উগ্রপন্থী-সন্ত্রাসী কারা? by শামস তাবরীয কাসেমী
প্যারিস
হামলার পর পশ্চিমা বিশ্ব আরো একবার ইসলামোফোবিয়ার শিকার হয়েছে। ইসলাম ও
মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিষোদগারের ধারা দীর্ঘ হতে চলেছে। ইসলামকে সন্ত্রাস ও
উগ্রবাদের সাথে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। নাইন-ইলেভেনের মতো প্যারিস ঘটনার পর
বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের জীবনের অঙ্গন সঙ্কীর্ণ করে দেয়া হয়েছে। এখন পশ্চিমা
দেশগুলোতে কোনো ব্যক্তির মুসলমান অথবা ইসলামি ঐতিহ্যের ধারক হওয়া অপরাধ
হিসেবে গণ্য হচ্ছে। পশ্চিমা ও বিশ্ব মিডিয়া মুসলমানদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও
বানোয়াট তথ্য দিয়ে অলঙ্কৃত ও ভিত্তিহীন প্রপাগান্ডা শুরু করে দিয়েছে।
উগ্রপন্থী ও সন্ত্রাসী জাতি হিসেবে মুসলমানদের পরিচয় করিয়ে দেয়া হচ্ছে। ভুল
ব্যাখ্যা করা হচ্ছে ইসলামের। আর পশ্চিমা সংস্কৃতির জন্য ইসলামকে সবচেয়ে
বেশি বিপজ্জনক হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। সোস্যাল মিডিয়াতে ইসলাম ও
মুসলমানদের সবচেয়ে বেশি সমালোচনার লক্ষ্যবস্তু বানানো হচ্ছে। পাশ্চাত্যে
বাড়তে থাকা ইসলামোফোবিয়া সম্পর্কে ওই সময় ভালো ধারণা লাভ করি, যখন ইউটিউবে
বিখ্যাত মার্কিন চ্যানেল সিএনএনের একটি ভিডিওতে আমি কমেন্ট করেছিলাম,
‘আমেরিকা বর্তমান বিশ্বের জন্য ক্যান্সার’। ওই কমেন্টের জবাবে ত্রিশের বেশি
খ্রিষ্টান জবাব দিয়েছেন। এগুলোতে ইসলামের বিরুদ্ধে চরম নোংরা ও কঠিন শব্দ
ব্যবহার করা হয়েছিল। চরমপন্থা ও সন্ত্রাসের চেয়েও অগ্রসর হয়ে বেশ কিছু কথা
বলা হয়েছিল। কেউ কেউ খ্রিষ্টধর্মেরও প্রচার করেছেন। আমেরিকা প্রেসিডেন্ট
প্রার্থী ট্রাম্প ভোট ব্যাংকের জন্য তার বক্তৃতার মাধ্যমে ইসলামোফোবিয়াকে
আরো বাড়িয়ে দিচ্ছেন। অনবরত মসজিদ বন্ধ করে দেয়া এবং মুসলমানদের সে দেশ থেকে
বহিষ্কার করার কথা বলে যাচ্ছেন।
কিছু দিন আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আকার ইঙ্গিতে ইসলামের সাথে সন্ত্রাসের সম্পর্ক জুড়ে দিয়েছেন। পশ্চিমা বিশ্বসহ ভারত ও অন্যান্য দেশের বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদেরাও সন্ত্রাসকে ধর্মের চশমা দিয়ে দেখতে শুরু করেছেন। ভারতের খ্যাতনামা ইংরেজি পত্রিকা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে তাভলীন সিংও বলেছেন এমনই কিছু ভিত্তিহীন কথা। ২২ নভেম্বর সংখ্যায় লিখেছেন, কুরআন সন্ত্রাসের শিক্ষা দেয় এবং সন্ত্রাসের সাথে মুসলমানদের স্পষ্ট সম্পর্ক রয়েছে। যারা এ ধরনের কথা বলে যে, সন্ত্রাসকে কোনো ধর্মের সাথে মেলানো যাবে না, তারা মিথ্যার ওপর দাঁড়িয়ে আছে। (Tavleen Singh, Fighting jihadi terrorism, Fifth column, Indian Express, 22 Nov-15, Page-17)
সত্য হলো নাইন-ইলেভেনের মতো বর্তমানের প্যারিস হামলার দৃশ্যপটও একটি নাটক। এর নেপথ্য উদ্দেশ্য মধ্যপ্রাচ্যের তেল দখল, ইসরাইলকে শক্তিশালী এবং বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের অগ্রযাত্রাকে রোধ করা। এ জন্য আজ ইতিহাসের কয়েকটি পাতা উল্টিয়ে বিশ্বকে এ কথা জানাতে চাই যে, আসল সন্ত্রাসী কারা? কারা বিশ্বের শান্তি ও নিরাপত্তা ধ্বংস করছে? কোন ধর্মের অনুসারীরা উগ্রবাদ ও সহিংসতার ইতিহাস রচনা করেছে? মুসলমান না অন্যরা? ইতিহাস বলে, ওই সব লোকই মানুষের মাথার খুলি দিয়ে মিনার নির্মাণ করেছিল, যারা আজ মুসলমানদের উগ্রপন্থী বলে অভিযুক্ত করছে। এই ফ্রান্স ১৯১২ সালে মুসলমানদের মাথা কেটে চিত্র তৈরি করেছিল এবং তা দিয়ে ডাকটিকিট জারি করেছিল। এসব শান্তির ঠিকাদার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করে মুহূর্তেই লাখ লাখ নিরপরাধ মানুষকে মেরে ফেলে। ওই সব নামসর্বস্ব চিন্তাবিদদের কেউ জিজ্ঞাসা করবেন কি, ওই সব মানুষের কী অপরাধ ছিল, ১৮৫৭ সালের আজাদি লড়াইয়ে ব্যর্থ হওয়ার পর যাদের তোপের মুখে বেঁধে শূন্যে নিক্ষেপ করা হয়? খোদ ইংরেজ ঐতিহাসিকেরা এ কথা স্বীকার করেছেন যে, দিল্লির আশপাশে এমন কোনো বৃক্ষ ছিল না যাতে কোনো মুসলমান আলেমে দ্বীনের লাশ তখন ঝুলানো ছিল না। এখানেই শেষ নয়, বরং মুসলমানদের ফুটন্ত তেলের মধ্যে ফেলে কয়লা বানানো হয়েছে। তাদের শূকরের চামড়ার মধ্যে বন্দী করে তাদের ওপর কুকুর লেলিয়ে দেয়া হয়েছে। হিটলার কে ছিলেন? যিনি নাৎসি ক্যাম্পে ৬০ লাখ ইহুদিকে নির্যাতন করে মেরে ফেলেছেন। রেশমি আন্দোলনের সময় মুসলমানদের কালাপানি ও আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে বন্দী করে নানা ধরনের নির্যাতনকারী কারা ছিলেন? অতীতের পাতা ওল্টানোর পাশাপাশি সাম্প্রতিক ঘটনাবলির ওপরও নজর বুলিয়ে নিন। নিকট অতীতে বসনিয়াতে শুধু খ্রিষ্টানেরা এক সংক্ষিপ্ত সময়কালে ১৪ লাখ মুসলমানকে পাইকারিভাবে হত্যা করেছে। রাশিয়া আফগানিস্তানে হামলা চালিয়ে ১০ লাখ মানুষকে মেরে ফেলেছে। এর চেয়ে অধিকসংখ্যক লোককে চির দিনের জন্য পঙ্গু করে দেয়া হয়।
১৯৮২ সালে লেবাননে ইসরাইলের হামলায় ১৭ হাজার ৫০০ নিরপরাধ বেসামরিক লোক শহীদ হন। সাম্প্রতিককালে আমেরিকা ইরাক ও আফগানিস্তানের সম্পদ পাওয়ার জন্য জবরদস্তিভাবে দখল করে এতদঞ্চলের মানবতাকে পিষে দিয়ে পীড়াদায়ক জুলুমের কাহিনী রচনা করেছে। অন্যায় প্রমাণিত হওয়া ছাড়াই আফগানিস্তানকে ধ্বংস করে দেয়া হয়। এক উসামার খোঁজে ১২ লাখ নিরপরাধ মানুষকে নির্দয়ভাবে হত্যা করা হলো। ১০ লাখের বেশি ইরাকি মুসলমানকে মেরে ফেলার পর নির্লজ্জতার সাথে স্বীকার করা হচ্ছে, ইরাকে হামলা বড় ধরনের ভুল ছিল। লিবিয়ায় হামলা করে সেখানকার প্রতিষ্ঠিত সরকারকে উৎখাত করে গৃহযুদ্ধ বাধিয়ে দেয়া হয়েছে। ড্রোন হামলার নামে পাকিস্তানে হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। এখন আইএসের নামে সিরিয়ায় বোমাবর্ষণ চলছে। প্রতিদিন হাজার হাজার নিষ্পাপ শিশু, বৃদ্ধ, যুবক ও মহিলাকে আইএস দমনের নামে মেরে ফেলা হচ্ছে। এ নিয়ে কথা বলারও কেউ নেই। এক দিকে সরকারও তাদের মারছে, অপর দিকে ওপর থেকে ফ্রান্স ও রাশিয়ার বোমাবর্ষণও চলছে। ফিলিস্তিনে আমেরিকার মদদে ইসরাইলের সন্ত্রাস ও সেনা আক্রমণ তো বলার অপেক্ষা রাখে না। ভারতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও সন্ত্রাসী ঘটনাগুলোর তালিকাও বেশ দীর্ঘ। সেখানে হাজার হাজার মুসলমানকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে।
মুসলমানদের পারস্পরিক মতভেদকে কেন্দ্র করে যারা মুসলমানদের উগ্রবাদী বা সন্ত্রাসী আখ্যায়িত করে, তাদের মনে রাখা উচিত, পশ্চিমা বিশ্ব ও ইহুদি-খ্রিষ্টানদের কৃতকর্মের সামনে এ রকম বিচ্ছিন্ন ঘটনা সূর্যের সামনে বিন্দুস্বরূপ। আর এমন ঘটনাকে কেন্দ্র করে কাউকে সন্ত্রাসী বলা হলে পশ্চিমাদের এ কথা মেনে নিতে হবে, বড় সন্ত্রাসী তারা নিজেরাই। কেননা একজন ব্যক্তির আদেশে তারা অগণিত মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে মেরেছে। ক্যাথলিক ও প্রোটেস্ট্যান্ট সম্প্রদায়ের মাঝে, খ্রিষ্টানদের পরস্পরের লড়াইয়ে লাখ লাখ খ্রিষ্টান মারা গেছে। এসব ঘটনার সাথে কোনো মুসলমান সম্পৃক্ত ছিলেন না। তাদের এ লড়াই-দাঙ্গা ইসলামের নামেও হয়নি। বরং ধর্মের নামে এ লড়াই এমন সম্প্রদায়গুলোর মাঝে হয়েছে, যারা নিজেরা নিজেদের মধ্যমপন্থা ও শান্তির পতাকাবাহী বলতে পঞ্চমুখ।
ইউরোপ ও পশ্চিমা বিশ্বের উগ্রবাদ ও সহিংসতার সামান্য নমুনামাত্র উপস্থাপন করা হলো। অপর দিকে, রয়েছে ইসলামের মহান শিক্ষার আলোকিত অধ্যায়, যেখানে মানুষ ও পশু তো দূরের কথা, একটা সামান্য গাছ কাটতেও সতর্কতা অবলম্বনের শিক্ষা দেয়া হয়েছে। ইসলামের ইতিহাসে এমন কোনো নজির নেই যে, মুসলমানরা অপর ধর্মের অনুসারী নিরপরাধ সাধারণ মানুষকে গণভাবে হত্যা করেছেন। বিশ্বজুড়ে ঘটিত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও উগ্রবাদের জন্য দায়ী পশ্চিমাবিশ্ব। আমেরিকা ও ইসরাইল বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুই সন্ত্রাসী। যেদিন এ উগ্রবাদ ও সন্ত্রাস থেমে যাবে, সে দিন পুরো বিশ্বে শান্তি নিরাপত্তার পরিবেশ প্রতিষ্ঠিত হবে।
মুম্বাই থেকে প্রকাশিত দৈনিক উর্দু টাইমস ৩০ নভেম্বর, ২০১৫ হতে
উর্দু থেকে ভাষান্তর ইমতিয়াজ বিন মাহতাব
ahmadimtiajdr@gmail.com
লেখক : ভারতের প্রখ্যাত সাংবাদিক ও কলামিস্ট
কিছু দিন আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আকার ইঙ্গিতে ইসলামের সাথে সন্ত্রাসের সম্পর্ক জুড়ে দিয়েছেন। পশ্চিমা বিশ্বসহ ভারত ও অন্যান্য দেশের বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদেরাও সন্ত্রাসকে ধর্মের চশমা দিয়ে দেখতে শুরু করেছেন। ভারতের খ্যাতনামা ইংরেজি পত্রিকা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে তাভলীন সিংও বলেছেন এমনই কিছু ভিত্তিহীন কথা। ২২ নভেম্বর সংখ্যায় লিখেছেন, কুরআন সন্ত্রাসের শিক্ষা দেয় এবং সন্ত্রাসের সাথে মুসলমানদের স্পষ্ট সম্পর্ক রয়েছে। যারা এ ধরনের কথা বলে যে, সন্ত্রাসকে কোনো ধর্মের সাথে মেলানো যাবে না, তারা মিথ্যার ওপর দাঁড়িয়ে আছে। (Tavleen Singh, Fighting jihadi terrorism, Fifth column, Indian Express, 22 Nov-15, Page-17)
সত্য হলো নাইন-ইলেভেনের মতো বর্তমানের প্যারিস হামলার দৃশ্যপটও একটি নাটক। এর নেপথ্য উদ্দেশ্য মধ্যপ্রাচ্যের তেল দখল, ইসরাইলকে শক্তিশালী এবং বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের অগ্রযাত্রাকে রোধ করা। এ জন্য আজ ইতিহাসের কয়েকটি পাতা উল্টিয়ে বিশ্বকে এ কথা জানাতে চাই যে, আসল সন্ত্রাসী কারা? কারা বিশ্বের শান্তি ও নিরাপত্তা ধ্বংস করছে? কোন ধর্মের অনুসারীরা উগ্রবাদ ও সহিংসতার ইতিহাস রচনা করেছে? মুসলমান না অন্যরা? ইতিহাস বলে, ওই সব লোকই মানুষের মাথার খুলি দিয়ে মিনার নির্মাণ করেছিল, যারা আজ মুসলমানদের উগ্রপন্থী বলে অভিযুক্ত করছে। এই ফ্রান্স ১৯১২ সালে মুসলমানদের মাথা কেটে চিত্র তৈরি করেছিল এবং তা দিয়ে ডাকটিকিট জারি করেছিল। এসব শান্তির ঠিকাদার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করে মুহূর্তেই লাখ লাখ নিরপরাধ মানুষকে মেরে ফেলে। ওই সব নামসর্বস্ব চিন্তাবিদদের কেউ জিজ্ঞাসা করবেন কি, ওই সব মানুষের কী অপরাধ ছিল, ১৮৫৭ সালের আজাদি লড়াইয়ে ব্যর্থ হওয়ার পর যাদের তোপের মুখে বেঁধে শূন্যে নিক্ষেপ করা হয়? খোদ ইংরেজ ঐতিহাসিকেরা এ কথা স্বীকার করেছেন যে, দিল্লির আশপাশে এমন কোনো বৃক্ষ ছিল না যাতে কোনো মুসলমান আলেমে দ্বীনের লাশ তখন ঝুলানো ছিল না। এখানেই শেষ নয়, বরং মুসলমানদের ফুটন্ত তেলের মধ্যে ফেলে কয়লা বানানো হয়েছে। তাদের শূকরের চামড়ার মধ্যে বন্দী করে তাদের ওপর কুকুর লেলিয়ে দেয়া হয়েছে। হিটলার কে ছিলেন? যিনি নাৎসি ক্যাম্পে ৬০ লাখ ইহুদিকে নির্যাতন করে মেরে ফেলেছেন। রেশমি আন্দোলনের সময় মুসলমানদের কালাপানি ও আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে বন্দী করে নানা ধরনের নির্যাতনকারী কারা ছিলেন? অতীতের পাতা ওল্টানোর পাশাপাশি সাম্প্রতিক ঘটনাবলির ওপরও নজর বুলিয়ে নিন। নিকট অতীতে বসনিয়াতে শুধু খ্রিষ্টানেরা এক সংক্ষিপ্ত সময়কালে ১৪ লাখ মুসলমানকে পাইকারিভাবে হত্যা করেছে। রাশিয়া আফগানিস্তানে হামলা চালিয়ে ১০ লাখ মানুষকে মেরে ফেলেছে। এর চেয়ে অধিকসংখ্যক লোককে চির দিনের জন্য পঙ্গু করে দেয়া হয়।
১৯৮২ সালে লেবাননে ইসরাইলের হামলায় ১৭ হাজার ৫০০ নিরপরাধ বেসামরিক লোক শহীদ হন। সাম্প্রতিককালে আমেরিকা ইরাক ও আফগানিস্তানের সম্পদ পাওয়ার জন্য জবরদস্তিভাবে দখল করে এতদঞ্চলের মানবতাকে পিষে দিয়ে পীড়াদায়ক জুলুমের কাহিনী রচনা করেছে। অন্যায় প্রমাণিত হওয়া ছাড়াই আফগানিস্তানকে ধ্বংস করে দেয়া হয়। এক উসামার খোঁজে ১২ লাখ নিরপরাধ মানুষকে নির্দয়ভাবে হত্যা করা হলো। ১০ লাখের বেশি ইরাকি মুসলমানকে মেরে ফেলার পর নির্লজ্জতার সাথে স্বীকার করা হচ্ছে, ইরাকে হামলা বড় ধরনের ভুল ছিল। লিবিয়ায় হামলা করে সেখানকার প্রতিষ্ঠিত সরকারকে উৎখাত করে গৃহযুদ্ধ বাধিয়ে দেয়া হয়েছে। ড্রোন হামলার নামে পাকিস্তানে হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। এখন আইএসের নামে সিরিয়ায় বোমাবর্ষণ চলছে। প্রতিদিন হাজার হাজার নিষ্পাপ শিশু, বৃদ্ধ, যুবক ও মহিলাকে আইএস দমনের নামে মেরে ফেলা হচ্ছে। এ নিয়ে কথা বলারও কেউ নেই। এক দিকে সরকারও তাদের মারছে, অপর দিকে ওপর থেকে ফ্রান্স ও রাশিয়ার বোমাবর্ষণও চলছে। ফিলিস্তিনে আমেরিকার মদদে ইসরাইলের সন্ত্রাস ও সেনা আক্রমণ তো বলার অপেক্ষা রাখে না। ভারতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও সন্ত্রাসী ঘটনাগুলোর তালিকাও বেশ দীর্ঘ। সেখানে হাজার হাজার মুসলমানকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে।
মুসলমানদের পারস্পরিক মতভেদকে কেন্দ্র করে যারা মুসলমানদের উগ্রবাদী বা সন্ত্রাসী আখ্যায়িত করে, তাদের মনে রাখা উচিত, পশ্চিমা বিশ্ব ও ইহুদি-খ্রিষ্টানদের কৃতকর্মের সামনে এ রকম বিচ্ছিন্ন ঘটনা সূর্যের সামনে বিন্দুস্বরূপ। আর এমন ঘটনাকে কেন্দ্র করে কাউকে সন্ত্রাসী বলা হলে পশ্চিমাদের এ কথা মেনে নিতে হবে, বড় সন্ত্রাসী তারা নিজেরাই। কেননা একজন ব্যক্তির আদেশে তারা অগণিত মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে মেরেছে। ক্যাথলিক ও প্রোটেস্ট্যান্ট সম্প্রদায়ের মাঝে, খ্রিষ্টানদের পরস্পরের লড়াইয়ে লাখ লাখ খ্রিষ্টান মারা গেছে। এসব ঘটনার সাথে কোনো মুসলমান সম্পৃক্ত ছিলেন না। তাদের এ লড়াই-দাঙ্গা ইসলামের নামেও হয়নি। বরং ধর্মের নামে এ লড়াই এমন সম্প্রদায়গুলোর মাঝে হয়েছে, যারা নিজেরা নিজেদের মধ্যমপন্থা ও শান্তির পতাকাবাহী বলতে পঞ্চমুখ।
ইউরোপ ও পশ্চিমা বিশ্বের উগ্রবাদ ও সহিংসতার সামান্য নমুনামাত্র উপস্থাপন করা হলো। অপর দিকে, রয়েছে ইসলামের মহান শিক্ষার আলোকিত অধ্যায়, যেখানে মানুষ ও পশু তো দূরের কথা, একটা সামান্য গাছ কাটতেও সতর্কতা অবলম্বনের শিক্ষা দেয়া হয়েছে। ইসলামের ইতিহাসে এমন কোনো নজির নেই যে, মুসলমানরা অপর ধর্মের অনুসারী নিরপরাধ সাধারণ মানুষকে গণভাবে হত্যা করেছেন। বিশ্বজুড়ে ঘটিত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও উগ্রবাদের জন্য দায়ী পশ্চিমাবিশ্ব। আমেরিকা ও ইসরাইল বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুই সন্ত্রাসী। যেদিন এ উগ্রবাদ ও সন্ত্রাস থেমে যাবে, সে দিন পুরো বিশ্বে শান্তি নিরাপত্তার পরিবেশ প্রতিষ্ঠিত হবে।
মুম্বাই থেকে প্রকাশিত দৈনিক উর্দু টাইমস ৩০ নভেম্বর, ২০১৫ হতে
উর্দু থেকে ভাষান্তর ইমতিয়াজ বিন মাহতাব
ahmadimtiajdr@gmail.com
লেখক : ভারতের প্রখ্যাত সাংবাদিক ও কলামিস্ট
No comments