রিকশা চালিয়ে নাটকে! by আহমেদ মুনির
জীবিকার তাগিদে রিকশা চালান রবিউল হক। কিন্তু মনের দিক থেকে অন্যদের চেয়ে আলাদা তিনি। তাঁর আছে নাটকের দল। সম্প্রতি জিতেছেন জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড l সৌরভ দাশ |
জীবিকার তাগিদে রিকশা চালান রবিউল হক। কিন্তু মনের দিক থেকে অন্যদের চেয়ে আলাদা তিনি। তাঁর আছে নাটকের দল। সম্প্রতি জিতেছেন জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড l সৌরভ দাশ |
বছর
দুয়েক আগের কথা। রানা প্লাজা ধসে তিন হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু
কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন না রবিউল হক। সিটি সার্ভিস বাস চালাতেন তখন।
স্টিয়ারিংয়ের সামনে বসে মনে হতো, মানুষের জীবনের দাম এত কম! কিছু একটা
করার কথা ভাবেন। কিশোর নাটকের একটি দলে অভিনয় করেছিলেন সপ্তম-অষ্টম
শ্রেণিতে পড়ার সময়। কিন্তু সে দল তো কবেই ভেঙে গেছে। রবিউল তবু খেটে
খাওয়া মানুষদের যন্ত্রণা নিয়ে নাটক করার স্বপ্ন দেখলেন। ইলেকট্রিশিয়ান
বন্ধু মুরাদ হাসানকে জানালেন নিজের পরিকল্পনা। উৎসাহ পেয়ে মুরাদ লিখে
ফেললেন রানা প্লাজা নিয়ে একটি নাটক। নাম আর কত দিন। রবিউলের নেতৃত্বে গঠিত
হলো তৃণমূল নাট্যদল। আর এই দলে যাঁরা যোগ দিলেন তাঁরাও সবাই শ্রমিক, তাঁরই
মতো নাটকের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন একসময়। এঁদের মধ্যে আছেন জেলে,
পোশাকশ্রমিক, কম্পিউটার অপারেটর ও বিউটি পার্লারের কর্মী। ২০১৩ সালের ২৬
মার্চ শহরের শ্রমিক অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে মঞ্চস্থ হয় আর কত দিন। তৃণমূল
নাট্যদলের পথচলার শুরুটা এমনই। এ বছর নাটকের এই সংগঠন এবং সংগঠনটির দলনেতা
রবিউল হক জিতলেন জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড।
শক্ত পেটানো শরীর, মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি আর একগাল হাসি। ৮ মে সকালে প্রথম আলো চট্টগ্রাম কার্যালয়ে এভাবেই হাজির হলেন রবিউল। হাতে ধাতুর ঢালাই করা জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যায়ার্ডের ক্রেস্ট। শুরুতেই জানতে চাই কী করে এই পদক জয়? নাটকপাগল রবিউল রেলওয়ে কলোনিতে ছোটবেলা থেকেই পথনাটক দেখছেন। আর দেখতে দেখতেই একদিন অভিনেতাও হয়ে গেলেন। এটা তাঁর কাছে অনেক বড় ব্যাপার। আর পুরস্কার পাওয়ার বিষয়টি তো অপ্রত্যাশিত আনন্দের ছিলই। রবিউল জানান, গত বছর চট্টগ্রামে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ইয়ং বাংলার বিভাগীয় আসর বসে। মেধাবী তরুণদের উৎসাহ দিতে জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ডের প্রবর্তন করে সংগঠনটি। আর সে জন্য উদ্যোগী তরুণদের কাছ থেকে কর্মকাণ্ডের বিবরণও চাওয়া হয়। সে আসরে রবিউল তাঁর নাট্যদলের হয়ে ইয়ং অ্যাওয়ার্ড প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। দুই মাস পর রবিউল জানতে পারেন যাচাই-বাছাইয়ের পর ২০০টি সংগঠনের তালিকায় উঠেছে তৃণমূল নাট্যদলের নাম। এরপর তৃণমূলের বিভিন্ন নাটকের ভিডিও-সিডি পাঠানো হয় ইয়ং বাংলা কর্তৃপক্ষের কাছে। সব দেখে কর্তৃপক্ষ পুরস্কারের জন্য মনোনীত করে তৃণমূলকে। সম্প্রতি ঢাকায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে রবিউলের হাতে তুলে দেওয়া হয় জয় বাংলা পুরস্কার। স্বীকৃতির বিষয়টি তো জানা হলো, কিন্তু শোনা হয়নি রবিউলের নিজের কথা। এখন কী করেন, প্রশ্ন করতেই ২৬ বছরের এই তরুণ বলেন, ‘নাটক করি।’ কিন্তু শুধু নাটক করে কি সংসার চলে? রবিউলের উত্তর, ‘না, তা চলে না। নাটক করি, তার ফাঁকে রিকশাও চালাই। আজ সকালেও রিকশা নিয়ে বের হয়েছিলাম।’
আলাপে আলাপে জানা গেল পাহাড়তলীর মাস্টারলেনের রেলওয়ে কলোনির একটা দুই কামরার টিনের ঘরে পরিবার নিয়ে থাকেন তিনি। ১৪ সদস্যের বিশাল যৌথ পরিবার তাঁদের। নিজের স্ত্রী, সন্তান, তিন ভাইয়ের পরিবার, মা-বাবা সবাই এক সঙ্গে গাদাগাদি করে থাকেন। বাবা অসুস্থ, দৃষ্টিশক্তি নেই। রেলওয়ে হাসপাতালে আয়ার চাকরি করেন মা রহিমা খাতুন। তাঁর নামেই বরাদ্দ এই কোয়ার্টার। অভাবের সংসারে কিশোর বয়সে কাজে লেগে যেতে হয়েছে রবিউলকে। বারবার ছেদ পড়লেও লেখাপড়া ছাড়েননি। উন্মুক্ত বিশ্বিবদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দেবেন সামনের বছর।
কী করে নাটকের শুরু? জানা গেল, উন্নয়ন সংস্থা বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব থিয়েটার আর্টসের (বিটা) নাটকের দল পাহাড়তলীর শ্রমিক এলাকায় নিয়মিত নাটক করত। সচেতনতামূলক এসব নাটকে তাঁদের পাড়ার অনেকে অভিনয়ও করত। রবিউল সেসব নাটকের নিয়মিত দর্শক ছিলেন। একসময় দর্শক থেকে অভিনেতাও বনে যান। এই অভিজ্ঞতা পরে তৃণমূল নাট্যদল গড়ার সময় কাজ দেয়। তৃণমূল দলের সদস্যরা সবাই তাঁরই মতো একসময় অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরে পেশাগত কারণে অভিনয় ছেড়ে দেন। রবিউল এঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সানন্দেই সবাই যোগ দেন নাটকের দলে।
নাটক নিয়ে বিটার সঙ্গেও কাজ করেছে তৃণমূল নাট্যদল। সমুদ্রপথে ঝুঁকি নিয়ে মালয়েশিয়া পাড়ি জমানো লোকজনকে সচেতন করতে স্বপ্নযাত্রা নামের একটি নাটক মঞ্চায়ন করেছে তৃণমূল। উন্নয়ন সংস্থা বিটা এই নাটকের খরচ যোগাচ্ছে।
বিটা প্রযোজিত মীন কন্যা, মেঘের ভেলা ও কালো চাঁদ নাটকে অভিনয়ও করেছেন রবিউল। দেশের বিভিন্ন জেলা ছাড়াও এসব নাটকের মঞ্চায়ন হয়েছে ভারতের ওডিশা, কলকাতা ও মেঘালয়ে।
নাটক নিয়ে কত দূর যেতে চান? প্রশ্ন করতেই রবিউল সঙ্গে থাকা ব্যাগ থেকে ল্যাপটপটি বের করলেন। ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ডের সঙ্গে এটাও পেয়েছেন উপহার হিসেবে। সেই ল্যাপটপ খুলে দেখান তাঁর নাটকের দলের সদস্যদের ছবি। বলেন, এই ছেলেমেয়েদের একটা স্বপ্ন আছে। সবাই মঞ্চে নতুন নতুন কাজ করতে চান। আর চান নাটক নিয়েই জীবনটা কাটিয়ে দিতে।
শক্ত পেটানো শরীর, মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি আর একগাল হাসি। ৮ মে সকালে প্রথম আলো চট্টগ্রাম কার্যালয়ে এভাবেই হাজির হলেন রবিউল। হাতে ধাতুর ঢালাই করা জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যায়ার্ডের ক্রেস্ট। শুরুতেই জানতে চাই কী করে এই পদক জয়? নাটকপাগল রবিউল রেলওয়ে কলোনিতে ছোটবেলা থেকেই পথনাটক দেখছেন। আর দেখতে দেখতেই একদিন অভিনেতাও হয়ে গেলেন। এটা তাঁর কাছে অনেক বড় ব্যাপার। আর পুরস্কার পাওয়ার বিষয়টি তো অপ্রত্যাশিত আনন্দের ছিলই। রবিউল জানান, গত বছর চট্টগ্রামে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ইয়ং বাংলার বিভাগীয় আসর বসে। মেধাবী তরুণদের উৎসাহ দিতে জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ডের প্রবর্তন করে সংগঠনটি। আর সে জন্য উদ্যোগী তরুণদের কাছ থেকে কর্মকাণ্ডের বিবরণও চাওয়া হয়। সে আসরে রবিউল তাঁর নাট্যদলের হয়ে ইয়ং অ্যাওয়ার্ড প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। দুই মাস পর রবিউল জানতে পারেন যাচাই-বাছাইয়ের পর ২০০টি সংগঠনের তালিকায় উঠেছে তৃণমূল নাট্যদলের নাম। এরপর তৃণমূলের বিভিন্ন নাটকের ভিডিও-সিডি পাঠানো হয় ইয়ং বাংলা কর্তৃপক্ষের কাছে। সব দেখে কর্তৃপক্ষ পুরস্কারের জন্য মনোনীত করে তৃণমূলকে। সম্প্রতি ঢাকায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে রবিউলের হাতে তুলে দেওয়া হয় জয় বাংলা পুরস্কার। স্বীকৃতির বিষয়টি তো জানা হলো, কিন্তু শোনা হয়নি রবিউলের নিজের কথা। এখন কী করেন, প্রশ্ন করতেই ২৬ বছরের এই তরুণ বলেন, ‘নাটক করি।’ কিন্তু শুধু নাটক করে কি সংসার চলে? রবিউলের উত্তর, ‘না, তা চলে না। নাটক করি, তার ফাঁকে রিকশাও চালাই। আজ সকালেও রিকশা নিয়ে বের হয়েছিলাম।’
আলাপে আলাপে জানা গেল পাহাড়তলীর মাস্টারলেনের রেলওয়ে কলোনির একটা দুই কামরার টিনের ঘরে পরিবার নিয়ে থাকেন তিনি। ১৪ সদস্যের বিশাল যৌথ পরিবার তাঁদের। নিজের স্ত্রী, সন্তান, তিন ভাইয়ের পরিবার, মা-বাবা সবাই এক সঙ্গে গাদাগাদি করে থাকেন। বাবা অসুস্থ, দৃষ্টিশক্তি নেই। রেলওয়ে হাসপাতালে আয়ার চাকরি করেন মা রহিমা খাতুন। তাঁর নামেই বরাদ্দ এই কোয়ার্টার। অভাবের সংসারে কিশোর বয়সে কাজে লেগে যেতে হয়েছে রবিউলকে। বারবার ছেদ পড়লেও লেখাপড়া ছাড়েননি। উন্মুক্ত বিশ্বিবদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দেবেন সামনের বছর।
কী করে নাটকের শুরু? জানা গেল, উন্নয়ন সংস্থা বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব থিয়েটার আর্টসের (বিটা) নাটকের দল পাহাড়তলীর শ্রমিক এলাকায় নিয়মিত নাটক করত। সচেতনতামূলক এসব নাটকে তাঁদের পাড়ার অনেকে অভিনয়ও করত। রবিউল সেসব নাটকের নিয়মিত দর্শক ছিলেন। একসময় দর্শক থেকে অভিনেতাও বনে যান। এই অভিজ্ঞতা পরে তৃণমূল নাট্যদল গড়ার সময় কাজ দেয়। তৃণমূল দলের সদস্যরা সবাই তাঁরই মতো একসময় অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরে পেশাগত কারণে অভিনয় ছেড়ে দেন। রবিউল এঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। সানন্দেই সবাই যোগ দেন নাটকের দলে।
নাটক নিয়ে বিটার সঙ্গেও কাজ করেছে তৃণমূল নাট্যদল। সমুদ্রপথে ঝুঁকি নিয়ে মালয়েশিয়া পাড়ি জমানো লোকজনকে সচেতন করতে স্বপ্নযাত্রা নামের একটি নাটক মঞ্চায়ন করেছে তৃণমূল। উন্নয়ন সংস্থা বিটা এই নাটকের খরচ যোগাচ্ছে।
বিটা প্রযোজিত মীন কন্যা, মেঘের ভেলা ও কালো চাঁদ নাটকে অভিনয়ও করেছেন রবিউল। দেশের বিভিন্ন জেলা ছাড়াও এসব নাটকের মঞ্চায়ন হয়েছে ভারতের ওডিশা, কলকাতা ও মেঘালয়ে।
নাটক নিয়ে কত দূর যেতে চান? প্রশ্ন করতেই রবিউল সঙ্গে থাকা ব্যাগ থেকে ল্যাপটপটি বের করলেন। ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ডের সঙ্গে এটাও পেয়েছেন উপহার হিসেবে। সেই ল্যাপটপ খুলে দেখান তাঁর নাটকের দলের সদস্যদের ছবি। বলেন, এই ছেলেমেয়েদের একটা স্বপ্ন আছে। সবাই মঞ্চে নতুন নতুন কাজ করতে চান। আর চান নাটক নিয়েই জীবনটা কাটিয়ে দিতে।
No comments