নারীবান্ধব শহর চাই by মোহসিনা হোসাইন
শহরগুলো নারীদের জন্য নিরাপদ নয় |
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান,
কর্মস্থল, গণপরিবহন, আবাসন, বিনোদনব্যবস্থা প্রভৃতি সূচকের আলোকে যাচাই
করা যায় একটি শহর নারীর জন্য কতটা অনুকূল ও নিরাপদ। সূচকগুলোর বিচারে
ঢাকাকে নারীবান্ধব শহর বলা যায় না। বিভিন্ন শহরে বসবাসের অভিজ্ঞতা থেকে
বলতে পারি, মহানগর ঢাকাতেই সবচেয়ে বেশি নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন নারীরা।
কর্মস্থল, রাস্তাঘাট, পরিবহন, কাঁচাবাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কোনোটিই
নারীবান্ধব নয়। ঢাকা শহর নারীর সঙ্গে বৈরী আচরণ করছে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা
থাকা সত্ত্বেও।
রাজধানী ঢাকায় নারীদের আবাসন–সুবিধা একেবারেই অপ্রতুল। পরিবারের বাইরে থাকেন এমন নারীদের জন্য তিলোত্তমা নগর ঢাকা বেশি ভোগান্তির। ছাত্রী ও কর্মজীবী নারীদের পর্যাপ্ত হোস্টেল–সুবিধা না থাকায় মেসে ও ‘সাবলেট’ হয়ে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকতে হয় গাদাগাদি করে। ভাড়াও গুনতে হয় চড়া। ব্যক্তিমালিকাধীন হোস্টেলও নিরাপদ নয়। অনেক ক্ষেত্রে সেখানেও নির্যাতনের শিকার হন নারীরা।
এই নগরে পাবলিক বাসে ওঠা নারীর জন্য রীতিমতো একটি যুদ্ধ। পিঠে হাত দিয়ে ঠেলে বাস হেলপারের ওঠানো-নামানোর মতো অস্বস্তিকর পরিস্থিতির শিকার হন কেবল নারীরাই। বাসে ভিড় থাকলে নারীদের জন্য বরাদ্দ করা আসন চলে যায় পুরুষদের দখলে। ‘সিট নাই’ অজুহাতে মেয়েদের নিতে চায় না অনেক বাস। তাই পাবলিক বাসের জন্য নারীর অপেক্ষাটা কেবলই দীর্ঘতর হয়। চালক, চালকের সহকারী ও পুরুষ যাত্রীদের কাছ থেকে অশ্লীল মন্তব্য শোনা যায়। ঢাকায় নারীদের জন্য বিশেষ বাস চালু থাকলেও তা নামমাত্র। এমন অনেক নজির আছে, নেহাত পরিবহন–সংকটের কারণেও নারী চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছেন।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও নিরাপদ নয়। ভেতরে ও বাইরে প্রায়ই ইভ টিজিংয়ের শিকার হন ছাত্রীরা। বহিরাগত লোক, সহপাঠী এমনকি শিক্ষকের দ্বারাও যৌন হয়রানির অনেক নজির আছে। বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নেই পর্যাপ্ত ও পরিচ্ছন্ন টয়লেট। আবার কর্মস্থলে নারীদের টয়লেটের অবস্থাও ভয়াবহ। পাবলিক টয়লেট এতটা শোচনীয় ও নোংরা, সেখানে অনেক নারী যান অনেকটা বাধ্য হয়ে। ফুটপাত বা রাস্তায় হাঁটার সময়ও শুনতে হয় বাজে মন্তব্য।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের ‘নিরাপদ নগরী নির্ভয় নারী’ শীর্ষক গবেষণামূলক জরিপ থেকে জানা যায়, শহরের ৪৭ দশমিক ৫ শতাংশ নারী গণপরিবহন, রাস্তা বা উন্মুক্ত জনবহুল এলাকায় চলাফেরার ক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। চলাচলের জায়গায় ৮৫ শতাংশ নারী মর্যাদাহানিকর উক্তির শিকার হয়েছেন এবং ৪৬ শতাংশ নারী অশ্লীল কথা শুনেছেন।
বিনোদন নয়, ঢাকায় বিনোদনকেন্দ্রগুলো নারীর জন্য হয়ে উঠেছে হয়রানির কেন্দ্র। পার্কে গেলে নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হয় তাঁদের। সিনেমা হলে মেয়েদের একা যাওয়ার পরিবেশ নেই। পুরুষ সঙ্গীকে নিয়ে গেলেও শুনতে হয় কটূক্তি। শপিং মলেও ইভ টিজিংয়ের শিকার হন নারীরা। কাঁচাবাজারে গেলেও অন্য চোখে তাকায় বিক্রেতারা, সুযোগ পেলেই শুনিয়ে দেয় কটু কথা। বিভিন্ন উৎসব ও জাতীয় দিবসেও নারীরা নিরাপত্তার অভাবে নিশ্চিন্তে যোগ দিতে পারেন না।
নির্যাতিত নারীদের কাছে ঢাকা যেন এক দুঃস্বপ্নের নগর। তাঁদের চিকিৎসা বা পুলিশি সহায়তা চাওয়াটাও যেন অপরাধ! বেশির ভাগ থানায় নারীদের কথা শোনার জন্য নেই নারী পুলিশের ব্যবস্থা। নির্যাতনের শিকার নারীকে অভিযোগ জানাতে হয় পুরুষ পুলিশের কাছে। সেখানেও কখনো বা অবমাননার সম্মুখীন হতে হয় তাঁদের।
দেশের শীর্ষ দুটি রাজনৈতিক দলের প্রধান নারী। তাই তাঁদের কাছ থেকে নারীবান্ধব নিরাপদ ঢাকা গড়ার ক্ষেত্রে বড় ধরনের উদ্যোগ আশা করি। মডেল হিসেবে সামনে থাকতে পারে দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলের ‘উইমেন ফ্রেন্ডলি সিটি প্রজেক্ট-২০০৭’। নারীদের জন্য নিরাপদ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিশ্চিত করতে ‘জিরো টলারেন্স’ ঘোষণা করেছে সিউল। শিশু শ্রেণি থেকেই চালু করেছে নারীর অধিকার বিষয়ে পাঠদানের ব্যবস্থা। কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়, অপরাধীর শাস্তিও হয় খুব দ্রুত। চিকিৎসা, কাউন্সেলিংসহ সব ধরনের সহায়তা পান একজন নির্যাতিত নারী। সব প্রতিষ্ঠানেই ১: ১ অনুপাতে মেয়েদের জন্য টয়লেটের ব্যবস্থা করার জোর নির্দেশনা আছে। মেয়েদের জন্য আছে চেঞ্জরুম, বেবিরুম, নার্সিংরুম, ইমার্জেন্সি বেলসহ নানা সুবিধা। চালু করা হয়েছে নারীবান্ধব বিশেষ ট্যাক্সি, যাতে ওঠামাত্রই যাত্রার স্থান, সময়, গাড়ির নম্বর এসএমএসের মাধ্যমে চলে যায় যাত্রীর পরিবারের কাছে। বাস, মেট্রো সার্ভিস তো বটেই, ফুটপাতে নারীরা যাতে স্বচ্ছন্দে চলাচল করতে পারেন, তা–ও নিশ্চিত করা হয়েছে।
নারীবান্ধব ঢাকা শহর গড়ে তুলতে নারীর নিরাপত্তার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেওয়া, পর্যাপ্ত মহিলা বাস চালু, গণপরিবহনে নারী আসন বৃদ্ধি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করা, কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল, ছাত্রী হোস্টেল ও শিশু পরিচর্যাকেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানো, প্রতিটি বাজার-শপিং মল নারীবান্ধব করা জরুরি। শহরের মূল সড়কগুলোর পাশে নারীদের জন্য স্থাপন করতে হবে পর্যাপ্ত শৌচাগার। প্রতিটি সিনেমা হলে সপ্তাহের যেকোনো এক দিন শুধু নারীদের জন্য প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
প্রতিটি থানায় নির্যাতিতদের জন্য চালু করতে হবে আশ্রয়কেন্দ্র ও কার্যকর ওয়ানস্টপ সাপোর্ট সেন্টার, যেখানে এক জায়গা থেকেই চিকিৎসা, আইনি থেকে শুরু করে সব সহায়তা পাওয়া যাবে। চালু করা যেতে পারে ২৪ ঘণ্টার হেল্পলাইন, নারীরা যেকোনো সমস্যায় সেখানে ফোন করে সহায়তা পাবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে সচেতন নাগরিকদের নিয়ে গঠন করা যেতে পারে স্বেচ্ছাসেবক কমিটি। প্রয়োজনে বখাটেদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে সোপর্দ করবে এ কমিটি। দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ছাড়া চলমান অবস্থা রীতিমতো পাল্টে ফেলা কঠিন। তাই এ-বিষয়ক রচনা বিভিন্ন শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
কিছুদিন আগে হয়ে গেল ঢাকা ও চট্টগ্রামে সিটি নির্বাচন। মেয়ররা নারীবান্ধব নিরাপদ শহর গড়ে তুলতে কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন। নারীদের জন্য পাবলিক টয়লেট, আলাদা পরিবহন, কর্মজীবী হোস্টেল, মায়েদের সুবিধার জন্য শিশু দিবাযত্নকেন্দ্র—এ বিষয়গুলোর প্রতিশ্রুতি দেখা গেছে তাঁদের ইশতেহারে। আমাদের প্রত্যাশা, তাঁরা এসব অঙ্গীকার বাস্তবায়নে উদ্যোগী হবেন। নিরাপত্তার প্রশ্নে সিটি করপোরেশনের ক্ষমতা সীমিত হলেও কাঠামোর মধ্যে থেকে যতটা সম্ভব কাজ করবেন তাঁরা। যেমন কমিউনিটি পুলিশ, রাস্তায় আলোর ব্যবস্থা করা, মেয়েদের আত্মরক্ষার কৌশল শেখানো ইত্যাদি ক্ষেত্রে তাঁরা উদ্যোগ নিতে পারেন।
মোহসিনা হোসাইন: শিক্ষক, বাংলা বিভাগ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।
mohsina.hossaindu@gmail.com
রাজধানী ঢাকায় নারীদের আবাসন–সুবিধা একেবারেই অপ্রতুল। পরিবারের বাইরে থাকেন এমন নারীদের জন্য তিলোত্তমা নগর ঢাকা বেশি ভোগান্তির। ছাত্রী ও কর্মজীবী নারীদের পর্যাপ্ত হোস্টেল–সুবিধা না থাকায় মেসে ও ‘সাবলেট’ হয়ে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকতে হয় গাদাগাদি করে। ভাড়াও গুনতে হয় চড়া। ব্যক্তিমালিকাধীন হোস্টেলও নিরাপদ নয়। অনেক ক্ষেত্রে সেখানেও নির্যাতনের শিকার হন নারীরা।
এই নগরে পাবলিক বাসে ওঠা নারীর জন্য রীতিমতো একটি যুদ্ধ। পিঠে হাত দিয়ে ঠেলে বাস হেলপারের ওঠানো-নামানোর মতো অস্বস্তিকর পরিস্থিতির শিকার হন কেবল নারীরাই। বাসে ভিড় থাকলে নারীদের জন্য বরাদ্দ করা আসন চলে যায় পুরুষদের দখলে। ‘সিট নাই’ অজুহাতে মেয়েদের নিতে চায় না অনেক বাস। তাই পাবলিক বাসের জন্য নারীর অপেক্ষাটা কেবলই দীর্ঘতর হয়। চালক, চালকের সহকারী ও পুরুষ যাত্রীদের কাছ থেকে অশ্লীল মন্তব্য শোনা যায়। ঢাকায় নারীদের জন্য বিশেষ বাস চালু থাকলেও তা নামমাত্র। এমন অনেক নজির আছে, নেহাত পরিবহন–সংকটের কারণেও নারী চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছেন।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও নিরাপদ নয়। ভেতরে ও বাইরে প্রায়ই ইভ টিজিংয়ের শিকার হন ছাত্রীরা। বহিরাগত লোক, সহপাঠী এমনকি শিক্ষকের দ্বারাও যৌন হয়রানির অনেক নজির আছে। বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নেই পর্যাপ্ত ও পরিচ্ছন্ন টয়লেট। আবার কর্মস্থলে নারীদের টয়লেটের অবস্থাও ভয়াবহ। পাবলিক টয়লেট এতটা শোচনীয় ও নোংরা, সেখানে অনেক নারী যান অনেকটা বাধ্য হয়ে। ফুটপাত বা রাস্তায় হাঁটার সময়ও শুনতে হয় বাজে মন্তব্য।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের ‘নিরাপদ নগরী নির্ভয় নারী’ শীর্ষক গবেষণামূলক জরিপ থেকে জানা যায়, শহরের ৪৭ দশমিক ৫ শতাংশ নারী গণপরিবহন, রাস্তা বা উন্মুক্ত জনবহুল এলাকায় চলাফেরার ক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। চলাচলের জায়গায় ৮৫ শতাংশ নারী মর্যাদাহানিকর উক্তির শিকার হয়েছেন এবং ৪৬ শতাংশ নারী অশ্লীল কথা শুনেছেন।
বিনোদন নয়, ঢাকায় বিনোদনকেন্দ্রগুলো নারীর জন্য হয়ে উঠেছে হয়রানির কেন্দ্র। পার্কে গেলে নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হয় তাঁদের। সিনেমা হলে মেয়েদের একা যাওয়ার পরিবেশ নেই। পুরুষ সঙ্গীকে নিয়ে গেলেও শুনতে হয় কটূক্তি। শপিং মলেও ইভ টিজিংয়ের শিকার হন নারীরা। কাঁচাবাজারে গেলেও অন্য চোখে তাকায় বিক্রেতারা, সুযোগ পেলেই শুনিয়ে দেয় কটু কথা। বিভিন্ন উৎসব ও জাতীয় দিবসেও নারীরা নিরাপত্তার অভাবে নিশ্চিন্তে যোগ দিতে পারেন না।
নির্যাতিত নারীদের কাছে ঢাকা যেন এক দুঃস্বপ্নের নগর। তাঁদের চিকিৎসা বা পুলিশি সহায়তা চাওয়াটাও যেন অপরাধ! বেশির ভাগ থানায় নারীদের কথা শোনার জন্য নেই নারী পুলিশের ব্যবস্থা। নির্যাতনের শিকার নারীকে অভিযোগ জানাতে হয় পুরুষ পুলিশের কাছে। সেখানেও কখনো বা অবমাননার সম্মুখীন হতে হয় তাঁদের।
দেশের শীর্ষ দুটি রাজনৈতিক দলের প্রধান নারী। তাই তাঁদের কাছ থেকে নারীবান্ধব নিরাপদ ঢাকা গড়ার ক্ষেত্রে বড় ধরনের উদ্যোগ আশা করি। মডেল হিসেবে সামনে থাকতে পারে দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলের ‘উইমেন ফ্রেন্ডলি সিটি প্রজেক্ট-২০০৭’। নারীদের জন্য নিরাপদ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিশ্চিত করতে ‘জিরো টলারেন্স’ ঘোষণা করেছে সিউল। শিশু শ্রেণি থেকেই চালু করেছে নারীর অধিকার বিষয়ে পাঠদানের ব্যবস্থা। কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়, অপরাধীর শাস্তিও হয় খুব দ্রুত। চিকিৎসা, কাউন্সেলিংসহ সব ধরনের সহায়তা পান একজন নির্যাতিত নারী। সব প্রতিষ্ঠানেই ১: ১ অনুপাতে মেয়েদের জন্য টয়লেটের ব্যবস্থা করার জোর নির্দেশনা আছে। মেয়েদের জন্য আছে চেঞ্জরুম, বেবিরুম, নার্সিংরুম, ইমার্জেন্সি বেলসহ নানা সুবিধা। চালু করা হয়েছে নারীবান্ধব বিশেষ ট্যাক্সি, যাতে ওঠামাত্রই যাত্রার স্থান, সময়, গাড়ির নম্বর এসএমএসের মাধ্যমে চলে যায় যাত্রীর পরিবারের কাছে। বাস, মেট্রো সার্ভিস তো বটেই, ফুটপাতে নারীরা যাতে স্বচ্ছন্দে চলাচল করতে পারেন, তা–ও নিশ্চিত করা হয়েছে।
নারীবান্ধব ঢাকা শহর গড়ে তুলতে নারীর নিরাপত্তার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেওয়া, পর্যাপ্ত মহিলা বাস চালু, গণপরিবহনে নারী আসন বৃদ্ধি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করা, কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল, ছাত্রী হোস্টেল ও শিশু পরিচর্যাকেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানো, প্রতিটি বাজার-শপিং মল নারীবান্ধব করা জরুরি। শহরের মূল সড়কগুলোর পাশে নারীদের জন্য স্থাপন করতে হবে পর্যাপ্ত শৌচাগার। প্রতিটি সিনেমা হলে সপ্তাহের যেকোনো এক দিন শুধু নারীদের জন্য প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
প্রতিটি থানায় নির্যাতিতদের জন্য চালু করতে হবে আশ্রয়কেন্দ্র ও কার্যকর ওয়ানস্টপ সাপোর্ট সেন্টার, যেখানে এক জায়গা থেকেই চিকিৎসা, আইনি থেকে শুরু করে সব সহায়তা পাওয়া যাবে। চালু করা যেতে পারে ২৪ ঘণ্টার হেল্পলাইন, নারীরা যেকোনো সমস্যায় সেখানে ফোন করে সহায়তা পাবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে সচেতন নাগরিকদের নিয়ে গঠন করা যেতে পারে স্বেচ্ছাসেবক কমিটি। প্রয়োজনে বখাটেদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে সোপর্দ করবে এ কমিটি। দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ছাড়া চলমান অবস্থা রীতিমতো পাল্টে ফেলা কঠিন। তাই এ-বিষয়ক রচনা বিভিন্ন শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
কিছুদিন আগে হয়ে গেল ঢাকা ও চট্টগ্রামে সিটি নির্বাচন। মেয়ররা নারীবান্ধব নিরাপদ শহর গড়ে তুলতে কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন। নারীদের জন্য পাবলিক টয়লেট, আলাদা পরিবহন, কর্মজীবী হোস্টেল, মায়েদের সুবিধার জন্য শিশু দিবাযত্নকেন্দ্র—এ বিষয়গুলোর প্রতিশ্রুতি দেখা গেছে তাঁদের ইশতেহারে। আমাদের প্রত্যাশা, তাঁরা এসব অঙ্গীকার বাস্তবায়নে উদ্যোগী হবেন। নিরাপত্তার প্রশ্নে সিটি করপোরেশনের ক্ষমতা সীমিত হলেও কাঠামোর মধ্যে থেকে যতটা সম্ভব কাজ করবেন তাঁরা। যেমন কমিউনিটি পুলিশ, রাস্তায় আলোর ব্যবস্থা করা, মেয়েদের আত্মরক্ষার কৌশল শেখানো ইত্যাদি ক্ষেত্রে তাঁরা উদ্যোগ নিতে পারেন।
মোহসিনা হোসাইন: শিক্ষক, বাংলা বিভাগ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।
mohsina.hossaindu@gmail.com
No comments