ডিভোর্স এমন যন্ত্রণা ভেতরটা এফোঁড় ওফোঁড় করে দেয়
২০১৫ কেমন গেল?
জীবনের সবচেয়ে খারাপ বছরগুলোর মধ্যে একটা। এক একটা বছর দারুণ যায়। এক একটা বছর যায় খুব খারাপ। এটা খুব খারাপগুলোর উপরের দিকে।
চরম নৈরাশ্যজনক বলছেন?
একটা জিনিস নৈরাশ্যজনক তখনই হয়, যখন সেই অভিজ্ঞতার কাছে আপনি হার স্বীকার করে নেন। আমার অভিধানে বাজে অভিজ্ঞতা বলে কিছু নেই। কী জানেন, ব্যর্থতা তখনই ব্যর্থতা যদি আপনি সেটা থেকে কিছু না শিখে বার হন। এ বছর স্তূপীকৃত ব্যর্থতার মধ্যে আমি অনেক কিছু শিখেছি। শেখার কোনও বয়স নেই। ইউ নেভার স্টপ লার্নিং। আঁতুড়ঘর থেকে সমাধি পর্যন্ত শিখতে শিখতে যেতে পারেন।
কী কী শিখলেন যদি বলেন?
বললাম তো জীবনের কঠিনতম বছরগুলোর মধ্যে একটা... ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে অনেক কিছু শিখিয়েছে। আরও কত কিছু সম্পর্কে শেখাল। জীবনে এমন নানা কিছু ঘটা শুরু হয়, যা আমি কনট্রোল করতে পারিনি। থিংস জাস্ট কেপ্ট অন হ্যাপেনিং। আমি পরে একলা বসে তার কারণগুলো বার করার চেষ্টা করেছি। কেন এমন হল? জীবনে এ বছর বসে আমি নিজেকে রিঅ্যাসেস করেছি। আত্মসমীক্ষা করেছি, যে-ডিরেকশনে আমি যাচ্ছি সেটা কি ঠিক? না আমার রুট বদলানো দরকার?
পেশাদার জীবনেও তো ব্যর্থতা। সম্প্রতি করাচি নির্বাচনে হারলেন।
খুব টাফ ইয়ার। আমাদের পার্টি পাকিস্তান তহরিক-ই-ইনসাফ-এর সাইজটা আসলে এ বছর এত দ্রুত বেড়ে গিয়েছে যে, সর্বত্র ম্যানেজ করা যাচ্ছে না। তা থেকে নানা প্রবলেম। আবার আমরা প্রধান বিরোধী দল হয়ে যাওয়ায় বাকি পার্টিগুলো ঈর্ষাকতর হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে গিয়েছে। নওয়াজের বিরুদ্ধে সেই ধর্নার পর থেকে গোটা রাজনৈতিক সিস্টেমটা যেন আমাদের বিরুদ্ধে চলে গিয়েছে।
ক্রিকেটজীবনে লোকে বলত, আপনার কিলার ইন্সটিংক্ট মুগ্ধ করার মতো। রাজনৈতিক জীবনে সেটা কিন্তু নিখোঁজ! নইলে নওয়াজ শরিফ যখন ওঁর বাসভবনের সামনে আপনার লাগাতার ধর্নায় বিধ্বস্ত, তখন হঠাৎ ধর্না তুলে নিলেন কেন?
আরে, এই আইডিয়াটা কোথা থেকে পেলেন যে আমরা নওয়াজকে ধর্নার মাধ্যমে ছুড়ে ফেলতে চেয়েছিলাম! একেবারেই না। আমরা এবং আরও একুশটা রাজনৈতিক দল মিলে যেটা বলেছিলাম, তা হল, ২০১৩-র সাধারণ নির্বাচনে সর্বাত্মক রিগিং হয়েছে। মনে রাখবেন, শুধু আমরা বলছিলাম না। এতগুলো পার্টি বলছিল। আমরা বলেছিলাম, নওয়াজ তুমি জুডিশিয়াল কমিশন গঠন করো। আর কমিশন যখন তদন্ত করবে তখন গদি ছাড়ো। ও তো জুডিশিয়াল কমিশন পরে করল। সেটা যদি আগে করে নিত, ধর্নাটাই হয় না।
কিন্তু নওয়াজ তো তখন যথেষ্ট চাপে ছিলেন?
ওই চাপটা শুধু ধর্নার জন্য ছিল না। সেই সময় ওর রক্ষক পুলিশ একটা শান্তিপূর্ণ শোভাযাত্রায় গুলি চালিয়ে একশো জনকে আহত করে। তার মধ্যে সতেরোজন ঘটনাস্থলেই মারা যায়। কারণ, ওদের পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জে গুলি করা হয়েছিল। এটা তো সবাই জানে যে, নওয়াজ হল পাকিস্তানের সবচেয়ে করাপ্ট পলিটিশিয়ান। যে আগের নির্বাচনে স্রেফ জোচ্চুরি করে জিতেছে।
রবিচন্দ্রন অশ্বিন সে দিন বলছিলেন, ‘‘আমি ইমরান খানের দারুণ ভক্ত। টিভিতে কোথাও উনি কিছু বলছেন দেখলেই আমি ঝপ করে বসে পড়ি।’’ অশ্বিন কে বা কী আপনি জানেন?
(ঘাড় নাড়িয়ে) সত্যি বলতে কী, ইন্ডিয়া দূরে থাক, আমি পাকিস্তান টিমেরও সবার নাম জানি না। পাকিস্তান-ইংল্যান্ড ম্যাচে কোথায় কী হচ্ছিল, ভাল ভাবে খবর রাখতে পারিনি। টুকটাক যা শুনি। আমি যত দূর জানি, ইন্ডিয়া-সাউথ আফ্রিকা সিরিজে দু’টিমের যে একমাত্র ফাস্ট বোলার সে-ই তিনটে টেস্ট খেলেনি। মডার্ন ক্রিকেট সম্পর্কে আমার কেমন একটা অবসাদ জন্মেছে যে এটা মিডিওকারদের আখড়া।
আমার কাছে সর্বোচ্চ মানের ক্রিকেট হল ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ টেস্ট ম্যাচ। ওটাই সেরা প্লেয়ার বাছার মাপকাঠি। চ্যালেঞ্জ যদি না থাকে, আমি শ্রেষ্ঠত্ব মাপব কী করে?
কাম অন, আপনি বলতে চান, টিভি দেখে কখনও মনে হয় না, ইস্ আমার জীবনে যদি আইপিএল থাকত?
একেবারেই না। আইপিএল মিস করেছি বলে এতটুকুও মনে করি না। কী হত, কয়েকটা ছক্কা মারিয়ের দেখা পেতাম, যারা আসল পরীক্ষায় পড়লে বেশির ভাগই মিডিওকার টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে ধরা পড়ত।
আপনার টেস্ট অভিষেক ১৯৭১ সালে। কিন্তু টিমে পাকাপাকি হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছিল ছয় বছর। রাজনীতিতে এ বার আপনার কুড়ি বছর পূর্ণ হবে। অথচ সাফল্য এখনও ধরা দিল না। ক্রিকেটের তুলনায় রাজনীতি বড় বেশি সময় নিচ্ছে না?
দু’টোর মধ্যে তুলনা চলে না। রাজনীতি অনেক বড় চ্যালেঞ্জ কারণ আমি একেবারে আউটসাইডার, যে বাইরে থেকে উড়ে এসে এত দিনকার শাসন ব্যবস্থাকে, সিস্টেমকে, তার নর্মকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। পাকিস্তানের চরমভাবাপন্ন পার্টি, লেফট উইং পার্টি, রাইট উইং পার্টি — সবাই গিয়ে একটা জায়গায় আমাদের বিরুদ্ধে এক। পিটিআই যদি এসে ওদের এত দিনকার মৌরসিপাট্টাকে সুনামির মতো ভাসিয়ে নিয়ে যায়। এই মুহূর্তে আমরাই দেশের একমাত্র ফেডারেল পার্টি। বাকিরা সব স্থানীয় পার্টিতে পর্যবসিত। আমরা এখন পাকিস্তানে একটা প্রদেশ চালাই, যেটা সম্পূর্ণ পিটিআই শাসিত। পাকিস্তানের যে কোনও সাধারণ মানুষের মত নিন। সে বলবে, ওটাই সবচেয়ে সুশাসিত প্রদেশ। যেখানে মানুষের জীবনযাত্রার উন্নতি হয়েছে। গ্রোথ রেট বেড়েছে। আইনশৃঙ্খলার অবস্থা ভাল।
লিডার হিসেবে এত বিখ্যাত। কিন্তু আপনার মুখে ক্রমাগত রাজনীতির কথা শুনে মনে হচ্ছে, এখন আর লিডার নন, পুরোদস্তুর রাজনীতিবিদ।
সেটা হয়তো কোনও দিন হতে পারব না। কারণ, প্রোটোটাইপ পলিটিশিয়ান আমি নই। তা ছাড়া আমি মনে করি, একজন নেতাও সার্থক রাজনীতিবিদ হয়ে উঠতে পারেন। সার্থক রাজনীতিবিদ মানে কেরিয়ার পলিটিশিয়ান নয়। সার্থক নেতা। যার সংজ্ঞা আমার কাছে, এমন কেউ যার নির্দিষ্ট ভিশন আছে। ভিশনের পিছনে ছোটার বন্য সাহস আছে। যিনি সেই আপাত অসম্ভবের পিছনে ছোটার সময় নিজের কথা ভাবেন না। যিনি বিভিন্ন মানুষকে অনুপ্রাণিত করে সেই আদর্শের পিছনে ছোটার জন্য এক পতাকার তলায় দাঁড় করাতে পারেন। যেমন আপনাদের দেশে গাঁধী। আমাদের দেশে কয়েদ-ই-আজম। ও দিকে ম্যান্ডেলা। কী অসাধারণ এক একজন মানুষ! কী বড় বড় সব ভিশন নিয়ে ওঁরা লড়াই করেছেন! এঁরা সত্যিকারের লিডার, কখনও পেশাদার রাজনীতিবিদ নন।
রাজনীতিতে এঁরা আপনার রোল মডেল বোঝা গেল। কিন্তু আপনার নিজের ভিশন কী?
আমার ভিশন এমন এক পাকিস্তান যা অনেক মানবিক। যেখানে সিভিল সোসাইটি হবে খুব গুরুত্বপূর্ণ। যেখানে পুরো ঝোঁকটাই থাকবে, মানুষটার অবস্থানের উন্নতিতে। আপনার শুনে মনে হতে পারে, এবং হয়তো সত্যি তাই যে, লক্ষ্যটা এখনও আইডিয়াল। তবে একে আমি তাড়া করছি এবং ইমিডিয়েট চ্যালেঞ্জ হল যে প্রদেশে আমরা ক্ষমতায়, সেখানে এগুলোকে সার্থক রূপ দেওয়া। ওখানে যদি শোকেস করতে পারি তা হলে নিশ্চয়ই মানুষের সংশয় কমবে। আর আমি এটা করেই ছাড়ব।
কথাগুলো শুনে বেশ মজা লাগছে। বিরানব্বই বিশ্বকাপের সময় আমায় দেওয়া একটা ইন্টারভিউতে আপনি বলেছিলেন, জীবনে কখনও রাজনীতিতে যোগ দেবেন না, আর বিয়ে-থা করবেন না।
তেইশ বছর আগের কথা বলছেন আপনি! কত লম্বা সময়! তখন আমার পক্ষে বোঝাই সম্ভব হয়নি, জীবন কী বিচিত্র বাঁক নিয়ে আপনাকে অদ্ভুত অদ্ভুত মোড়ে দাঁড় করিয়ে দিতে পারে! আপনি এক রকমভাবে জীবন কাটাবেন ঠিক করেছেন, এ বার হঠাৎ একটা স্রোতে সেটা পুরো উল্টো দিকে ঘুরে গেল। আমাদের কোরানে বলে, মানুষ একরকম প্ল্যানিং করে। আল্লা আর এক রকম করেন। যে কোনও একটা প্ল্যান কাজ করে।
সঞ্জয় মঞ্জরেকর সে দিন বলছিলেন, আপনার মতো উদারতা তিনি ভারতীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে দেখেননি। নব্বইয়ের নিউজিল্যান্ড সফরে সঞ্জয় রান না পাওয়ার পর আপনি নাকি ইংল্যান্ডে দেখা হওয়া মাত্র পরম স্নেহে বলেছিলেন, ‘‘সঞ্জয় এটা কী করলে! তোমার উপর আমার এত আশা। কেন হ্যাডলিকে এত ব্যাকফুটে খেলছিলে? পরের বার এই ভুল কোরো না।’’ সঞ্জয় আজও আপনার উৎসাহদানের কথা ভুলতে পারেন না। ভারত-পাক সিরিজে নিরপেক্ষ আম্পায়ার প্রচলনের পেছনেও আপনি।
কিন্তু এই যে আপনার সৎ-প্রগতিশীল মানুষ হিসেবে ভাবমূর্তি, সেটাই তো আক্রান্ত হয়ে গিয়েছে রেহাম খান এপিসোডে। আপনার বিবাহবিচ্ছিন্ন দ্বিতীয় স্ত্রী অনেক কথা বলেছেন আপনার সম্পর্কে...
কী বলব আমি! এ ব্যাপারটা এত দুঃখজনক।
দিল্লির জনপ্রিয় ইংরেজি চ্যানেলের মুখ্য সম্পাদক বলেছিলেন, রেহামের কোনও লোক নাকি ওঁদের ফোন করে বলেছে ইংল্যান্ডে প্রতিনিধি পাঠাতে। রেহাম আপনার সম্পর্কে বিস্ফোরক ইন্টারভিউ দেবেন। তবে মোটা টাকা পেমেন্ট করতে হবে।
ইন্ডিয়ান চ্যানেলকে বলেছে?
হ্যাঁ...
ইট ইজ ভেরি স্যাড। আমি এটা নিয়ে কথাই বলতে চাই না। এত যন্ত্রণাকাতর আমার কাছে এই বিচ্ছেদ অভিজ্ঞতা। ভেরি পেনফুল।
কিছু মনে করবেন না। আমার ধারণা ছিল, আপনাকে বিধ্বস্ত দেখব। কিন্তু দিল্লিতে এ বার দেখার পর মনে হল, সব কিছুই নর্ম্যাল রয়েছে।
বাইরে থেকে হয়তো মনে হচ্ছে। ডিভোর্স এমন গভীর যন্ত্রণা যে, ভেতরটা কেটে এফোঁড় ওফোঁড় করে দেয়। আমি খুবই কাবু হয়ে পড়েছিলাম। আই ওয়াজ রিয়েলি ডিপ্রেসড।
তারপর আত্মরক্ষা করলেন কী করে?
আমি আসলে এমন একজন মানুষ যার জীবন প্রতিনিয়ত ঘাতপ্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে চলেছে। কখনও সে উপরে গেছে। কখনও নীচে পড়েছে। আমি জানি জীবনে এই রকম দুর্যোগের মধ্যে কী করে ফাইটব্যাক করতে হয়। সে ভাবেই সামলে ওঠার চেষ্টা করছি।
কী ভাবে লড়াই করতে হয় এমন দুর্যোগের সঙ্গে? এবিপি পাঠকদের সঙ্গে শেয়ার করুন না।
প্রথমত, যে করে হোক নিজেকে শতযন্ত্রণা থেকেও টেনে তুলতে হবে। বলতে হবে, নিজের জন্য আমায় বাঁচতে হবে। আমার সামনে এখনও জীবন পড়ে রয়েছে।
দুই: নিজেকে একেবারেই করুণা করবেন না। প্রশ্ন তুলবেন না, কেন আমার এমন হল?
তিন: বিশ্লেষণ করুন, কেন এটা ঘটল? কী কী ভুল আপনি করেছেন?
চার: নিজেকে বলুন, এটা মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা তো নিশ্চয়ই। কিন্তু একদিক থেকে উপকারীও, আমাকে
জীবন সম্পর্কে আরও শিক্ষিত করে বিদায় নিল।
অনেকের মনে হয় জেমিমার আপনার প্রতি ভালবাসাটা অনেক জেনুইন। কলকাতায় কাউকে কাউকে দেখছি যাঁদের মনে হচ্ছে ওই যে আপনার বিয়ের দিন ট্যুইটার থেকে জেমিমা এতদিন ব্যবহার করা ‘খান’ পদবিটা সরিয়ে নিলেন, সেটা খুব রোম্যান্টিক।
আমি আর এ প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলতে চাই না গৌতম। ইট ইজ টু পার্সোনাল (যথেষ্ট আবেগপ্রবণ দেখাতে শুরু করেছে তাঁকে)।
ওকে। অন্য প্রসঙ্গে আসি। তিন বছর বাদে জীবনে কোথায় দেখছেন নিজেকে?
নো আইডিয়া। ভবিষ্যৎ কে জানে? আর জানতে পারে না বলেই জীবন এত চমকপ্রদ। সব কিছু আগাম জানা থাকলে বোরিং হয়ে যেত।
বেশ পুরনো একটা ইন্টারভিউতে বলেছিলেন, ‘আই অ্যাম আ হিডনিস্ট অ্যান্ড আই লিভ ইন দ্য প্রেজেন্ট।’ এটা কি সেই সব সময় বর্তমানে থাকতে চাওয়া?
আমি মনে করি না আমি হিডনিস্ট বলে। হিডনিস্ট হল সেই লোকটা যে বর্তমানে থাকে। জীবনের শখ-আহ্লাদগুলো পুরোমাত্রায় মিটিয়ে বাবুগিরি করে। এটা ক্ষয়িষ্ণু সংস্কৃতির প্রতীক। আমি মোটেও জাগতিক সুখের জন্য জীবন কাটাই না। আমি বাঁচি অ্যাচিভমেন্টের জন্য।
আপনি নিশ্চয়ই জানেন ভারতে এখন পাকিস্তান নিয়ে কেমন অস্থির অবস্থা। আমির, শাহরুখের মতো জনপ্রিয় হিরোরাও চার পাশের অস্থিরতা দেখে মন্তব্য করলেই লোকে বলছে, দেশে অত যখন প্রবলেম, যাও পাকিস্তানে গিয়ে থাকো।
আমি ঠিক এটাই কাল বলছিলাম নরেন্দ্র মোদীকে। যে আমাদের কী এমন বড় সমস্যা, সমাধান করা যাবে না? এর চেয়ে অনেক বড় বড় সমস্যা নিয়ে পৃথিবীতে প্রতিবেশী দেশরা আপস করে নিয়েছে। আমরা যদি কখনও ক্ষমতায় আসি, আমার ভিশন হল দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা। ট্রেড চালু হলেই কোটি কোটি টাকা ঠিক উঠে আসবে। বিলিয়নস নয়, ট্রিলিয়নস অব ডলারস। তখন সর্বস্তরের মানুষ উপকৃত হবে। ইমিডিয়েটলি দু’দেশে ব্যবসা চালু করা দরকার। শান্তি দরকার। তা হলেই এই সব অসহিষ্ণুতার বাতাবরণ কমে আসবে। মনে রাখতে হবে কিছু স্বার্থান্বেষী লোক তাতেও ঝামেলা পাকাতে চেষ্টা করবে। এমন লোক দু’দেশেই রয়েছে। তাদের চাপের কাছে দমে গেলে চলবে না। দু’একটা গুলি চললে বা বিস্ফোরণ হলেই শান্তি প্রক্রিয়া থামিয়ে দিলে চলবে না। যারা এগুলো করছে, তারা তো ঠিক এটাই চাইছে যে তাদের উৎপাতে উদ্যোগটা থেমে যাক।
ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির কমন অভিযোগ হল সীমান্তের ওপারের পারফর্মারেরা বলিউডে স্বাগত হন। কিন্তু আমাদের এখান থেকে কাউকে পাকিস্তানে আমন্ত্রণ জানানো হয় না।
জানি না কেন এমন হচ্ছে। আমি তো এককালে ওখানে অনেককে ডেকেছি প্রোগ্রাম করার জন্য। রেখা গিয়েছে। বিনোদ খন্না গিয়েছে। আমির গিয়েছে।
শুনছিলাম আপনি ‘আপ’ পার্টির খুব ভক্ত। তা হলে তো মোদীর সঙ্গে দেখা না করে এবার দিল্লিতে কেজরিওয়ালের সঙ্গে বৈঠক করা উচিত ছিল।
এটা ঠিকই ‘আপ’-এর আদর্শ আমার ভাল লাগে। আপ-এর আদর্শ আর আমাদের পার্টির স্লোগান একই— দুর্নীতি হটাও এবং শাসন ব্যবস্থার উন্নতি করো। আপনি যে সরকারেই রাজ করুন না কেন, তাকে তো মানুষের প্রতি দায়িত্বশীল হতে হবে। কেজরিওয়ালের সঙ্গে দেখা করতে পারলে ভাল হত। অবশ্য আমার সঙ্গে নীতীশ কুমারের দেখা হল। ‘আপ’-এর লক্ষ্য হল সিভিল সোসাইটি থেকে মানুষের জন্য সচেতনতা তৈরি। এটাই তো দরকার। আমাদের দু’দেশের নাগরিকেরাই জানে না তাদের কত সংবিধানসম্মত অধিকার আছে। আর এরা যত জানবে না, তত দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিবিদের সুবিধে। তত উত্থান হবে ডিক্টেটরদের।
পাক সাংবাদিকদের মুখে শুনছিলাম নওয়াজ শরিফ আপনাকে নিছক অপছন্দ নয়, মনেপ্রাণে ঘৃণা করেন। প্রধান বিরোধী পার্টির এক নম্বরের সঙ্গে সদ্ভাব না থাকারই কথা। কিন্তু এত ঘৃণা কেন?
ঘৃণার কারণ হল নওয়াজের লুঠেরা চরিত্রটা আমি মানুষের কাছে স্পষ্ট করে দিয়েছি। জারদারি... সে...
আপনি তো আগে বলতেন জারদারি করাপ্ট?
দুটোই। ওদের সংসারটা হল দুর্নীতিগ্রস্তদের কোয়ালিশন। তার মধ্যে অবশ্য একটা তফাত আছে। জারদারি নিজে তোলা তোলে।
বিদেশে বিশাল ব্যাঙ্ক ব্যালান্স করে ফেলেছে। যেখান থেকে পারে, টাকা মারে। কিন্তু নওয়াজ আরও ক্ষতিকারক। কারণ ও নিজের করাপশনে গণতন্ত্রের এক একটা পিলারকেও প্রভাবিত করে দিয়েছে। আর্মি চিফ-কে ও কিনতে
চেষ্টা করেছিল। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বাড়িতে ব্রিফকেসে লাখ লাখ টাকা ভরে পাঠিয়েছে। নির্বাচন কমিশনকে উৎকোচ দিয়েছে। এর পর দেশে সুস্থ নির্বাচন হবে কী করে? ও তো সবাইকে কিনে নিচ্ছে। মিডিয়াকে অবধি...
মিডিয়াও?
নামকরণই তো হয়ে গিয়েছে লেফাফা জার্নালিস্ট। লেফাফায় করে মিডিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অংশের জন্য টাকা পাঠানো হয়।
পাক মিডিয়া সম্পর্কে বরাবর আপনি খুব তিক্ত। বিশ্বকাপ জেতার পর আপনার আশেপাশে ভারতীয় রিপোর্টারের সংখ্যা পাকিস্তানি সাংবাদিকের চেয়ে বেশি ছিল। মনে করতে পারেন?
এত দিন আগের কথা মনে করতে পারছি না।
তখন পাকি সাংবাদিকদের আপনি বলতেন শেয়াল। যারা সাফল্যে ঝোপেঝাড়ে লুকিয়ে থাকে। আর আপনি হারছেন দেখলে লোকালয়ে কাম়ড়াতে ফেরে।
না, রাজনৈতিক সাংবাদিকরা সে রকম আমি বলব না। পাকিস্তানি প্রেসের চরিত্র এখন অনেক বদলেছে। ওরা খুব ভাইব্রান্ট। কেউ কেউ
পে রোলে আছে ঠিকই, কিন্তু গরিষ্ঠ অংশটা এখন নিয়মিতভাবে কেচ্ছাকেলেঙ্কারি ফাঁস করছে।
খুব বলিষ্ঠ। মিডিয়া নিয়ে সার্বিকভাবে আমার কোনও অভিযোগ থাকতে পারে না।
নিজের দেশেই দু’-তিনবার আপনার উপর আক্রমণের চেষ্টা হয়েছে। তাও নাকি আপনি যথেষ্ট সংখ্যক দেহরক্ষী নিয়ে ঘোরেন না। এত হাই স্টেক গেমে নিশ্ছিদ্র থাকতে না-চাওয়ার কারণ কী? রাজনীতি তো হিরোইজম হতে পারে না?
মৃত্যু তো একদিন আসবেই। আমি মনে করি যে দিন যাওয়ার যেতে হবে। কোনও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আপনাকে বাঁচাতে পারবে না। আই অ্যাম নট স্কেয়ার্ড অ্যাট অল। ভয়ে সিঁটিয়ে থাকার কোনও ব্যাপারই নেই। পাকিস্তানি রাজনীতিবিদদের মধ্যে একমাত্র আমায় দেখবেন, নির্ভয়ে যখন তখন জনতার কাছে চলে যেতে। বিস্ফোরণে মৃত্যু যদি কপালে লেখা থাকে, আপনি খণ্ডাবেন কী করে! আবার ঈশ্বর যদি চান, চরম অসহায়তায়ও উনিই আপনাকে সুস্থ করে তুলবেন। নির্বাচনের আগের দিন তো আমি মরেই যাচ্ছিলাম। তিরিশ ফুট উঁচু প্ল্যাটফর্ম থেকে পড়ে যাই।
ওই ভাবে পড়ে কেউ বেঁচে ফিরে আসতে পারে?
সে তো বলা হয়, আপনাকে রক্ষা করেছিল বুলেট প্রুফ জ্যাকেটের মোটা আস্তরণটা।
কোনও কিছুই বাঁচানোর মতো ছিল না। আমার মাথায় কনকাশন হয়ে যায়। সারা শরীরে সেলাই। বুকের হাড় ভাঙা। পাঁজরার দু’টো হাড় ভাঙা। সেখান থেকে তিন মাসে সুস্থ হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়ালাম। নতুন জীবনই পেলাম বলা যায়।
(ইমরান এ বার উসখুস করতে শুরু করেছেন। তাঁর দিল্লি-ইসলামাবাদ চার্টার্ড ফ্লাইটের সময় হয়ে যাচ্ছে। তাও বিমানবন্দরের পথে দিল্লির বিখ্যাত কুতুব সাহিব দরগা ঘুরে এয়ারপোর্টে ছুটবেন। বললাম, জাস্ট শেষ করছি।)
এগারো বছর আগে সৌরভের টিম যখন পাকিস্তান সফরে এসেছিল, আপনি অনেক আশাপ্রকাশ করেছিলেন যে, দু’দেশের সম্পর্ক দারুণ মজবুত করে দেবে এই সফর। কোথায় কী, উল্টে এমন অশান্তি যে এ বার তো সিরিজটাই হল না...
সম্পর্ক ভাল করতে হলে দু’দেশ থেকেই একটা জিনিস চাই, তা হল ডিটারমিনেশন। দু’দেশের নেতৃত্বকেই কঠোর হয়ে এগোতে হবে যে, খুচখাচ যাই ঘটুক সেটাকে গুরুত্ব না দিয়ে আমরা শান্তি আনব। সীমান্তে একবার গুলি চলল, তো নেতৃত্ব তাতে বিচলিত হয়ে গেল। এ ভাবে হবে না। হিংসাত্মক ঘটনা থাকবেই। তাকে পাত্তা দিলে মাথায় চড়ে বসবে।
ইমরান, আগে দু’দেশের খচখচানি একটা জিনিস নিয়েই ছিল — কাশ্মীর। এখন আরও একটা বিষয় তাতে যোগ হয়েছে — দাউদ ইব্রাহিম। পাকিস্তান যতক্ষণ না দাউদকে প্রত্যর্পণ করব বলে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, ততক্ষণ ভারতে অন্তত বিশ্বাসের সম্পর্ক তৈরি হবে না।
সে সবই স্বাভাবিক ভাবে হবে। আগে জোরদার মৈত্রী তৈরি হোক। তারপর এগুলোর সমাধান আপনাআপনি হয়ে যাবে।
মানতে পারছি না। দাউদ এখানে খুব স্পর্শকাতর কাঁটা। কাল ‘আজ তক’য়ে আপনার ইন্টারভিউ দেখে অবাক হয়ে গেলাম। যেখানে আপনি বলছেন, দাউদ পাকিস্তানে কি না, তাই নাকি আপনি জানেন না!
সত্যি আমি জানি না। আচ্ছা, আমায় বলুন তো দাউদ যদি পাকিস্তানে থেকেও থাকে, ও কি রাস্তায় আনন্দ করে হাঁটাহাটি করবে?
এটা পুরো পেশাদার রাজনীতিবিদের মতো কথা হল।
কেন, এটা কি বিশ্বাস হচ্ছে না যে, আমি জানি না! আমায় বলুন তো, দাউদের খবরটা পাব কোথা থেকে?
খুব সহজ। আপনার একুশ বছরের সহকর্মী মিয়াঁদাদকে ফোন করে। দাউদ তো সম্পর্কে মিয়াঁদাদের বেয়াই...
বাহ্, কী ব্রিলিয়ান্ট আইডিয়া!
দাউদ যদি থেকেও থাকে আমাদের দেশে নিশ্চয়ই আত্মগোপন করে রয়েছে। জাভেদকে আমি ফোন করলে ও কি বলে দেবে, হ্যাঁ রে ও তো এখানে লুকিয়ে রয়েছে।
সুত্রঃ আনন্দবাজার পত্রিকা
জীবনের সবচেয়ে খারাপ বছরগুলোর মধ্যে একটা। এক একটা বছর দারুণ যায়। এক একটা বছর যায় খুব খারাপ। এটা খুব খারাপগুলোর উপরের দিকে।
চরম নৈরাশ্যজনক বলছেন?
একটা জিনিস নৈরাশ্যজনক তখনই হয়, যখন সেই অভিজ্ঞতার কাছে আপনি হার স্বীকার করে নেন। আমার অভিধানে বাজে অভিজ্ঞতা বলে কিছু নেই। কী জানেন, ব্যর্থতা তখনই ব্যর্থতা যদি আপনি সেটা থেকে কিছু না শিখে বার হন। এ বছর স্তূপীকৃত ব্যর্থতার মধ্যে আমি অনেক কিছু শিখেছি। শেখার কোনও বয়স নেই। ইউ নেভার স্টপ লার্নিং। আঁতুড়ঘর থেকে সমাধি পর্যন্ত শিখতে শিখতে যেতে পারেন।
কী কী শিখলেন যদি বলেন?
বললাম তো জীবনের কঠিনতম বছরগুলোর মধ্যে একটা... ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে অনেক কিছু শিখিয়েছে। আরও কত কিছু সম্পর্কে শেখাল। জীবনে এমন নানা কিছু ঘটা শুরু হয়, যা আমি কনট্রোল করতে পারিনি। থিংস জাস্ট কেপ্ট অন হ্যাপেনিং। আমি পরে একলা বসে তার কারণগুলো বার করার চেষ্টা করেছি। কেন এমন হল? জীবনে এ বছর বসে আমি নিজেকে রিঅ্যাসেস করেছি। আত্মসমীক্ষা করেছি, যে-ডিরেকশনে আমি যাচ্ছি সেটা কি ঠিক? না আমার রুট বদলানো দরকার?
পেশাদার জীবনেও তো ব্যর্থতা। সম্প্রতি করাচি নির্বাচনে হারলেন।
খুব টাফ ইয়ার। আমাদের পার্টি পাকিস্তান তহরিক-ই-ইনসাফ-এর সাইজটা আসলে এ বছর এত দ্রুত বেড়ে গিয়েছে যে, সর্বত্র ম্যানেজ করা যাচ্ছে না। তা থেকে নানা প্রবলেম। আবার আমরা প্রধান বিরোধী দল হয়ে যাওয়ায় বাকি পার্টিগুলো ঈর্ষাকতর হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে গিয়েছে। নওয়াজের বিরুদ্ধে সেই ধর্নার পর থেকে গোটা রাজনৈতিক সিস্টেমটা যেন আমাদের বিরুদ্ধে চলে গিয়েছে।
ক্রিকেটজীবনে লোকে বলত, আপনার কিলার ইন্সটিংক্ট মুগ্ধ করার মতো। রাজনৈতিক জীবনে সেটা কিন্তু নিখোঁজ! নইলে নওয়াজ শরিফ যখন ওঁর বাসভবনের সামনে আপনার লাগাতার ধর্নায় বিধ্বস্ত, তখন হঠাৎ ধর্না তুলে নিলেন কেন?
আরে, এই আইডিয়াটা কোথা থেকে পেলেন যে আমরা নওয়াজকে ধর্নার মাধ্যমে ছুড়ে ফেলতে চেয়েছিলাম! একেবারেই না। আমরা এবং আরও একুশটা রাজনৈতিক দল মিলে যেটা বলেছিলাম, তা হল, ২০১৩-র সাধারণ নির্বাচনে সর্বাত্মক রিগিং হয়েছে। মনে রাখবেন, শুধু আমরা বলছিলাম না। এতগুলো পার্টি বলছিল। আমরা বলেছিলাম, নওয়াজ তুমি জুডিশিয়াল কমিশন গঠন করো। আর কমিশন যখন তদন্ত করবে তখন গদি ছাড়ো। ও তো জুডিশিয়াল কমিশন পরে করল। সেটা যদি আগে করে নিত, ধর্নাটাই হয় না।
কিন্তু নওয়াজ তো তখন যথেষ্ট চাপে ছিলেন?
ওই চাপটা শুধু ধর্নার জন্য ছিল না। সেই সময় ওর রক্ষক পুলিশ একটা শান্তিপূর্ণ শোভাযাত্রায় গুলি চালিয়ে একশো জনকে আহত করে। তার মধ্যে সতেরোজন ঘটনাস্থলেই মারা যায়। কারণ, ওদের পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জে গুলি করা হয়েছিল। এটা তো সবাই জানে যে, নওয়াজ হল পাকিস্তানের সবচেয়ে করাপ্ট পলিটিশিয়ান। যে আগের নির্বাচনে স্রেফ জোচ্চুরি করে জিতেছে।
রবিচন্দ্রন অশ্বিন সে দিন বলছিলেন, ‘‘আমি ইমরান খানের দারুণ ভক্ত। টিভিতে কোথাও উনি কিছু বলছেন দেখলেই আমি ঝপ করে বসে পড়ি।’’ অশ্বিন কে বা কী আপনি জানেন?
(ঘাড় নাড়িয়ে) সত্যি বলতে কী, ইন্ডিয়া দূরে থাক, আমি পাকিস্তান টিমেরও সবার নাম জানি না। পাকিস্তান-ইংল্যান্ড ম্যাচে কোথায় কী হচ্ছিল, ভাল ভাবে খবর রাখতে পারিনি। টুকটাক যা শুনি। আমি যত দূর জানি, ইন্ডিয়া-সাউথ আফ্রিকা সিরিজে দু’টিমের যে একমাত্র ফাস্ট বোলার সে-ই তিনটে টেস্ট খেলেনি। মডার্ন ক্রিকেট সম্পর্কে আমার কেমন একটা অবসাদ জন্মেছে যে এটা মিডিওকারদের আখড়া।
আমার কাছে সর্বোচ্চ মানের ক্রিকেট হল ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ টেস্ট ম্যাচ। ওটাই সেরা প্লেয়ার বাছার মাপকাঠি। চ্যালেঞ্জ যদি না থাকে, আমি শ্রেষ্ঠত্ব মাপব কী করে?
কাম অন, আপনি বলতে চান, টিভি দেখে কখনও মনে হয় না, ইস্ আমার জীবনে যদি আইপিএল থাকত?
একেবারেই না। আইপিএল মিস করেছি বলে এতটুকুও মনে করি না। কী হত, কয়েকটা ছক্কা মারিয়ের দেখা পেতাম, যারা আসল পরীক্ষায় পড়লে বেশির ভাগই মিডিওকার টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে ধরা পড়ত।
আপনার টেস্ট অভিষেক ১৯৭১ সালে। কিন্তু টিমে পাকাপাকি হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছিল ছয় বছর। রাজনীতিতে এ বার আপনার কুড়ি বছর পূর্ণ হবে। অথচ সাফল্য এখনও ধরা দিল না। ক্রিকেটের তুলনায় রাজনীতি বড় বেশি সময় নিচ্ছে না?
দু’টোর মধ্যে তুলনা চলে না। রাজনীতি অনেক বড় চ্যালেঞ্জ কারণ আমি একেবারে আউটসাইডার, যে বাইরে থেকে উড়ে এসে এত দিনকার শাসন ব্যবস্থাকে, সিস্টেমকে, তার নর্মকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। পাকিস্তানের চরমভাবাপন্ন পার্টি, লেফট উইং পার্টি, রাইট উইং পার্টি — সবাই গিয়ে একটা জায়গায় আমাদের বিরুদ্ধে এক। পিটিআই যদি এসে ওদের এত দিনকার মৌরসিপাট্টাকে সুনামির মতো ভাসিয়ে নিয়ে যায়। এই মুহূর্তে আমরাই দেশের একমাত্র ফেডারেল পার্টি। বাকিরা সব স্থানীয় পার্টিতে পর্যবসিত। আমরা এখন পাকিস্তানে একটা প্রদেশ চালাই, যেটা সম্পূর্ণ পিটিআই শাসিত। পাকিস্তানের যে কোনও সাধারণ মানুষের মত নিন। সে বলবে, ওটাই সবচেয়ে সুশাসিত প্রদেশ। যেখানে মানুষের জীবনযাত্রার উন্নতি হয়েছে। গ্রোথ রেট বেড়েছে। আইনশৃঙ্খলার অবস্থা ভাল।
লিডার হিসেবে এত বিখ্যাত। কিন্তু আপনার মুখে ক্রমাগত রাজনীতির কথা শুনে মনে হচ্ছে, এখন আর লিডার নন, পুরোদস্তুর রাজনীতিবিদ।
সেটা হয়তো কোনও দিন হতে পারব না। কারণ, প্রোটোটাইপ পলিটিশিয়ান আমি নই। তা ছাড়া আমি মনে করি, একজন নেতাও সার্থক রাজনীতিবিদ হয়ে উঠতে পারেন। সার্থক রাজনীতিবিদ মানে কেরিয়ার পলিটিশিয়ান নয়। সার্থক নেতা। যার সংজ্ঞা আমার কাছে, এমন কেউ যার নির্দিষ্ট ভিশন আছে। ভিশনের পিছনে ছোটার বন্য সাহস আছে। যিনি সেই আপাত অসম্ভবের পিছনে ছোটার সময় নিজের কথা ভাবেন না। যিনি বিভিন্ন মানুষকে অনুপ্রাণিত করে সেই আদর্শের পিছনে ছোটার জন্য এক পতাকার তলায় দাঁড় করাতে পারেন। যেমন আপনাদের দেশে গাঁধী। আমাদের দেশে কয়েদ-ই-আজম। ও দিকে ম্যান্ডেলা। কী অসাধারণ এক একজন মানুষ! কী বড় বড় সব ভিশন নিয়ে ওঁরা লড়াই করেছেন! এঁরা সত্যিকারের লিডার, কখনও পেশাদার রাজনীতিবিদ নন।
রাজনীতিতে এঁরা আপনার রোল মডেল বোঝা গেল। কিন্তু আপনার নিজের ভিশন কী?
আমার ভিশন এমন এক পাকিস্তান যা অনেক মানবিক। যেখানে সিভিল সোসাইটি হবে খুব গুরুত্বপূর্ণ। যেখানে পুরো ঝোঁকটাই থাকবে, মানুষটার অবস্থানের উন্নতিতে। আপনার শুনে মনে হতে পারে, এবং হয়তো সত্যি তাই যে, লক্ষ্যটা এখনও আইডিয়াল। তবে একে আমি তাড়া করছি এবং ইমিডিয়েট চ্যালেঞ্জ হল যে প্রদেশে আমরা ক্ষমতায়, সেখানে এগুলোকে সার্থক রূপ দেওয়া। ওখানে যদি শোকেস করতে পারি তা হলে নিশ্চয়ই মানুষের সংশয় কমবে। আর আমি এটা করেই ছাড়ব।
কথাগুলো শুনে বেশ মজা লাগছে। বিরানব্বই বিশ্বকাপের সময় আমায় দেওয়া একটা ইন্টারভিউতে আপনি বলেছিলেন, জীবনে কখনও রাজনীতিতে যোগ দেবেন না, আর বিয়ে-থা করবেন না।
তেইশ বছর আগের কথা বলছেন আপনি! কত লম্বা সময়! তখন আমার পক্ষে বোঝাই সম্ভব হয়নি, জীবন কী বিচিত্র বাঁক নিয়ে আপনাকে অদ্ভুত অদ্ভুত মোড়ে দাঁড় করিয়ে দিতে পারে! আপনি এক রকমভাবে জীবন কাটাবেন ঠিক করেছেন, এ বার হঠাৎ একটা স্রোতে সেটা পুরো উল্টো দিকে ঘুরে গেল। আমাদের কোরানে বলে, মানুষ একরকম প্ল্যানিং করে। আল্লা আর এক রকম করেন। যে কোনও একটা প্ল্যান কাজ করে।
সঞ্জয় মঞ্জরেকর সে দিন বলছিলেন, আপনার মতো উদারতা তিনি ভারতীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে দেখেননি। নব্বইয়ের নিউজিল্যান্ড সফরে সঞ্জয় রান না পাওয়ার পর আপনি নাকি ইংল্যান্ডে দেখা হওয়া মাত্র পরম স্নেহে বলেছিলেন, ‘‘সঞ্জয় এটা কী করলে! তোমার উপর আমার এত আশা। কেন হ্যাডলিকে এত ব্যাকফুটে খেলছিলে? পরের বার এই ভুল কোরো না।’’ সঞ্জয় আজও আপনার উৎসাহদানের কথা ভুলতে পারেন না। ভারত-পাক সিরিজে নিরপেক্ষ আম্পায়ার প্রচলনের পেছনেও আপনি।
কিন্তু এই যে আপনার সৎ-প্রগতিশীল মানুষ হিসেবে ভাবমূর্তি, সেটাই তো আক্রান্ত হয়ে গিয়েছে রেহাম খান এপিসোডে। আপনার বিবাহবিচ্ছিন্ন দ্বিতীয় স্ত্রী অনেক কথা বলেছেন আপনার সম্পর্কে...
কী বলব আমি! এ ব্যাপারটা এত দুঃখজনক।
দিল্লির জনপ্রিয় ইংরেজি চ্যানেলের মুখ্য সম্পাদক বলেছিলেন, রেহামের কোনও লোক নাকি ওঁদের ফোন করে বলেছে ইংল্যান্ডে প্রতিনিধি পাঠাতে। রেহাম আপনার সম্পর্কে বিস্ফোরক ইন্টারভিউ দেবেন। তবে মোটা টাকা পেমেন্ট করতে হবে।
ইন্ডিয়ান চ্যানেলকে বলেছে?
হ্যাঁ...
ইট ইজ ভেরি স্যাড। আমি এটা নিয়ে কথাই বলতে চাই না। এত যন্ত্রণাকাতর আমার কাছে এই বিচ্ছেদ অভিজ্ঞতা। ভেরি পেনফুল।
কিছু মনে করবেন না। আমার ধারণা ছিল, আপনাকে বিধ্বস্ত দেখব। কিন্তু দিল্লিতে এ বার দেখার পর মনে হল, সব কিছুই নর্ম্যাল রয়েছে।
বাইরে থেকে হয়তো মনে হচ্ছে। ডিভোর্স এমন গভীর যন্ত্রণা যে, ভেতরটা কেটে এফোঁড় ওফোঁড় করে দেয়। আমি খুবই কাবু হয়ে পড়েছিলাম। আই ওয়াজ রিয়েলি ডিপ্রেসড।
তারপর আত্মরক্ষা করলেন কী করে?
আমি আসলে এমন একজন মানুষ যার জীবন প্রতিনিয়ত ঘাতপ্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে চলেছে। কখনও সে উপরে গেছে। কখনও নীচে পড়েছে। আমি জানি জীবনে এই রকম দুর্যোগের মধ্যে কী করে ফাইটব্যাক করতে হয়। সে ভাবেই সামলে ওঠার চেষ্টা করছি।
কী ভাবে লড়াই করতে হয় এমন দুর্যোগের সঙ্গে? এবিপি পাঠকদের সঙ্গে শেয়ার করুন না।
প্রথমত, যে করে হোক নিজেকে শতযন্ত্রণা থেকেও টেনে তুলতে হবে। বলতে হবে, নিজের জন্য আমায় বাঁচতে হবে। আমার সামনে এখনও জীবন পড়ে রয়েছে।
দুই: নিজেকে একেবারেই করুণা করবেন না। প্রশ্ন তুলবেন না, কেন আমার এমন হল?
তিন: বিশ্লেষণ করুন, কেন এটা ঘটল? কী কী ভুল আপনি করেছেন?
চার: নিজেকে বলুন, এটা মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা তো নিশ্চয়ই। কিন্তু একদিক থেকে উপকারীও, আমাকে
জীবন সম্পর্কে আরও শিক্ষিত করে বিদায় নিল।
অনেকের মনে হয় জেমিমার আপনার প্রতি ভালবাসাটা অনেক জেনুইন। কলকাতায় কাউকে কাউকে দেখছি যাঁদের মনে হচ্ছে ওই যে আপনার বিয়ের দিন ট্যুইটার থেকে জেমিমা এতদিন ব্যবহার করা ‘খান’ পদবিটা সরিয়ে নিলেন, সেটা খুব রোম্যান্টিক।
আমি আর এ প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলতে চাই না গৌতম। ইট ইজ টু পার্সোনাল (যথেষ্ট আবেগপ্রবণ দেখাতে শুরু করেছে তাঁকে)।
ওকে। অন্য প্রসঙ্গে আসি। তিন বছর বাদে জীবনে কোথায় দেখছেন নিজেকে?
নো আইডিয়া। ভবিষ্যৎ কে জানে? আর জানতে পারে না বলেই জীবন এত চমকপ্রদ। সব কিছু আগাম জানা থাকলে বোরিং হয়ে যেত।
বেশ পুরনো একটা ইন্টারভিউতে বলেছিলেন, ‘আই অ্যাম আ হিডনিস্ট অ্যান্ড আই লিভ ইন দ্য প্রেজেন্ট।’ এটা কি সেই সব সময় বর্তমানে থাকতে চাওয়া?
আমি মনে করি না আমি হিডনিস্ট বলে। হিডনিস্ট হল সেই লোকটা যে বর্তমানে থাকে। জীবনের শখ-আহ্লাদগুলো পুরোমাত্রায় মিটিয়ে বাবুগিরি করে। এটা ক্ষয়িষ্ণু সংস্কৃতির প্রতীক। আমি মোটেও জাগতিক সুখের জন্য জীবন কাটাই না। আমি বাঁচি অ্যাচিভমেন্টের জন্য।
আপনি নিশ্চয়ই জানেন ভারতে এখন পাকিস্তান নিয়ে কেমন অস্থির অবস্থা। আমির, শাহরুখের মতো জনপ্রিয় হিরোরাও চার পাশের অস্থিরতা দেখে মন্তব্য করলেই লোকে বলছে, দেশে অত যখন প্রবলেম, যাও পাকিস্তানে গিয়ে থাকো।
আমি ঠিক এটাই কাল বলছিলাম নরেন্দ্র মোদীকে। যে আমাদের কী এমন বড় সমস্যা, সমাধান করা যাবে না? এর চেয়ে অনেক বড় বড় সমস্যা নিয়ে পৃথিবীতে প্রতিবেশী দেশরা আপস করে নিয়েছে। আমরা যদি কখনও ক্ষমতায় আসি, আমার ভিশন হল দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা। ট্রেড চালু হলেই কোটি কোটি টাকা ঠিক উঠে আসবে। বিলিয়নস নয়, ট্রিলিয়নস অব ডলারস। তখন সর্বস্তরের মানুষ উপকৃত হবে। ইমিডিয়েটলি দু’দেশে ব্যবসা চালু করা দরকার। শান্তি দরকার। তা হলেই এই সব অসহিষ্ণুতার বাতাবরণ কমে আসবে। মনে রাখতে হবে কিছু স্বার্থান্বেষী লোক তাতেও ঝামেলা পাকাতে চেষ্টা করবে। এমন লোক দু’দেশেই রয়েছে। তাদের চাপের কাছে দমে গেলে চলবে না। দু’একটা গুলি চললে বা বিস্ফোরণ হলেই শান্তি প্রক্রিয়া থামিয়ে দিলে চলবে না। যারা এগুলো করছে, তারা তো ঠিক এটাই চাইছে যে তাদের উৎপাতে উদ্যোগটা থেমে যাক।
ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির কমন অভিযোগ হল সীমান্তের ওপারের পারফর্মারেরা বলিউডে স্বাগত হন। কিন্তু আমাদের এখান থেকে কাউকে পাকিস্তানে আমন্ত্রণ জানানো হয় না।
জানি না কেন এমন হচ্ছে। আমি তো এককালে ওখানে অনেককে ডেকেছি প্রোগ্রাম করার জন্য। রেখা গিয়েছে। বিনোদ খন্না গিয়েছে। আমির গিয়েছে।
শুনছিলাম আপনি ‘আপ’ পার্টির খুব ভক্ত। তা হলে তো মোদীর সঙ্গে দেখা না করে এবার দিল্লিতে কেজরিওয়ালের সঙ্গে বৈঠক করা উচিত ছিল।
এটা ঠিকই ‘আপ’-এর আদর্শ আমার ভাল লাগে। আপ-এর আদর্শ আর আমাদের পার্টির স্লোগান একই— দুর্নীতি হটাও এবং শাসন ব্যবস্থার উন্নতি করো। আপনি যে সরকারেই রাজ করুন না কেন, তাকে তো মানুষের প্রতি দায়িত্বশীল হতে হবে। কেজরিওয়ালের সঙ্গে দেখা করতে পারলে ভাল হত। অবশ্য আমার সঙ্গে নীতীশ কুমারের দেখা হল। ‘আপ’-এর লক্ষ্য হল সিভিল সোসাইটি থেকে মানুষের জন্য সচেতনতা তৈরি। এটাই তো দরকার। আমাদের দু’দেশের নাগরিকেরাই জানে না তাদের কত সংবিধানসম্মত অধিকার আছে। আর এরা যত জানবে না, তত দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিবিদের সুবিধে। তত উত্থান হবে ডিক্টেটরদের।
পাক সাংবাদিকদের মুখে শুনছিলাম নওয়াজ শরিফ আপনাকে নিছক অপছন্দ নয়, মনেপ্রাণে ঘৃণা করেন। প্রধান বিরোধী পার্টির এক নম্বরের সঙ্গে সদ্ভাব না থাকারই কথা। কিন্তু এত ঘৃণা কেন?
ঘৃণার কারণ হল নওয়াজের লুঠেরা চরিত্রটা আমি মানুষের কাছে স্পষ্ট করে দিয়েছি। জারদারি... সে...
আপনি তো আগে বলতেন জারদারি করাপ্ট?
দুটোই। ওদের সংসারটা হল দুর্নীতিগ্রস্তদের কোয়ালিশন। তার মধ্যে অবশ্য একটা তফাত আছে। জারদারি নিজে তোলা তোলে।
বিদেশে বিশাল ব্যাঙ্ক ব্যালান্স করে ফেলেছে। যেখান থেকে পারে, টাকা মারে। কিন্তু নওয়াজ আরও ক্ষতিকারক। কারণ ও নিজের করাপশনে গণতন্ত্রের এক একটা পিলারকেও প্রভাবিত করে দিয়েছে। আর্মি চিফ-কে ও কিনতে
চেষ্টা করেছিল। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বাড়িতে ব্রিফকেসে লাখ লাখ টাকা ভরে পাঠিয়েছে। নির্বাচন কমিশনকে উৎকোচ দিয়েছে। এর পর দেশে সুস্থ নির্বাচন হবে কী করে? ও তো সবাইকে কিনে নিচ্ছে। মিডিয়াকে অবধি...
মিডিয়াও?
নামকরণই তো হয়ে গিয়েছে লেফাফা জার্নালিস্ট। লেফাফায় করে মিডিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অংশের জন্য টাকা পাঠানো হয়।
পাক মিডিয়া সম্পর্কে বরাবর আপনি খুব তিক্ত। বিশ্বকাপ জেতার পর আপনার আশেপাশে ভারতীয় রিপোর্টারের সংখ্যা পাকিস্তানি সাংবাদিকের চেয়ে বেশি ছিল। মনে করতে পারেন?
এত দিন আগের কথা মনে করতে পারছি না।
তখন পাকি সাংবাদিকদের আপনি বলতেন শেয়াল। যারা সাফল্যে ঝোপেঝাড়ে লুকিয়ে থাকে। আর আপনি হারছেন দেখলে লোকালয়ে কাম়ড়াতে ফেরে।
না, রাজনৈতিক সাংবাদিকরা সে রকম আমি বলব না। পাকিস্তানি প্রেসের চরিত্র এখন অনেক বদলেছে। ওরা খুব ভাইব্রান্ট। কেউ কেউ
পে রোলে আছে ঠিকই, কিন্তু গরিষ্ঠ অংশটা এখন নিয়মিতভাবে কেচ্ছাকেলেঙ্কারি ফাঁস করছে।
খুব বলিষ্ঠ। মিডিয়া নিয়ে সার্বিকভাবে আমার কোনও অভিযোগ থাকতে পারে না।
নিজের দেশেই দু’-তিনবার আপনার উপর আক্রমণের চেষ্টা হয়েছে। তাও নাকি আপনি যথেষ্ট সংখ্যক দেহরক্ষী নিয়ে ঘোরেন না। এত হাই স্টেক গেমে নিশ্ছিদ্র থাকতে না-চাওয়ার কারণ কী? রাজনীতি তো হিরোইজম হতে পারে না?
মৃত্যু তো একদিন আসবেই। আমি মনে করি যে দিন যাওয়ার যেতে হবে। কোনও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আপনাকে বাঁচাতে পারবে না। আই অ্যাম নট স্কেয়ার্ড অ্যাট অল। ভয়ে সিঁটিয়ে থাকার কোনও ব্যাপারই নেই। পাকিস্তানি রাজনীতিবিদদের মধ্যে একমাত্র আমায় দেখবেন, নির্ভয়ে যখন তখন জনতার কাছে চলে যেতে। বিস্ফোরণে মৃত্যু যদি কপালে লেখা থাকে, আপনি খণ্ডাবেন কী করে! আবার ঈশ্বর যদি চান, চরম অসহায়তায়ও উনিই আপনাকে সুস্থ করে তুলবেন। নির্বাচনের আগের দিন তো আমি মরেই যাচ্ছিলাম। তিরিশ ফুট উঁচু প্ল্যাটফর্ম থেকে পড়ে যাই।
ওই ভাবে পড়ে কেউ বেঁচে ফিরে আসতে পারে?
সে তো বলা হয়, আপনাকে রক্ষা করেছিল বুলেট প্রুফ জ্যাকেটের মোটা আস্তরণটা।
কোনও কিছুই বাঁচানোর মতো ছিল না। আমার মাথায় কনকাশন হয়ে যায়। সারা শরীরে সেলাই। বুকের হাড় ভাঙা। পাঁজরার দু’টো হাড় ভাঙা। সেখান থেকে তিন মাসে সুস্থ হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়ালাম। নতুন জীবনই পেলাম বলা যায়।
(ইমরান এ বার উসখুস করতে শুরু করেছেন। তাঁর দিল্লি-ইসলামাবাদ চার্টার্ড ফ্লাইটের সময় হয়ে যাচ্ছে। তাও বিমানবন্দরের পথে দিল্লির বিখ্যাত কুতুব সাহিব দরগা ঘুরে এয়ারপোর্টে ছুটবেন। বললাম, জাস্ট শেষ করছি।)
এগারো বছর আগে সৌরভের টিম যখন পাকিস্তান সফরে এসেছিল, আপনি অনেক আশাপ্রকাশ করেছিলেন যে, দু’দেশের সম্পর্ক দারুণ মজবুত করে দেবে এই সফর। কোথায় কী, উল্টে এমন অশান্তি যে এ বার তো সিরিজটাই হল না...
সম্পর্ক ভাল করতে হলে দু’দেশ থেকেই একটা জিনিস চাই, তা হল ডিটারমিনেশন। দু’দেশের নেতৃত্বকেই কঠোর হয়ে এগোতে হবে যে, খুচখাচ যাই ঘটুক সেটাকে গুরুত্ব না দিয়ে আমরা শান্তি আনব। সীমান্তে একবার গুলি চলল, তো নেতৃত্ব তাতে বিচলিত হয়ে গেল। এ ভাবে হবে না। হিংসাত্মক ঘটনা থাকবেই। তাকে পাত্তা দিলে মাথায় চড়ে বসবে।
ইমরান, আগে দু’দেশের খচখচানি একটা জিনিস নিয়েই ছিল — কাশ্মীর। এখন আরও একটা বিষয় তাতে যোগ হয়েছে — দাউদ ইব্রাহিম। পাকিস্তান যতক্ষণ না দাউদকে প্রত্যর্পণ করব বলে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, ততক্ষণ ভারতে অন্তত বিশ্বাসের সম্পর্ক তৈরি হবে না।
সে সবই স্বাভাবিক ভাবে হবে। আগে জোরদার মৈত্রী তৈরি হোক। তারপর এগুলোর সমাধান আপনাআপনি হয়ে যাবে।
মানতে পারছি না। দাউদ এখানে খুব স্পর্শকাতর কাঁটা। কাল ‘আজ তক’য়ে আপনার ইন্টারভিউ দেখে অবাক হয়ে গেলাম। যেখানে আপনি বলছেন, দাউদ পাকিস্তানে কি না, তাই নাকি আপনি জানেন না!
সত্যি আমি জানি না। আচ্ছা, আমায় বলুন তো দাউদ যদি পাকিস্তানে থেকেও থাকে, ও কি রাস্তায় আনন্দ করে হাঁটাহাটি করবে?
এটা পুরো পেশাদার রাজনীতিবিদের মতো কথা হল।
কেন, এটা কি বিশ্বাস হচ্ছে না যে, আমি জানি না! আমায় বলুন তো, দাউদের খবরটা পাব কোথা থেকে?
খুব সহজ। আপনার একুশ বছরের সহকর্মী মিয়াঁদাদকে ফোন করে। দাউদ তো সম্পর্কে মিয়াঁদাদের বেয়াই...
বাহ্, কী ব্রিলিয়ান্ট আইডিয়া!
দাউদ যদি থেকেও থাকে আমাদের দেশে নিশ্চয়ই আত্মগোপন করে রয়েছে। জাভেদকে আমি ফোন করলে ও কি বলে দেবে, হ্যাঁ রে ও তো এখানে লুকিয়ে রয়েছে।
সুত্রঃ আনন্দবাজার পত্রিকা
No comments