সীমান্তে মাইক বাজিয়ে উত্তরকে উসকে দিচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া
উত্তর কোরিয়াকে উসকে দিতে কোরীয় সীমান্তে ফের লাউডস্পিকারে মাইক বাজাচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া। বুধবার উত্তর কোরিয়া প্রথমবারের মতো হাইড্রোজেন বোমার সফল পরীক্ষা চালানোর দাবির প্রতিক্রিয়ায় এ পদক্ষেপ নিয়েছে তারা। শুক্রবার বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়া ওইদিন দুপুরে তাদের মাইকগুলো উত্তর কোরিয়ার দিকে ঘুরিয়ে দেয়। এসব মাইকে অতি লাউডস্পিকারে কোরিয়ার পপসংগীত, খবর ও আবহাওয়ার প্রতিবেদন এবং উত্তরের নেতাদের বিরুদ্ধে নানা সমালোচনা করা হচ্ছে। কোরীয় সীমান্তের ১১টি স্থানে এ ধরনের লাউডস্পিকার বসানো হয়েছে বলে ওই খবরে জানা গেছে। উত্তর কোরিয়া এখনও পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেনি। এদিকে দক্ষিণের এ পদক্ষেপে উত্তর ক্ষুব্ধ হতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ উত্তর কোরিয়া এর আগে লাউডস্পিকারগুলো বন্ধ করতে শক্তি প্রয়োগের হুমকিও দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ১৯৫৩ সালে দক্ষিণ ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে যুদ্ধের অবসান হলেও যুদ্ধাবস্থানের অবসান ঘটেনি। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা কো তায়ে-ইয়ং বলেন, উত্তর কোরিয়ার হাইড্রোজেন বোমার পরীক্ষার দাবি কোরীয় চুক্তির গুরুতর লংঘন।
তিনি আরও বলেন, যেসব স্থানে লাউডস্পিকার বাজানো হচ্ছে সেসব এলাকায় সতর্ক অবস্থান বাড়িয়ে দিয়েছে সামরিক বাহিনী। এদিকে উত্তরের উদ্ভূত এ পরিস্থিতিতে দক্ষিণ কোরিয়াকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বিট্রেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ড। জাপান সফরকালে সিউলের (দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী) উদ্দেশে তিনি বলেন, ফের লাউডস্পিকার চালু করায় উত্তেজনা বাড়বে। প্রচারণার ক্ষেত্রে সিউলের এ কৌশল পিয়ংইয়ংয়ের (উত্তর কোরিয়ার রাজধানী) জন্য বিরক্তির কারণ। এর আগে গতবছরের আগস্টে কোরীয় সীমান্তে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে দক্ষিণ কোরিয়ার দুই সেনা গুরুতর আহত হলে প্রচারণা শুরু করে সিউল। এতে দু’দেশের ক্ষিপ্রতায় দুই কোরিয়ার সীমান্তবর্তী ‘যুদ্ধবিরতি গ্রাম’ পানমুনজামে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের মাধ্যমে এ পরিস্থিতির অবসান ঘটে। যদিও ২০০৪ সালে এক দ্বিপাক্ষিক চুক্তি সম্পাদিত হওয়ার পর সীমান্তে এ ধরনের প্রচারণা বন্ধ করে কোরীয় উপদ্বীপের দুই দেশ। এছাড়া ২০১০ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার একটি রণতরী ডুবে গেলে উত্তর কোরিয়াকে অভিযুক্ত করে সীমান্তে প্রচারণা চালানোর হুমকি দেয় সিউল। এ উদ্দেশ্যে দুই কোরিয়ার মধ্যবর্তী সীমান্তেও লাউডস্পিকার বসানো হয়। উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে চীনকে অবশ্যই বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে : কেরি চীনকে অবশ্যই উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে চলমান গতানুগতিক বাণিজ্য বন্ধ করেতে হবে। কারণ চীনের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্কের কোনো মূল্য দিল না উত্তর কোরিয়া। বৃহস্পতিবার চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াংইয়ের সঙ্গে টেলিফোনে আলাপের পর শুক্রবার এক বিবৃতিতে এমন কথা বলেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়ার। উত্তর কোরিয়ার হাইড্রোজেন বোমার বিস্ফোরণের পর থেকে শুরু হয়েছে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে নানা গুঞ্জন।
কিন্তু কূটনৈতিক মহলে বেশ চাপে পড়েছে চীন। কারণ তাদের সঙ্গেই বহুদিনের সম্পর্ক উত্তর কোরিয়ার। এখন চীন কী করবে তার দিকেই তাকিয়ে রয়েছে বিশ্ব। আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে বারবার নিষেধাজ্ঞা জর্জরিত উত্তর কোরিয়া বরাবরই চীনকে পাশে পেয়েছে। চীনের সাহায্য ছাড়া উত্তর কোরিয়ায় কিম বংশের এই শাসন কার্যত অস্তিত্বের সংকটে পড়ে যেত। নানা সময়ে নানা হুমকি দিয়ে, অস্ত্র পরীক্ষা করে বিশ্বের চক্ষুশূল হয়েছে উত্তর কোরিয়া। নিষেধাজ্ঞার বহর ক্রমেই পড়েছে। কিন্তু চীনের স্নেহের হাত কখনও সরে যায়নি। সবকিছু থেকেই নানাভাবে মধ্যস্থতা করে উত্তর কোরিয়াকে আগলে রেখেছে চীন। এবার হয়তো সত্যিই উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে হিমশিম খাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কেরি ও ওয়াংয়ের ফোনালাপে তার কিছুটা উপলব্ধি করা যায়। কেরি বলেন, উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক অবসান করার আহ্বান জানালে তিনি ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। অন্যদিকে ওয়াং বলেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের সব জোটের সঙ্গে মতৈক্যে পৌঁছতে বেইজিং বরাবরই প্রস্তুত। এদিকে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মুখপাত্র হুয়া চুংয়ি বলেন, কোরিয়া দ্বীপরাষ্ট্রে শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে বেইজিং সর্বদাই চেষ্টা করবে আর এজন্য প্রয়োজন সব দলের যৌথ সমর্থন।
No comments