সংখ্যালঘুরা রাজনীতির ‘দাবার ঘুঁটি’
বাংলাদেশের ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুরা রাজনীতির মাঠে ‘দাবার ঘুঁটি’ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছেন বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাসগুপ্ত। তিনি আরও বলেছেন, বাংলাদেশের ভিন্ন ধর্মাবলম্বী সংখ্যালঘুরা প্রতিনিয়তই রাষ্ট্রীয় নিগ্রহের স্বীকার হচ্ছেন। যে কারণে অব্যাহত সীমাহীন বঞ্চনা, বৈষম্য ও নিপীড়নের কারণে ধর্মীয় এবং জাতিগত সংখ্যালঘুরা হারিয়ে যাচ্ছেন না, তাদের হারিয়ে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে। রোববার মানবজমিনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি।
রানা দাসগুপ্ত বলেন, সম্প্রতি দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় মন্দির, রাসমেলা ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ব্যক্তিদের ওপর হামলার ঘটনাকে ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু এভাবে এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চরম ব্যর্থতার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। রাষ্ট্রের প্রয়োজনে রাষ্ট্রকেই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এসব ঘটনার বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। মন্দির ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, একেকটি ঘটনা ঘটে আর বলা হয় এটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। আবার এখন বলছে এগুলো জেএমবির কাজ। এতে প্রমাণিত হয় এসব ঘটনা ঘটার আগের এবং পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলা করার মতো প্রস্তুতি সরকার বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ছিল না। এসব ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। দেশের সবার স্বার্থেই এসব ঘটনার যথাযথ তদন্ত করে দোষীদের বিচারের ব্যবস্থা করা উচিত। তিনি বলেন, দেশে আইএস আছে কি নেই, এ বিতর্ক অর্থহীন। তবে, আমি মনে করি বাংলাদেশে আইএস না থাকলেও আইএস ও আল-কায়েদা প্রভাবিত বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন রয়েছে। তারা এখনও সক্রিয় রয়েছে।
রানা দাস গুপ্ত বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে সীমাহীন আত্মত্যাগ করেছে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। সে সময় দেশে যত গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে তার প্রায় সব গণহত্যার ভুক্তভোগী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, স্বাধীনতাযুদ্ধে এত ত্যাগ স্বীকার করার পরেও স্বাধীনতার পরে বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক দলের রাজনীতির দাবার ঘুঁটি হিসেবে তারা ব্যবহৃত হচ্ছেন। এই দীর্ঘ সময়েও তাদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের ৪৪ বছর পরে দেশের ধর্মীয় জাতিগত সম্প্রদায় ও সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী সীমাহীন বঞ্চনা, বৈষম্য ও নিপীড়নের স্বীকার হয়ে তাদের দেশত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর প্রায় তিন দশক প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী ক্ষমতায় থেকেছে। জিয়াউর রহমান জামায়াতসহ প্রতিক্রিয়াশীল ধর্মান্ধ গোষ্ঠীকে রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছেন। তখন থেকেই তথাকথিত ভারত বিরোধিতার নামে সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার, নির্যাতন রীতিমতো নিয়মিতভাবেই হয়ে আসছে। ১৯৯২ সালে ভারতে বাবরি মসজিদ নিয়ে সৃষ্ট দাঙ্গার পরিপ্রেক্ষিতেও বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের নিপীড়ন করাসহ তাদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলা করা হয়েছে। ২০০১ সালের বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর সংখ্যালঘুরা চরম নির্যাতনের মুখে পড়েন। এমনি যুদ্ধাপরাধের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে দেয়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের আগে ও পরে দেশের বিভিন্ন স্থানে এ অত্যাচার, নির্যাতনের ধারা অব্যাহত থেকেছে। দুঃখজনক হলেও সত্য মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও এ ধারা অব্যাহত আছে।
বিদ্যমান রাজনৈতিক-সামাজিক বাস্তবতায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় দেশত্যাগে বাধ্য হচ্ছে উল্লেখ করে ঐক্য পরিষদের এ শীর্ষ নেতা বলেন, ১৯৪৭-এ দেশ ভাগের সময় পূর্ব পাকিস্তানে সংখ্যালঘুর হার ছিল ২৯.৭ ভাগ। একাত্তরের প্রাক্কালে এ হার ছিল শতকরা ২০ ভাগের বেশি। বাংলাদেশ পপুলেশন স্ট্যাটিস্টিক্যালি ব্যুরোর হিসাবে নিঃসরণ হতে হতে বর্তমানের এ সময়ে তা ৯.৭ ভাগে নেমে এসেছে। অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর হার ৯৮.৬ থেকে বর্তমানে তা ৪৮ ভাগে নেমে এসেছে। অর্থাৎ নিজ ভূমিতেও তারা সংখ্যাগুরু থেকে সংখ্যালঘুতে নেমে এসেছে।
তিনি বলেন, উপমহাদেশীয় রাজনীতিতে ‘দেশত্যাগ’ বিষয়টি বড় ফ্যাক্টর হিসেবে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত হচ্ছে বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের স্বার্থ, অধিকার, নিরাপত্তা সর্বোপরি অস্তিত্ব নিশ্চিত করার ওপর নির্ভর করছে এ অঞ্চলের শান্তি, অগ্রগতি, গণতন্ত্র, সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা। তাই সংখ্যালঘু নিঃসরণের মাধ্যমে বৈচিত্র্যের সংস্কৃতি যদি হারিয়ে যায় তাহলে ভবিষ্যতে আমরা কোন বাংলাদেশের চিত্র দেখবো? এ বাংলাদেশ হবে পাকিস্তান, আফগানিস্তানের মতো। তিনি বলেন, সংখ্যালঘুদের হারিয়ে যাওয়া মানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও প্রগতিশীল রাজনীতির চেতনা হারিয়ে যাওয়া। শুধু সরকার নয়, সবাইকে এ বিষয়টি অনুধাবন করতে হবে। পাশাপাশি এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন মহলের সমালোচনা প্রসঙ্গে ঐক্য পরিষদের এ নেতা বলেন, মুখে বললেও আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই মনে মনে অসাম্প্রদায়িকতা, ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শিক চেতনা ধারণ করেন না। এসব ধারণ করার নামে তাদের অনেকেই ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধার করার চেষ্টা করে। আওয়ামী লীগ সব ধর্ম বর্ণের মানুষ নিয়ে রাজনীতি করতে চাইলেও আওয়ামী লীগের মধ্যে কিছু আওয়ামী লীগার আছে যারা মনে করেন, হিন্দুরা দেশে থাকলে ভোটটা আমার। আর চলে গেলে জমিটা আমার। অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াত মনে করে হিন্দুরা দেশ ত্যাগ করলে ধর্মও বাঁচবে, দেশও বাঁচবে। তারা ধর্মের ভিত্তিতে রাজনীতি করতে চায়। তাদের মূল লক্ষ্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের দেশ থেকে তাড়িয়ে দেয়া। এই হলো রাজনৈতিক সুবিধাবাদীদের দৃষ্টিভঙ্গি। তবে, ধর্মীয় সংখ্যালঘুর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতা ও সদিচ্ছার কোনো কমতি নেই। তিনি নিজেও সুবিধাবাদীদের ‘পরগাছা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। আমার মতে, সরকারি দলের যেসব নেতা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জায়গা, জমি দখল করেছেন তাদের দল থেকে বহিষ্কার করে এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান দৃশ্যমান করা উচিত।
তিনি আরও বলেন, ওলামা লীগ নামের একটি সংগঠন আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন হিসেবে নিজেদের দাবি করে। কিন্তু একজন বিচারপতি নিয়োগ নিয়ে তারা সাম্প্রদায়িক মন্তব্য করেছে। কিন্তু এ বিষয়ে বিএনপি, জামায়াত, হেফাজতও কোনো মন্তব্য করেনি। তাহলে এরা কারা? মূলত এরাই আগাছা। সরকারের নাম ভাঙিয়ে এরা সরকারেরই বিরোধিতা করছে। আমার মনে হয় এরা খন্দকার মোশতাকের প্রেতাত্মা। তাই এদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের আরও সচেতন হওয়া উচিত।
১৯৪৯ সালে চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন রানা দাসগুপ্ত। ১৯৬২ সালে অষ্টম শ্রেণিতে পড়াকালীন আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে অংশ নেয়াসহ বঙ্গবন্ধু ঘোষিত ছয় দফার পক্ষে জনমত গঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখেন তিনি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭২ সালে পদার্থবিদ্যায় স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করার পাশাপাশি চট্টগ্রাম আইন কলেজ থেকে এলএলবি পাস করে ১৯৮৬ সালে আইন পেশায় নিযুক্ত হন রানা দাসগুপ্ত। বর্তমানে তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
রানা দাসগুপ্ত বলেন, সম্প্রতি দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় মন্দির, রাসমেলা ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ব্যক্তিদের ওপর হামলার ঘটনাকে ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু এভাবে এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চরম ব্যর্থতার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। রাষ্ট্রের প্রয়োজনে রাষ্ট্রকেই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এসব ঘটনার বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। মন্দির ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, একেকটি ঘটনা ঘটে আর বলা হয় এটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। আবার এখন বলছে এগুলো জেএমবির কাজ। এতে প্রমাণিত হয় এসব ঘটনা ঘটার আগের এবং পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলা করার মতো প্রস্তুতি সরকার বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ছিল না। এসব ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। দেশের সবার স্বার্থেই এসব ঘটনার যথাযথ তদন্ত করে দোষীদের বিচারের ব্যবস্থা করা উচিত। তিনি বলেন, দেশে আইএস আছে কি নেই, এ বিতর্ক অর্থহীন। তবে, আমি মনে করি বাংলাদেশে আইএস না থাকলেও আইএস ও আল-কায়েদা প্রভাবিত বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন রয়েছে। তারা এখনও সক্রিয় রয়েছে।
রানা দাস গুপ্ত বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে সীমাহীন আত্মত্যাগ করেছে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। সে সময় দেশে যত গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে তার প্রায় সব গণহত্যার ভুক্তভোগী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, স্বাধীনতাযুদ্ধে এত ত্যাগ স্বীকার করার পরেও স্বাধীনতার পরে বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক দলের রাজনীতির দাবার ঘুঁটি হিসেবে তারা ব্যবহৃত হচ্ছেন। এই দীর্ঘ সময়েও তাদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের ৪৪ বছর পরে দেশের ধর্মীয় জাতিগত সম্প্রদায় ও সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী সীমাহীন বঞ্চনা, বৈষম্য ও নিপীড়নের স্বীকার হয়ে তাদের দেশত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর প্রায় তিন দশক প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী ক্ষমতায় থেকেছে। জিয়াউর রহমান জামায়াতসহ প্রতিক্রিয়াশীল ধর্মান্ধ গোষ্ঠীকে রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছেন। তখন থেকেই তথাকথিত ভারত বিরোধিতার নামে সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার, নির্যাতন রীতিমতো নিয়মিতভাবেই হয়ে আসছে। ১৯৯২ সালে ভারতে বাবরি মসজিদ নিয়ে সৃষ্ট দাঙ্গার পরিপ্রেক্ষিতেও বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের নিপীড়ন করাসহ তাদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলা করা হয়েছে। ২০০১ সালের বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর সংখ্যালঘুরা চরম নির্যাতনের মুখে পড়েন। এমনি যুদ্ধাপরাধের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে দেয়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের আগে ও পরে দেশের বিভিন্ন স্থানে এ অত্যাচার, নির্যাতনের ধারা অব্যাহত থেকেছে। দুঃখজনক হলেও সত্য মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও এ ধারা অব্যাহত আছে।
বিদ্যমান রাজনৈতিক-সামাজিক বাস্তবতায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় দেশত্যাগে বাধ্য হচ্ছে উল্লেখ করে ঐক্য পরিষদের এ শীর্ষ নেতা বলেন, ১৯৪৭-এ দেশ ভাগের সময় পূর্ব পাকিস্তানে সংখ্যালঘুর হার ছিল ২৯.৭ ভাগ। একাত্তরের প্রাক্কালে এ হার ছিল শতকরা ২০ ভাগের বেশি। বাংলাদেশ পপুলেশন স্ট্যাটিস্টিক্যালি ব্যুরোর হিসাবে নিঃসরণ হতে হতে বর্তমানের এ সময়ে তা ৯.৭ ভাগে নেমে এসেছে। অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর হার ৯৮.৬ থেকে বর্তমানে তা ৪৮ ভাগে নেমে এসেছে। অর্থাৎ নিজ ভূমিতেও তারা সংখ্যাগুরু থেকে সংখ্যালঘুতে নেমে এসেছে।
তিনি বলেন, উপমহাদেশীয় রাজনীতিতে ‘দেশত্যাগ’ বিষয়টি বড় ফ্যাক্টর হিসেবে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত হচ্ছে বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের স্বার্থ, অধিকার, নিরাপত্তা সর্বোপরি অস্তিত্ব নিশ্চিত করার ওপর নির্ভর করছে এ অঞ্চলের শান্তি, অগ্রগতি, গণতন্ত্র, সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা। তাই সংখ্যালঘু নিঃসরণের মাধ্যমে বৈচিত্র্যের সংস্কৃতি যদি হারিয়ে যায় তাহলে ভবিষ্যতে আমরা কোন বাংলাদেশের চিত্র দেখবো? এ বাংলাদেশ হবে পাকিস্তান, আফগানিস্তানের মতো। তিনি বলেন, সংখ্যালঘুদের হারিয়ে যাওয়া মানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও প্রগতিশীল রাজনীতির চেতনা হারিয়ে যাওয়া। শুধু সরকার নয়, সবাইকে এ বিষয়টি অনুধাবন করতে হবে। পাশাপাশি এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন মহলের সমালোচনা প্রসঙ্গে ঐক্য পরিষদের এ নেতা বলেন, মুখে বললেও আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই মনে মনে অসাম্প্রদায়িকতা, ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শিক চেতনা ধারণ করেন না। এসব ধারণ করার নামে তাদের অনেকেই ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধার করার চেষ্টা করে। আওয়ামী লীগ সব ধর্ম বর্ণের মানুষ নিয়ে রাজনীতি করতে চাইলেও আওয়ামী লীগের মধ্যে কিছু আওয়ামী লীগার আছে যারা মনে করেন, হিন্দুরা দেশে থাকলে ভোটটা আমার। আর চলে গেলে জমিটা আমার। অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াত মনে করে হিন্দুরা দেশ ত্যাগ করলে ধর্মও বাঁচবে, দেশও বাঁচবে। তারা ধর্মের ভিত্তিতে রাজনীতি করতে চায়। তাদের মূল লক্ষ্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের দেশ থেকে তাড়িয়ে দেয়া। এই হলো রাজনৈতিক সুবিধাবাদীদের দৃষ্টিভঙ্গি। তবে, ধর্মীয় সংখ্যালঘুর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতা ও সদিচ্ছার কোনো কমতি নেই। তিনি নিজেও সুবিধাবাদীদের ‘পরগাছা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। আমার মতে, সরকারি দলের যেসব নেতা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জায়গা, জমি দখল করেছেন তাদের দল থেকে বহিষ্কার করে এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান দৃশ্যমান করা উচিত।
তিনি আরও বলেন, ওলামা লীগ নামের একটি সংগঠন আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন হিসেবে নিজেদের দাবি করে। কিন্তু একজন বিচারপতি নিয়োগ নিয়ে তারা সাম্প্রদায়িক মন্তব্য করেছে। কিন্তু এ বিষয়ে বিএনপি, জামায়াত, হেফাজতও কোনো মন্তব্য করেনি। তাহলে এরা কারা? মূলত এরাই আগাছা। সরকারের নাম ভাঙিয়ে এরা সরকারেরই বিরোধিতা করছে। আমার মনে হয় এরা খন্দকার মোশতাকের প্রেতাত্মা। তাই এদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের আরও সচেতন হওয়া উচিত।
১৯৪৯ সালে চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন রানা দাসগুপ্ত। ১৯৬২ সালে অষ্টম শ্রেণিতে পড়াকালীন আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে অংশ নেয়াসহ বঙ্গবন্ধু ঘোষিত ছয় দফার পক্ষে জনমত গঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখেন তিনি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭২ সালে পদার্থবিদ্যায় স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করার পাশাপাশি চট্টগ্রাম আইন কলেজ থেকে এলএলবি পাস করে ১৯৮৬ সালে আইন পেশায় নিযুক্ত হন রানা দাসগুপ্ত। বর্তমানে তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
No comments