
মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত হাবিবুর রহমান হাবির বাড়ি মিরপুর উপজেলার মালিহাদ ইউনিয়নের রাজপুর রাজনগর গ্রামে। তার পিতার নাম ইসমাইল হোসেন। হাবিবুর রহমান হাবির ছোট ভাই হাসিবুর রহমান জানান, যশোর জেল কর্তৃপক্ষ আমাদের দেখা করার জন্য চিঠি দিয়েছিল। চিঠি পেলেও আমাদের পরিবারের কেউ দেখা করতে যায়নি। মিরপুর থানা পুলিশের একটি টিম তাদের বাড়িতে এসে আগামী শুক্রবার (৮ জানুয়ারী) সকালে তার ভাইয়ের লাশ গ্রহণ করতে বলেছে। ওই দিন সকালেই আমরা যশোর যাব লাশ আনতে। হাবিবুর রহমানের স্ত্রী জাহানারা জানান, ফাঁসির খবর তারা পেয়েছেন। লাশ এনে এলাকায় দাফন করা হবে। অন্য দুই আসামী আনোয়ার হোসেনের বাড়ি কুর্শা ইউনিয়নের কুর্শা গ্রামে। আর রাশেদুল ইসলাম ঝন্টুর বাড়ি একই ইউনিয়নের কুলপাড়া মল্লিকপুরে।
মামলায় ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত ৫ আসামী পলাতক রয়েছে। তারা হলেন, মান্নান মোল্ল্যা, জালাল ওরফে বাশার, রওশন আলী, বাকের আলী ও জাহান আলী। হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে ৫ জন গা ঢাকা দেন। এর মধ্যে মান্নান মোল্লা, জাহান ও জালাল ভারতে অবস্থান করছে বলে জানা গেছে।
রায় কার্যকর হচ্ছে এমন সংবাদে নিহতের পরিবার ও জেলার বিভিন্ন মহল নানা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। নিহত জাসদ নেতা এয়াকুব আলীর ছেলে ইউসুফ আলী রুশো জানান, আমার পিতাসহ যারা সেদিন নির্মমভাবে হত্যা হয়েছিলো তাদের খুনিদের ফাঁসি কার্যকর হবে জানতে পেরেছি। এ খবরে আমরা খুব খুশি। ফাঁসি কার্যকরের মধ্যদিয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হবে বলে আশা করছি। তবে এ রায় আরো আগে কার্যকর হওয়া উচিৎ ছিলো। কুষ্টিয়া জেলা জাসদের সভাপতি গোলাম মহসিন জানান, একজন নিঃস্বার্থ প্রচার বিমুখ নেতা ছিলেন কাজী আরেফ। সন্ত্রাস ও সম্প্রদায়িকতামুক্ত দেশ গড়ায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিল তাঁর। তাকে যারা হত্যা করেছে তাদের বিরুদ্ধে মহামান্য আদালত কর্তৃক ঘোষিত রায়ে মৃত্যুদন্ডাদেশ কার্যকরের মাধ্যমে সমগ্র দেশবাসী তথা কুষ্টিয়াবাসীরও কলঙ্কের দায়মুক্তি হবে।
মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত তিন আসামী আনোয়ার হোসেন, রাশেদুল ইসলাম ঝন্টু ও হাবিবুর রহমান হাবি যশোর কারাগারে কনডেম সেলে বন্দী রয়েছে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আজ বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে আসামীদের ফাঁসি কার্যকর হবে বলে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
যশোরের পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান জানান, তিনিসহ জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জন কারা কর্তৃপক্ষের চিঠি পেয়েছেন। ফাঁসির রায় কার্যকর নির্বিঘ্নে করতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার শাহজাহান আহমেদ জানান, তিনজনের ফাঁসি কার্যকরের সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এক আসামীর পরিবার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, শুক্রবার সকাল ৮টায় জেল গেটে উপস্থিত হয়ে মরদেহ গ্রহণ করতে বলেছে কারা কর্তৃপক্ষ। এদিকে ফাঁসি কার্যকর হবে এমন সংবাদে খুশি নিহতের পরিবার ও জাসদের নেতাকর্মীরা।
১৯৯৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারী কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার আড়িয়া ইউনিয়নের কালিদাসপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে সন্ত্রাসবিরোধী এক জনসভায় জাসদ কেন্দ্রীয় সভাপতি জাতীয় নেতা কাজী আরেফ আহমেদ, জেলা জাসদের সভাপতি লোকমান হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব আলী, স্থানীয় জাসদ নেতা ইসরাইল হোসেন ও শমসের মন্ডল একদল সন্ত্রাসীর গুলিতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন। ঘটনার দিনই পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটি পরদিন সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়। দীর্ঘ তদন্ত শেষে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকান্ডের সাড়ে পাঁচ বছর পর ২০০৪ সালের ৩০ আগষ্ট কুষ্টিয়ার জেলা ও দায়রা জজ আদালত ১০ আসামীর ফাঁসি ও ১২ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ডের রায় দেন। রায়ের বিরুদ্ধে আসামীপক্ষ আপিল করলে ২০০৮ সালের ৫ আগষ্ট হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ নিম্ন আদালতের মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ১০ আসামীর মধ্যে ৯ জনের ফাঁসির আদেশ বহাল রাখেন। অপর আসামী এলাজ উদ্দিন হাইকোর্টে মামলা চলাকালে মৃত্যুবরণ করেন। একই সাথে যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত ১২ আসামীর সাজা মওকুফ করে মহামান্য হাইকোর্ট। এরপর হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে ফাঁসির তিন আসামী রাশেদুল ইসলাম ঝন্টু, আনোয়ার হোসেন ও হাবিবুর রহমান হাবি সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন। ২০১১ সালের ৭ আগস্ট প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে শুনানি শেষে আপিলকারী ফাঁসির ৩ আসামীসহ ৯ জনের সাজা বহাল রাখেন।
মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত হাবিবুর রহমান হাবির বাড়ি মিরপুর উপজেলার মালিহাদ ইউনিয়নের রাজপুর রাজনগর গ্রামে। তার পিতার নাম ইসমাইল হোসেন। হাবিবুর রহমান হাবির ছোট ভাই হাসিবুর রহমান জানান, যশোর জেল কর্তৃপক্ষ আমাদের দেখা করার জন্য চিঠি দিয়েছিল। চিঠি পেলেও আমাদের পরিবারের কেউ দেখা করতে যায়নি। মিরপুর থানা পুলিশের একটি টিম তাদের বাড়িতে এসে আগামী শুক্রবার (৮ জানুয়ারী) সকালে তার ভাইয়ের লাশ গ্রহণ করতে বলেছে। ওই দিন সকালেই আমরা যশোর যাব লাশ আনতে। হাবিবুর রহমানের স্ত্রী জাহানারা জানান, ফাঁসির খবর তারা পেয়েছেন। লাশ এনে এলাকায় দাফন করা হবে। অন্য দুই আসামী আনোয়ার হোসেনের বাড়ি কুর্শা ইউনিয়নের কুর্শা গ্রামে। আর রাশেদুল ইসলাম ঝন্টুর বাড়ি একই ইউনিয়নের কুলপাড়া মল্লিকপুরে।
মামলায় ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত ৫ আসামী পলাতক রয়েছে। তারা হলেন, মান্নান মোল্ল্যা, জালাল ওরফে বাশার, রওশন আলী, বাকের আলী ও জাহান আলী। হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে ৫ জন গা ঢাকা দেন। এর মধ্যে মান্নান মোল্লা, জাহান ও জালাল ভারতে অবস্থান করছে বলে জানা গেছে।
রায় কার্যকর হচ্ছে এমন সংবাদে নিহতের পরিবার ও জেলার বিভিন্ন মহল নানা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। নিহত জাসদ নেতা এয়াকুব আলীর ছেলে ইউসুফ আলী রুশো জানান, আমার পিতাসহ যারা সেদিন নির্মমভাবে হত্যা হয়েছিলো তাদের খুনিদের ফাঁসি কার্যকর হবে জানতে পেরেছি। এ খবরে আমরা খুব খুশি। ফাঁসি কার্যকরের মধ্যদিয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হবে বলে আশা করছি। তবে এ রায় আরো আগে কার্যকর হওয়া উচিৎ ছিলো। কুষ্টিয়া জেলা জাসদের সভাপতি গোলাম মহসিন জানান, একজন নিঃস্বার্থ প্রচার বিমুখ নেতা ছিলেন কাজী আরেফ। সন্ত্রাস ও সম্প্রদায়িকতামুক্ত দেশ গড়ায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিল তাঁর। তাকে যারা হত্যা করেছে তাদের বিরুদ্ধে মহামান্য আদালত কর্তৃক ঘোষিত রায়ে মৃত্যুদন্ডাদেশ কার্যকরের মাধ্যমে সমগ্র দেশবাসী তথা কুষ্টিয়াবাসীরও কলঙ্কের দায়মুক্তি হবে।
কাজী আরেফসহ নিহত ৫ জাসদ নেতা |
হত্যাকান্ডের পরিকল্পনাকারীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে
জাতীয় নেতা কাজী আরেফসহ ৫ জাসদ নেতা খুনের ঘটনায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িতরা বিচারের আওতায় আসলেও ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারীরা আজও ধরা ছোঁয়ার বাইরে। তাদের চিহ্নিত করতে পারেনি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা। জেলা জাসদের সভাপতি গোলাম মহসিন বলেন, কাজী আরেফ হত্যাকান্ড কোন সাধারণ হত্যাকান্ড ছিল না। গভীর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তাকে হত্যা করা হয়। কাজী আরেফ একজন দুরদর্শী রাজনীতিবিদ ছিলেন। তাকে হত্যার মধ্যদিয়ে একটি চেতনাকে ধবংস করা হয়। তাই এ ঘটনার পিছনে থেকে যারা কলকাঠি নেড়েছেন, অর্থ দিয়ে সন্ত্রাসীদের সহযোগিতা করেছেন তাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হোক এটা আমাদের চাওয়া। পরিকল্পনাকারী ও অর্থ সরবরাহকারী হিসেবে তৎকালিন বিএনপি নেতা হাবলু মোল্লার নাম এসেছিল। পরবর্তিতে বিএনপি জোট সরকারের সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তাদের নাম বাদ দেয়া হয়। এদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার জোর দাবি জানানান তিনি।
সে দিন যা ঘটেছিল
সেদিন ১৯৯৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারী। জনসভা পরিচালনাকারী হত্যাকান্ডের প্রত্যক্ষদর্শী আমলা সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি কারশেদ আলম স্মৃতিচারণ করে বলেন, তখন বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে ৫টা। আরেফ ভাই বক্তব্য শুরু করেন। বক্তব্য দুই থেকে তিন মিনিট দেয়ার পর হামলা শুরু হয়। জনসভা মঞ্চের পূর্ব পাশ থেকে এসে গুলি চালানো হয়। হামলায় ৯ জন অংশ নেয়। সবার হাতে ছিল ভারী অস্ত্র। তৎকালিন কুষ্টিয়া জেলা জাসদ সভাপতি লোকমান হোসেনকে উদ্দেশ্য করে প্রথম গুলি চালায় তারা। পরে জেলা জাসদের সাধারন সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইয়াকুব আলীও গুলিবিদ্ধ হন। এ সময় কাজী আরেফ আহমেদ সন্ত্রাসীদের নিবৃত করার চেষ্টা করেন। সন্ত্রাসীরা ওই সময় কাজী আরেফকে মঞ্চ থেকে নেমে আসার জন্য বারবার অনুরোধ করেন। এক পর্যায়ে কাজী আরেফকে প্রচন্ড গালমন্দ করেন তারা। কাজী আরেফ খুনিদের অনুরাধ করে বলেন, তোমরা আমাকে মার। কোথায় যেতে হবে বল আমি যাচ্ছি। কিন্তু অন্যদের মেরো না। পরে সন্ত্রাসীরা কাজী আরেফকে লক্ষ্য করে ব্রাশফায়ার করে। তিনটি বুলেট লাগে তার শরীরে। মঞ্চের ওপর পড়ে যান তিনি। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পরে এ মামলার অন্যতম স্বাক্ষী হন কারশেদ আলম। রায় কার্যকর হতে যাচ্ছে জেনে তিনিও আনন্দিত। তিনি বলেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বছরের পর বছর ধরে আদালতের বারান্দায় ঘুরে শেষ পর্যন্ত আদালতের রায় কার্যকর হচ্ছে জেনে ভাল লাগছে। বছরের পর বছর অপেক্ষা করেছিলাম এ রকম একটি দিনের জন্য। আমি দেখেছি কি নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিলো তাদের। এই হত্যাকারীদের ফাঁসির রায় কার্যকরের মধ্য দিয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হবে। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতিফলন ঘটতে কাজী আরেফ আহমেদ তার জীবদ্দশায় শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত যে লড়াই করে গেছেন। মৃত্যুর পর তার রেখে যাওয়া সেই একই আদর্শ ও চেতনা লালন করতে নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়েও এতটুকু বিচ্যুত হননি পরিবারের সদস্যরা। যে আদর্শিক চেতনায় তিনি একটা সন্ত্রাসমুক্ত দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখার অপরাধে সন্ত্রাসীদের নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিলেন। সর্বশেষ এই রায় কার্যকরের মধ্যদিয়ে সন্ত্রাসমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা পাবে এমনই প্রত্যাশা পরিবারের।
মুক্তিযুদ্ধে কাজী আরেফের অবদান
কাজী আরেফ আহমেদ মূলত একজন জনদরদী, আত্মমর্যাদাশীল, নির্লোভ মানুষ। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের প্রশ্নে তিনি ছিলেন একরোখা ও জেদি। আইয়ুবের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনই কাজী আরেফ আহমেদকে রাজনৈতিক কর্মী করে গড়ে তোলে। ১৯৬২ এর নভেম্বর এ সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমেদ বাংলাদেশে স্বাধীন করার সিদ্ধান্তে এক মতে পৌঁছান। এটাই ৬২ এর নিউক্লিয়াস নামে পরিচিত। যার নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ নামে যুদ্ধের লক্ষ্যে একটি গোপন সংগঠন গড়ে উঠেছিলো। সারা দেশব্যাপী এ সংগঠনের তৎপরতা ছিলো। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৬ দফা কর্মসূচি ঘোষিত হলে, ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগ সভাপতি হিসেবে কাজী আরেফ আহমেদ প্রথম সমর্থন জানিয়ে বিবৃতি দেন। বাংলাদেশের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি হিসেবে ১৯৭০ সালে গঠিত ‘জয় বাংলা বাহিনীর’ অন্যতম সংগঠকও ছিলেন তিনি। কাজী আরেফ আহমেদ স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রতীক জাতীয় পতাকার অন্যতম রূপকার। দীর্ঘদিন ধরে লালিত স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নসাধ ১৯৭১ সালের সশস্ত্র মুক্তি সংগ্রামের মাধ্যমে বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু হয়, তার সূচনালগ্নে কাজী আরেফ আহমেদ বাংলাদেশ লিবারেশন ফ্রন্ট’র অন্যতম নেতার ভূমিকা পালন করেন। এই বাহিনীর নেতা হিসেবে তিনি মুক্তিযুদ্ধে পশ্চিম রণাঙ্গনের (বৃহত্তর পাবনা, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, খুলনা ও বরিশাল ) নেতৃত্ব দেন।
জাতীয় নেতা কাজী আরেফসহ ৫ জাসদ নেতা খুনের ঘটনায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িতরা বিচারের আওতায় আসলেও ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারীরা আজও ধরা ছোঁয়ার বাইরে। তাদের চিহ্নিত করতে পারেনি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা। জেলা জাসদের সভাপতি গোলাম মহসিন বলেন, কাজী আরেফ হত্যাকান্ড কোন সাধারণ হত্যাকান্ড ছিল না। গভীর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তাকে হত্যা করা হয়। কাজী আরেফ একজন দুরদর্শী রাজনীতিবিদ ছিলেন। তাকে হত্যার মধ্যদিয়ে একটি চেতনাকে ধবংস করা হয়। তাই এ ঘটনার পিছনে থেকে যারা কলকাঠি নেড়েছেন, অর্থ দিয়ে সন্ত্রাসীদের সহযোগিতা করেছেন তাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হোক এটা আমাদের চাওয়া। পরিকল্পনাকারী ও অর্থ সরবরাহকারী হিসেবে তৎকালিন বিএনপি নেতা হাবলু মোল্লার নাম এসেছিল। পরবর্তিতে বিএনপি জোট সরকারের সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তাদের নাম বাদ দেয়া হয়। এদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার জোর দাবি জানানান তিনি।
সে দিন যা ঘটেছিল
সেদিন ১৯৯৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারী। জনসভা পরিচালনাকারী হত্যাকান্ডের প্রত্যক্ষদর্শী আমলা সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি কারশেদ আলম স্মৃতিচারণ করে বলেন, তখন বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে ৫টা। আরেফ ভাই বক্তব্য শুরু করেন। বক্তব্য দুই থেকে তিন মিনিট দেয়ার পর হামলা শুরু হয়। জনসভা মঞ্চের পূর্ব পাশ থেকে এসে গুলি চালানো হয়। হামলায় ৯ জন অংশ নেয়। সবার হাতে ছিল ভারী অস্ত্র। তৎকালিন কুষ্টিয়া জেলা জাসদ সভাপতি লোকমান হোসেনকে উদ্দেশ্য করে প্রথম গুলি চালায় তারা। পরে জেলা জাসদের সাধারন সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইয়াকুব আলীও গুলিবিদ্ধ হন। এ সময় কাজী আরেফ আহমেদ সন্ত্রাসীদের নিবৃত করার চেষ্টা করেন। সন্ত্রাসীরা ওই সময় কাজী আরেফকে মঞ্চ থেকে নেমে আসার জন্য বারবার অনুরোধ করেন। এক পর্যায়ে কাজী আরেফকে প্রচন্ড গালমন্দ করেন তারা। কাজী আরেফ খুনিদের অনুরাধ করে বলেন, তোমরা আমাকে মার। কোথায় যেতে হবে বল আমি যাচ্ছি। কিন্তু অন্যদের মেরো না। পরে সন্ত্রাসীরা কাজী আরেফকে লক্ষ্য করে ব্রাশফায়ার করে। তিনটি বুলেট লাগে তার শরীরে। মঞ্চের ওপর পড়ে যান তিনি। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পরে এ মামলার অন্যতম স্বাক্ষী হন কারশেদ আলম। রায় কার্যকর হতে যাচ্ছে জেনে তিনিও আনন্দিত। তিনি বলেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বছরের পর বছর ধরে আদালতের বারান্দায় ঘুরে শেষ পর্যন্ত আদালতের রায় কার্যকর হচ্ছে জেনে ভাল লাগছে। বছরের পর বছর অপেক্ষা করেছিলাম এ রকম একটি দিনের জন্য। আমি দেখেছি কি নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিলো তাদের। এই হত্যাকারীদের ফাঁসির রায় কার্যকরের মধ্য দিয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হবে। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতিফলন ঘটতে কাজী আরেফ আহমেদ তার জীবদ্দশায় শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত যে লড়াই করে গেছেন। মৃত্যুর পর তার রেখে যাওয়া সেই একই আদর্শ ও চেতনা লালন করতে নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়েও এতটুকু বিচ্যুত হননি পরিবারের সদস্যরা। যে আদর্শিক চেতনায় তিনি একটা সন্ত্রাসমুক্ত দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখার অপরাধে সন্ত্রাসীদের নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিলেন। সর্বশেষ এই রায় কার্যকরের মধ্যদিয়ে সন্ত্রাসমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা পাবে এমনই প্রত্যাশা পরিবারের।
মুক্তিযুদ্ধে কাজী আরেফের অবদান
কাজী আরেফ আহমেদ মূলত একজন জনদরদী, আত্মমর্যাদাশীল, নির্লোভ মানুষ। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের প্রশ্নে তিনি ছিলেন একরোখা ও জেদি। আইয়ুবের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনই কাজী আরেফ আহমেদকে রাজনৈতিক কর্মী করে গড়ে তোলে। ১৯৬২ এর নভেম্বর এ সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমেদ বাংলাদেশে স্বাধীন করার সিদ্ধান্তে এক মতে পৌঁছান। এটাই ৬২ এর নিউক্লিয়াস নামে পরিচিত। যার নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ নামে যুদ্ধের লক্ষ্যে একটি গোপন সংগঠন গড়ে উঠেছিলো। সারা দেশব্যাপী এ সংগঠনের তৎপরতা ছিলো। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৬ দফা কর্মসূচি ঘোষিত হলে, ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগ সভাপতি হিসেবে কাজী আরেফ আহমেদ প্রথম সমর্থন জানিয়ে বিবৃতি দেন। বাংলাদেশের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি হিসেবে ১৯৭০ সালে গঠিত ‘জয় বাংলা বাহিনীর’ অন্যতম সংগঠকও ছিলেন তিনি। কাজী আরেফ আহমেদ স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রতীক জাতীয় পতাকার অন্যতম রূপকার। দীর্ঘদিন ধরে লালিত স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নসাধ ১৯৭১ সালের সশস্ত্র মুক্তি সংগ্রামের মাধ্যমে বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু হয়, তার সূচনালগ্নে কাজী আরেফ আহমেদ বাংলাদেশ লিবারেশন ফ্রন্ট’র অন্যতম নেতার ভূমিকা পালন করেন। এই বাহিনীর নেতা হিসেবে তিনি মুক্তিযুদ্ধে পশ্চিম রণাঙ্গনের (বৃহত্তর পাবনা, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, খুলনা ও বরিশাল ) নেতৃত্ব দেন।
No comments