ধান কৃষকের গলার ফাঁস
সারা
দেশে ধানের বাম্পার ফলনেও কৃষকের মুখে হাসি নেই। ধানের ন্যায্যমূল্য
পাচ্ছে না কৃষক। উৎপাদন খরচের চেয়ে প্রায় অর্ধেক দামে বাজারে ধান বিক্রি
হচ্ছে। ফলে ধান বিক্রি করে কৃষকের খরচ তো উঠছেই না। উল্টো আরও লোকসান
হচ্ছে। সরকারি হিসাবে প্রতি মণ ধানের উৎপাদন খরচ ৮০০ টাকা। বাজারে প্রতি মণ
ধান গড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকা। প্রতি মণে কৃষকের লোকসান হচ্ছে ৩০০ টাকা।
প্রতি বিঘায় গড়ে ১৮ থেকে ২০ মণ ধান উৎপাদিত হচ্ছে। এ হিসাবে ধান চাষ করে
প্রতি বিঘায় কৃষকের লোকসান হচ্ছে ৫ হাজার ৪০০ টাকা থেকে ৬ হাজার টাকা। ধান
চাষের আগে কৃষক দাদন বা চড়া সুদে ঋণ নিয়েছে। দাম কম থাকায় এখন কৃষক ধান
বিক্রি করেও আগের ঋণ শোধ করতে পারছে না। তার উপর সংসারের খরচ তো আছেই। আবার
নতুন করে চাষের সময় চলে এসেছে। এ সময়ে আগের ঋণ শোধ না করতে পারলে নতুন ঋণ
পাওয়া যাবে না। ফলে আগামীতে অর্থ সংকটের কারণে জমি চাষ করাও কঠিন হয়ে পড়বে।
এসব মিলে কৃষক এখন হতাশাগ্রস্ত। এতে সব দিক থেকেই কৃষকের গলায় ফাঁস
লেগেছে।
এছাড়া এ বছরের শুরু থেকে বিরোধী দলের টানা হরতাল-অবরোধের কারণে কৃষক উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে পারেনি। ফলে ওই মৌসুমেও তাদের বড় ধরনের লোকসান হয়েছে। পর পর টানা দুটি ফসলের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া কৃষকের আর্থিক দুরবস্থা আরও প্রকট হয়েছে।
এ অবস্থায় কৃষকদের আগের খেলাপি ঋণ নবায়ন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নতুন ঋণ দেয়ার নির্দেশ দেয়া হলেও কৃষকরাই এখন নতুন ঋণ নিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। কেননা পর পর দুটি ফসলের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে তারা যেমন হতাশ, তেমনি আগামী ফসলের যে ন্যায্যমূল্য পাবে এরও কোনো নিশ্চয়তা নেই।
এর আগে ২০১৩ সালের রাজনৈতিক আন্দোলনের সময়েও কৃষকের উৎপাদিত শীতকালীন শস্যের কোনো ন্যায্যমূল্য পায়নি তারা।
এ অবস্থায় সংসার খরচ দূরের কথা মহাজনের দাদনের টাকা, ব্যাংক বা এনজিও’র ঋণ কীভাবে শোধ করবেন সেই দুশ্চিন্তায় তারা দিশেহারা। বাজারে ধানের দাম কম থাকায় মাঠের ধান কেটে মাড়াই করে বাড়িতে নিতেও অনেকের আগ্রহ কম। কেননা ধান কাটতে দিনমজুরপ্রতি দিনে খরচ হচ্ছে ৫০০ টাকা। এক বিঘার ধান কাটতে ও মাড়াই করতে খরচ হচ্ছে প্রায় ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা। এসব খরচ মিটিয়ে বাজারে যে দামে ধান বিক্রি করা হচ্ছে তার চেয়ে মাঠের ধান মাঠে থাকাই ভালো বলে মনে করছেন কৃষকরা।
এদিকে বাম্পার ফলনে কৃষকরা সর্বস্বান্ত হলেও মোটা অংকের মুনাফা করছেন মধ্যস্বত্বভোগী ফড়িয়া ও মিলাররা। তারা কম দামে কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনে এখন চড়া দামে সরকারের কাছে বিক্রি করছেন। ফলে ধানের মুনাফার পুরোটাই চলে যাচ্ছে ফড়িয়া ও মিলারদের পকেটে।
জানা গেছে, চলতি মৌসুমে সরকারের ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে ১ মে থেকে। এ কার্যক্রম চলবে আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। এই কার্যক্রমের আওতায় এবার ৩২ টাকা কেজি দরে ১০ লাখ টন চাল ও ২২ টাকা কেজি দরে এক লাখ টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। সরকার প্রতি মণ ধানের ক্রয়মূল্য নির্ধারন করেছে ৮৮০ টাকা।
কিন্তু সরকারের ধান-চাল কেনা শুরুর আগেই গত এপ্রিলের শুরু থেকে বাজারে নতুন ধান চলে আসে। এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে নতুন ধানের বেশির ভাগই বাজারে চলে আসে। তখন দাম কমে যায়। যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। ফলে সরকারের ধান-চাল কেনার আগেই কৃষকরা দেনা শোধ করতে বা নিজেদের প্রয়োজনে ধানের একটি অংশ কম দামে বিক্রি করে দিয়েছে। এতে ধান চলে গেছে ফড়িয়াদের হাতে।
প্রতি বছরই কৃষকরা ধানের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ বছর পরিস্থিতি আরও খারাপ। কারণ ভারতীয় চালে দেশ সয়লাব হয়ে গেছে। সরকারের শুল্কমুক্ত সুবিধার সুযোগ নিয়ে চাহিদা বিবেচনা না করেই লাখ লাখ টন ধান ভারত থেকে আমদানি হয়েছে। শেষ সময়ে চাল আমদানির ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হলেও এর মধ্যে চাহিদার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি আমদানি হয়েছে। আরও চাল আসছে। ফলে এখন শুল্ক আরোপ করেও খুব বেশি লাভবান হওয়া যাবে না।
চাল আমদানিতে শুল্ক আরোপের কারণে ধানের মূল্য বাড়াতে কতটুকু সহায়ক হবে তা নিয়ে এখনও অনিশ্চয়তায় কৃষকরা। আর এখন ধানের দাম বাড়লেও এর সুফল কৃষকরা খুব বেশি একটা পাবে না। কেননা কৃষকরা এর মধ্যে নিজেদের প্রয়োজনীয় ধান ছাড়া বাকি প্রায় সবই বিক্রি করে দিয়েছে। ফলে এখন ধানের দাম বাড়লে এর সুফল পাবে ফড়িয়ারা।
সূত্র জানায়, গত ফেরুয়ারি থেকেই ভারত থেকে চাল আমদানির জন্য ব্যাপকভাবে এলসি খোলা শুরু হয়। গড়ে গত বছরের চেয়ে প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি এলসি খোলা হয়েছে। ওইসব চালের একটি বড় অংশ এর মধ্যে দেশে চলে এসেছে। বাকিগুলো আসার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়ে ১০৫ কোটি ডলারের চাল আমদানি করা হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে আমদানি করা হয়েছিল ৭৭ কোটি ডলারের।
তবে কৃষকরা সরকারের বিলম্বিত শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে বলে প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন। তাদের মতে, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে জরুরি অবস্থা চলাকালে চালের মূল্য ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। তখন সরকারের নির্দেশে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চাল আমদানির ওপর শুল্ক প্রত্যাহার করে। কিন্তু এরপর সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের অভাবে চাল আমদানির ওপর আর শুল্ক আরোপ করা হয়নি। আর এ সুযোগ গ্রহণ করে এক শ্রেণীর আমদানিকারক। সরকারি তথ্য অনুযায়ী দেশ খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। কিন্তু তারপরও মাত্রাতিরিক্ত চাল আমদানির কারণে কৃষকদের উৎপাদিত ধানের মূল্যের ওপর এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। আমদানি করা চালের মূল্য কম হওয়ায় এবং চাহিদার চেয়ে বেশি আমদানি হওয়ায় গত আমন মৌসুমেও চাষীরা পানির দরে ক্ষেতের ধান বিক্রি করেছে। এ বছর কৃষিমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রীসহ সরকারের একাধিক মন্ত্রী চাল আমদানির ওপর শুল্ক আরোপের সুপারিশ করে। এরপরই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নেয়।
অপরদিকে কৃষকদের মূল্য সহায়তা দেয়ার জন্য প্রতিবছরই সরকার চাল ও ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু করে। কিন্তু এর জটিল নীতিমালার কারণে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে সরকারের ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানের সুফল পাচ্ছে না কৃষক। যে উদ্দেশ্যে এ কর্মসূচি হাতে নেয়া হচ্ছে, সেটিও পূরণ হচ্ছে না। এতে প্রায় প্রতি বছরই লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ধান-চাল সংগ্রহের কর্মসূচি ব্যর্থ হচ্ছে। কৃষক তার উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। সরকারের মুনাফা পাচ্ছে ফড়িয়া আর মিলাররা।
ধান কৃষকের গলার ফাঁস : গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলার কৃষক রফিকুল, আবদুর রউফ ও জামাতআলী জানান, এ বছর সার-কীটনাশক ও ডিজেলসহ অন্য সব কৃষিসামগ্রীর দাম ছিল ঊর্ধ্বমুখী। ধান রোপণ করা থেকে কাটা পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে কৃষাণ-মজুরের মজুরিও বেড়েছে। ধান কাটতে একজন মজুর ৫০০ টাকা মজুরি নেয়। অথচ ধান চাষ করে যে টাকা খরচ হয়েছে, কৃষকদের সে খরচই উঠছে না। তিনি আরও জানান, দাদন ব্যবসায়ী-এনজিওসহ বিভিন্ন স্থান থেকে চড়া সুদে ঋণ দিয়ে ধান চাষ করে এখন খরচের অর্ধেক বিক্রি করতে হচ্ছে অর্ধেক দামে। এক মণ ধান কমপক্ষে ৮শ’ থেকে ৯শ’ টাকা হলে তারা পোষাতে পারতেন। কিন্তু বিক্রি হচ্ছে গড়ে ৫০০ টাকা মণ দরে।
কৃষক সোলায়মান হোসেন জানান, খাদ্য বিভাগ কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান না কিনে মিল ও চাতালসহ বড় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ধান-চাল কিনছে। ফলে ওইসব ব্যবসায়ী সুযোগ বুঝে কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনে নামমাত্র মূল্যে। ফলে কৃষক কম দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। এর ফলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় ফড়িয়ারা।
নীলফামারীরর সৈয়দপুর উপজেলায় বোরোর বাম্পাার ফলন হলেও কৃষকের মুখে হাসি নেই। দেনা পরিশোধ ও সাংসারিক প্রয়োজনে বাধ্য হয়ে কৃষকদের কম দামে নতুন ধান বিক্রি করতে হচ্ছে। কিন্তু ধানের দরপতনে কৃষকরা বেসামাল হয়ে পড়েছেন। প্রতি বস্তা (৭৫ কেজি) ধান মাত্র ৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফলে এক কেজি ধানের বর্তমান বাজার মূল্য হচ্ছে ১০ টাকা। এতে করে কৃষককে প্রতি কেজি ধানে লোকসান গুনতে হচ্ছে ২ টাকা ৬৮ পয়সা। ধানের দরপতনে কৃষকরা প্রতি মণে ১৫০ টাকা লোকসান হলেও চাল ব্যবসায়ীদের মণে লাভ হচ্ছে ২শ’ টাকার মতো।
ময়মনসিংহ কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক আলতাবুর রহমান বলেন, বাম্পার ফলন হলেও কৃষক ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। প্রতি মণ ধান উৎপাদন ও ঘরে তোলা পর্যন্ত খরচ পড়ে ৭শ’ টাকা। বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ টাকা থেকে ৬শ’ টাকা মণ দরে।
দু’বছর ধরে ধান কেনা বন্ধ : ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে ২ বছর ধরে সরকারিভাবে ধান কেনা হয়নি। কৃষকরা জানান, সরকারিভাবে তাদের কাছ থেকে কোনো ধান না কেনায় বাজারে এর দাম কম থাকায় তারা হতাশ। এ ব্যাপারে ধান ব্যবসায়ী ও মিল মালিক ইসমাঈল হোসেন, তারা মিয়া, আবুল হাশেম জানান, ধান-চালের বাজারমূল্য কমে যাওয়ায় তাদের কাছে এখনও হাজার হাজার বস্তা চাল অবিক্রীত রয়েছে।
শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার ছিটপাড়া গ্রামের কৃষক আবু হারেজ। তার ৪০ কাঠা জমির মধ্যে ২৩ কাঠা জমির ধান নেক ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে মরে গেছে। বাকি ১৭ কাঠা জমিতে ৫৪ মণ ধান পেয়েছেন। বর্তমান বাজারমূল্যে ৫৪০ টাকা দরে তার এ ধানের মূল্য ২৯ হাজার ১৬০ টাকা। অথচ তার আবাদে খরচ হয়েছে ৬০ হাজার টাকা। ধান বিক্রি করে তিনি খরচের অর্ধেকেরও কম পাচ্ছেন। বাকি টাকা তার লোকসান হচ্ছে।
কুমিল্লা জেলায় কৃষি শ্রমিকের অভাবে ধান কাটা যাচ্ছে না। অনেকেই রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে কর্মস্থানে চলে যাওয়ায় শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে কৃষি শ্রমিকের মূল্য খুবই চড়া। দৈনিক তিন বেলা খাবার দিয়ে ও ৪৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা দিয়েও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না।
ক্রেতার দেখা মিলছে না : ধানের জেলা দিনাজপুরে চলতি বোরো মৌসুমে শুরুতেই ধানের দাম নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। বাম্পার ফলন হলেও হাসি নেই কৃষকের মুখে। কেননা বাজারে ধানের ক্রেতা নেই। উৎপাদন খরচের অর্ধেক দামে ধান বিক্রি করতে হচ্ছে। সরকার ধান ক্রয়ের ঘোষণা দিলেও এখনও ক্রয় অভিযান শুরু হয়নি। গুদামে আগের ধান মজুত থাকায় এ অবস্থায় কৃষকের কাছ থেকে ধান না কেনায় বাধ্য হয়ে কৃষকরা স্থানীয়ভাবে গড়ে উঠা সিন্ডিকেট, মজুদদার, ফড়িয়া ও চাল কলগুলোতে ধান বিক্রি করছেন।
গাইবান্ধায় ব্যবসায়ীরা ধান-চাল কিনছেন না। অপরদিকে সরকারিভাবে ধান-চাল ক্রয়ের নির্দেশনা এলেও আর্দ্রতার মাত্রা আশানুরূপ না থাকার অজুহাতে স্থানীয় ক্রয় কেন্দ্রগুলোতে সংগ্রহ অভিযান শুরু করা হয়নি। ফলে হাট-বাজারে কেনাকাটা নেই। অন্যান্য বার এ সময় বাইরে থেকে ব্যবসায়ীরা এসে ধান কিনে নিয়ে যেত। কিন্তু এবার হাটবাজারগুলোতে বাইরের কোনো ক্রেতা নেই। ফলে ধান-চালের দর এখন নিুমুখী। সামান্য পরিমাণে ধান-চাল স্থানীয়ভাবে কেনাবেচা চলছে অত্যন্ত কম দামে। তাতে কৃষকদের ধান উৎপাদন খরচই উঠছে না।
কিশোরগঞ্জের চামরা বন্দরে নতুন বোরো ধান বোঝাই শত শত নৌকা ঘাটে ভিড়েছে। এ ঘাটে মধ্যস্বত্বভোগী পাইকার এবং চাতাল মালিকরা ভিড় করছে ধান কেনার জন্য। কিন্তু দাম কম থাকায় ধান বিক্রি না করে বাড়ি ফিরতে দেখা গেছে কৃষকদের।
উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশংকা : বিপুল পরিমণ ভারতীয় চাল আমদানিই কৃষকের সর্বনাশ ডেকে এনেছে। উত্তরের জেলাগুলো ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষা হওয়ায় বিপুল পরিমাণ দিনমজুর পরিবার-পরিজন নিয়ে অবৈধভাবে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে কাজের সন্ধানে যান। তারা সেখানে তুলনামূলক বেশি দিন মজুরি পান। এসব কারণে এখন এ অঞ্চলে মারাত্মক কৃষি শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। রংপুরের মাহিগঞ্জের চালের আড়তদার শেখ কাশেম ও চাতাল মালিক তছলিম হাজী জানান, সরকারের ভারত থেকে চাল আমদানির ভুল সিদ্ধান্তের কারণে দেশের ভেতরে ধানের বাজার দরে মারাত্মক পতন হয়েছে। ফলে কৃষকরা ধানের দাম পাচ্ছেন না। কিন্তু সে অনুপাতে চালের বাজার দরও কমছে না। তিনি মনে করেন, ধানের দাম না পেলে আগামী মৌসুমে ধান উৎপাদনে কৃষক নিরুৎসাহিত হয়ে পড়বে।
(প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন, যুগান্তরের সিনিয়র রিপোর্টার শাহ আলম খান, রংপুর ব্যুরো প্রধান মাহবুব রহমান, ময়মনসিংহ ব্যুরো প্রধান আতাউল করিম খোকন, কিশোরগঞ্জ ব্যুরো প্রধান এটিএম নিজাম, কুমিল্লা ব্যুরো অফিসের তাবারক উল্লাহ কায়েস, মোহাম্মদ ময়লাল হোসেন, গাইবান্ধা প্রতিনিধি গবিন্দ লাল দাস, সাদুল্লাপুর প্রতিনিধি আবদুল জোব্বার আকন্দ, নীলফামারীর সৈয়দপুর প্রতিনিধি সৈয়দা রুখসানা জামান শানু, দিনাজপুর প্রতিনিধি আহসানুল আলম সাথী, শেরপুরের নালিতাবাড়ী প্রতিনিধি এমএ হাকাম হীরা, মাদারীপুরের কালকিনি প্রতিনিধি এইচএম মিলন ও কিশোরগঞ্জের ভৈরব প্রতিনিধি আসাদুজ্জামান ফারুক।)
এছাড়া এ বছরের শুরু থেকে বিরোধী দলের টানা হরতাল-অবরোধের কারণে কৃষক উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে পারেনি। ফলে ওই মৌসুমেও তাদের বড় ধরনের লোকসান হয়েছে। পর পর টানা দুটি ফসলের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া কৃষকের আর্থিক দুরবস্থা আরও প্রকট হয়েছে।
এ অবস্থায় কৃষকদের আগের খেলাপি ঋণ নবায়ন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নতুন ঋণ দেয়ার নির্দেশ দেয়া হলেও কৃষকরাই এখন নতুন ঋণ নিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। কেননা পর পর দুটি ফসলের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে তারা যেমন হতাশ, তেমনি আগামী ফসলের যে ন্যায্যমূল্য পাবে এরও কোনো নিশ্চয়তা নেই।
এর আগে ২০১৩ সালের রাজনৈতিক আন্দোলনের সময়েও কৃষকের উৎপাদিত শীতকালীন শস্যের কোনো ন্যায্যমূল্য পায়নি তারা।
এ অবস্থায় সংসার খরচ দূরের কথা মহাজনের দাদনের টাকা, ব্যাংক বা এনজিও’র ঋণ কীভাবে শোধ করবেন সেই দুশ্চিন্তায় তারা দিশেহারা। বাজারে ধানের দাম কম থাকায় মাঠের ধান কেটে মাড়াই করে বাড়িতে নিতেও অনেকের আগ্রহ কম। কেননা ধান কাটতে দিনমজুরপ্রতি দিনে খরচ হচ্ছে ৫০০ টাকা। এক বিঘার ধান কাটতে ও মাড়াই করতে খরচ হচ্ছে প্রায় ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা। এসব খরচ মিটিয়ে বাজারে যে দামে ধান বিক্রি করা হচ্ছে তার চেয়ে মাঠের ধান মাঠে থাকাই ভালো বলে মনে করছেন কৃষকরা।
এদিকে বাম্পার ফলনে কৃষকরা সর্বস্বান্ত হলেও মোটা অংকের মুনাফা করছেন মধ্যস্বত্বভোগী ফড়িয়া ও মিলাররা। তারা কম দামে কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনে এখন চড়া দামে সরকারের কাছে বিক্রি করছেন। ফলে ধানের মুনাফার পুরোটাই চলে যাচ্ছে ফড়িয়া ও মিলারদের পকেটে।
জানা গেছে, চলতি মৌসুমে সরকারের ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে ১ মে থেকে। এ কার্যক্রম চলবে আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। এই কার্যক্রমের আওতায় এবার ৩২ টাকা কেজি দরে ১০ লাখ টন চাল ও ২২ টাকা কেজি দরে এক লাখ টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। সরকার প্রতি মণ ধানের ক্রয়মূল্য নির্ধারন করেছে ৮৮০ টাকা।
কিন্তু সরকারের ধান-চাল কেনা শুরুর আগেই গত এপ্রিলের শুরু থেকে বাজারে নতুন ধান চলে আসে। এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে নতুন ধানের বেশির ভাগই বাজারে চলে আসে। তখন দাম কমে যায়। যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। ফলে সরকারের ধান-চাল কেনার আগেই কৃষকরা দেনা শোধ করতে বা নিজেদের প্রয়োজনে ধানের একটি অংশ কম দামে বিক্রি করে দিয়েছে। এতে ধান চলে গেছে ফড়িয়াদের হাতে।
প্রতি বছরই কৃষকরা ধানের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ বছর পরিস্থিতি আরও খারাপ। কারণ ভারতীয় চালে দেশ সয়লাব হয়ে গেছে। সরকারের শুল্কমুক্ত সুবিধার সুযোগ নিয়ে চাহিদা বিবেচনা না করেই লাখ লাখ টন ধান ভারত থেকে আমদানি হয়েছে। শেষ সময়ে চাল আমদানির ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হলেও এর মধ্যে চাহিদার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি আমদানি হয়েছে। আরও চাল আসছে। ফলে এখন শুল্ক আরোপ করেও খুব বেশি লাভবান হওয়া যাবে না।
চাল আমদানিতে শুল্ক আরোপের কারণে ধানের মূল্য বাড়াতে কতটুকু সহায়ক হবে তা নিয়ে এখনও অনিশ্চয়তায় কৃষকরা। আর এখন ধানের দাম বাড়লেও এর সুফল কৃষকরা খুব বেশি একটা পাবে না। কেননা কৃষকরা এর মধ্যে নিজেদের প্রয়োজনীয় ধান ছাড়া বাকি প্রায় সবই বিক্রি করে দিয়েছে। ফলে এখন ধানের দাম বাড়লে এর সুফল পাবে ফড়িয়ারা।
সূত্র জানায়, গত ফেরুয়ারি থেকেই ভারত থেকে চাল আমদানির জন্য ব্যাপকভাবে এলসি খোলা শুরু হয়। গড়ে গত বছরের চেয়ে প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি এলসি খোলা হয়েছে। ওইসব চালের একটি বড় অংশ এর মধ্যে দেশে চলে এসেছে। বাকিগুলো আসার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়ে ১০৫ কোটি ডলারের চাল আমদানি করা হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে আমদানি করা হয়েছিল ৭৭ কোটি ডলারের।
তবে কৃষকরা সরকারের বিলম্বিত শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে বলে প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন। তাদের মতে, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে জরুরি অবস্থা চলাকালে চালের মূল্য ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। তখন সরকারের নির্দেশে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চাল আমদানির ওপর শুল্ক প্রত্যাহার করে। কিন্তু এরপর সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের অভাবে চাল আমদানির ওপর আর শুল্ক আরোপ করা হয়নি। আর এ সুযোগ গ্রহণ করে এক শ্রেণীর আমদানিকারক। সরকারি তথ্য অনুযায়ী দেশ খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। কিন্তু তারপরও মাত্রাতিরিক্ত চাল আমদানির কারণে কৃষকদের উৎপাদিত ধানের মূল্যের ওপর এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। আমদানি করা চালের মূল্য কম হওয়ায় এবং চাহিদার চেয়ে বেশি আমদানি হওয়ায় গত আমন মৌসুমেও চাষীরা পানির দরে ক্ষেতের ধান বিক্রি করেছে। এ বছর কৃষিমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রীসহ সরকারের একাধিক মন্ত্রী চাল আমদানির ওপর শুল্ক আরোপের সুপারিশ করে। এরপরই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নেয়।
অপরদিকে কৃষকদের মূল্য সহায়তা দেয়ার জন্য প্রতিবছরই সরকার চাল ও ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু করে। কিন্তু এর জটিল নীতিমালার কারণে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে সরকারের ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানের সুফল পাচ্ছে না কৃষক। যে উদ্দেশ্যে এ কর্মসূচি হাতে নেয়া হচ্ছে, সেটিও পূরণ হচ্ছে না। এতে প্রায় প্রতি বছরই লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ধান-চাল সংগ্রহের কর্মসূচি ব্যর্থ হচ্ছে। কৃষক তার উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। সরকারের মুনাফা পাচ্ছে ফড়িয়া আর মিলাররা।
ধান কৃষকের গলার ফাঁস : গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলার কৃষক রফিকুল, আবদুর রউফ ও জামাতআলী জানান, এ বছর সার-কীটনাশক ও ডিজেলসহ অন্য সব কৃষিসামগ্রীর দাম ছিল ঊর্ধ্বমুখী। ধান রোপণ করা থেকে কাটা পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে কৃষাণ-মজুরের মজুরিও বেড়েছে। ধান কাটতে একজন মজুর ৫০০ টাকা মজুরি নেয়। অথচ ধান চাষ করে যে টাকা খরচ হয়েছে, কৃষকদের সে খরচই উঠছে না। তিনি আরও জানান, দাদন ব্যবসায়ী-এনজিওসহ বিভিন্ন স্থান থেকে চড়া সুদে ঋণ দিয়ে ধান চাষ করে এখন খরচের অর্ধেক বিক্রি করতে হচ্ছে অর্ধেক দামে। এক মণ ধান কমপক্ষে ৮শ’ থেকে ৯শ’ টাকা হলে তারা পোষাতে পারতেন। কিন্তু বিক্রি হচ্ছে গড়ে ৫০০ টাকা মণ দরে।
কৃষক সোলায়মান হোসেন জানান, খাদ্য বিভাগ কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান না কিনে মিল ও চাতালসহ বড় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ধান-চাল কিনছে। ফলে ওইসব ব্যবসায়ী সুযোগ বুঝে কৃষকদের কাছ থেকে ধান কেনে নামমাত্র মূল্যে। ফলে কৃষক কম দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। এর ফলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় ফড়িয়ারা।
নীলফামারীরর সৈয়দপুর উপজেলায় বোরোর বাম্পাার ফলন হলেও কৃষকের মুখে হাসি নেই। দেনা পরিশোধ ও সাংসারিক প্রয়োজনে বাধ্য হয়ে কৃষকদের কম দামে নতুন ধান বিক্রি করতে হচ্ছে। কিন্তু ধানের দরপতনে কৃষকরা বেসামাল হয়ে পড়েছেন। প্রতি বস্তা (৭৫ কেজি) ধান মাত্র ৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফলে এক কেজি ধানের বর্তমান বাজার মূল্য হচ্ছে ১০ টাকা। এতে করে কৃষককে প্রতি কেজি ধানে লোকসান গুনতে হচ্ছে ২ টাকা ৬৮ পয়সা। ধানের দরপতনে কৃষকরা প্রতি মণে ১৫০ টাকা লোকসান হলেও চাল ব্যবসায়ীদের মণে লাভ হচ্ছে ২শ’ টাকার মতো।
ময়মনসিংহ কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক আলতাবুর রহমান বলেন, বাম্পার ফলন হলেও কৃষক ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। প্রতি মণ ধান উৎপাদন ও ঘরে তোলা পর্যন্ত খরচ পড়ে ৭শ’ টাকা। বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ টাকা থেকে ৬শ’ টাকা মণ দরে।
দু’বছর ধরে ধান কেনা বন্ধ : ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে ২ বছর ধরে সরকারিভাবে ধান কেনা হয়নি। কৃষকরা জানান, সরকারিভাবে তাদের কাছ থেকে কোনো ধান না কেনায় বাজারে এর দাম কম থাকায় তারা হতাশ। এ ব্যাপারে ধান ব্যবসায়ী ও মিল মালিক ইসমাঈল হোসেন, তারা মিয়া, আবুল হাশেম জানান, ধান-চালের বাজারমূল্য কমে যাওয়ায় তাদের কাছে এখনও হাজার হাজার বস্তা চাল অবিক্রীত রয়েছে।
শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার ছিটপাড়া গ্রামের কৃষক আবু হারেজ। তার ৪০ কাঠা জমির মধ্যে ২৩ কাঠা জমির ধান নেক ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে মরে গেছে। বাকি ১৭ কাঠা জমিতে ৫৪ মণ ধান পেয়েছেন। বর্তমান বাজারমূল্যে ৫৪০ টাকা দরে তার এ ধানের মূল্য ২৯ হাজার ১৬০ টাকা। অথচ তার আবাদে খরচ হয়েছে ৬০ হাজার টাকা। ধান বিক্রি করে তিনি খরচের অর্ধেকেরও কম পাচ্ছেন। বাকি টাকা তার লোকসান হচ্ছে।
কুমিল্লা জেলায় কৃষি শ্রমিকের অভাবে ধান কাটা যাচ্ছে না। অনেকেই রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে কর্মস্থানে চলে যাওয়ায় শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে কৃষি শ্রমিকের মূল্য খুবই চড়া। দৈনিক তিন বেলা খাবার দিয়ে ও ৪৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা দিয়েও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না।
ক্রেতার দেখা মিলছে না : ধানের জেলা দিনাজপুরে চলতি বোরো মৌসুমে শুরুতেই ধানের দাম নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। বাম্পার ফলন হলেও হাসি নেই কৃষকের মুখে। কেননা বাজারে ধানের ক্রেতা নেই। উৎপাদন খরচের অর্ধেক দামে ধান বিক্রি করতে হচ্ছে। সরকার ধান ক্রয়ের ঘোষণা দিলেও এখনও ক্রয় অভিযান শুরু হয়নি। গুদামে আগের ধান মজুত থাকায় এ অবস্থায় কৃষকের কাছ থেকে ধান না কেনায় বাধ্য হয়ে কৃষকরা স্থানীয়ভাবে গড়ে উঠা সিন্ডিকেট, মজুদদার, ফড়িয়া ও চাল কলগুলোতে ধান বিক্রি করছেন।
গাইবান্ধায় ব্যবসায়ীরা ধান-চাল কিনছেন না। অপরদিকে সরকারিভাবে ধান-চাল ক্রয়ের নির্দেশনা এলেও আর্দ্রতার মাত্রা আশানুরূপ না থাকার অজুহাতে স্থানীয় ক্রয় কেন্দ্রগুলোতে সংগ্রহ অভিযান শুরু করা হয়নি। ফলে হাট-বাজারে কেনাকাটা নেই। অন্যান্য বার এ সময় বাইরে থেকে ব্যবসায়ীরা এসে ধান কিনে নিয়ে যেত। কিন্তু এবার হাটবাজারগুলোতে বাইরের কোনো ক্রেতা নেই। ফলে ধান-চালের দর এখন নিুমুখী। সামান্য পরিমাণে ধান-চাল স্থানীয়ভাবে কেনাবেচা চলছে অত্যন্ত কম দামে। তাতে কৃষকদের ধান উৎপাদন খরচই উঠছে না।
কিশোরগঞ্জের চামরা বন্দরে নতুন বোরো ধান বোঝাই শত শত নৌকা ঘাটে ভিড়েছে। এ ঘাটে মধ্যস্বত্বভোগী পাইকার এবং চাতাল মালিকরা ভিড় করছে ধান কেনার জন্য। কিন্তু দাম কম থাকায় ধান বিক্রি না করে বাড়ি ফিরতে দেখা গেছে কৃষকদের।
উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশংকা : বিপুল পরিমণ ভারতীয় চাল আমদানিই কৃষকের সর্বনাশ ডেকে এনেছে। উত্তরের জেলাগুলো ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষা হওয়ায় বিপুল পরিমাণ দিনমজুর পরিবার-পরিজন নিয়ে অবৈধভাবে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে কাজের সন্ধানে যান। তারা সেখানে তুলনামূলক বেশি দিন মজুরি পান। এসব কারণে এখন এ অঞ্চলে মারাত্মক কৃষি শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। রংপুরের মাহিগঞ্জের চালের আড়তদার শেখ কাশেম ও চাতাল মালিক তছলিম হাজী জানান, সরকারের ভারত থেকে চাল আমদানির ভুল সিদ্ধান্তের কারণে দেশের ভেতরে ধানের বাজার দরে মারাত্মক পতন হয়েছে। ফলে কৃষকরা ধানের দাম পাচ্ছেন না। কিন্তু সে অনুপাতে চালের বাজার দরও কমছে না। তিনি মনে করেন, ধানের দাম না পেলে আগামী মৌসুমে ধান উৎপাদনে কৃষক নিরুৎসাহিত হয়ে পড়বে।
(প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন, যুগান্তরের সিনিয়র রিপোর্টার শাহ আলম খান, রংপুর ব্যুরো প্রধান মাহবুব রহমান, ময়মনসিংহ ব্যুরো প্রধান আতাউল করিম খোকন, কিশোরগঞ্জ ব্যুরো প্রধান এটিএম নিজাম, কুমিল্লা ব্যুরো অফিসের তাবারক উল্লাহ কায়েস, মোহাম্মদ ময়লাল হোসেন, গাইবান্ধা প্রতিনিধি গবিন্দ লাল দাস, সাদুল্লাপুর প্রতিনিধি আবদুল জোব্বার আকন্দ, নীলফামারীর সৈয়দপুর প্রতিনিধি সৈয়দা রুখসানা জামান শানু, দিনাজপুর প্রতিনিধি আহসানুল আলম সাথী, শেরপুরের নালিতাবাড়ী প্রতিনিধি এমএ হাকাম হীরা, মাদারীপুরের কালকিনি প্রতিনিধি এইচএম মিলন ও কিশোরগঞ্জের ভৈরব প্রতিনিধি আসাদুজ্জামান ফারুক।)
No comments