মহান বিজয় দিবস
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাজিত করার মধ্য দিয়ে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের স্বপ্ন চূড়ান্তভাবে বাস্তবায়িত হয়। আজ আমাদের সেই মহান বিজয় দিবস। যে অগণিত মানুষের আত্মত্যাগের ফলে এই বিজয় সম্ভব হয়েছিল, আমরা তাঁদের গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। এই দিনে আমরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। আরও স্মরণ করি জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, কামারুজ্জামান ও এম মনসুর আলীকে। পৃথিবীর অনেক দেশ বিনা রক্তপাতে ঔপনিবেশিক পরাধীনতা থেকে মুক্তি পেয়েছে। কিন্তু আমাদের স্বাধীনতা এক সাগর রক্তের বিনিময়ে পাওয়া। তাই প্রতিবছর স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবস উদ্যাপনের সময় আমাদের অগণিত শহীদের কথাই স্মরণে আসে সবকিছুর আগে। মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগের অনুভূতিই আমাদের প্রগাঢ়তম অনুভূতি। তবে এই দিবসগুলো আমাদের কিছু আত্মজিজ্ঞাসার সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়। স্বাধীনতার জন্য আমাদের আত্মত্যাগের পেছনে যে স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা ছিল, তার কতটা আমরা বাস্তবায়িত করতে পেরেছি? মুক্তিযুদ্ধের মূল স্বপ্ন ছিল স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, কিন্তু প্রকৃত অর্থে গণতান্ত্রিক আদর্শ ও রীতিনীতি কতটা প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি?
কতটা গণতান্ত্রিক হয়েছে আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনার প্রক্রিয়াগুলো? রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ ক্রিয়াকর্মে এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যকার পারস্পরিক আচরণে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি কতটা বিকশিত হয়েছে? আইনের দৃষ্টিতে সব নাগরিকের সমান অধিকার কি নিশ্চিত হয়েছে? সমাজে ন্যায় ও সমতা প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার ছিল স্বাধীনতার চেতনার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই ক্ষেত্রে কতটা অগ্রগতি সাধিত হয়েছে? মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণ করতে গেলে এসব আত্মজিজ্ঞাসা অত্যন্ত জরুরি। গত সাড়ে চার দশকে বাংলাদেশে অনেক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটেছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জিত হয়েছে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে প্রশংসনীয় উন্নতি ঘটেছে, দারিদ্র্য অনেক কমেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসেনি। একাত্তরের মতো গোটা জাতির ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়েই স্বাধীন বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন সত্য হতে পারে, লাঘব হতে পারে শহীদদের রক্তের ঋণ।
No comments