এশিয়ায় গণতন্ত্রের সঙ্কট by শশী থারুর
শেষ পর্যন্ত প্রমাণিত হলো যে, অনেকে
যেমনটা আশা করেন এশিয়ার গণতন্ত্র তার চেয়ে কঠিন। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন
দিয়ে ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার মতো বৃহৎ এবং বিভক্ত সমাজে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক
ক্রান্তিকাল উতরানো সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু থাইল্যান্ড ও পাকিস্তানের মতো
কিছু এশীয় গণতন্ত্র মনে হচ্ছে তাদের পথ হারাচ্ছে।
ব্যালট বাক্সের মাধ্যমে সরকারের পরিবর্তন ঘটানোর ভারতীয়দের বিরাট অভিজ্ঞতা রয়েছে। চলতি বছরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনও সেদিক থেকে কোন ব্যতিক্রম নয়। ভারতেই বিশ্বের বৃহত্তম ভোটাভুটি অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। ভারতীয়রা এবারে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) অনুকূলে ভোট দিলো। আর দু’মেয়াদে নির্বাচিত ইউনাইটেড প্রগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স ইউপিকে প্রত্যাখ্যান করলো। এ ধরনের দ্বিতীয় বৃহত্তম ভোটাভুটি ঘটে ইন্দোনেশিয়ায়। দেশটির তৃতীয় রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোটারগণ সাবেক জেনারেল প্রাবো সুবিয়ানতো’র পরিবর্তে জনপ্রিয় মেয়র জোকো উইডিডোকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেন। এমনকি যুদ্ধে বিপর্যস্ত আফগানিস্তান তার প্রথম দফায় গণতান্ত্রিক হাতবদল নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন সম্পন্ন করলো। যদিও এ নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বী আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ নির্বাচনী ফলাফলের বৈধতা তীব্রভাবে চ্যালেঞ্জ করেছেন। এর ফলে আশরাফ গনি লাভবান হলেন। এই বিরোধ অবশ্য সহিংস রূপ নেয়নি। উভয় পক্ষ একটি জাতীয় ঐকমত্যের সরকার প্রতিষ্ঠায় মার্কিন মধ্যস্থতায় আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। এটা আশাব্যঞ্জক যে, গৃহযুদ্ধ ও সন্ত্রাসে বিধ্বস্ত এই ভূখণ্ডের বিবদমান পক্ষের কেউ অস্ত্রশক্তিতে বলীয়ান হওয়ার প্রবণতা দেখাচ্ছে না। প্রতীয়মান হচ্ছে যে, এই দেশগুলো এটা মেনে নিতে শুরু করেছে যে, নির্বাচন অনুষ্ঠানের কার্যকারিতা তার ফলাফল মেনে নেয়ার উপর নির্ভর করে।
একটি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আশাবাদ, অঙ্গীকার এবং আপসের মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। আর এ সবই সরকার ও শাসিতের মধ্যকার গঠিত বন্ধন নির্দেশ করে। নির্বাচনের ফল গ্রহণ করা গণতন্ত্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আপনি আপনার পরাজয়কেও ঔদার্যের সঙ্গে গ্রহণ করবেন। দুর্ভাগ্যবশত এই প্রবণতা এশিয়ার সর্বত্র সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। থাইল্যান্ডের রাজা ভূমিবল একটি নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সংবিধান অনুমোদন করার মধ্য দিয়ে থাই-গণতন্ত্রের মৃত্যু সনদে কার্যকরভাবে স্বাক্ষর করেছেন। এক হিসাবে এটা হলো ১৯৩২ সালের পরে ১৮তম অন্তর্বর্তীকালীন সংবিধান, যাতে সেনাপ্রধান জেনারেল প্রেউথ চান-ওচা নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর পিস অ্যান্ড অর্ডারকে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। জেনারেল প্রেউথ তার নতুন ক্ষমতাবলে ‘দেশের শাসন বা জাতীয় অর্থনীতি, রাজতন্ত্র, জাতীয় নিরাপত্তা এবং শান্তি-শৃঙ্খলাকে ধ্বংস করতে পারে-এমন সব ধরনের তৎপরতার প্রতিরোধ, স্থগিত এবং দমন করতে পারবেন। ’
এদিকে পাকিস্তান অচল হয়ে পড়েছে। প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের নির্বাচিত সরকার এবং তার সমালোচকদের মধ্যে একটা সংরক্ষিত অচলায়তন গড়ে উঠেছে। ক্যারিশমেটিক সাবেক ক্রিকেট তারকা ইমরান খান, যার দল গত নির্বাচনে তৃতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে, তিনি এবং কানাডাভিত্তিক ধর্মীয় নেতা তাহিরুল কাদরি বিক্ষোভ মিছিলে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এর ফলে ইসলামাবাদ স্থবির হয়ে পড়েছে। এটা এমন একটি পরিস্থিতি, যা ইমরান ও কাদরি, নওয়াজের পদত্যাগ না করা পর্যন্ত চালিয়ে যাবেন বলে অঙ্গীকার করেছেন। আশাবাদের একটি ক্ষীণ রেখা হলো প্রধান বিরোধী দল পিপিপি। এর আগে পিপিপি সরকারকে শরিফ ছাড় দিয়েছিলেন। সরকার বিরোধী বিক্ষোভে যোগ না দিয়ে তারা নওয়াজকে সংবিধানবহির্ভূত উপায়ে চাপ দিয়ে পদত্যাগ করানোর প্রচেষ্টার বিরোধিতা করেছেন। তারা নওয়াজের পেছনে দাঁড়িয়েছেন।
কিন্তু থাইল্যান্ডের মতো পাকিস্তানেও সামরিক বাহিনীর দীর্ঘ ছায়া রয়েছে। সামরিক বাহিনী পাকিস্তানের অস্তিত্বের অর্ধেক সময় সরাসরি শাসন করেছে। যদিও সেনাবাহিনী এখন পর্যন্ত চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় সরাসরি হস্তক্ষেপ করেনি। মনে করা হচ্ছে, শীর্ষস্থানীয় সামরিক নেতৃবৃন্দের উল্লেখযোগ্য অংশ বিক্ষোভ সমাবেশকে মার্জনা করেছেন।
সত্যি বলতে কি, থাই ও পাকিস্তানের গণতন্ত্রের সঙ্গে সামরিক বাহিনীর সম্পর্কের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী পরিস্থিতিকে নিজেদের জন্য অনুকূল মনে করে। থাইল্যান্ডে সেটা অনুপস্থিত। কারণ থাইল্যান্ডে সামরিক বাহিনীসহ অভিজাত শ্রেণী একাধিক্রমে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের বিরোধিতা করে চলেছে। তার কারণ ভোটাররা থাকসিন শিনাওয়াত্রা এবং তার বোন ইংলাকের মতো জনপ্রিয় নেতাদের নির্বাচিত করে থাকেন, যা সামরিক বাহিনীর জন্য সুখকর নয়। নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক ফলাফল নিজেদের অনুকূলে আনার চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পরে এই শক্তিশালী গোষ্ঠী চূড়ান্তভাবে সিদ্ধান্ত নিলো যে, গণতান্ত্রিক নির্বাচনের খোলসটা আর ধরে রাখার দরকারটা কি। ওটা ফেলে দাও।
পাকিস্তানে, বিপরীতক্রমে বেসামরিক নির্বাচিত সরকার যখন সশস্ত্র বাহিনীর সর্বোচ্চ ক্ষমতার বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলো, তখনই সমস্যা আরম্ভ হলো। সম্ভবত এটা কোন কাকতালীয় বিষয় নয় যে, শরিফ যখন ক্রমাগতভাবে সামরিক বাহিনীর কর্তৃত্বকে সীমিত করতে উদ্যোগী হলেন, তখনই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়লো। আসল বস কে- তিনি যদি সামরিক বাহিনীকে দেখাতে পারেন যে, এটা তার ভালই জানা আছে এবং তার জন্য লাল সীমারেখা যতই টানা হোক না কেন, ততক্ষণ প্রতিবাদকারীদের দ্বারা নওয়াজকে গদিচ্যুত করতে দেয়া হবে না। সেনাবাহিনী বরং দ্রুততার সঙ্গে তাদেরকে রাস্তা থেকে বিদায় করে দেবে।
সুতরাং পাকিস্তানের গণতন্ত্রের মৃত্যুর জন্য শোক প্রকাশ করা খুব তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে। আরো কিছু সময়ের জন্য এটা নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র হিসেবে চলতে পারে। কিন্তু একে শক্তিশালী করতে হলে পাকিস্তানের সকল রাজনৈতিক দলকে অবাধ ও সুষ্ঠু এবং আইনানুগ নির্বাচন অনুষ্ঠানে এবং তার ফল মেনে চলা শিখতে হবে।
ইমরান খানের কাছে পাকিস্তান এখন এটাই আশা করতে পারে। ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে তার দলের মাত্র ৩৫টি আসন, সেটা পিপিপি’র ৪৫ আসনের চেয়ে কম। আর নওয়াজের মুসলিম লীগের ১৬৬ আসন থেকে ঢের দূরে। একজন ক্রিকেটার হিসেবে খানের এটা বোঝা উচিত যে, এই স্কোর দিয়ে তাকে ম্যান অব দ্য ম্যাচ ঘোষণা করা যাবে না। দুর্ভাগ্যবশত উর্দিধারী আম্পায়ারের কাছ থেকে তার আশা, তারা খানের হয়ে খেলায় তাকে জিতিয়ে দেবেন।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এশিয়ায় গণতন্ত্রের বিরাট অগ্রগতি ঘটেছে। এক প্রজন্ম আগেও এশিয়ার প্রায় অর্ধেক দেশে জবরদস্তি ক্ষমতার দখল ঘটেছে। কিন্তু আজকের দিনে দক্ষিণ কোরিয়া এবং ফিলিপাইনে সামরিক শাসন জারি প্রায় অভাবনীয় এবং বাংলাদেশে তা অসম্ভাবনীয় (আনলাইকলি)। এমনকি মিয়ানমারও তার অনেক সমস্যা নিয়েও সামরিক বাহিনীর রাজনৈতিক প্রভাবের শৃঙ্খল নিশ্চিতভাবে ভাঙতে পেরেছে। তবে এশিয়া মহাদেশকে পুরোপুরি সেনাশাসন মুক্ত করতে হলে থাইল্যান্ড ও পাকিস্তানে বিরাট অগ্রগতি নিশ্চিত করতে হবে।
ব্যালট বাক্সের মাধ্যমে সরকারের পরিবর্তন ঘটানোর ভারতীয়দের বিরাট অভিজ্ঞতা রয়েছে। চলতি বছরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনও সেদিক থেকে কোন ব্যতিক্রম নয়। ভারতেই বিশ্বের বৃহত্তম ভোটাভুটি অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। ভারতীয়রা এবারে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) অনুকূলে ভোট দিলো। আর দু’মেয়াদে নির্বাচিত ইউনাইটেড প্রগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স ইউপিকে প্রত্যাখ্যান করলো। এ ধরনের দ্বিতীয় বৃহত্তম ভোটাভুটি ঘটে ইন্দোনেশিয়ায়। দেশটির তৃতীয় রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোটারগণ সাবেক জেনারেল প্রাবো সুবিয়ানতো’র পরিবর্তে জনপ্রিয় মেয়র জোকো উইডিডোকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেন। এমনকি যুদ্ধে বিপর্যস্ত আফগানিস্তান তার প্রথম দফায় গণতান্ত্রিক হাতবদল নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন সম্পন্ন করলো। যদিও এ নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বী আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ নির্বাচনী ফলাফলের বৈধতা তীব্রভাবে চ্যালেঞ্জ করেছেন। এর ফলে আশরাফ গনি লাভবান হলেন। এই বিরোধ অবশ্য সহিংস রূপ নেয়নি। উভয় পক্ষ একটি জাতীয় ঐকমত্যের সরকার প্রতিষ্ঠায় মার্কিন মধ্যস্থতায় আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। এটা আশাব্যঞ্জক যে, গৃহযুদ্ধ ও সন্ত্রাসে বিধ্বস্ত এই ভূখণ্ডের বিবদমান পক্ষের কেউ অস্ত্রশক্তিতে বলীয়ান হওয়ার প্রবণতা দেখাচ্ছে না। প্রতীয়মান হচ্ছে যে, এই দেশগুলো এটা মেনে নিতে শুরু করেছে যে, নির্বাচন অনুষ্ঠানের কার্যকারিতা তার ফলাফল মেনে নেয়ার উপর নির্ভর করে।
একটি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আশাবাদ, অঙ্গীকার এবং আপসের মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। আর এ সবই সরকার ও শাসিতের মধ্যকার গঠিত বন্ধন নির্দেশ করে। নির্বাচনের ফল গ্রহণ করা গণতন্ত্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আপনি আপনার পরাজয়কেও ঔদার্যের সঙ্গে গ্রহণ করবেন। দুর্ভাগ্যবশত এই প্রবণতা এশিয়ার সর্বত্র সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। থাইল্যান্ডের রাজা ভূমিবল একটি নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সংবিধান অনুমোদন করার মধ্য দিয়ে থাই-গণতন্ত্রের মৃত্যু সনদে কার্যকরভাবে স্বাক্ষর করেছেন। এক হিসাবে এটা হলো ১৯৩২ সালের পরে ১৮তম অন্তর্বর্তীকালীন সংবিধান, যাতে সেনাপ্রধান জেনারেল প্রেউথ চান-ওচা নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর পিস অ্যান্ড অর্ডারকে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। জেনারেল প্রেউথ তার নতুন ক্ষমতাবলে ‘দেশের শাসন বা জাতীয় অর্থনীতি, রাজতন্ত্র, জাতীয় নিরাপত্তা এবং শান্তি-শৃঙ্খলাকে ধ্বংস করতে পারে-এমন সব ধরনের তৎপরতার প্রতিরোধ, স্থগিত এবং দমন করতে পারবেন। ’
এদিকে পাকিস্তান অচল হয়ে পড়েছে। প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের নির্বাচিত সরকার এবং তার সমালোচকদের মধ্যে একটা সংরক্ষিত অচলায়তন গড়ে উঠেছে। ক্যারিশমেটিক সাবেক ক্রিকেট তারকা ইমরান খান, যার দল গত নির্বাচনে তৃতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে, তিনি এবং কানাডাভিত্তিক ধর্মীয় নেতা তাহিরুল কাদরি বিক্ষোভ মিছিলে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এর ফলে ইসলামাবাদ স্থবির হয়ে পড়েছে। এটা এমন একটি পরিস্থিতি, যা ইমরান ও কাদরি, নওয়াজের পদত্যাগ না করা পর্যন্ত চালিয়ে যাবেন বলে অঙ্গীকার করেছেন। আশাবাদের একটি ক্ষীণ রেখা হলো প্রধান বিরোধী দল পিপিপি। এর আগে পিপিপি সরকারকে শরিফ ছাড় দিয়েছিলেন। সরকার বিরোধী বিক্ষোভে যোগ না দিয়ে তারা নওয়াজকে সংবিধানবহির্ভূত উপায়ে চাপ দিয়ে পদত্যাগ করানোর প্রচেষ্টার বিরোধিতা করেছেন। তারা নওয়াজের পেছনে দাঁড়িয়েছেন।
কিন্তু থাইল্যান্ডের মতো পাকিস্তানেও সামরিক বাহিনীর দীর্ঘ ছায়া রয়েছে। সামরিক বাহিনী পাকিস্তানের অস্তিত্বের অর্ধেক সময় সরাসরি শাসন করেছে। যদিও সেনাবাহিনী এখন পর্যন্ত চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় সরাসরি হস্তক্ষেপ করেনি। মনে করা হচ্ছে, শীর্ষস্থানীয় সামরিক নেতৃবৃন্দের উল্লেখযোগ্য অংশ বিক্ষোভ সমাবেশকে মার্জনা করেছেন।
সত্যি বলতে কি, থাই ও পাকিস্তানের গণতন্ত্রের সঙ্গে সামরিক বাহিনীর সম্পর্কের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী পরিস্থিতিকে নিজেদের জন্য অনুকূল মনে করে। থাইল্যান্ডে সেটা অনুপস্থিত। কারণ থাইল্যান্ডে সামরিক বাহিনীসহ অভিজাত শ্রেণী একাধিক্রমে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের বিরোধিতা করে চলেছে। তার কারণ ভোটাররা থাকসিন শিনাওয়াত্রা এবং তার বোন ইংলাকের মতো জনপ্রিয় নেতাদের নির্বাচিত করে থাকেন, যা সামরিক বাহিনীর জন্য সুখকর নয়। নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক ফলাফল নিজেদের অনুকূলে আনার চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পরে এই শক্তিশালী গোষ্ঠী চূড়ান্তভাবে সিদ্ধান্ত নিলো যে, গণতান্ত্রিক নির্বাচনের খোলসটা আর ধরে রাখার দরকারটা কি। ওটা ফেলে দাও।
পাকিস্তানে, বিপরীতক্রমে বেসামরিক নির্বাচিত সরকার যখন সশস্ত্র বাহিনীর সর্বোচ্চ ক্ষমতার বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলো, তখনই সমস্যা আরম্ভ হলো। সম্ভবত এটা কোন কাকতালীয় বিষয় নয় যে, শরিফ যখন ক্রমাগতভাবে সামরিক বাহিনীর কর্তৃত্বকে সীমিত করতে উদ্যোগী হলেন, তখনই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়লো। আসল বস কে- তিনি যদি সামরিক বাহিনীকে দেখাতে পারেন যে, এটা তার ভালই জানা আছে এবং তার জন্য লাল সীমারেখা যতই টানা হোক না কেন, ততক্ষণ প্রতিবাদকারীদের দ্বারা নওয়াজকে গদিচ্যুত করতে দেয়া হবে না। সেনাবাহিনী বরং দ্রুততার সঙ্গে তাদেরকে রাস্তা থেকে বিদায় করে দেবে।
সুতরাং পাকিস্তানের গণতন্ত্রের মৃত্যুর জন্য শোক প্রকাশ করা খুব তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে। আরো কিছু সময়ের জন্য এটা নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র হিসেবে চলতে পারে। কিন্তু একে শক্তিশালী করতে হলে পাকিস্তানের সকল রাজনৈতিক দলকে অবাধ ও সুষ্ঠু এবং আইনানুগ নির্বাচন অনুষ্ঠানে এবং তার ফল মেনে চলা শিখতে হবে।
ইমরান খানের কাছে পাকিস্তান এখন এটাই আশা করতে পারে। ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে তার দলের মাত্র ৩৫টি আসন, সেটা পিপিপি’র ৪৫ আসনের চেয়ে কম। আর নওয়াজের মুসলিম লীগের ১৬৬ আসন থেকে ঢের দূরে। একজন ক্রিকেটার হিসেবে খানের এটা বোঝা উচিত যে, এই স্কোর দিয়ে তাকে ম্যান অব দ্য ম্যাচ ঘোষণা করা যাবে না। দুর্ভাগ্যবশত উর্দিধারী আম্পায়ারের কাছ থেকে তার আশা, তারা খানের হয়ে খেলায় তাকে জিতিয়ে দেবেন।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এশিয়ায় গণতন্ত্রের বিরাট অগ্রগতি ঘটেছে। এক প্রজন্ম আগেও এশিয়ার প্রায় অর্ধেক দেশে জবরদস্তি ক্ষমতার দখল ঘটেছে। কিন্তু আজকের দিনে দক্ষিণ কোরিয়া এবং ফিলিপাইনে সামরিক শাসন জারি প্রায় অভাবনীয় এবং বাংলাদেশে তা অসম্ভাবনীয় (আনলাইকলি)। এমনকি মিয়ানমারও তার অনেক সমস্যা নিয়েও সামরিক বাহিনীর রাজনৈতিক প্রভাবের শৃঙ্খল নিশ্চিতভাবে ভাঙতে পেরেছে। তবে এশিয়া মহাদেশকে পুরোপুরি সেনাশাসন মুক্ত করতে হলে থাইল্যান্ড ও পাকিস্তানে বিরাট অগ্রগতি নিশ্চিত করতে হবে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বর্তমান সভাপতি বিশিষ্ট কংগ্রেস নেতা শশী ঠারুর এর আগে ভারতীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন।
(১৩ই সেপ্টেম্বরের আরব নিউজের সৌজন্যে)
No comments