প্রধানমন্ত্রীর দ্বারস্থ ইসি- পৌরসভা নির্বাচন ২০১৫: আচরণবিধি লঙ্ঘন by হারুন আল রশীদ
আচরণবিধি
লঙ্ঘনসহ নির্বাচনী অনাচার বন্ধে প্রধানমন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েছে নির্বাচন
কমিশন (ইসি)। সরকারি দলের মন্ত্রী-সাংসদদের বিরুদ্ধে বিধি ভঙ্গের অব্যাহত
অভিযোগের প্রেক্ষাপটে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বিষয়টি দেখার জন্য
প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।
নির্বাচনী বিধিবিধান প্রয়োগের ক্ষেত্রেও নির্বাচন কমিশন যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, তার বেশির ভাগ সরকারি দলের প্রার্থীদের পক্ষে যাচ্ছে। সর্বশেষ মেয়র ও কাউন্সিলর পদের শতাধিক প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ বলে হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছেন, তার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। এই প্রার্থীদের বেশির ভাগ বিএনপি ও আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’।
কমিশন মাঠপর্যায়ে যেসব তদন্ত চালাচ্ছে, তার ফলও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও বিএনপির মনোনীত প্রার্থীদের বিপক্ষে যাচ্ছে। কমিশন এ পর্যন্ত ১৯টি ঘটনার ব্যাখ্যা জানতে চেয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের চিঠি দিয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি চিঠির জবাব এসেছে। তাতে প্রতিটি ক্ষেত্রে অভিযোগ অসার বলে রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রতিবেদন দিয়েছেন। কেবল সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার ক্ষেত্রে কমিশন রিটার্নিং কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে। অনিয়ম প্রশ্রয় দেওয়ায় এই কর্মকর্তাকে শাস্তি দিলেও অনিয়মের সুবিধাভোগী সরকারদলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
বন্দুক প্রধানমন্ত্রীর ঘাড়ে: নির্বাচন পরিচালনার সর্বময় ক্ষমতা থাকলেও কমিশন তা প্রয়োগ করছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে মন্ত্রী-সাংসদসহ সরকারি সুবিধাভোগীদের আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে নির্বাচন কমিশন সহজাত ক্ষমতাকে কাজে লাগাচ্ছে না। এ অবস্থায় গতকাল রোববার কমিশন সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে কমিশনার শাহনেওয়াজ সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘যাঁরা সরকারে আছেন, তাঁরা অন্যদের চেয়ে বেশি দায়িত্বশীল আচরণ করবেন, এটা আমাদের প্রত্যাশা। যাঁরা সরকারি সুবিধা ভোগ করছেন, তাঁদের প্রতি অনুরোধ, তাঁরা যেন কমিশনকে সহযোগিতা করেন। কারণ, এই নির্বাচনের সঙ্গে সরকারের ভাবমূর্তির প্রশ্ন জড়িত। তাঁদের প্রতি অনুরোধ থাকবে, আপনারা এমন কোনো আচরণ করবেন না, যাতে কমিশনকে অপ্রস্তুত হয়ে পড়তে হয়। তাঁরা যেন কমিশনকে এমন কোনো ব্যবস্থা নিতে বাধ্য না করেন, যাতে তাঁরাও অপ্রস্তুত হন। সরকারপ্রধানের প্রতি অনুরোধ থাকবে, আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়টি তিনি যেন দেখেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার নির্বাচন বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করার দায়িত্ব কমিশনের। একজন কমিশনার এ ধরনের কথা বললে ধরে নিতে হয়, সরকারের মন্ত্রী-সাংসদেরা আচরণবিধি মানছেন না। কমিশনও তাঁদের সামাল দিতে পারছে না। কিন্তু সামাল দেওয়ার জন্য যথেষ্ট আইন আছে। সেটা তারা প্রয়োগ করছে না কেন?
আপিলের সিদ্ধান্ত: কমিশন সচিবালয়ের তথ্যানুযায়ী, ২৩৪টি পৌরসভায় বাছাইয়ে মেয়র পদে ১৫৭ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। তাঁদের মধ্যে বিএনপির ১৬ জন প্রার্থী আছেন। তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি আছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। বাকিরা অন্যান্য দলের।
অভিযোগ আছে, সরকারি দলের প্রার্থীদের চাপে নিয়মবহির্ভূতভাবে ফেনী, চাঁদপুর, সিলেট, শরীয়তপুর, কুমিল্লাসহ কয়েকটি জেলায় প্রতিপক্ষ প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া কাউন্সিলর পদে ৫৮১ এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১৫৯ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়।
কমিশন সচিবালয় থেকে জানা যায়, মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া দেড় শতাধিক প্রার্থী হাইকোর্টে গিয়ে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন। এর মধ্যে সাত-আটজন মেয়র প্রার্থী আছেন। ভোটের আট দিন আগে এখন কমিশন এ বিষয়ে আপিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, কমিশন মনে করে, রিটার্নিং কর্মকর্তা বা আপিল কর্তৃপক্ষ যৌক্তিক কারণেই প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাতিল করেছিল।
কমিশন সচিবালয় সূত্র জানায়, গতকালের বৈঠকে দুজন কমিশনার হাইকোর্টের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল না করার পক্ষে মত দেন। তিনজন কমিশনার আপিলের পক্ষে মত দিলে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন।
হাইকোর্টের রায়ে মনোনয়নপত্র বৈধ হওয়া মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন চাঁদপুরের ছেংগারচরে বিএনপির সারোয়ারুল আবেদীন, বগুড়ার সারিয়াকন্দিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আবদুল হামিদ সরদার ও আবদুর রশিদ ফরাজী, শরীয়তপুরে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রফিকুল ইসলাম, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বিএনপির গোলাম মো. রাব্বানী, লাকসামে জাতীয় পার্টির মোখলেসুর রহমান, হোমনায় স্বতন্ত্র প্রার্থী জহিরুল হক, সিলেটের গোলাপগঞ্জে বিএনপির গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী প্রমুখ।
কমিশনের পদক্ষেপে সুবিধা সরকারি দলের: সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার রিটার্নিং কর্মকর্তা (জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা) আবুল হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে নির্বাচন কমিশন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আমিনুল ইসলামের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণার ক্ষেত্রে অনিয়ম করেছেন। আমিনুল উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান। আইন অনুযায়ী পৌরসভায় নির্বাচন করতে হলে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগে উপজেলা থেকে পদত্যাগ করতে হবে। কিন্তু তিনি তা না করেই পৌর মেয়র পদে মনোনয়নপত্র জমা দেন।
কমিশন এই অপরাধে আবুল হোসেনকে বরখাস্ত করলেও আমিনুলের প্রার্থিতার বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেন, এ বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ না করায় কমিশন ব্যবস্থা নিতে পারছে না। কেউ সংক্ষুব্ধ হলে তিনি আদালতে যেতে পারেন।
কিন্তু কমিশন সচিবালয়ের নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের মতে, নির্বাচনে কেউ অবৈধ সুযোগ গ্রহণ করলে তাঁর প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা কমিশনের আছে। নির্বাচন পরিচালনাবিধির ৯০ ধারায় বলা আছে, লিখিত অভিযোগ বা অন্য কোনো উৎস থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কমিশন বিষয়টি তাৎক্ষণিক তদন্তের নির্দেশ দিতে পারবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে কমিশন ওই প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করতে পারবে।
এ বিষয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, একই ঘটনায় দুই রকম সিদ্ধান্ত হতে পারে না। রিটার্নিং কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া মানে এখানে অনিয়ম হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা কমিশনের আছে।
আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ ও রিটার্নিং কর্মকর্তাদের প্রতিবেদন: স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমান, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, জাতীয় সংসদের হুইপ আতিউর রহমান, সাংসদ এনামুল হক, হাসিবুর রহমানসহ আরও অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেও শেষ পর্যন্ত অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না বলে দাবি করছেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা।
ময়মনসিংহের ফুলপুরে হাসানুল হক ইনু ও মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠলে রিটার্নিং কর্মকর্তা কমিশনে পাঠানো প্রতিবেদনে বলেছেন, দুই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি। তাঁরা সমাবেশে বক্তব্য দিলেও ভোট চাননি। তবে তিনি সরকারদলীয় প্রার্থী শশধর সেনকে সতর্ক করে দিয়েছেন।
চাঁদপুরের ছেংগারচর পৌরসভার রিটার্নিং কর্মকর্তা (উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা) মফিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি বিএনপির প্রার্থী সারোয়ারুল আবেদীনের মনোনয়নপত্র থেকে শিক্ষাসনদ ছিঁড়ে ফেলে দিয়ে তা অবৈধ ঘোষণা করেন। এ বিষয়ে কমিশনের চিঠির জবাবে গতকাল রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেছেন, বিএনপির প্রার্থী মনোনয়নপত্রের সঙ্গে সর্বোচ্চ শিক্ষার সনদ ও আয়কর-সম্পর্কিত দলিলাদি সংযুক্ত করেননি। সার্বিক মন্তব্যে তিনি বলেছেন, সারোয়ারুল আবেদীনের বক্তব্য শুধু মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন, মনগড়া ও দায়িত্বজ্ঞানহীনই নয়, বরং মানহানিকর ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
ইতিমধ্যে হাইকোর্টের নির্দেশে সারোয়ারুল আবেদীন তাঁর প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন। গতকাল তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ক্ষমতাসীন দলের লোকজন তাঁকে এলাকায় ঢুকতে দিচ্ছেন না।
সারোয়ারুল আবেদীনের প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ার বিরুদ্ধে আপিল করেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী রফিকুল আলম।
নির্বাচনী বিধিবিধান প্রয়োগের ক্ষেত্রেও নির্বাচন কমিশন যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, তার বেশির ভাগ সরকারি দলের প্রার্থীদের পক্ষে যাচ্ছে। সর্বশেষ মেয়র ও কাউন্সিলর পদের শতাধিক প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ বলে হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছেন, তার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। এই প্রার্থীদের বেশির ভাগ বিএনপি ও আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’।
কমিশন মাঠপর্যায়ে যেসব তদন্ত চালাচ্ছে, তার ফলও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও বিএনপির মনোনীত প্রার্থীদের বিপক্ষে যাচ্ছে। কমিশন এ পর্যন্ত ১৯টি ঘটনার ব্যাখ্যা জানতে চেয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের চিঠি দিয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি চিঠির জবাব এসেছে। তাতে প্রতিটি ক্ষেত্রে অভিযোগ অসার বলে রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রতিবেদন দিয়েছেন। কেবল সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার ক্ষেত্রে কমিশন রিটার্নিং কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে। অনিয়ম প্রশ্রয় দেওয়ায় এই কর্মকর্তাকে শাস্তি দিলেও অনিয়মের সুবিধাভোগী সরকারদলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
বন্দুক প্রধানমন্ত্রীর ঘাড়ে: নির্বাচন পরিচালনার সর্বময় ক্ষমতা থাকলেও কমিশন তা প্রয়োগ করছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে মন্ত্রী-সাংসদসহ সরকারি সুবিধাভোগীদের আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে নির্বাচন কমিশন সহজাত ক্ষমতাকে কাজে লাগাচ্ছে না। এ অবস্থায় গতকাল রোববার কমিশন সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে কমিশনার শাহনেওয়াজ সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘যাঁরা সরকারে আছেন, তাঁরা অন্যদের চেয়ে বেশি দায়িত্বশীল আচরণ করবেন, এটা আমাদের প্রত্যাশা। যাঁরা সরকারি সুবিধা ভোগ করছেন, তাঁদের প্রতি অনুরোধ, তাঁরা যেন কমিশনকে সহযোগিতা করেন। কারণ, এই নির্বাচনের সঙ্গে সরকারের ভাবমূর্তির প্রশ্ন জড়িত। তাঁদের প্রতি অনুরোধ থাকবে, আপনারা এমন কোনো আচরণ করবেন না, যাতে কমিশনকে অপ্রস্তুত হয়ে পড়তে হয়। তাঁরা যেন কমিশনকে এমন কোনো ব্যবস্থা নিতে বাধ্য না করেন, যাতে তাঁরাও অপ্রস্তুত হন। সরকারপ্রধানের প্রতি অনুরোধ থাকবে, আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়টি তিনি যেন দেখেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার নির্বাচন বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করার দায়িত্ব কমিশনের। একজন কমিশনার এ ধরনের কথা বললে ধরে নিতে হয়, সরকারের মন্ত্রী-সাংসদেরা আচরণবিধি মানছেন না। কমিশনও তাঁদের সামাল দিতে পারছে না। কিন্তু সামাল দেওয়ার জন্য যথেষ্ট আইন আছে। সেটা তারা প্রয়োগ করছে না কেন?
আপিলের সিদ্ধান্ত: কমিশন সচিবালয়ের তথ্যানুযায়ী, ২৩৪টি পৌরসভায় বাছাইয়ে মেয়র পদে ১৫৭ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। তাঁদের মধ্যে বিএনপির ১৬ জন প্রার্থী আছেন। তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি আছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। বাকিরা অন্যান্য দলের।
অভিযোগ আছে, সরকারি দলের প্রার্থীদের চাপে নিয়মবহির্ভূতভাবে ফেনী, চাঁদপুর, সিলেট, শরীয়তপুর, কুমিল্লাসহ কয়েকটি জেলায় প্রতিপক্ষ প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া কাউন্সিলর পদে ৫৮১ এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১৫৯ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়।
কমিশন সচিবালয় থেকে জানা যায়, মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া দেড় শতাধিক প্রার্থী হাইকোর্টে গিয়ে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন। এর মধ্যে সাত-আটজন মেয়র প্রার্থী আছেন। ভোটের আট দিন আগে এখন কমিশন এ বিষয়ে আপিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, কমিশন মনে করে, রিটার্নিং কর্মকর্তা বা আপিল কর্তৃপক্ষ যৌক্তিক কারণেই প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাতিল করেছিল।
কমিশন সচিবালয় সূত্র জানায়, গতকালের বৈঠকে দুজন কমিশনার হাইকোর্টের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল না করার পক্ষে মত দেন। তিনজন কমিশনার আপিলের পক্ষে মত দিলে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন।
হাইকোর্টের রায়ে মনোনয়নপত্র বৈধ হওয়া মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন চাঁদপুরের ছেংগারচরে বিএনপির সারোয়ারুল আবেদীন, বগুড়ার সারিয়াকন্দিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আবদুল হামিদ সরদার ও আবদুর রশিদ ফরাজী, শরীয়তপুরে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রফিকুল ইসলাম, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বিএনপির গোলাম মো. রাব্বানী, লাকসামে জাতীয় পার্টির মোখলেসুর রহমান, হোমনায় স্বতন্ত্র প্রার্থী জহিরুল হক, সিলেটের গোলাপগঞ্জে বিএনপির গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী প্রমুখ।
কমিশনের পদক্ষেপে সুবিধা সরকারি দলের: সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার রিটার্নিং কর্মকর্তা (জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা) আবুল হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে নির্বাচন কমিশন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আমিনুল ইসলামের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণার ক্ষেত্রে অনিয়ম করেছেন। আমিনুল উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান। আইন অনুযায়ী পৌরসভায় নির্বাচন করতে হলে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগে উপজেলা থেকে পদত্যাগ করতে হবে। কিন্তু তিনি তা না করেই পৌর মেয়র পদে মনোনয়নপত্র জমা দেন।
কমিশন এই অপরাধে আবুল হোসেনকে বরখাস্ত করলেও আমিনুলের প্রার্থিতার বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেন, এ বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ না করায় কমিশন ব্যবস্থা নিতে পারছে না। কেউ সংক্ষুব্ধ হলে তিনি আদালতে যেতে পারেন।
কিন্তু কমিশন সচিবালয়ের নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের মতে, নির্বাচনে কেউ অবৈধ সুযোগ গ্রহণ করলে তাঁর প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা কমিশনের আছে। নির্বাচন পরিচালনাবিধির ৯০ ধারায় বলা আছে, লিখিত অভিযোগ বা অন্য কোনো উৎস থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কমিশন বিষয়টি তাৎক্ষণিক তদন্তের নির্দেশ দিতে পারবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে কমিশন ওই প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করতে পারবে।
এ বিষয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, একই ঘটনায় দুই রকম সিদ্ধান্ত হতে পারে না। রিটার্নিং কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া মানে এখানে অনিয়ম হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা কমিশনের আছে।
আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ ও রিটার্নিং কর্মকর্তাদের প্রতিবেদন: স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমান, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, জাতীয় সংসদের হুইপ আতিউর রহমান, সাংসদ এনামুল হক, হাসিবুর রহমানসহ আরও অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেও শেষ পর্যন্ত অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না বলে দাবি করছেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা।
ময়মনসিংহের ফুলপুরে হাসানুল হক ইনু ও মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠলে রিটার্নিং কর্মকর্তা কমিশনে পাঠানো প্রতিবেদনে বলেছেন, দুই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি। তাঁরা সমাবেশে বক্তব্য দিলেও ভোট চাননি। তবে তিনি সরকারদলীয় প্রার্থী শশধর সেনকে সতর্ক করে দিয়েছেন।
চাঁদপুরের ছেংগারচর পৌরসভার রিটার্নিং কর্মকর্তা (উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা) মফিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি বিএনপির প্রার্থী সারোয়ারুল আবেদীনের মনোনয়নপত্র থেকে শিক্ষাসনদ ছিঁড়ে ফেলে দিয়ে তা অবৈধ ঘোষণা করেন। এ বিষয়ে কমিশনের চিঠির জবাবে গতকাল রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেছেন, বিএনপির প্রার্থী মনোনয়নপত্রের সঙ্গে সর্বোচ্চ শিক্ষার সনদ ও আয়কর-সম্পর্কিত দলিলাদি সংযুক্ত করেননি। সার্বিক মন্তব্যে তিনি বলেছেন, সারোয়ারুল আবেদীনের বক্তব্য শুধু মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন, মনগড়া ও দায়িত্বজ্ঞানহীনই নয়, বরং মানহানিকর ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
ইতিমধ্যে হাইকোর্টের নির্দেশে সারোয়ারুল আবেদীন তাঁর প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন। গতকাল তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ক্ষমতাসীন দলের লোকজন তাঁকে এলাকায় ঢুকতে দিচ্ছেন না।
সারোয়ারুল আবেদীনের প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ার বিরুদ্ধে আপিল করেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী রফিকুল আলম।
No comments