মন্ত্রিসভায় নতুন বেতন স্কেল অনুমোদন- ২১ লাখ চাকরিজীবীর বেতন বাড়ল
দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় ২১ লাখ
চাকরিজীবীর বেতন বাড়ছে। গ্রেড ভেদে মূল বেতন ৯১ থেকে ১০১ শতাংশ বাড়ার
বিষয়টি অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। নতুন স্কেলে প্রথম গ্রেডে সর্বোচ্চ মূল
বেতন ৭৮ হাজার টাকা (নির্ধারিত)। আর ২০তম গ্রেডে সর্বনিম্ন মূল বেতন ৮
হাজার ২৫০ টাকা। এখন সরকারি চাকুরেরা সর্বোচ্চ ৪০ হাজার টাকা ও সর্বনিম্ন ৪
হাজার ১০০ টাকা মূল বেতন পান।
গতকাল সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেল অনুমোদন করা হয়। কয়েক মাস ধরে বিষয়টি নিয়ে নানা রকম আলোচনা চলছিল। সর্বশেষ বেতন স্কেল দেওয়া হয়েছিল ২০০৯ সালে।
সশস্ত্র বাহিনীর জন্যও নতুন বেতনকাঠামো অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। প্রধানমন্ত্রী তিন বাহিনীর প্রধানদের বেতন ও পদমর্যাদা একই রকম করার অনুশাসন দিয়েছেন বলে বৈঠক শেষে সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানান মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত অর্থবছরে (২০১৪-১৫) বেতন-ভাতা খাতে সরকারের খরচ হয়েছে ৪৪ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ১৭ দশমিক ৭ শতাংশ। বেতন বৃদ্ধির ফলে চলতি অর্থবছরে (২০১৫-১৬) সরকারের অতিরিক্ত প্রয়োজন হবে ১৫ হাজার ৯০৪ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এই অর্থবছরে বেতন-ভাতা খাতে ৬০ হাজার ৩৫৬ কোটি টাকা (বাজেটের ২০ দশমিক ১ শতাংশ) লাগবে। উল্লেখ্য, এ বছরের জাতীয় বাজেট ২ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকা।
নতুন স্কেল কার্যকর হবে চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে। আগামী কিছুদিনের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি হলে বকেয়াসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেতন পাবেন। চলতি বছরে শুধু মূল বেতন এবং আগামী অর্থবছরের ১ জুলাই মূল বেতনের সঙ্গে অন্যান্য ভাতা যুক্ত হবে। এই অর্থবছরে পুরোনো বেতন স্কেলে অন্যান্য ভাতা দেওয়া হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বেতনের সঙ্গে ভাতা যুক্ত হওয়ায় আগামী অর্থবছরে অতিরিক্ত খরচের পরিমাণ হবে ২৩ হাজার ৮২৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। তখন জাতীয় বেতন স্কেল পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে মোট খরচ হবে ৬৯ হাজার ৯১৮ কোটি টাকা।
মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তা ও সদস্য, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার পাওয়া (এমপিওভুক্ত) শিক্ষক, সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নতুন জাতীয় বেতনে ১ জুলাই থেকে অন্তর্ভুক্ত হবেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, স্বশাসিত সংস্থা, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংক ও অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের ক্ষেত্রেও এই সময় থেকে নতুন বেতন স্কেল প্রযোজ্য হবে।
তবে মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বেতন, মর্যাদা ও পৃথক বেতন স্কেলের বিষয়টি পর্যালোচনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বেতন বৈষম্য নিরসন-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিকে। এর আগ পর্যন্ত তাঁরা যে গ্রেডে আছেন, সেই গ্রেডে নতুন স্কেল অনুযায়ী বেতন পাবেন। আর এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষকদের বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয় পর্যালোচনা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত দেবে, এরপর অর্থ বিভাগ এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করবে।
বেসরকারি শিক্ষকেরা মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা খুশি হননি। তাঁরা পূর্বঘোষিত আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন।
তবে শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান প্রথম আলোকে বলেছেন, মন্ত্রিসভা শিক্ষকদের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করেছে। খুব শিগগির তাঁদের বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধান হয়ে যাবে এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে।
জাতীয় বেতন স্কেলে ২০টি গ্রেড ছাড়াও দুটি বিশেষ গ্রেড থাকছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব পাবেন ৮৬ হাজার টাকা করে, সরকারের জ্যেষ্ঠ সচিবেরা পাবেন ৮২ হাজার টাকা করে। তিন বাহিনীর প্রধানেরা মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং মুখ্য সচিবের সমান বেতন পাবেন। আর জ্যেষ্ঠ সচিবের সমান বেতন পাবেন লে. জেনারেল ও সমপদমর্যাদার সামরিক কর্মকর্তারা।
জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সাবেক সচিব আলী ইমাম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, বেতন বৃদ্ধির এ বিষয়টি খুবই ইতিবাচক। সরকারি কর্মচারীদের স্বচ্ছ ও স্বাভাবিক জীবনযাত্রার জন্য এটা দরকার ছিল। তাঁর মতে, অন্য পেশা বা বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানের তুলনায় প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা অনেক কম বেতন পান বলে একধরনের অতৃপ্তি ছিল। এটি দূর হবে, পাশাপাশি সম্মানজনক এই বেতন-ভাতা মেধাবীদের সরকারি চাকরির প্রতি আকৃষ্ট করবে। এ ছাড়া দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও বাড়বে।
গ্রেড থাকবে, শ্রেণি বাদ: নতুন বেতন স্কেলে এখনকার মতোই ২০টি গ্রেড থাকবে। ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন বেতন ও চাকরি কমিশন ১৬টি গ্রেডের প্রস্তাব করলেও সচিব কমিটি সরকারের আর্থিক সামর্থ্য ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রত্যাশা বিবেচনা করে ২০টি গ্রেড বহাল রাখে।
তবে শ্রেণি (প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি) তুলে দেওয়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজ নিজ গ্রেড দিয়েই পরিচিত হবেন।
নতুন বেতন স্কেলে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাদ দেওয়া হয়েছে। চাকরিতে একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর এ ধরনের স্কেল পেতেন সরকারি চাকরিজীবীরা। এ নিয়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্ষোভ থাকলেও মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা বলেছেন, ওই দুটি সুবিধা বাদ দেওয়া হলেও পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, যেসব নতুন সুবিধা যুক্ত করা হয়েছে, তাতে তাঁরা বরং লাভবান হবেন। তাঁর মতে, টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড কেউ পেতেন, কেউ বঞ্চিত হতেন। এখন বার্ষিক প্রবৃদ্ধি সর্বজনীন করায় সবাই তা পাবেন এবং এটা যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য বলে মন্ত্রিসভা মনে করে। তিনি আরও বলেন, ১ জুলাইয়ের আগে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেডপ্রাপ্তরা এটা পাবেন। তবে নতুন করে কেউ আর তা পাবেন না।
বার্ষিক প্রবৃদ্ধি নির্দিষ্ট করে দেওয়া হলো: এই প্রথম সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মূল বেতনের ওপর বার্ষিক প্রবৃদ্ধি নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। প্রতিবছরের ১ জুলাই সবার জন্য একই সঙ্গে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হবে। ২০ থেকে ষষ্ঠ গ্রেড পর্যন্ত বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হবে মূল বেতনের ৫ শতাংশ। পঞ্চম গ্রেডে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হবে সাড়ে ৪ শতাংশ। ৩ ও ৪ নম্বর গ্রেডে প্রবৃদ্ধি হবে ৪ শতাংশ। গ্রেড ২-এর বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ। তবে ১ নম্বর গ্রেডে প্রবৃদ্ধি হবে না।
মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা বলেন, মূল বেতনের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হবে চক্রবৃদ্ধি হারে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘কারও মূল বেতন ১০ হাজার টাকা হলে এক বছরে তাঁর ৫ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি হবে ৫০০ টাকা। প্রথম বছর শেষে ওই ব্যক্তির প্রবৃদ্ধিসহ বেতন দাঁড়াবে ১০ হাজার ৫০০ টাকা। যেহেতু চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়বে, তাই দ্বিতীয় বছরে ওই ১০ হাজার ৫০০ টাকার ওপর বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হবে। এভাবে প্রতিবছরই বার্ষিক প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে।
তিন বাহিনীর প্রধানদের বেতন ও মর্যাদা সমান: সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর প্রধানেরা একই স্কেলে বেতন-ভাতা পাবেন। এর আগে সেনাপ্রধানের পদমর্যাদা ও বেতন অন্য দুই বাহিনীর প্রধানদের ওপরে ছিল। সেনাপ্রধান এখন ৪৫ হাজার টাকা মূল বেতন পান, অন্য দুই বাহিনীর প্রধানেরা পান ৪২ হাজার টাকা করে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, তিন বাহিনীর প্রধানেরা বেতন পাবেন ৮৬ হাজার টাকা করে। মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর প্রধানদের র্যাঙ্কও উন্নীত করা হবে।
নববর্ষ ভাতা চালু: সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী, শিক্ষক, সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা ও সদস্যদের জন্য বাংলা নববর্ষ ভাতা চালুর বিষয়টি অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, দেশে ধর্মভিত্তিক উৎসব রয়েছে। কিন্তু বাংলা নববর্ষ ভাতা সব সম্প্রদায়ের মানুষ একই সঙ্গে এবং একই সময়ে পাবেন। এই ভাতা হবে মূল বেতনের ২০ শতাংশ। মন্ত্রিসভা প্রশিক্ষণ ভাতা, ঝুঁকি ভাতা, চিকিৎসা ভাতা, শিক্ষা ভাতাসহ সব ধরনের বিশেষ ভাতা টাকার অঙ্কে নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। প্রেষণ ভাতা তুলে দেওয়া হয়েছে। তবে বাড়িভাড়া এখনকার মতো মূল বেতনের শতাংশ হারে (কোথায় ৪০, কোথাও ৫০ শতাংশ) দেওয়া হবে।
বাড়ল অবসর সুবিধা: নতুন বেতন-স্কেলে অবসর সুবিধা বাড়বে। ২০০৯ সালের বেতন স্কেলে সরকারি চাকুরেদের অবসরের সময় মূল বেতনের ৮০ শতাংশ ধরে পেনশন নির্ধারণ হতো। নতুন স্কেলে মূল বেতনের ৯০ শতাংশ ধরে পেনশন নির্ধারণ করা হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, নতুন জাতীয় বেতন স্কেলের বিশেষ দিক হচ্ছে, ওপরের ধাপের তুলনায় নিচের ধাপে বেতন বেশি বেড়েছে। তবে প্রতিবছর বার্ষিক প্রবৃদ্ধির যে হার নির্দিষ্ট করে দিয়েছে মন্ত্রিসভা, তাতে ভবিষ্যতে বেতন কমিশন গঠনের প্রয়োজন না-ও হতে পারে। উল্লেখ্য, বেতন কমিশন একটি স্থায়ী বেতন কমিশন গঠনের সুপারিশ করেছিল।
গত ২১ ডিসেম্বর সরকারের কাছে প্রতিবেদন দিয়েছিল বেতন কমিশন, যা সচিব কমিটি ও অর্থ বিভাগ হয়ে গতকাল মন্ত্রিসভায় ওঠে। ২০১৩ সালের ১ জুলাই থেকে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা পাচ্ছিলেন মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে মহার্ঘ ভাতা, যা নতুন বেতনকাঠামো বাস্তবায়নের দিন থেকে বিলুপ্ত হবে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও বেতন কমিশনের প্রধান মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, বেতন ও চাকরি কমিশন সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে, এটি বাস্তবায়নের এখতিয়ার সরকারের। তিনি বলেন, প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভালোভাবে দেখভাল না করা হলে তাঁদের কাছ থেকে সর্বোচ্চ উৎকর্ষ, সততা ও নিষ্ঠা পাওয়া যাবে না।
বেতন কমিশনের প্রধান আরও বলেন, ‘সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা এক বছরে যে বেতন পান, যুক্তরাষ্ট্রে সমপদমর্যাদার কর্মকর্তা আধা সপ্তাহে সেই বেতন পান। আমরা সরকারকে বলেছিলাম, তাঁদের যেন এক সপ্তাহের সমান বেতন দেওয়া হয়। সরকার সেই সুপারিশ রেখেছে।’
মন্ত্রিসভায় নতুন বেতন স্কেল অনুমোদন
গতকাল সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেল অনুমোদন করা হয়। কয়েক মাস ধরে বিষয়টি নিয়ে নানা রকম আলোচনা চলছিল। সর্বশেষ বেতন স্কেল দেওয়া হয়েছিল ২০০৯ সালে।
সশস্ত্র বাহিনীর জন্যও নতুন বেতনকাঠামো অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। প্রধানমন্ত্রী তিন বাহিনীর প্রধানদের বেতন ও পদমর্যাদা একই রকম করার অনুশাসন দিয়েছেন বলে বৈঠক শেষে সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানান মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত অর্থবছরে (২০১৪-১৫) বেতন-ভাতা খাতে সরকারের খরচ হয়েছে ৪৪ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ১৭ দশমিক ৭ শতাংশ। বেতন বৃদ্ধির ফলে চলতি অর্থবছরে (২০১৫-১৬) সরকারের অতিরিক্ত প্রয়োজন হবে ১৫ হাজার ৯০৪ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এই অর্থবছরে বেতন-ভাতা খাতে ৬০ হাজার ৩৫৬ কোটি টাকা (বাজেটের ২০ দশমিক ১ শতাংশ) লাগবে। উল্লেখ্য, এ বছরের জাতীয় বাজেট ২ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকা।
নতুন স্কেল কার্যকর হবে চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে। আগামী কিছুদিনের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি হলে বকেয়াসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেতন পাবেন। চলতি বছরে শুধু মূল বেতন এবং আগামী অর্থবছরের ১ জুলাই মূল বেতনের সঙ্গে অন্যান্য ভাতা যুক্ত হবে। এই অর্থবছরে পুরোনো বেতন স্কেলে অন্যান্য ভাতা দেওয়া হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বেতনের সঙ্গে ভাতা যুক্ত হওয়ায় আগামী অর্থবছরে অতিরিক্ত খরচের পরিমাণ হবে ২৩ হাজার ৮২৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। তখন জাতীয় বেতন স্কেল পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে মোট খরচ হবে ৬৯ হাজার ৯১৮ কোটি টাকা।
মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তা ও সদস্য, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার পাওয়া (এমপিওভুক্ত) শিক্ষক, সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নতুন জাতীয় বেতনে ১ জুলাই থেকে অন্তর্ভুক্ত হবেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, স্বশাসিত সংস্থা, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংক ও অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের ক্ষেত্রেও এই সময় থেকে নতুন বেতন স্কেল প্রযোজ্য হবে।
তবে মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বেতন, মর্যাদা ও পৃথক বেতন স্কেলের বিষয়টি পর্যালোচনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বেতন বৈষম্য নিরসন-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিকে। এর আগ পর্যন্ত তাঁরা যে গ্রেডে আছেন, সেই গ্রেডে নতুন স্কেল অনুযায়ী বেতন পাবেন। আর এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষকদের বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয় পর্যালোচনা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত দেবে, এরপর অর্থ বিভাগ এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করবে।
বেসরকারি শিক্ষকেরা মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা খুশি হননি। তাঁরা পূর্বঘোষিত আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন।
তবে শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান প্রথম আলোকে বলেছেন, মন্ত্রিসভা শিক্ষকদের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করেছে। খুব শিগগির তাঁদের বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধান হয়ে যাবে এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে।
জাতীয় বেতন স্কেলে ২০টি গ্রেড ছাড়াও দুটি বিশেষ গ্রেড থাকছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব পাবেন ৮৬ হাজার টাকা করে, সরকারের জ্যেষ্ঠ সচিবেরা পাবেন ৮২ হাজার টাকা করে। তিন বাহিনীর প্রধানেরা মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং মুখ্য সচিবের সমান বেতন পাবেন। আর জ্যেষ্ঠ সচিবের সমান বেতন পাবেন লে. জেনারেল ও সমপদমর্যাদার সামরিক কর্মকর্তারা।
জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সাবেক সচিব আলী ইমাম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, বেতন বৃদ্ধির এ বিষয়টি খুবই ইতিবাচক। সরকারি কর্মচারীদের স্বচ্ছ ও স্বাভাবিক জীবনযাত্রার জন্য এটা দরকার ছিল। তাঁর মতে, অন্য পেশা বা বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানের তুলনায় প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা অনেক কম বেতন পান বলে একধরনের অতৃপ্তি ছিল। এটি দূর হবে, পাশাপাশি সম্মানজনক এই বেতন-ভাতা মেধাবীদের সরকারি চাকরির প্রতি আকৃষ্ট করবে। এ ছাড়া দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও বাড়বে।
গ্রেড থাকবে, শ্রেণি বাদ: নতুন বেতন স্কেলে এখনকার মতোই ২০টি গ্রেড থাকবে। ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন বেতন ও চাকরি কমিশন ১৬টি গ্রেডের প্রস্তাব করলেও সচিব কমিটি সরকারের আর্থিক সামর্থ্য ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রত্যাশা বিবেচনা করে ২০টি গ্রেড বহাল রাখে।
তবে শ্রেণি (প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি) তুলে দেওয়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজ নিজ গ্রেড দিয়েই পরিচিত হবেন।
নতুন বেতন স্কেলে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাদ দেওয়া হয়েছে। চাকরিতে একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর এ ধরনের স্কেল পেতেন সরকারি চাকরিজীবীরা। এ নিয়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্ষোভ থাকলেও মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা বলেছেন, ওই দুটি সুবিধা বাদ দেওয়া হলেও পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, যেসব নতুন সুবিধা যুক্ত করা হয়েছে, তাতে তাঁরা বরং লাভবান হবেন। তাঁর মতে, টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড কেউ পেতেন, কেউ বঞ্চিত হতেন। এখন বার্ষিক প্রবৃদ্ধি সর্বজনীন করায় সবাই তা পাবেন এবং এটা যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য বলে মন্ত্রিসভা মনে করে। তিনি আরও বলেন, ১ জুলাইয়ের আগে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেডপ্রাপ্তরা এটা পাবেন। তবে নতুন করে কেউ আর তা পাবেন না।
বার্ষিক প্রবৃদ্ধি নির্দিষ্ট করে দেওয়া হলো: এই প্রথম সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মূল বেতনের ওপর বার্ষিক প্রবৃদ্ধি নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। প্রতিবছরের ১ জুলাই সবার জন্য একই সঙ্গে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হবে। ২০ থেকে ষষ্ঠ গ্রেড পর্যন্ত বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হবে মূল বেতনের ৫ শতাংশ। পঞ্চম গ্রেডে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হবে সাড়ে ৪ শতাংশ। ৩ ও ৪ নম্বর গ্রেডে প্রবৃদ্ধি হবে ৪ শতাংশ। গ্রেড ২-এর বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ। তবে ১ নম্বর গ্রেডে প্রবৃদ্ধি হবে না।
মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা বলেন, মূল বেতনের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হবে চক্রবৃদ্ধি হারে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘কারও মূল বেতন ১০ হাজার টাকা হলে এক বছরে তাঁর ৫ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি হবে ৫০০ টাকা। প্রথম বছর শেষে ওই ব্যক্তির প্রবৃদ্ধিসহ বেতন দাঁড়াবে ১০ হাজার ৫০০ টাকা। যেহেতু চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়বে, তাই দ্বিতীয় বছরে ওই ১০ হাজার ৫০০ টাকার ওপর বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হবে। এভাবে প্রতিবছরই বার্ষিক প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে।
তিন বাহিনীর প্রধানদের বেতন ও মর্যাদা সমান: সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর প্রধানেরা একই স্কেলে বেতন-ভাতা পাবেন। এর আগে সেনাপ্রধানের পদমর্যাদা ও বেতন অন্য দুই বাহিনীর প্রধানদের ওপরে ছিল। সেনাপ্রধান এখন ৪৫ হাজার টাকা মূল বেতন পান, অন্য দুই বাহিনীর প্রধানেরা পান ৪২ হাজার টাকা করে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, তিন বাহিনীর প্রধানেরা বেতন পাবেন ৮৬ হাজার টাকা করে। মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর প্রধানদের র্যাঙ্কও উন্নীত করা হবে।
নববর্ষ ভাতা চালু: সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী, শিক্ষক, সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা ও সদস্যদের জন্য বাংলা নববর্ষ ভাতা চালুর বিষয়টি অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, দেশে ধর্মভিত্তিক উৎসব রয়েছে। কিন্তু বাংলা নববর্ষ ভাতা সব সম্প্রদায়ের মানুষ একই সঙ্গে এবং একই সময়ে পাবেন। এই ভাতা হবে মূল বেতনের ২০ শতাংশ। মন্ত্রিসভা প্রশিক্ষণ ভাতা, ঝুঁকি ভাতা, চিকিৎসা ভাতা, শিক্ষা ভাতাসহ সব ধরনের বিশেষ ভাতা টাকার অঙ্কে নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। প্রেষণ ভাতা তুলে দেওয়া হয়েছে। তবে বাড়িভাড়া এখনকার মতো মূল বেতনের শতাংশ হারে (কোথায় ৪০, কোথাও ৫০ শতাংশ) দেওয়া হবে।
বাড়ল অবসর সুবিধা: নতুন বেতন-স্কেলে অবসর সুবিধা বাড়বে। ২০০৯ সালের বেতন স্কেলে সরকারি চাকুরেদের অবসরের সময় মূল বেতনের ৮০ শতাংশ ধরে পেনশন নির্ধারণ হতো। নতুন স্কেলে মূল বেতনের ৯০ শতাংশ ধরে পেনশন নির্ধারণ করা হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, নতুন জাতীয় বেতন স্কেলের বিশেষ দিক হচ্ছে, ওপরের ধাপের তুলনায় নিচের ধাপে বেতন বেশি বেড়েছে। তবে প্রতিবছর বার্ষিক প্রবৃদ্ধির যে হার নির্দিষ্ট করে দিয়েছে মন্ত্রিসভা, তাতে ভবিষ্যতে বেতন কমিশন গঠনের প্রয়োজন না-ও হতে পারে। উল্লেখ্য, বেতন কমিশন একটি স্থায়ী বেতন কমিশন গঠনের সুপারিশ করেছিল।
গত ২১ ডিসেম্বর সরকারের কাছে প্রতিবেদন দিয়েছিল বেতন কমিশন, যা সচিব কমিটি ও অর্থ বিভাগ হয়ে গতকাল মন্ত্রিসভায় ওঠে। ২০১৩ সালের ১ জুলাই থেকে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা পাচ্ছিলেন মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে মহার্ঘ ভাতা, যা নতুন বেতনকাঠামো বাস্তবায়নের দিন থেকে বিলুপ্ত হবে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও বেতন কমিশনের প্রধান মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, বেতন ও চাকরি কমিশন সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে, এটি বাস্তবায়নের এখতিয়ার সরকারের। তিনি বলেন, প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভালোভাবে দেখভাল না করা হলে তাঁদের কাছ থেকে সর্বোচ্চ উৎকর্ষ, সততা ও নিষ্ঠা পাওয়া যাবে না।
বেতন কমিশনের প্রধান আরও বলেন, ‘সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা এক বছরে যে বেতন পান, যুক্তরাষ্ট্রে সমপদমর্যাদার কর্মকর্তা আধা সপ্তাহে সেই বেতন পান। আমরা সরকারকে বলেছিলাম, তাঁদের যেন এক সপ্তাহের সমান বেতন দেওয়া হয়। সরকার সেই সুপারিশ রেখেছে।’
মন্ত্রিসভায় নতুন বেতন স্কেল অনুমোদন
গ্রেড পুরোনো স্কেল নতুন স্কেল
(নির্ধারিত) (নির্ধারিত)
গ্রেড–১ ৪০,০০০ ৭৮,০০০
গ্রেড–২ ৩৩,৫০০ ৬৬,০০০
গ্রেড–৩ ২৯,০০০ ৫৬,৫০০
গ্রেড–৪ ২৫,৭৫০ ৫০,০০০
গ্রেড–৫ ২২,২৫০ ৪৩,০০০
গ্রেড–৬ ১৮,৫০০ ৩৫,৫০০
গ্রেড–৭ ১৫,০০০ ২৯,০০০
গ্রেড–৮ ১২,০০০ ২৩,০০০
গ্রেড–৯ ১১,০০০ ২২,০০০
গ্রেড–১০ ৮,০০০ ১৬,০০০
গ্রেড–১১ ৬,৪০০ ১২,৫০০
গ্রেড–১২ ৫,৯০০ ১১,৩০০
গ্রেড–১৩ ৫,৫০০ ১১,০০০
গ্রেড–১৪ ৫,২০০ ১০,২০০
গ্রেড–১৫ ৪,৯০০ ৯,৭০০
গ্রেড–১৬ ৪,৭০০ ৯,৩০০
গ্রেড–১৭ ৪,৫০০ ৯,০০০
গ্রেড–১৮ ৪,৪০০ ৮,৮০০
গ্রেড–১৯ ৪,২৫০ ৮,৫০০
গ্রেড–২০ ৪,১০০ ৮,২৫০
গ্রেড–১ ৪০,০০০ ৭৮,০০০
গ্রেড–২ ৩৩,৫০০ ৬৬,০০০
গ্রেড–৩ ২৯,০০০ ৫৬,৫০০
গ্রেড–৪ ২৫,৭৫০ ৫০,০০০
গ্রেড–৫ ২২,২৫০ ৪৩,০০০
গ্রেড–৬ ১৮,৫০০ ৩৫,৫০০
গ্রেড–৭ ১৫,০০০ ২৯,০০০
গ্রেড–৮ ১২,০০০ ২৩,০০০
গ্রেড–৯ ১১,০০০ ২২,০০০
গ্রেড–১০ ৮,০০০ ১৬,০০০
গ্রেড–১১ ৬,৪০০ ১২,৫০০
গ্রেড–১২ ৫,৯০০ ১১,৩০০
গ্রেড–১৩ ৫,৫০০ ১১,০০০
গ্রেড–১৪ ৫,২০০ ১০,২০০
গ্রেড–১৫ ৪,৯০০ ৯,৭০০
গ্রেড–১৬ ৪,৭০০ ৯,৩০০
গ্রেড–১৭ ৪,৫০০ ৯,০০০
গ্রেড–১৮ ৪,৪০০ ৮,৮০০
গ্রেড–১৯ ৪,২৫০ ৮,৫০০
গ্রেড–২০ ৪,১০০ ৮,২৫০
No comments