সংঘর্ষ, হামলা, গুলি সড়ক অবরোধ, আগুন
পৌরসভা নির্বাচনকে ঘিরে বাড়ছে সংঘাতের ঘটনা। সময় যত ঘনিয়ে আসছে তত বাড়ছে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে গুলি বিনিময়ের ঘটনাও ঘটছে। এমন অবস্থায় অসহায় হয়ে পড়েছে স্থানীয় নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা। হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় সরকারি দল বা সরকারি দলের বিদ্রোহী প্রার্থীরা জড়িত থাকায় স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকেও জোরালো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না বলে প্রার্থীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল দেশের বেশ কয়েকটি স্থানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। হামলা চালানো হয়েছে প্রার্থী ও দলীয় নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে। যানবাহন ও দোকানপাটে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। আওয়ামী লীগ সমর্থিত ও বিদ্রোহী প্রার্থী কর্মীদের মধ্যে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে সংঘর্ষের ঘটনায় প্রায় দুই ঘণ্টা ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক বন্ধ থাকে। এতে দুর্ভোগে পড়েন হাজারো যাত্রী। একই দিনে সাভারে বিএনপির প্রার্থীর বাড়িতে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কর্মীদের হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। দুই প্রার্থীর কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে জামালপুরের সরিষাবাড়িতে। সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে শরীয়তপুর সদরে। এ ছাড়া নরসিংদীতে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বৈঠকে ককটেল হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় প্রার্থীদের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করা হয়েছে।
স্টাফ রিপোর্টার, সাভার থেকে জানান, সাভার পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী বদিউজ্জামান বদিরের বাড়িতে গতকাল বিকালে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর সমর্থকরা হামলা, ভাঙচুর ও গুলি ছুড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে বিএনপির মেয়র প্রার্থীর ছোট ভাইসহ ১০ জন আহত হয়েছেন। তবে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী হাজী আবদুল গণির বড় ছেলে কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা ফারুক হাসান তুহিন। এদিকে ঘটনার পর পর বদিরের বাড়িতে র্যাব ও পুলিশ উপস্থিত হয়। বিএনপির মেয়র প্রার্থী ছাত্রদলের ঢাকা বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বদিউজ্জামান বদি বলেন, নাশকতার তিনটি মামলায় উচ্চ আদালতে জামিন নিয়ে সাভার পৌরসভা নির্বাচনে ব্যাংক কলোনি এলাকায় প্রচারণা শুরু করি। গতকাল বিকাল আনুমানিক সাড়ে ৪টার দিকে ব্যাংক কলোনি মহল্লার নিজের বাসায় দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় চলছিল। তখন হঠাৎ করে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর লোকজন অতর্কিতে হামলা করে। কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে চেয়ার টেবিল, বাড়ি ঘর ও দুটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে পালিয়ে যাওয়ার সময় বাইরে থেকে ইট-পাটকেল ছুড়ে। হামলায় তার ছোট ভাই মাসুদ, কর্মী আফজাল, সোহেল, হোসেনসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। তবে তাদের কোথায় চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে তা তিনি বলতে পারেননি। তিনি আরও জানান, হামলার বিষয়টি নির্বাচন কর্মকর্তা ও থানা পুলিশকে অবহিত করা হয়েছে। বদি আরও জানায়, হামলাকারীদের মধ্যে তিনি আওয়ামী লীগ মেয়র প্রার্থী হাজী আবদুল গণির ছেলে ফারুক হাসান তুহিনকে চিনতে পেরেছেন। তবে হামলাকারী অন্য কাউকে তিনি চিনতে পারেননি। ঢাকা জেলার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) রাসেল শেখ বলেন, বিএনপি প্রার্থীর বাড়িতে হামলার ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও তিনি জানান। এদিকে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সহকারী রিটার্নিং অফিসার মোহাম্মদ মমিন মিয়া বলেন, বিএনপির মেয়র প্রার্থী বদিউজ্জামান বদিরের বাড়িতে হামলা ও গুলির ঘটনার অভিযোগ শোনার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়ার কথাও বলে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা। তবে আওয়ামী লীগ মেয়র প্রার্থীর ছেলে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক হাসান তুহিন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমরা হামলা চালাইনি। আমাদের লোকজন ক্যানভাস করতে করতে ওই স্থান দিয়ে যাওয়ার সময় বিএনপির প্রার্থী বদিরের বহিরাগত লোকজন আমাদের লোকজনের ওপর হামলা চালিয়েছে। এতে ছাত্রলীগের পৌর শাখার সভাপতি অভিসহ ৫-৬ জন আহত হয়েছে। তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে। গুলি ছুড়ার বিষয়ে তুহিন বলেন, গুলিও বিএনপির প্রার্থীর বহিরাগত লোকজনই ছুড়েছে।
চৌদ্দগ্রামে সংঘর্ষ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও যানবাহনে ভাঙচুর, আগুন
স্টাফ রিপোর্টার, কুমিল্লা থেকে জানান, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম পৌরসভা নির্বাচনে দুই মেয়র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ, ধাওয়া-পালটা ধাওয়া, গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও যানবাহনে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। সংঘর্ষে পুলিশের এসআই মো. হোসাইন, কনস্টেবল মনির হোসেনসহ উভয় প্রার্থীর অন্তত অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। গতকাল বিকাল সোয়া ৪টার দিকে চৌদ্দগ্রাম বাজারে আওয়ামী লীগ দলীয় মেয়র প্রার্থী বর্তমান মেয়র মিজানুর রহমান ও দলের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী ইমাম হোসেন পাটোয়ারী এনামের কর্মী সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অতিরিক্ত পুলিশের পাশাপাশি ঘটনাস্থলে বিজিবি ও র্যাব সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। জানা যায়, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী ইমাম হোসেন পাটোয়ারী এনামের সমর্থকরা বিকালে চৌদ্দগ্রাম বাজারে মিছিল বের করে। এ সময় আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মিজানুর রহমানের সমর্থনে আলকরা ইউপি চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেন বাচ্চু কর্মীদের নিয়ে গণসংযোগ শেষে ফেরার পথে চৌদ্দগ্রাম বাজারে উভয় পক্ষ মুখোমুখি হয়। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে প্রথমে বাগবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে ফাঁকা গুলির শব্দে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ, ধাওয়া-পালটা ধাওয়া, ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়। এ সময় উপজেলা সদরের পুরাতন ইউপি ভবনের সামনে থাকা দুটি মাইক্রোবাস ও রাস্তায় থাকা একটিসহ ৩ মাইক্রোবাস ১২টি মোটরসাইকেলে আগুন দেয়া হয়। প্রায় ২ ঘণ্টাব্যাপী চলা সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ফাঁকা গুলি ও শতাধিক ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এ ছাড়াও বাজারে ব্যবসায়ী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আক্তার হোসেন পাটোয়ারীর পাইকারি মুদি মালের দোকানসহ বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠা ও ফুটপাটের দোকানসহ অর্ধশতাধিক দোকানে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। আতঙ্কিত ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ করে দেয়। সংঘর্ষে পুলিশের এসআই মো. হোসাইন, কনস্টেবল মনির, দোকানের কর্মচারী জাফর, শিপন, আবদুল্লাহসহ অন্তত অর্ধশতাধিক আহত হয়েছে। আহতদের চৌদ্দগ্রাম ও কুমিল্লার বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পুরাতন ও নতুন দুটি সড়ককেই প্রায় ২ ঘণ্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। এতে মহাসড়কের উভয় পাশে কয়েক শত যানবাহন আটকা পড়ে। সন্ধ্যা ৬টায় কুমিল্লা পুলিশ সুপার মো. শাহ আবিদ হোসেন জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে জেলা সদর থেকে অর্ধশতাধিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল জানান, পুলিশের পাশাপাশি ঘটনাস্থলে বিজিবি ও র্যাব সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। ঘটনার পর দুই মেয়র প্রার্থীর মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তাদের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
শরীয়তপুরে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষ
শরীয়তপুর প্রতিনিধি জানান, শরীয়তপুরে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাবেক শরীয়তপুর পৌরসভা মেয়র নুর মোহাম্মদ কোতোয়ালের বাসভবনে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেছে হামলাকারীরা। এ নিয়ে শরীয়তপুর শহরে আতঙ্ক বিরাজ করছে। শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। পালং থানা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শরীয়তপুর সদর পৌরসভার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মো. রফিকুল ইসলাম কোতোয়ালের পক্ষে শরীয়তপুর ও কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে গতআল দুপুরে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে নির্বাচনী প্রসু্ততি সভা চলছিল। এ সভায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য একেএম এনামুল হক শামীম, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর রব মুন্সি, সাধারণ সম্পাদক অনল কুমার দে, আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক ইকবাল হোসেন অপুসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সভাশেষে আওয়ামী লীগের বিবাদমান দুটি গ্রুপ এক সঙ্গে নৌকা প্রতীকের পক্ষে মিছিল বের করে। মিছিলে নেতৃত্বে ছিলেন একাংশের নেতা কেন্দ্রীয় নেতা ইকবাল হোসেন অপু এবং অপর অংশের নেতা সাবেক ছাত্রলীগের সভাপতি ও শরীতপুর সরকারী কলেজের সাবেক ভিপি নুরুল আমিন কোতোয়াল। মিছিলটির শেষ মুহূর্তে পিছন দিক থেকে উভয় গ্রুপের কর্মী সমর্থকদের মধ্যে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে সংঘর্ষ বেধে যায়। শরীয়তপুর সদর পালং মডেল থানার সামনে প্রায় আধা ঘণ্টাব্যাপী এ সংঘর্ষ চলাকালে উভয় গ্রুপের সমর্থকরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও লাঠিসোটা ব্যবহার করে। দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পালটা ধাওয়া চলতে থাকে। এ সময় সংঘর্ষকারীরা জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নুর মোহাম্মদ কোতোয়ালের বাড়িতে হামলা এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। ইটপাটকেল নিক্ষেপে তার বাড়ির দরজা জানালা ভেঙ্গে যায়। ইটপাটকেল নিক্ষেপে ইলিয়াছ, প্রকাশ, দ্বীন ইসলাম, সুজন পাহাড়, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নুর মোহাম্মদ কোতোয়ালে স্ত্রী ও পুত্রবধূসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হওয়ার খবর জানা গেছে। এ ব্যাপারে পৌরসভা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এম মজলিস খান বলেন, এ ঘটনায় আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে ব্যাপক প্রভাব পড়বে। পালং মডেল থানার ভাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খলিলুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দল নিয়ে দুটি গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পালটা ধাওয়া হয়েছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
সরিষাবাড়ীতে দুই মেয়র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ
সরিষাবাড়ী (জামালপুর) প্রতিনিধি জানান: জামালপুরের সরিষাবাড়ী পৌরসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই মেয়র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পালটা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এতে কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন। গতকাল দুপুরে পৌর এলাকার আরামনগর বাজারে এ ঘটনা ঘটে। প্রার্থী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী রুহুল আমীন সেলিম (মোবাইল প্রতীক) এর কর্মীরা আরামনগর বাজার এলাকায় ভোট চাইতে গেলে বিনএপি মনোনীত প্রার্থী ফয়জুল কবির তালুকদার শাহীন (ধানের শীষ প্রতীক) এর কর্মী-সমর্থকদের মাঝে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে দু’পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া-পালটা ধাওয়া ও ইট পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এ সময় শহিদুল্লাহ, শফিকুল, তাজিন, আমিনুল, পলাশ ও আপেলসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়। এ সংবাদ পেয়ে সরকারদলীয় নেতা-কর্মীরা আরামনগর বাজারে বিদ্রোহী প্রার্থী সেলিমের পক্ষে অবস্থান নেয়। সংবাদ পেয়ে সরিষবাড়ী থানার একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির সভাপতি বলেন ধানের শীষের বিজয় ঠেকাতে নির্বাচনী মাঠে বিদ্রোহী নয় সরকার দলীয় মদতপুষ্ট প্রার্থী রুহুল আমীনসহ সরকার দলীয়রা এক হয়ে কাজ করছে। তবে নির্বাচন সুষ্ঠু হলে ধানের শীষের বিজয় কখনোই ঠেকাতে পারবে না।
আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর উঠান বৈঠকে ককটেল হামলা
নরসিংদী প্রতিনিধি জানান, নরসিংদীর মাধবদী পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মেয়র পদ প্রার্থী মোশাররফ হোসেন মানিক এর উঠান বৈঠকে দুর্বৃত্তরা ককটেল হামলা করেছে। তবে এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয় নি। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে দুইটি অবিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধার করেছে। রোববার রাত সাড়ে নয়টায় ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বিরামপুর এলাকায় কুয়েতি মসজিদের পাশে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় রাত্রেই বিএনপির ১৪ জন নেতা কর্মীর নাম উল্লেখ করে নরসিংদী মডেল থানায় একটি মামলা করেছে মাধবদী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি সালাউদ্দিন আহমেদ। এদিকে ককটেল হামলার প্রতিবাদে সোমবার দুপুরে এক সাংবাদিক সম্মেলন করেন আওয়ামী লীগের মেয়র পদ প্রার্থী মানিক। সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করেন বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী বর্তমান মেয়র মো. ইলিয়াছ তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানান, রোববার রাত সাড়ে আটটার দিকে বিরামপুর এলাকায় উঠান বৈঠক করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোশাররফ হোসেন। বৈঠক চলাকালে রাত সাড়ে নয়টায় পাশে কে বা কারা দুটি ককলেট নিক্ষেপ করে। কিন্তু ককটেল দুটি বিস্ফোরিত হয়নি। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে অবিস্ফোরিত ককটেল দুটি উদ্ধার করে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে যায়।
এদিকে গত কয়েক দিনে বিভিন্ন পৌরসভায় দলীয় প্রার্থীদের প্রচার, সভা ও বাড়িতে হামলার অভিযোগ করেছে বিএনপি। দলটির পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত তথ্যও গণমাধ্যমে দেয়া হয়েছে। দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, গতকাল কুমিল্লার চান্দিনায় দলের মেয়রপ্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী সভায় যোগ দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান এবং প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবদিন ফারুকসহ স্থানীয় নেতাকর্মীরা। এ সময় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা সভায় ককটেল বিস্ফোরণ ঘটনায় বলে অভিযোগ করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গত রোববার ঝিনাইদহের শৈলকুপায় বিএনপির প্রার্থী খলিলুর রহমানের গণসংযোগে হামলা চালিয়েছে সরকার সমর্থকরা। এতে আহত হন ৫ জন। ওইদিন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের তারাবো পৌরসভায় বিএনপির মেয়র প্রার্থী নাসির উদ্দিনের গণসংযোগে হামলা চালিয়েছে সরকার দলের নেতাকর্মী সমর্থকরা। এ সময় তারা লাঠিসোঠা নিয়ে বিএনপি সমর্থকদেরও এলোপাতাড়ি মারধর করে। এ ঘটনায় ৭০ জন আহত হয়েছে। নাসিরের গাড়ি বহরের ৭টি গাড়ি ভাঙচুর ও প্রার্থীকে শারীরিকভাবে নাজেহাল করে অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে রূপগঞ্জ থানা পুলিশের সহযোগিতায় মেয়র প্রার্থী নাসির উদ্দিন ওই এলাকা ত্যাগ করেন। একইদিন কুষ্টিয়ার মিরপুর পৌরসভায় বিএনপির মেয়র প্রার্থী আবদুল আজিজ খানের গণসংযোগে দেশীয় অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা। এতে আহত হয়েছেন ৭ জন। এ ছাড়া ভোলা পৌরসভা বিএনপির মেয়র প্রার্থী হারুন-অর-রশিদের লিফলেট বিতরণের সময় তার কর্মীদের মারধর করে সরকার সমর্থকরা। একইদিন পাবনায় বিএনপি নেতা মির্জা মকবুল হোসেনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গত রোববার গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে গণসংযোগকালে সরকারদলীয় মেয়র প্রার্থীর নেতাকর্মীরা ঐশ্বর্য পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস ভাঙচুর করে। এদিকে শনিবার ঝিনাইদহে যুবদল কর্মী মিন্টু মণ্ডলকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গত রোববার সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক নারী কাউন্সিলর ও মহিলা দলের কেন্দ্রীয় নেত্রী শাহানা বেগম শানুর ছেলে রায়হান ইসলামকে (২৫) কুপিয়ে জখম করেছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে আহত হয়েছেন মা শানুও। একই দিন ঠাকুরগাঁয়ে বিএনপির প্রার্থী মোকাররম হোসেনের পোস্টার লাগানোর সময় বাধা দিয়েছে সরকার দলের সমর্থকরা। শনিবার রাতে কুমিল্লার লাকসাম পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী লুৎফুল হাছানের বাড়িতে হামলা করা হয়েছে। এতে আহত হন অন্তত ৫ জন। রাজশাহীর বাঘার আড়ানীতে বিএনপির মেয়র প্রার্থী তোজাম্মেল হকের কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মুক্তার আলীর কর্মী-সমর্থকেরা। এতে আহত হয়েছেন ৫ জন। গত শনিবার যশোরের চৌগাছা পৌরসভায় আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী দুই মেয়র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পালটা ধাওয়া ও গোলাগুলি হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে ময়মনসিংহের গফরগাঁও পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী আজিজুল ইসলামের মা রাবেয়া খাতুনকে (৬৫) হত্যার অভিযোগে করা মামলায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আনিসুল হককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত ১৮ই ডিসেম্বর ভোলার বোহারনউদ্দিন পৌরসভায় বিএনপির মেয়রপ্রার্থী মনিরুজ্জামানের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় মেয়রপ্রার্থীর স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকীসহ পরিবারের চারজন আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার লক্ষ্মীপুরের রামগতি পৌরসভায় জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী আজাদ উদ্দিনকে গণসংযোগকালে ধাওয়া দেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। একই দিনে মুন্সীগঞ্জ পৌরসভায় বিএনপির মেয়র প্রার্থীর প্রচারণায় বাধা ও তার সমর্থকদের হত্যার হুমকি দিয়েছে সরকার সমর্থকরা। গত বুধবার নোয়াখালীর চাটখিলে কাউন্সিলর প্রার্থী জামালউদ্দিনের বাড়িতে হামলা চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা এতে আহত হয়েছেন ৬ জন। ১২ই ডিসেম্বর নোয়াখালীর চৌমুহনীতে বিএনপির প্রার্থী জহিরউদ্দিনের নির্বাচনী বৈঠকে হামলা ও গুলি বর্ষণ চালিয়েছে সরকার দলের সমর্থকরা। এতে অন্তত ১৬ জন আহত হয়েছেন। গত ১৬ই ডিসেম্বর কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর উদ্দীন খান বিরোধী নেতাকর্মীদের হুমকি দেন। দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আজকের এই নির্বাচনী প্রচারণার শুরুর পর থেকে কোনো ওয়ার্ডে যদি কোনো বিএনপি, কোনো জামায়াত, কোনো ধানের শীষের লোক ভোট চায়, তাহলে অবশ্যই সেই ওয়ার্ডের নেতৃবৃন্দকে জবাবদিহি করতে হবে। কেন জামায়াত-শিবিরের লোক সেই ওয়ার্ডে ভোট চাবে।’ গত ১৫ই ডিসেম্বর বরিশালের বাকেরগঞ্জ পৌরসভায় বিএনপির মেয়র প্রার্থী মো. মতিউর রহমান মোল্লার গণসংযোগে হামলা চালিয়েছে সরকার সমর্থকরা। এতে কমপক্ষে পাঁচজন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে নারী কর্মীদের হুমকি দেয়া হয়েছে। এদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, গত রোববার রাজশাহীর তাহেরপুরে বিএনপির প্রার্থী আবু নঈম শামসুর রহমানকে নির্বাচনী প্রচারণাকালে এলাকা থেকে বের করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। জেলার কাঁটাখালী বিএনপি নির্বাচনী কমিটির সদস্য সচিব এজেন্ট মনিরুজ্জামান দুলালকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। চট্টগ্রামের মিরেরসরাই ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিনকে কুপিয়ে আহত করেছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। রারৈয়ারহাটে বিএনপি প্রার্থী মঈনউদ্দিন লিটনের ছোট ভাই গণসংযোগকালে ছাত্রলীগের ক্যাডার বাহিনী তার ওপর হামলা করে মাথা মারাত্মকভাবে জখম করেছে। কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর থানা বিএনপির সভাপতি কায়সার মাহমুদ রিপনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত ১৮ই ডিসেম্বর ঝিনাইদহের হরিনাকুন্ডু ও শৈলকুপায় সরকারি দলের সশস্ত্র নেতাকর্মীরা বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে আক্রমণ ও লুটতরাজ চালাচ্ছে। ধানের শীষের সমর্থকদের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করার জন্য তাণ্ডব চালানো হচ্ছে। জয়পুরহাট সদরে বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে পুলিশ হুমকি দিচ্ছে এবং নির্বাচনী পোস্টার তুলে ফেলছে। চট্টগ্রামের মিরেরসরাই উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা নুরুল আমিনকে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বেধড়ক মারধর করে গুরুতর আহত এবং তার গাড়ি ভাঙচুর করেছে। ঝালকাঠির নলছিটি পৌরসভা নির্বাচনে ধানের শীষের মেয়র প্রার্থী মো. মজিবুর রহমানকে প্রচারণায় বাধা দেয়া হচ্ছে। তার মাইক কেড়ে নেয়া হয়েছে এবং পোস্টার ছিঁড়ে ফেলাসহ কর্মীদের মারধর করা হয়েছে। বরগুনার পাথরঘাটায় ধানের শীষের প্রার্থী মল্লিক মো. আইয়ুবকে প্রচারণায় বাধা দেয়া হচ্ছে।
গত ১৬ই ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌরসভার বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাজি মোমতাজের সমর্থক ও ভোটারদেরকে যৌথবাহিনীর সহায়তায় ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা হুমকি প্রদান করে যাচ্ছে। রাজশাহী বাগমারার তাহেরপুর পৌরসভার বিএনপির মেয়র প্রার্থী শামসুর রহমান মিন্টুর নির্বাচনী প্রচারণায় মারাত্মকভাবে বাধা দেয়া হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় ভোটারদের বাড়িতে বাড়িতে বিএনপি প্রার্থী মিন্টুকে ভোট না দেয়ার জন্য ব্যাপক হুমকি দেয়া হয়েছে।
স্টাফ রিপোর্টার, সাভার থেকে জানান, সাভার পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী বদিউজ্জামান বদিরের বাড়িতে গতকাল বিকালে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর সমর্থকরা হামলা, ভাঙচুর ও গুলি ছুড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে বিএনপির মেয়র প্রার্থীর ছোট ভাইসহ ১০ জন আহত হয়েছেন। তবে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী হাজী আবদুল গণির বড় ছেলে কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা ফারুক হাসান তুহিন। এদিকে ঘটনার পর পর বদিরের বাড়িতে র্যাব ও পুলিশ উপস্থিত হয়। বিএনপির মেয়র প্রার্থী ছাত্রদলের ঢাকা বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বদিউজ্জামান বদি বলেন, নাশকতার তিনটি মামলায় উচ্চ আদালতে জামিন নিয়ে সাভার পৌরসভা নির্বাচনে ব্যাংক কলোনি এলাকায় প্রচারণা শুরু করি। গতকাল বিকাল আনুমানিক সাড়ে ৪টার দিকে ব্যাংক কলোনি মহল্লার নিজের বাসায় দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় চলছিল। তখন হঠাৎ করে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর লোকজন অতর্কিতে হামলা করে। কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে চেয়ার টেবিল, বাড়ি ঘর ও দুটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে পালিয়ে যাওয়ার সময় বাইরে থেকে ইট-পাটকেল ছুড়ে। হামলায় তার ছোট ভাই মাসুদ, কর্মী আফজাল, সোহেল, হোসেনসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। তবে তাদের কোথায় চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে তা তিনি বলতে পারেননি। তিনি আরও জানান, হামলার বিষয়টি নির্বাচন কর্মকর্তা ও থানা পুলিশকে অবহিত করা হয়েছে। বদি আরও জানায়, হামলাকারীদের মধ্যে তিনি আওয়ামী লীগ মেয়র প্রার্থী হাজী আবদুল গণির ছেলে ফারুক হাসান তুহিনকে চিনতে পেরেছেন। তবে হামলাকারী অন্য কাউকে তিনি চিনতে পারেননি। ঢাকা জেলার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) রাসেল শেখ বলেন, বিএনপি প্রার্থীর বাড়িতে হামলার ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও তিনি জানান। এদিকে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সহকারী রিটার্নিং অফিসার মোহাম্মদ মমিন মিয়া বলেন, বিএনপির মেয়র প্রার্থী বদিউজ্জামান বদিরের বাড়িতে হামলা ও গুলির ঘটনার অভিযোগ শোনার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়ার কথাও বলে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা। তবে আওয়ামী লীগ মেয়র প্রার্থীর ছেলে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক হাসান তুহিন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমরা হামলা চালাইনি। আমাদের লোকজন ক্যানভাস করতে করতে ওই স্থান দিয়ে যাওয়ার সময় বিএনপির প্রার্থী বদিরের বহিরাগত লোকজন আমাদের লোকজনের ওপর হামলা চালিয়েছে। এতে ছাত্রলীগের পৌর শাখার সভাপতি অভিসহ ৫-৬ জন আহত হয়েছে। তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে। গুলি ছুড়ার বিষয়ে তুহিন বলেন, গুলিও বিএনপির প্রার্থীর বহিরাগত লোকজনই ছুড়েছে।
চৌদ্দগ্রামে সংঘর্ষ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও যানবাহনে ভাঙচুর, আগুন
স্টাফ রিপোর্টার, কুমিল্লা থেকে জানান, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম পৌরসভা নির্বাচনে দুই মেয়র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ, ধাওয়া-পালটা ধাওয়া, গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও যানবাহনে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। সংঘর্ষে পুলিশের এসআই মো. হোসাইন, কনস্টেবল মনির হোসেনসহ উভয় প্রার্থীর অন্তত অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। গতকাল বিকাল সোয়া ৪টার দিকে চৌদ্দগ্রাম বাজারে আওয়ামী লীগ দলীয় মেয়র প্রার্থী বর্তমান মেয়র মিজানুর রহমান ও দলের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী ইমাম হোসেন পাটোয়ারী এনামের কর্মী সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অতিরিক্ত পুলিশের পাশাপাশি ঘটনাস্থলে বিজিবি ও র্যাব সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। জানা যায়, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী ইমাম হোসেন পাটোয়ারী এনামের সমর্থকরা বিকালে চৌদ্দগ্রাম বাজারে মিছিল বের করে। এ সময় আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মিজানুর রহমানের সমর্থনে আলকরা ইউপি চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেন বাচ্চু কর্মীদের নিয়ে গণসংযোগ শেষে ফেরার পথে চৌদ্দগ্রাম বাজারে উভয় পক্ষ মুখোমুখি হয়। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে প্রথমে বাগবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে ফাঁকা গুলির শব্দে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ, ধাওয়া-পালটা ধাওয়া, ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়। এ সময় উপজেলা সদরের পুরাতন ইউপি ভবনের সামনে থাকা দুটি মাইক্রোবাস ও রাস্তায় থাকা একটিসহ ৩ মাইক্রোবাস ১২টি মোটরসাইকেলে আগুন দেয়া হয়। প্রায় ২ ঘণ্টাব্যাপী চলা সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ফাঁকা গুলি ও শতাধিক ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এ ছাড়াও বাজারে ব্যবসায়ী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আক্তার হোসেন পাটোয়ারীর পাইকারি মুদি মালের দোকানসহ বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠা ও ফুটপাটের দোকানসহ অর্ধশতাধিক দোকানে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। আতঙ্কিত ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ করে দেয়। সংঘর্ষে পুলিশের এসআই মো. হোসাইন, কনস্টেবল মনির, দোকানের কর্মচারী জাফর, শিপন, আবদুল্লাহসহ অন্তত অর্ধশতাধিক আহত হয়েছে। আহতদের চৌদ্দগ্রাম ও কুমিল্লার বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পুরাতন ও নতুন দুটি সড়ককেই প্রায় ২ ঘণ্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। এতে মহাসড়কের উভয় পাশে কয়েক শত যানবাহন আটকা পড়ে। সন্ধ্যা ৬টায় কুমিল্লা পুলিশ সুপার মো. শাহ আবিদ হোসেন জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে জেলা সদর থেকে অর্ধশতাধিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল জানান, পুলিশের পাশাপাশি ঘটনাস্থলে বিজিবি ও র্যাব সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। ঘটনার পর দুই মেয়র প্রার্থীর মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তাদের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
শরীয়তপুরে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষ
শরীয়তপুর প্রতিনিধি জানান, শরীয়তপুরে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাবেক শরীয়তপুর পৌরসভা মেয়র নুর মোহাম্মদ কোতোয়ালের বাসভবনে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেছে হামলাকারীরা। এ নিয়ে শরীয়তপুর শহরে আতঙ্ক বিরাজ করছে। শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। পালং থানা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শরীয়তপুর সদর পৌরসভার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মো. রফিকুল ইসলাম কোতোয়ালের পক্ষে শরীয়তপুর ও কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে গতআল দুপুরে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে নির্বাচনী প্রসু্ততি সভা চলছিল। এ সভায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য একেএম এনামুল হক শামীম, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর রব মুন্সি, সাধারণ সম্পাদক অনল কুমার দে, আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক ইকবাল হোসেন অপুসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সভাশেষে আওয়ামী লীগের বিবাদমান দুটি গ্রুপ এক সঙ্গে নৌকা প্রতীকের পক্ষে মিছিল বের করে। মিছিলে নেতৃত্বে ছিলেন একাংশের নেতা কেন্দ্রীয় নেতা ইকবাল হোসেন অপু এবং অপর অংশের নেতা সাবেক ছাত্রলীগের সভাপতি ও শরীতপুর সরকারী কলেজের সাবেক ভিপি নুরুল আমিন কোতোয়াল। মিছিলটির শেষ মুহূর্তে পিছন দিক থেকে উভয় গ্রুপের কর্মী সমর্থকদের মধ্যে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে সংঘর্ষ বেধে যায়। শরীয়তপুর সদর পালং মডেল থানার সামনে প্রায় আধা ঘণ্টাব্যাপী এ সংঘর্ষ চলাকালে উভয় গ্রুপের সমর্থকরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও লাঠিসোটা ব্যবহার করে। দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পালটা ধাওয়া চলতে থাকে। এ সময় সংঘর্ষকারীরা জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নুর মোহাম্মদ কোতোয়ালের বাড়িতে হামলা এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। ইটপাটকেল নিক্ষেপে তার বাড়ির দরজা জানালা ভেঙ্গে যায়। ইটপাটকেল নিক্ষেপে ইলিয়াছ, প্রকাশ, দ্বীন ইসলাম, সুজন পাহাড়, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নুর মোহাম্মদ কোতোয়ালে স্ত্রী ও পুত্রবধূসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হওয়ার খবর জানা গেছে। এ ব্যাপারে পৌরসভা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এম মজলিস খান বলেন, এ ঘটনায় আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে ব্যাপক প্রভাব পড়বে। পালং মডেল থানার ভাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খলিলুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দল নিয়ে দুটি গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পালটা ধাওয়া হয়েছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
সরিষাবাড়ীতে দুই মেয়র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ
সরিষাবাড়ী (জামালপুর) প্রতিনিধি জানান: জামালপুরের সরিষাবাড়ী পৌরসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই মেয়র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পালটা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এতে কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন। গতকাল দুপুরে পৌর এলাকার আরামনগর বাজারে এ ঘটনা ঘটে। প্রার্থী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী রুহুল আমীন সেলিম (মোবাইল প্রতীক) এর কর্মীরা আরামনগর বাজার এলাকায় ভোট চাইতে গেলে বিনএপি মনোনীত প্রার্থী ফয়জুল কবির তালুকদার শাহীন (ধানের শীষ প্রতীক) এর কর্মী-সমর্থকদের মাঝে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে দু’পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া-পালটা ধাওয়া ও ইট পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এ সময় শহিদুল্লাহ, শফিকুল, তাজিন, আমিনুল, পলাশ ও আপেলসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়। এ সংবাদ পেয়ে সরকারদলীয় নেতা-কর্মীরা আরামনগর বাজারে বিদ্রোহী প্রার্থী সেলিমের পক্ষে অবস্থান নেয়। সংবাদ পেয়ে সরিষবাড়ী থানার একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির সভাপতি বলেন ধানের শীষের বিজয় ঠেকাতে নির্বাচনী মাঠে বিদ্রোহী নয় সরকার দলীয় মদতপুষ্ট প্রার্থী রুহুল আমীনসহ সরকার দলীয়রা এক হয়ে কাজ করছে। তবে নির্বাচন সুষ্ঠু হলে ধানের শীষের বিজয় কখনোই ঠেকাতে পারবে না।
আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর উঠান বৈঠকে ককটেল হামলা
নরসিংদী প্রতিনিধি জানান, নরসিংদীর মাধবদী পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মেয়র পদ প্রার্থী মোশাররফ হোসেন মানিক এর উঠান বৈঠকে দুর্বৃত্তরা ককটেল হামলা করেছে। তবে এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয় নি। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে দুইটি অবিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধার করেছে। রোববার রাত সাড়ে নয়টায় ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বিরামপুর এলাকায় কুয়েতি মসজিদের পাশে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় রাত্রেই বিএনপির ১৪ জন নেতা কর্মীর নাম উল্লেখ করে নরসিংদী মডেল থানায় একটি মামলা করেছে মাধবদী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি সালাউদ্দিন আহমেদ। এদিকে ককটেল হামলার প্রতিবাদে সোমবার দুপুরে এক সাংবাদিক সম্মেলন করেন আওয়ামী লীগের মেয়র পদ প্রার্থী মানিক। সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করেন বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী বর্তমান মেয়র মো. ইলিয়াছ তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানান, রোববার রাত সাড়ে আটটার দিকে বিরামপুর এলাকায় উঠান বৈঠক করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোশাররফ হোসেন। বৈঠক চলাকালে রাত সাড়ে নয়টায় পাশে কে বা কারা দুটি ককলেট নিক্ষেপ করে। কিন্তু ককটেল দুটি বিস্ফোরিত হয়নি। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে অবিস্ফোরিত ককটেল দুটি উদ্ধার করে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে যায়।
এদিকে গত কয়েক দিনে বিভিন্ন পৌরসভায় দলীয় প্রার্থীদের প্রচার, সভা ও বাড়িতে হামলার অভিযোগ করেছে বিএনপি। দলটির পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত তথ্যও গণমাধ্যমে দেয়া হয়েছে। দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, গতকাল কুমিল্লার চান্দিনায় দলের মেয়রপ্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী সভায় যোগ দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান এবং প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবদিন ফারুকসহ স্থানীয় নেতাকর্মীরা। এ সময় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা সভায় ককটেল বিস্ফোরণ ঘটনায় বলে অভিযোগ করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গত রোববার ঝিনাইদহের শৈলকুপায় বিএনপির প্রার্থী খলিলুর রহমানের গণসংযোগে হামলা চালিয়েছে সরকার সমর্থকরা। এতে আহত হন ৫ জন। ওইদিন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের তারাবো পৌরসভায় বিএনপির মেয়র প্রার্থী নাসির উদ্দিনের গণসংযোগে হামলা চালিয়েছে সরকার দলের নেতাকর্মী সমর্থকরা। এ সময় তারা লাঠিসোঠা নিয়ে বিএনপি সমর্থকদেরও এলোপাতাড়ি মারধর করে। এ ঘটনায় ৭০ জন আহত হয়েছে। নাসিরের গাড়ি বহরের ৭টি গাড়ি ভাঙচুর ও প্রার্থীকে শারীরিকভাবে নাজেহাল করে অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে রূপগঞ্জ থানা পুলিশের সহযোগিতায় মেয়র প্রার্থী নাসির উদ্দিন ওই এলাকা ত্যাগ করেন। একইদিন কুষ্টিয়ার মিরপুর পৌরসভায় বিএনপির মেয়র প্রার্থী আবদুল আজিজ খানের গণসংযোগে দেশীয় অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা। এতে আহত হয়েছেন ৭ জন। এ ছাড়া ভোলা পৌরসভা বিএনপির মেয়র প্রার্থী হারুন-অর-রশিদের লিফলেট বিতরণের সময় তার কর্মীদের মারধর করে সরকার সমর্থকরা। একইদিন পাবনায় বিএনপি নেতা মির্জা মকবুল হোসেনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গত রোববার গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে গণসংযোগকালে সরকারদলীয় মেয়র প্রার্থীর নেতাকর্মীরা ঐশ্বর্য পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস ভাঙচুর করে। এদিকে শনিবার ঝিনাইদহে যুবদল কর্মী মিন্টু মণ্ডলকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গত রোববার সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক নারী কাউন্সিলর ও মহিলা দলের কেন্দ্রীয় নেত্রী শাহানা বেগম শানুর ছেলে রায়হান ইসলামকে (২৫) কুপিয়ে জখম করেছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে আহত হয়েছেন মা শানুও। একই দিন ঠাকুরগাঁয়ে বিএনপির প্রার্থী মোকাররম হোসেনের পোস্টার লাগানোর সময় বাধা দিয়েছে সরকার দলের সমর্থকরা। শনিবার রাতে কুমিল্লার লাকসাম পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী লুৎফুল হাছানের বাড়িতে হামলা করা হয়েছে। এতে আহত হন অন্তত ৫ জন। রাজশাহীর বাঘার আড়ানীতে বিএনপির মেয়র প্রার্থী তোজাম্মেল হকের কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মুক্তার আলীর কর্মী-সমর্থকেরা। এতে আহত হয়েছেন ৫ জন। গত শনিবার যশোরের চৌগাছা পৌরসভায় আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী দুই মেয়র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পালটা ধাওয়া ও গোলাগুলি হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে ময়মনসিংহের গফরগাঁও পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী আজিজুল ইসলামের মা রাবেয়া খাতুনকে (৬৫) হত্যার অভিযোগে করা মামলায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আনিসুল হককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত ১৮ই ডিসেম্বর ভোলার বোহারনউদ্দিন পৌরসভায় বিএনপির মেয়রপ্রার্থী মনিরুজ্জামানের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় মেয়রপ্রার্থীর স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকীসহ পরিবারের চারজন আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার লক্ষ্মীপুরের রামগতি পৌরসভায় জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী আজাদ উদ্দিনকে গণসংযোগকালে ধাওয়া দেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। একই দিনে মুন্সীগঞ্জ পৌরসভায় বিএনপির মেয়র প্রার্থীর প্রচারণায় বাধা ও তার সমর্থকদের হত্যার হুমকি দিয়েছে সরকার সমর্থকরা। গত বুধবার নোয়াখালীর চাটখিলে কাউন্সিলর প্রার্থী জামালউদ্দিনের বাড়িতে হামলা চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা এতে আহত হয়েছেন ৬ জন। ১২ই ডিসেম্বর নোয়াখালীর চৌমুহনীতে বিএনপির প্রার্থী জহিরউদ্দিনের নির্বাচনী বৈঠকে হামলা ও গুলি বর্ষণ চালিয়েছে সরকার দলের সমর্থকরা। এতে অন্তত ১৬ জন আহত হয়েছেন। গত ১৬ই ডিসেম্বর কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর উদ্দীন খান বিরোধী নেতাকর্মীদের হুমকি দেন। দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আজকের এই নির্বাচনী প্রচারণার শুরুর পর থেকে কোনো ওয়ার্ডে যদি কোনো বিএনপি, কোনো জামায়াত, কোনো ধানের শীষের লোক ভোট চায়, তাহলে অবশ্যই সেই ওয়ার্ডের নেতৃবৃন্দকে জবাবদিহি করতে হবে। কেন জামায়াত-শিবিরের লোক সেই ওয়ার্ডে ভোট চাবে।’ গত ১৫ই ডিসেম্বর বরিশালের বাকেরগঞ্জ পৌরসভায় বিএনপির মেয়র প্রার্থী মো. মতিউর রহমান মোল্লার গণসংযোগে হামলা চালিয়েছে সরকার সমর্থকরা। এতে কমপক্ষে পাঁচজন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে নারী কর্মীদের হুমকি দেয়া হয়েছে। এদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, গত রোববার রাজশাহীর তাহেরপুরে বিএনপির প্রার্থী আবু নঈম শামসুর রহমানকে নির্বাচনী প্রচারণাকালে এলাকা থেকে বের করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। জেলার কাঁটাখালী বিএনপি নির্বাচনী কমিটির সদস্য সচিব এজেন্ট মনিরুজ্জামান দুলালকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। চট্টগ্রামের মিরেরসরাই ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিনকে কুপিয়ে আহত করেছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। রারৈয়ারহাটে বিএনপি প্রার্থী মঈনউদ্দিন লিটনের ছোট ভাই গণসংযোগকালে ছাত্রলীগের ক্যাডার বাহিনী তার ওপর হামলা করে মাথা মারাত্মকভাবে জখম করেছে। কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর থানা বিএনপির সভাপতি কায়সার মাহমুদ রিপনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত ১৮ই ডিসেম্বর ঝিনাইদহের হরিনাকুন্ডু ও শৈলকুপায় সরকারি দলের সশস্ত্র নেতাকর্মীরা বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে আক্রমণ ও লুটতরাজ চালাচ্ছে। ধানের শীষের সমর্থকদের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করার জন্য তাণ্ডব চালানো হচ্ছে। জয়পুরহাট সদরে বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে পুলিশ হুমকি দিচ্ছে এবং নির্বাচনী পোস্টার তুলে ফেলছে। চট্টগ্রামের মিরেরসরাই উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা নুরুল আমিনকে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বেধড়ক মারধর করে গুরুতর আহত এবং তার গাড়ি ভাঙচুর করেছে। ঝালকাঠির নলছিটি পৌরসভা নির্বাচনে ধানের শীষের মেয়র প্রার্থী মো. মজিবুর রহমানকে প্রচারণায় বাধা দেয়া হচ্ছে। তার মাইক কেড়ে নেয়া হয়েছে এবং পোস্টার ছিঁড়ে ফেলাসহ কর্মীদের মারধর করা হয়েছে। বরগুনার পাথরঘাটায় ধানের শীষের প্রার্থী মল্লিক মো. আইয়ুবকে প্রচারণায় বাধা দেয়া হচ্ছে।
গত ১৬ই ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌরসভার বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাজি মোমতাজের সমর্থক ও ভোটারদেরকে যৌথবাহিনীর সহায়তায় ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা হুমকি প্রদান করে যাচ্ছে। রাজশাহী বাগমারার তাহেরপুর পৌরসভার বিএনপির মেয়র প্রার্থী শামসুর রহমান মিন্টুর নির্বাচনী প্রচারণায় মারাত্মকভাবে বাধা দেয়া হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় ভোটারদের বাড়িতে বাড়িতে বিএনপি প্রার্থী মিন্টুকে ভোট না দেয়ার জন্য ব্যাপক হুমকি দেয়া হয়েছে।
No comments