এশিয়ার গণতন্ত্রে কালো দাগ by শশী থারুর
এশিয়ায় গণতন্ত্র যতটা কঠিন ভাবা হয়েছিল, তার চেয়ে একটু বেশি কঠিনই মনে হচ্ছে। তবে ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার সমাজ বৃহৎ ও বিভক্ত হলেও তারা একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার পালাবদল ঘটাতে পেরেছে। কিন্তু এশিয়ার অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশ যেমন পাকিস্তান ও থাইল্যান্ড পথচ্যুত হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।
ভারতে ব্যালটের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনের ইতিহাস দীর্ঘ, ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা প্রাপ্তির পর এ বছরের ১৬তম সাধারণ নির্বাচনেও এর কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। ভারতীয় নির্বাচন দুনিয়ার সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক চর্চা, এবারের নির্বাচনে দেশটির ভোটাররা ইউপিএ জোট বর্জন করেছেন, এর বদলে তাঁরা নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ভারতীয় জনতা পার্টিকে বেছে নিয়েছেন।
অনুরূপ ঘটনা ইন্দোনেশিয়ায়ও ঘটেছে। এটা দুনিয়ার দ্বিতীয় বৃহৎ গণতান্ত্রিক চর্চা। দেশটির তৃতীয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটাররা সাবেক জেনারেল প্রাবোও সুবিয়ানতোর বদলে জনপ্রিয় মেয়র জোকো উইডোডোকে বেছে নেন। তবে এ দেশের মানুষের কঠোর সেনাশাসন ও দুর্বল বেসামরিক শাসন উভয়ই প্রত্যক্ষ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে।
এমনকি যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানেও প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়েছে, গণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের এটাই প্রথম নজির স্থাপন করল দেশটি। নির্বাচনে আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ পরাজিত হয়েছেন, তিনি নির্বাচনে বিজয়ী আশরাফ গনির বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন। তবে এই বিরোধ এখনো সহিংস রূপ লাভ করেনি। উভয় দলই যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় একটি জাতীয় ঐকমত্যের সরকার গঠনের বিষয়ে আলোচনা করছে।
এসব দেশ শেষমেশ বুঝতে পেরেছে, নির্বাচনের ফলাফল আর যে তরিকায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ। তবে তাদের বোঝাপড়ায় তারতম্য রয়েছে। নির্বাচন হচ্ছে শাসক ও শাসিতের মধ্যকার সম্পর্কের আশা, প্রতিশ্রুতি বা বোঝাপড়া সবকিছুরই প্রতিফলন। তাই নির্বাচনের ফলাফল মেনে নেওয়াটাও গণতন্ত্রের একটি অপরিহার্য অংশ। জেতার জন্য আপনি যুদ্ধ করবেন, আবার হেরে গেলে সেটাও মর্যাদার সঙ্গে মেনে নেওয়া শিখতে হবে।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে এশিয়ায় এই ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা দেখা যায় না। থাইল্যান্ডের রাজা ভূমিবল আদুলিয়াদেজ একটি নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সংবিধানের অনুমোদন দিয়ে আদতে থাই গণতন্ত্র গলা টিপে হত্যা করেছেন। ১৯৩২ সালের পর এটা নাকি সে দেশের ১৮তম সংবিধান, এতে ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর পিস অ্যান্ড অর্ডারের হাতে সব ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, সেনাপ্রধান জেনারেল প্রাইউথ শান–ওশার নেতৃত্বে সামরিক জান্তা। প্রাইউথ এখন চাইলে ‘শান্তি ও শৃঙ্খলা ধ্বংস করতে পারে এমন যেকোনো পদক্ষেপ প্রতিরোধ, মুলতবি ও দমন করতে পারবেন। জাতীয় শৃঙ্খলা ও রাজতন্ত্র, দেশের অর্থনীতি ও শাসনব্যবস্থা ধ্বংস করতে পারে, এমন যেকোনো কিছুর ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য হবে।’
সামরিক জান্তা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আগামী বছর নির্বাচন হবে, তবে তা অবাধ ও সুষ্ঠু হবে, এমন সম্ভাবনা কম। থাইল্যান্ডে গত ৮২ বছরে ডজনেরও বেশি সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে, সে দেশে এখন একটি সংবিধান থাকলেও সেটা আদতে সামরিক শাসন চিরস্থায়ী করার একটি সনদ ছাড়া আর কিছু নয়।
এদিকে নওয়াজ শরিফ ও তাঁর সমালোচকদের মধ্যকার বিবাদ দীর্ঘায়িত হওয়ার কারণে পাকিস্তান পঙ্গু হওয়ার পথে। সাবেক ক্রিকেট তারকা ইমরান খান ও কানাডাভিত্তিক ধর্মীয় নেতা তাহিরুল কাদরিও গণ-আন্দোলন শুরু করেছেন, তাতে ইসলামাবাদ অচল হয়ে পড়েছে। নওয়াজ শরিফ পদত্যাগ না করা পর্যন্ত তাঁরা এটা চালিয়ে যাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। অথচ গত বছরের নির্বাচনে ইমরানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফ তৃতীয় স্থান লাভ করে।
এ অবস্থায় প্রধান বিরোধী দল পিপিপি সাড়া দিলেই সুড়ঙ্গের শেষ মাথায় আলো দেখার সম্ভাবনা রয়েছে। নওয়াজ শরিফ নির্বাচনের মাধ্যমে পিপিপিকে সরিয়ে ক্ষমতায় এলেও পিপিপি নওয়াজ শরিফের অবস্থানের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছে। শরিফ বলেছেন, তিনি অসাংবিধানিক পন্থায় ক্ষমতা ছাড়বেন না।
কিন্তু থাইল্যান্ডের মতো পাকিস্তানের মাথায়ও সামরিক বাহিনীর ভূত জেঁকে বসেছে। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী দেশটির ইতিহাসের অর্ধেক সময় সরাসরি শাসন করেছে, বাকি অর্ধেক সময় পরোক্ষভাবে দেশটি শাসন করেছে। এখন পর্যন্ত দেশটির সেনাবাহিনী এই সংকটে প্রত্যক্ষভাবে হস্তক্ষেপ করেনি। তার মানে বোঝা যায়, এই বিদ্রোহের প্রতি সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সমর্থন রয়েছে।
আসলে দেশ দুটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে সেখানকার গণতন্ত্রের সম্পর্কে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে, পাকিস্তানের ক্ষেত্রে সেটা শুভ ইঙ্গিত বহন করছে। পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠানের ওপর দেশটির সামরিক বাহিনীর নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। ফলে তারা চাইলে নির্বাচিত সরকারকে তাদের স্বার্থের বিরুদ্ধে কিছু করা থেকে বিরত রাখতে পারে, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ যেভাবেই হোক না কেন।
সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকতে অনিচ্ছুক শরিফ তাদের কর্তৃত্বের পরীক্ষা নিতে চাওয়ায় এই বিদ্রোহের সৃষ্টি হয়েছে, এটা কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়। তিনি যদি সেনাবাহিনীকে ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দেন তাঁর বস কে তিনি তা জানেন এবং তাঁর জন্য যে সীমাই টেনে দেওয়া হোক না কেন তিনি তা মেনে চলবেন, তাহলে সেনাবাহিনী এই বিদ্রোহীদের পিটিয়ে রাস্তা থেকে ঘরে ফেরত পাঠাবে। নওয়াজের উৎখাত হওয়ার আশঙ্কাও আর থাকবে না।
ফলে পাকিস্তানের গণতন্ত্রের মৃত্যু ঘোষণা করার সময় এখনো আসেনি, সেখানে অন্তত আগামী কিছুদিনের জন্য একরকম ‘নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র’ ধরনের কিছু চলবে। কিন্তু এটাকেও টিকিয়ে রাখতে বা সংহত করতে হলে পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলোকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন ও তার ফল মেনে নেওয়ার সংস্কৃতি আয়ত্ত করতে হবে।
ইমরান খানের কাছ থেকে এখন ঠিক এটাই প্রত্যাশা করছে পাকিস্তান, গত নির্বাচনে তাঁর দল মাত্র ৩৫টি আসন পেয়েছিল, পিপিপি পেয়েছিল ৪৫টি আসন আর নওয়াজের পাকিস্তান মুসলিম লিগ পেয়েছিল ১৬৬ আসন। তাঁর মতো ক্রিকেটারের এটা বোঝা উচিত, এই ফলাফলে তাঁর পক্ষে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পাওয়া সম্ভব নয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, ইমরান একজন খাকি পোশাকের আম্পায়ারের প্রতীক্ষায় আছেন, যিনি খেলার মোড় তাঁর দিকে ঘুরিয়ে দেবেন।
বিগত কয়েক বছরে এশিয়ার গণতন্ত্রের অর্জন নেহাত কম নয়। এই এক প্রজন্ম আগেই এশিয়ার অর্ধেক দেশে জোর করে ক্ষমতায় আসার নজির দেখা গেছে আর আজ দক্ষিণ কোরিয়া, ফিলিপাইন ও বাংলাদেশে জোর করে ক্ষমতায় বসে যাওয়াটা সহজ কাজ নয়। এমনকি মিয়ানমার শত সমস্যা সত্ত্বেও নিশ্চিতভাবে কর্তৃত্ববাদী ধারা থেকে বেরিয়ে এসেছে। কিন্তু থাইল্যান্ড ও পাকিস্তানের গণতন্ত্রের পথে যাত্রা করাটা খুব একটা সুখকর হবে না, সে পথ বন্ধুর।
ইংরেজি থেকে অনুবাদ: প্রতীক বর্ধন; স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট
শশী থারুর: ভারতের সাবেক মানবসম্পদ উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী।
ভারতে ব্যালটের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনের ইতিহাস দীর্ঘ, ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা প্রাপ্তির পর এ বছরের ১৬তম সাধারণ নির্বাচনেও এর কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। ভারতীয় নির্বাচন দুনিয়ার সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক চর্চা, এবারের নির্বাচনে দেশটির ভোটাররা ইউপিএ জোট বর্জন করেছেন, এর বদলে তাঁরা নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ভারতীয় জনতা পার্টিকে বেছে নিয়েছেন।
অনুরূপ ঘটনা ইন্দোনেশিয়ায়ও ঘটেছে। এটা দুনিয়ার দ্বিতীয় বৃহৎ গণতান্ত্রিক চর্চা। দেশটির তৃতীয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটাররা সাবেক জেনারেল প্রাবোও সুবিয়ানতোর বদলে জনপ্রিয় মেয়র জোকো উইডোডোকে বেছে নেন। তবে এ দেশের মানুষের কঠোর সেনাশাসন ও দুর্বল বেসামরিক শাসন উভয়ই প্রত্যক্ষ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে।
এমনকি যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানেও প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়েছে, গণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের এটাই প্রথম নজির স্থাপন করল দেশটি। নির্বাচনে আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ পরাজিত হয়েছেন, তিনি নির্বাচনে বিজয়ী আশরাফ গনির বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন। তবে এই বিরোধ এখনো সহিংস রূপ লাভ করেনি। উভয় দলই যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় একটি জাতীয় ঐকমত্যের সরকার গঠনের বিষয়ে আলোচনা করছে।
এসব দেশ শেষমেশ বুঝতে পেরেছে, নির্বাচনের ফলাফল আর যে তরিকায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ। তবে তাদের বোঝাপড়ায় তারতম্য রয়েছে। নির্বাচন হচ্ছে শাসক ও শাসিতের মধ্যকার সম্পর্কের আশা, প্রতিশ্রুতি বা বোঝাপড়া সবকিছুরই প্রতিফলন। তাই নির্বাচনের ফলাফল মেনে নেওয়াটাও গণতন্ত্রের একটি অপরিহার্য অংশ। জেতার জন্য আপনি যুদ্ধ করবেন, আবার হেরে গেলে সেটাও মর্যাদার সঙ্গে মেনে নেওয়া শিখতে হবে।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে এশিয়ায় এই ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা দেখা যায় না। থাইল্যান্ডের রাজা ভূমিবল আদুলিয়াদেজ একটি নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সংবিধানের অনুমোদন দিয়ে আদতে থাই গণতন্ত্র গলা টিপে হত্যা করেছেন। ১৯৩২ সালের পর এটা নাকি সে দেশের ১৮তম সংবিধান, এতে ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর পিস অ্যান্ড অর্ডারের হাতে সব ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, সেনাপ্রধান জেনারেল প্রাইউথ শান–ওশার নেতৃত্বে সামরিক জান্তা। প্রাইউথ এখন চাইলে ‘শান্তি ও শৃঙ্খলা ধ্বংস করতে পারে এমন যেকোনো পদক্ষেপ প্রতিরোধ, মুলতবি ও দমন করতে পারবেন। জাতীয় শৃঙ্খলা ও রাজতন্ত্র, দেশের অর্থনীতি ও শাসনব্যবস্থা ধ্বংস করতে পারে, এমন যেকোনো কিছুর ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য হবে।’
সামরিক জান্তা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আগামী বছর নির্বাচন হবে, তবে তা অবাধ ও সুষ্ঠু হবে, এমন সম্ভাবনা কম। থাইল্যান্ডে গত ৮২ বছরে ডজনেরও বেশি সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে, সে দেশে এখন একটি সংবিধান থাকলেও সেটা আদতে সামরিক শাসন চিরস্থায়ী করার একটি সনদ ছাড়া আর কিছু নয়।
এদিকে নওয়াজ শরিফ ও তাঁর সমালোচকদের মধ্যকার বিবাদ দীর্ঘায়িত হওয়ার কারণে পাকিস্তান পঙ্গু হওয়ার পথে। সাবেক ক্রিকেট তারকা ইমরান খান ও কানাডাভিত্তিক ধর্মীয় নেতা তাহিরুল কাদরিও গণ-আন্দোলন শুরু করেছেন, তাতে ইসলামাবাদ অচল হয়ে পড়েছে। নওয়াজ শরিফ পদত্যাগ না করা পর্যন্ত তাঁরা এটা চালিয়ে যাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। অথচ গত বছরের নির্বাচনে ইমরানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফ তৃতীয় স্থান লাভ করে।
এ অবস্থায় প্রধান বিরোধী দল পিপিপি সাড়া দিলেই সুড়ঙ্গের শেষ মাথায় আলো দেখার সম্ভাবনা রয়েছে। নওয়াজ শরিফ নির্বাচনের মাধ্যমে পিপিপিকে সরিয়ে ক্ষমতায় এলেও পিপিপি নওয়াজ শরিফের অবস্থানের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছে। শরিফ বলেছেন, তিনি অসাংবিধানিক পন্থায় ক্ষমতা ছাড়বেন না।
কিন্তু থাইল্যান্ডের মতো পাকিস্তানের মাথায়ও সামরিক বাহিনীর ভূত জেঁকে বসেছে। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী দেশটির ইতিহাসের অর্ধেক সময় সরাসরি শাসন করেছে, বাকি অর্ধেক সময় পরোক্ষভাবে দেশটি শাসন করেছে। এখন পর্যন্ত দেশটির সেনাবাহিনী এই সংকটে প্রত্যক্ষভাবে হস্তক্ষেপ করেনি। তার মানে বোঝা যায়, এই বিদ্রোহের প্রতি সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সমর্থন রয়েছে।
আসলে দেশ দুটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে সেখানকার গণতন্ত্রের সম্পর্কে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে, পাকিস্তানের ক্ষেত্রে সেটা শুভ ইঙ্গিত বহন করছে। পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠানের ওপর দেশটির সামরিক বাহিনীর নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। ফলে তারা চাইলে নির্বাচিত সরকারকে তাদের স্বার্থের বিরুদ্ধে কিছু করা থেকে বিরত রাখতে পারে, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ যেভাবেই হোক না কেন।
সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকতে অনিচ্ছুক শরিফ তাদের কর্তৃত্বের পরীক্ষা নিতে চাওয়ায় এই বিদ্রোহের সৃষ্টি হয়েছে, এটা কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়। তিনি যদি সেনাবাহিনীকে ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দেন তাঁর বস কে তিনি তা জানেন এবং তাঁর জন্য যে সীমাই টেনে দেওয়া হোক না কেন তিনি তা মেনে চলবেন, তাহলে সেনাবাহিনী এই বিদ্রোহীদের পিটিয়ে রাস্তা থেকে ঘরে ফেরত পাঠাবে। নওয়াজের উৎখাত হওয়ার আশঙ্কাও আর থাকবে না।
ফলে পাকিস্তানের গণতন্ত্রের মৃত্যু ঘোষণা করার সময় এখনো আসেনি, সেখানে অন্তত আগামী কিছুদিনের জন্য একরকম ‘নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র’ ধরনের কিছু চলবে। কিন্তু এটাকেও টিকিয়ে রাখতে বা সংহত করতে হলে পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলোকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন ও তার ফল মেনে নেওয়ার সংস্কৃতি আয়ত্ত করতে হবে।
ইমরান খানের কাছ থেকে এখন ঠিক এটাই প্রত্যাশা করছে পাকিস্তান, গত নির্বাচনে তাঁর দল মাত্র ৩৫টি আসন পেয়েছিল, পিপিপি পেয়েছিল ৪৫টি আসন আর নওয়াজের পাকিস্তান মুসলিম লিগ পেয়েছিল ১৬৬ আসন। তাঁর মতো ক্রিকেটারের এটা বোঝা উচিত, এই ফলাফলে তাঁর পক্ষে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পাওয়া সম্ভব নয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, ইমরান একজন খাকি পোশাকের আম্পায়ারের প্রতীক্ষায় আছেন, যিনি খেলার মোড় তাঁর দিকে ঘুরিয়ে দেবেন।
বিগত কয়েক বছরে এশিয়ার গণতন্ত্রের অর্জন নেহাত কম নয়। এই এক প্রজন্ম আগেই এশিয়ার অর্ধেক দেশে জোর করে ক্ষমতায় আসার নজির দেখা গেছে আর আজ দক্ষিণ কোরিয়া, ফিলিপাইন ও বাংলাদেশে জোর করে ক্ষমতায় বসে যাওয়াটা সহজ কাজ নয়। এমনকি মিয়ানমার শত সমস্যা সত্ত্বেও নিশ্চিতভাবে কর্তৃত্ববাদী ধারা থেকে বেরিয়ে এসেছে। কিন্তু থাইল্যান্ড ও পাকিস্তানের গণতন্ত্রের পথে যাত্রা করাটা খুব একটা সুখকর হবে না, সে পথ বন্ধুর।
ইংরেজি থেকে অনুবাদ: প্রতীক বর্ধন; স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট
শশী থারুর: ভারতের সাবেক মানবসম্পদ উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী।
No comments