গরু আমদানি কম by আসলাম-উদ-দৌলা
ঈদুল আজহার দিন দ্রুত এগিয়ে আসছে। কিন্তু
হাট-বাজারে গরু দেখা যাচ্ছে না। এমন কি ভারত থেকে কোরবানির পশু আসছে না।
যার প্রভাব পড়েতে শুরু করেছে নগরী ও জেলার বিভিন্ন পশুর হাটগুলোতে।
ক্রেতাসমাগম হলেও দাম চড়া হওয়ায় অনেকেই ফিরেও যাচ্ছেন। হাটের ইজারদাররা
বলছেন, ইতিমধ্যেই কোরবানির পশুর হাটগুলোতে গরু-মহিষ আসতে শুরু করলেও
সীমান্তে কড়াকড়ি থাকায় ভারতীয় গরুর আমদানি কম হচ্ছে। ফলে এবার গরু-মহিষের
দামটা একটু চড়া। রাজশাহীর বড় পশুর হাটগুলোর মধ্যে রয়েছে সিটিহাট, কাটাখালি,
মহিশালবাড়ি, নওহাটা, কাকন, মচমইল, কেশরহাট, বানেশ্বরহাট। এসব হাট
সংশ্লিষ্টরা জানান, ঈদুল আজহা উপলক্ষে হাটগুলোতে কোরবানির পশু ইতিমধ্যেই
আসতে শুরু করেছে। তবে ভারতীয় গরু-মহিষের আমদানি কম। এখন পর্যন্ত হাটগুলোতে
খামারের গরুর আধিক্যই বেশি বলে মনে হচ্ছে। উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় পশুর হাট
নগরীর সিটিহাটে গিয়ে দেখা গেছে, হাটে প্রচুর খামারের গরুর আমদানি হয়েছে।
কিন্তু হরতালের কারণে বাইরে থেকে তেমন গরু আমদানি হয়নি। এছাড়া বাইরের
ক্রেতারা তেমন আসতে পারেনি। যার ফলে বেচাকেনাও হয়েছে কম। অনেককেই বাড়িতে
গরু ফিরিয়ে নিয়ে যেতে দেখা গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবার হাটগুলোতে
গতবারের চেয়ে গরু-ছাগল দাম একটু বেশি। গত বছর যে গরুর দাম ৫০ হাজার টাকা
ছিল। এবার ওই মাপের গরু ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নগরীর সিটি
হাটের ইজারাদার আতিকুর রহমান কালু বলেন, হরতালসহ ভারতীয় সীমান্তে কড়াকড়ির
কারণে এখনও জমজমাট পশুর হাট শুরু হয়নি। তাছাড়া আবহাওয়াও খারাপ। সব মিলিয়ে
পশুহাট কিছুটা জমতে শুরু করলেও দাম অন্যান্য বছরের চেয়ে একটু চড়া। তিনি
বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা না থাকলে এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে দু’ একদিনের
মধ্যেই রাজশাহীতে পশুর হাট জমজমাট শুরু হবে। পাইকারি গরু বিক্রেতা সোলায়মান
বলেন, ভারতীয় সীমান্তে দিয়ে গরু আসতে অন্যান্য বছরের চেয়ে অনেক বেশি
কড়াকড়ি চলছে। তাই আমাদের বেশি দামে গরু কিনে আনতে হয়। যার কারণে বিক্রিও
করতে হয় চড়া দামে। কিন্তু দাম বেশি হওয়ায় ক্রেতারা এখনও গরু-মহিষ কেনায়
তেমন একটা আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। নগরীর সিটি হাটে গরু কিনতে আসা নগরীর
মহিষবাথান এলাকার নজরুল ইসলাম বলেন, কোরবানির গরু কেনার জন্য হাটে
গিয়েছিলাম। কিন্তু দাম অনেক চড়া। যেহেতু ঈদের আরও বেশ কয়েক দিন বাকি আছে,
তাই বাজার দেখে একটু ভেবেচিন্তে দেরি করেই গরু কিনি। এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা
গেছে, সারা বছরই সীমান্ত পথে কিছু গরু-মহিষ ভারত থেকে আসে। কোরবানি উপলক্ষে
এই আমদানি বাড়ে। বিশেষ করে বড় গরুগুলো আসে বেশি। কিন্তু এবার গরু-মহিষ
সীমান্তের কাছাকাছিই পৌঁছাতে পারছে না। পুলিশের পাশাপাশি বিএসএফ সীমান্তে
টহল বাড়িয়েছে গরু মহিষের চালান ঠেকাতে। সীমান্তের ওপার থেকে গরু নিয়ে আসা
এক ব্যবসায়ী জানান, সে দেশে সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে গবাদিপশুর ওপর
নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার হিসাব-নিকাশ চলছে। আগে যারা এই ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ
করতেন তাদের সঙ্গে নতুন সরকারের লোকজনের ফায়সালা হয়নি। এ বিষয়টি ফায়সালা না
হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশে গবাদিপশুর চালান পাঠাতে পারছেন না তারা। সূত্রমতে,
চাঁপাইনবাবগঞ্জের ওয়াহিদপুর, খাঁকচাপাড়া ও জোহরপুর টেক সীমান্ত পথে এখন
গড়ে ৩০ থেকে ৪০টি করে গরু ভারত থেকে আসছে। এবার গরু আমদানি নেই বললেই চলে।
সীমান্তের ওপারের গরু ব্যবসায়ীরা হাজার হাজার গরু কিনে পাঠানোর অপেক্ষায়
থাকলেও সীমান্তে কড়াকড়ির কারণে তা আসতে পারছে না। রাজশাহী কাস্টমস অফিস
সূত্র জানায়, এবার সীমান্ত পথে ভারত থেকে গবাদিপশু আসছে কম। কোরবানির
মওসুমে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও জয়পুরহাট জেলার সীমান্ত পথে দৈনিক
গড়ে ৪ থেকে ৫ হাজার করে গরু আসতো। সেখানে পুরো আগস্ট মাসে সীমান্ত পথে
এসেছে মাত্র ১৫-১৬ হাজার গবাদিপশু। রাজশাহী কাস্টমসের অতিরিক্ত কমিশনার
ফখরুল আলম জানান, এখনও সেপ্টেম্বরের হিসাব হাতে আসেনি। গত আগস্টে ১০ হাজার
১৪৫টি ভারতীয় গরু ও ৫ হাজার ৩০টি মহিষ এবং জুলাইয়ে ১০ হাজার ৯৪০টি গরু ও ৩
হাজার ৭৬৪টি মহিষ সীমান্ত পথে বাংলাদেশে এসেছে। এছাড়া কিছু ছাগলও আমদানি
হয়েছে। তবে তা গত কোরবানির মওসুমের তুলনায় অনেক কম।
No comments