প্রধান বিচারপতির ‘সংশয়ে’ মনক্ষুণ্ন বিচারপতি চৌধুরী
বিচারপতি
এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীকে নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে প্রধান বিচারপতির
পক্ষে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার জেনারেলের পাঠানো চিঠিতে মনক্ষুণ্ন হয়েছেন
তিনি।
ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার জেনারেলের নামে আপিল বিভাগের একজন বিচারপতিকে চিঠি পাঠানোকেও অসৌজন্যমূলক ও অশোভনীয় বলেছেন বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী।
তবে প্রধান বিচারপতির নির্দেশক্রমে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের পাঠানো চিঠির জবাবে আবারো তার অবস্থান পরিস্কার করেছেন বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী। মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠানো বিচারপতি চৌধুরীর দুই পৃষ্ঠার সর্বশেষ চিঠির বিষয়:০২/০৯/২০১৫ খ্রিষ্টাব্দ, স্মারক নং-১৭৯৬২ জি. প্রসঙ্গে।
এরপর চিঠিতে লেখা হয়: আপনার আদেশক্রমে আমাকে লেখা ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার জাকির হোসেন সাহেবের ২.৯.২০১৫ ইং তারিখের চিঠি আমার হস্তগত হয়েছে। আমার ৩১.৮.২০১৫ তারিখে প্রদেয় জবাবের প্রেক্ষিতে এবং উক্ত জবাবে বর্ণিত তথ্যসমূহ, শাসনতান্ত্রিক ও আইন সম্পর্কিত বিবরণের সঠিকতা সম্পর্কে সুনিশ্চিত হয়েই আপনি ০২.০৯.২০১৫ ইং তারিখের পত্রে আমার পেনশন বিষয়ক কার্যক্রম শুরু করার বিষয়ে আমাকে অবহিত করেছেন।
তিনি লিখেছেন: ‘এই প্রসঙ্গে আমি উল্লেখ করতে চাই যে, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারকে দিয়ে একজন আপিল বিভাগের বিচারপতিকে চিঠি দেওয়া শুধু অশোভনীয় ও অসৌজন্যমূলকই নয়, সহকর্মী বিচারকগণের প্রতি চরম হেয় ও অবমাননার বহিঃপ্রকাশ। ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারকে নিজ নাম ও স্বাক্ষরসহ আপীল বিভাগের একজন বিচারপতিকে চিঠি লিখতে নির্দেশ দিয়ে এবং তার স্বাক্ষর ও নামে চিঠি প্রেরণ করে আপনি মূলত সুপ্রীম কোর্টের সকল মাননীয় বিচারপতিকেই অসম্মান করেছেন। সুপ্রীম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল প্রধান বিচারপতির রেজিস্ট্রার নন। তিনি সুপ্রীম কোর্টের সকল বিচারপতিগণের রেজিস্ট্রার।’
প্রধান বিচারপতির পক্ষে দেখানো সংশয়কে সম্মানহানিকর হিসেবেও উল্লেখ করা হয় চিঠিতে। লেখা হয়: আপনার পত্রে আমাকে ‘ব্রিটিশ পাসপোর্টধারী’ উল্লেখ করেছেন এবং আমি পেন্ডিং রায় না লিখে বিদেশ চলে যেতে পারি মর্মে সংশয় প্রকাশ করেছেন যা উদ্ভট, হাস্যকর, কল্পনাপ্রসূত, সৌজন্য বহির্ভূত ও সম্মানহানিকর। বিচারপতি হিসেবে আমি আমার সাংবিধানিক শপথ রক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ। পেন্ডিং রায় না লিখে বিদেশ চলে যাওয়ার মত অসুস্থ চিন্তা কোনো সৎ, নীতিবান, দেশপ্রেমিক বিচারপতি করতে পারেন না। ‘ব্রিটিশ পাসপোর্টধারী’ না হয়েও যে কোনো বিচারপতি বিদেশে যেতে পারেন। তবে প্রসঙ্গত উল্লেখ করতেই হয় যে, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা, দেশ ও জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে একজন মুক্তিযোদ্ধা কখনোই সরে দাঁড়াতে পারেন না। একজন রাজাকার বা শান্তি কমিটির সদস্যই কেবল দেশ ও জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা অস্বীকার করতে পারে, যা ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত।’
বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরীর চিঠিতে এরপর আছে: ‘আপনার প্রেরিত পত্রে আপনি ‘যদি’ ও ‘সংশয়’ শব্দসমূহের ভিত্তিতে আমার বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি বা অন্য কোনো বিচারপতিই তাদের সহকর্মী অন্য কোনো বিচারপতির ক্ষেত্রে ‘যদি’ ও ‘সংশয়’ ব্যবহার করে কোনোরূপ মন্তব্য করতে পারেন না। বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হিসেবে আপনি আমার ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণে ‘যদি’ ও ‘সংশয়’ শব্দসমূহ ব্যবহার করেছেন এবং উক্ত শব্দসমূহের ভিত্তিতে আমার ক্ষেত্রে অলীক ও কল্পনাপ্রসূত সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন। যদি ও সংশয় শব্দসমূহের ভিত্তিতে একজন বিচারপতি তার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন না। একজন বিচারককে সকল ‘সংশয়’ এর উর্ধ্বে উঠে ন্যয় বিচারের জন্য সিদ্ধান্ত নিতে হয়। একজন বিচারককে সিদ্ধান্ত নিতে হয় দৃশ্যমাণ ঘটনার ভিত্তিত, কল্পনার ভিত্তিতে নয়। ‘যদি’ ও ‘সংশয়’ এর ভিত্তিতে কোনো সিদ্ধান্ত নিলে তা হবে অলীক, কল্পনা প্রসূত ও ন্যায় বিচার পরিপন্থী। মাননীয় প্রধান বিচারপতি কাল্পনিক ধারণার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে বিচার ব্যবস্থায় বিপর্যয় নেমে আসবে। আপনার ‘যদি’ ও ‘সংশয়’ এর আশংকা এই দেশের জনসাধারণকে ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত করবে এবং বিচারালয়ের পবিত্রতা ক্ষুণ্ন করবে।’
‘আপনার পত্রে বর্ণিত শব্দপ্রয়োগ থেকে এটা সুষ্পষ্ট যে, code of conduct, judges of the supreme court এর আওতায়, আমার প্রতি আপনার আচরণ ‘dignifide’ ও ‘respectful’ নয়,’ বলে মন্তব্য করেন বিচারপতি চৌধুরী।
তিনি লিখেছেন: ‘সংবিধান অনুযায়ী সুপ্রীম কোর্টের সকল বিচারপতিই সাংবিধানিক পদের ধারক। কোনো বিচারপতিই প্রধান বিচারপতির অধস্তন নহে। আইনের ভাষায় বলা হয় বিচারপতিদের তুলনায় প্রধান বিচারপতির অবস্থান Primus inter press অর্থাৎ তিনি সহকর্মীদের মধ্যে প্রথম। সংবিধানের অনুচ্ছেদ মতে প্রত্যেক বিচারকই বিচারিক ব্যাপারে স্বাধীন, প্রধান বিচারপতির অধস্তন নহেন। আপনার ২রা সেপ্টেম্বরের পত্রে, ‘উক্ত রায়ের নথিগুলো সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ফেরত প্রদান করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো’ মর্মে মামলার নথি ফেরত চাওয়া সংবিধানের ৯৪(৪) ধারা মোতাবেক আমার স্বাধীন বিচার ও রায় দানের ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপস্বরূপ, যা পুনরায় আমার প্রতি আপনার ‘ill will’এর সুস্পষ্ট বহিঃপ্রকাশ।’
তিনি লিখেন: ‘অতীতে কোনো বিচারপতিকেই এভাবে পেনশন গ্রহণের পূর্বে ফাইল ফেরত দিতে বলা হয়নি। অতীতে সকল বিচারপতিই অবসরের পর কয়েক মাস এমনকি বছর নিয়েছেন অসমাপ্ত রায় শেষ করতে, এটা আপনার ক্ষেত্রেও নিশ্চয়ই হবে। আপনার কাছে বর্তমান দস্তখতের অপেক্ষায় বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে কয়েক মাস ধরে। অতীতের সকল বিচারপতিই অবসরের পরও রায় লিখেছেন এবং ভবিষ্যতে তা হবে এটাই স্বাভাবিক।’
‘অত্র পত্রের সঙ্গে সংযুক্তি হিসেবে সাম্প্রতিক সময়ে অবসর গ্রহণ করা প্রধান বিচারপতিসহ কয়েকজন বিচারপতির নাম সংযুক্ত করা হলো, তবে উল্লেখিত বিচারপতিগণ ছাড়াও অন্য সকলেই অবসরের পরও রায় লিখেছেন এবং ভবিষ্যতেও লিখবেন। এটাই স্বাভাবিক,’ বলে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী উল্লেখ করেন।
তিনি এরপর লিখেছেন: ‘প্রধান বিচারপতি হিসেবে আপনি সহকর্মী বিচারকদের আপনার কোনো আদেশ প্রশাসনিক কর্মকর্তার মাধ্যমে অবহিত করার অধিকার রাখেন না। প্রশাসনিক কর্মকর্তার মাধ্যমে আমাকে আপনার কল্পনা প্রসূত আদেশ অবহিতকরণের মধ্য দিয়ে যে অসম্মান ও সৌজন্যহীনতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, আমার সহকর্মী বিচারকগণের সহিত ভবিষ্যতে তার পুনরাবৃত্তি না করার জন্য বিনীত অনুরোধ করছি। ৩০ লক্ষ শহীদ আর মা-বোনের সম্ভ্রম কোটি মানুষের ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের সংবিধান। আমাদের সাংবিধানিক শপথ আমরা কোনোভাবেই ভঙ্গ করতে পারি না।’
বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরীর এই চিঠিটির অনুলিপি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগেও পাঠানো হয়।
ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার জেনারেলের নামে আপিল বিভাগের একজন বিচারপতিকে চিঠি পাঠানোকেও অসৌজন্যমূলক ও অশোভনীয় বলেছেন বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী।
তবে প্রধান বিচারপতির নির্দেশক্রমে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের পাঠানো চিঠির জবাবে আবারো তার অবস্থান পরিস্কার করেছেন বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী। মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠানো বিচারপতি চৌধুরীর দুই পৃষ্ঠার সর্বশেষ চিঠির বিষয়:০২/০৯/২০১৫ খ্রিষ্টাব্দ, স্মারক নং-১৭৯৬২ জি. প্রসঙ্গে।
এরপর চিঠিতে লেখা হয়: আপনার আদেশক্রমে আমাকে লেখা ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার জাকির হোসেন সাহেবের ২.৯.২০১৫ ইং তারিখের চিঠি আমার হস্তগত হয়েছে। আমার ৩১.৮.২০১৫ তারিখে প্রদেয় জবাবের প্রেক্ষিতে এবং উক্ত জবাবে বর্ণিত তথ্যসমূহ, শাসনতান্ত্রিক ও আইন সম্পর্কিত বিবরণের সঠিকতা সম্পর্কে সুনিশ্চিত হয়েই আপনি ০২.০৯.২০১৫ ইং তারিখের পত্রে আমার পেনশন বিষয়ক কার্যক্রম শুরু করার বিষয়ে আমাকে অবহিত করেছেন।
তিনি লিখেছেন: ‘এই প্রসঙ্গে আমি উল্লেখ করতে চাই যে, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারকে দিয়ে একজন আপিল বিভাগের বিচারপতিকে চিঠি দেওয়া শুধু অশোভনীয় ও অসৌজন্যমূলকই নয়, সহকর্মী বিচারকগণের প্রতি চরম হেয় ও অবমাননার বহিঃপ্রকাশ। ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারকে নিজ নাম ও স্বাক্ষরসহ আপীল বিভাগের একজন বিচারপতিকে চিঠি লিখতে নির্দেশ দিয়ে এবং তার স্বাক্ষর ও নামে চিঠি প্রেরণ করে আপনি মূলত সুপ্রীম কোর্টের সকল মাননীয় বিচারপতিকেই অসম্মান করেছেন। সুপ্রীম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল প্রধান বিচারপতির রেজিস্ট্রার নন। তিনি সুপ্রীম কোর্টের সকল বিচারপতিগণের রেজিস্ট্রার।’
প্রধান বিচারপতির পক্ষে দেখানো সংশয়কে সম্মানহানিকর হিসেবেও উল্লেখ করা হয় চিঠিতে। লেখা হয়: আপনার পত্রে আমাকে ‘ব্রিটিশ পাসপোর্টধারী’ উল্লেখ করেছেন এবং আমি পেন্ডিং রায় না লিখে বিদেশ চলে যেতে পারি মর্মে সংশয় প্রকাশ করেছেন যা উদ্ভট, হাস্যকর, কল্পনাপ্রসূত, সৌজন্য বহির্ভূত ও সম্মানহানিকর। বিচারপতি হিসেবে আমি আমার সাংবিধানিক শপথ রক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ। পেন্ডিং রায় না লিখে বিদেশ চলে যাওয়ার মত অসুস্থ চিন্তা কোনো সৎ, নীতিবান, দেশপ্রেমিক বিচারপতি করতে পারেন না। ‘ব্রিটিশ পাসপোর্টধারী’ না হয়েও যে কোনো বিচারপতি বিদেশে যেতে পারেন। তবে প্রসঙ্গত উল্লেখ করতেই হয় যে, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা, দেশ ও জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে একজন মুক্তিযোদ্ধা কখনোই সরে দাঁড়াতে পারেন না। একজন রাজাকার বা শান্তি কমিটির সদস্যই কেবল দেশ ও জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা অস্বীকার করতে পারে, যা ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত।’
বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরীর চিঠিতে এরপর আছে: ‘আপনার প্রেরিত পত্রে আপনি ‘যদি’ ও ‘সংশয়’ শব্দসমূহের ভিত্তিতে আমার বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি বা অন্য কোনো বিচারপতিই তাদের সহকর্মী অন্য কোনো বিচারপতির ক্ষেত্রে ‘যদি’ ও ‘সংশয়’ ব্যবহার করে কোনোরূপ মন্তব্য করতে পারেন না। বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হিসেবে আপনি আমার ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণে ‘যদি’ ও ‘সংশয়’ শব্দসমূহ ব্যবহার করেছেন এবং উক্ত শব্দসমূহের ভিত্তিতে আমার ক্ষেত্রে অলীক ও কল্পনাপ্রসূত সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন। যদি ও সংশয় শব্দসমূহের ভিত্তিতে একজন বিচারপতি তার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন না। একজন বিচারককে সকল ‘সংশয়’ এর উর্ধ্বে উঠে ন্যয় বিচারের জন্য সিদ্ধান্ত নিতে হয়। একজন বিচারককে সিদ্ধান্ত নিতে হয় দৃশ্যমাণ ঘটনার ভিত্তিত, কল্পনার ভিত্তিতে নয়। ‘যদি’ ও ‘সংশয়’ এর ভিত্তিতে কোনো সিদ্ধান্ত নিলে তা হবে অলীক, কল্পনা প্রসূত ও ন্যায় বিচার পরিপন্থী। মাননীয় প্রধান বিচারপতি কাল্পনিক ধারণার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে বিচার ব্যবস্থায় বিপর্যয় নেমে আসবে। আপনার ‘যদি’ ও ‘সংশয়’ এর আশংকা এই দেশের জনসাধারণকে ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত করবে এবং বিচারালয়ের পবিত্রতা ক্ষুণ্ন করবে।’
‘আপনার পত্রে বর্ণিত শব্দপ্রয়োগ থেকে এটা সুষ্পষ্ট যে, code of conduct, judges of the supreme court এর আওতায়, আমার প্রতি আপনার আচরণ ‘dignifide’ ও ‘respectful’ নয়,’ বলে মন্তব্য করেন বিচারপতি চৌধুরী।
তিনি লিখেছেন: ‘সংবিধান অনুযায়ী সুপ্রীম কোর্টের সকল বিচারপতিই সাংবিধানিক পদের ধারক। কোনো বিচারপতিই প্রধান বিচারপতির অধস্তন নহে। আইনের ভাষায় বলা হয় বিচারপতিদের তুলনায় প্রধান বিচারপতির অবস্থান Primus inter press অর্থাৎ তিনি সহকর্মীদের মধ্যে প্রথম। সংবিধানের অনুচ্ছেদ মতে প্রত্যেক বিচারকই বিচারিক ব্যাপারে স্বাধীন, প্রধান বিচারপতির অধস্তন নহেন। আপনার ২রা সেপ্টেম্বরের পত্রে, ‘উক্ত রায়ের নথিগুলো সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ফেরত প্রদান করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো’ মর্মে মামলার নথি ফেরত চাওয়া সংবিধানের ৯৪(৪) ধারা মোতাবেক আমার স্বাধীন বিচার ও রায় দানের ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপস্বরূপ, যা পুনরায় আমার প্রতি আপনার ‘ill will’এর সুস্পষ্ট বহিঃপ্রকাশ।’
তিনি লিখেন: ‘অতীতে কোনো বিচারপতিকেই এভাবে পেনশন গ্রহণের পূর্বে ফাইল ফেরত দিতে বলা হয়নি। অতীতে সকল বিচারপতিই অবসরের পর কয়েক মাস এমনকি বছর নিয়েছেন অসমাপ্ত রায় শেষ করতে, এটা আপনার ক্ষেত্রেও নিশ্চয়ই হবে। আপনার কাছে বর্তমান দস্তখতের অপেক্ষায় বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে কয়েক মাস ধরে। অতীতের সকল বিচারপতিই অবসরের পরও রায় লিখেছেন এবং ভবিষ্যতে তা হবে এটাই স্বাভাবিক।’
‘অত্র পত্রের সঙ্গে সংযুক্তি হিসেবে সাম্প্রতিক সময়ে অবসর গ্রহণ করা প্রধান বিচারপতিসহ কয়েকজন বিচারপতির নাম সংযুক্ত করা হলো, তবে উল্লেখিত বিচারপতিগণ ছাড়াও অন্য সকলেই অবসরের পরও রায় লিখেছেন এবং ভবিষ্যতেও লিখবেন। এটাই স্বাভাবিক,’ বলে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী উল্লেখ করেন।
তিনি এরপর লিখেছেন: ‘প্রধান বিচারপতি হিসেবে আপনি সহকর্মী বিচারকদের আপনার কোনো আদেশ প্রশাসনিক কর্মকর্তার মাধ্যমে অবহিত করার অধিকার রাখেন না। প্রশাসনিক কর্মকর্তার মাধ্যমে আমাকে আপনার কল্পনা প্রসূত আদেশ অবহিতকরণের মধ্য দিয়ে যে অসম্মান ও সৌজন্যহীনতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, আমার সহকর্মী বিচারকগণের সহিত ভবিষ্যতে তার পুনরাবৃত্তি না করার জন্য বিনীত অনুরোধ করছি। ৩০ লক্ষ শহীদ আর মা-বোনের সম্ভ্রম কোটি মানুষের ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের সংবিধান। আমাদের সাংবিধানিক শপথ আমরা কোনোভাবেই ভঙ্গ করতে পারি না।’
বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরীর এই চিঠিটির অনুলিপি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগেও পাঠানো হয়।
No comments