আঞ্চলিক যুদ্ধে জয়ী হতে হবে
সম্ভাব্য ‘আঞ্চলিক যুদ্ধে’ জয়ী হতে নিজেদের সক্ষমতাকে শাণিত করতে চীনের সেনাবাহিনী পিপলস লিবারেশন আর্মিকে (পিএলএ) নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। পিএলএর কাছে ‘চরম আনুগত্যও’ আশা করেছেন তিনি। চীনা প্রেসিডেন্টের এ ধরনের মন্তব্য এটাই প্রথম না হলেও এবার তা এমন এক সময়ে এল, যখন সীমান্তের একটি অংশে চীনা ও ভারতীয় সেনাদের মধ্যে উত্তেজনা চলছে। চীন সীমান্তে উত্তেজনার প্রেক্ষাপটেই ভারতের সেনাপ্রধান তাঁর নির্ধারিত ভুটান সফর স্থগিত করেছেন। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়া ও এনডিটিভির।
সদ্য ভারত সফর শেষে দেশে ফেরা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং গত রোববার বেইজিংয়ে পিএলএর শীর্ষ ১৫ জেনারেলকে নিয়ে এক বৈঠক করেন। এতে সেনাপ্রধান ফাং ফেঙ্গুইও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে জিনপিং নিজের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত তিনজন জেনারেলের পদোন্নতি দেন। গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী বৈঠকে তিনি সেনা কমান্ডারদের ‘আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা পরিস্থিতি সম্পর্কে অধিকতর ভালো ধারণা’ থাকা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন। প্রেসিডেন্টের এ বক্তব্যকে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। সরকারি বিবৃতির বরাত দিয়ে চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়ার খবরে বলা হয়, ‘পিএলএর সব সদস্যকে প্রেসিডেন্ট ও কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের (সিএমসি) চেয়ারম্যান শি জিনপিংয়ের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। পাশাপাশি সিএমসির নির্ধারিত নতুন লক্ষ্য ও মিশন পূরণে নিজেদের কর্মপন্থাকে সময়োপযোগী করতে হবে।’ বিবৃতিতে সেনাবাহিনীর ওপর প্রেসিডেন্টের ‘অসন্তোষের’ বিষয়টিতে আলোকপাত করার পাশাপাশি ‘নতুন পরিস্থিতি’র আওতায় সেনা কমান্ডের সক্ষমতা বাড়ানোর ওপরও জোর দেওয়া হয়েছে। শি জিনপিংয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, পিএলএর সব দপ্তরকে নিজেদের যুদ্ধ প্রস্তুতির উন্নয়ন ঘটাতে এবং তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে একটি আঞ্চলিক যুদ্ধে জয়ী হওয়ার জন্য নিজেদের সক্ষমতাকে শাণিত করতে হবে। পিএলএর সব অংশের মধ্যে অবশ্যই চীনা কমিউনিস্ট পার্টির প্রতি পরম আনুগত্য ও দৃঢ় বিশ্বাস থাকতে হবে। উল্লেখ্য, ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি চীনের একমাত্র রাজনৈতিক দল। এর সাধারণ সম্পাদক প্রেসিডেন্ট নিজে। চীনা প্রেসিডেন্ট এর আগেও ‘আঞ্চলিক যুদ্ধের’ জন্য পিএলএকে প্রস্তুত থাকতে বলেছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের সঙ্গে চীনের সীমান্তে বেশ উত্তেজনাপূর্ণ অবস্থা বিরাজ করছে।
বিশেষ করে ভারতের পক্ষ থেকে সীমান্তের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার (এলএসি) ওপার থেকে চীনা সেনাদের বারবার অনুপ্রবেশের অভিযোগ আসছে। এমনকি চীনা প্রেসিডেন্টের সাম্প্রতিক নয়াদিল্লি সফরের সময়ও এমন অভিযোগ ওঠে। এমন প্রেক্ষাপটে জিনপিং দেশে ফেরার পরই এমন বক্তব্য বিশেষ তাৎপর্য বহন করছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতির মাধ্যমে দৃশ্যত বিষয়টি হালকা করার চেষ্টা করেছে। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনইন গত সোমবার বলেন, সীমান্ত ইস্যুতে কারোর মধ্যেই ‘অযথা সন্দেহ’ থাকার কোনো দরকার নেই। কারণ, দুই দেশের নেতারা সীমান্ত সমস্যাগুলো বন্ধুভাবাপন্ন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে রাজনৈতিকভাবে সমাধানের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ একটি সমঝোতায় পৌঁছেছেন। লাদাখ সীমান্তে উত্তেজনা: চীন-ভারত সীমান্তের বিরোধপূর্ণ লাদাখের চুমুর এলাকায় চীনা সেনাবাহিনীর একটি রাস্তা নির্মাণের বিষয়টি গত ১৩ সেপ্টেম্বর শনাক্ত করে ভারতীয় বাহিনী। ভারতের বক্তব্য, এটি ২০০৫ সালের সীমান্ত প্রটোকল লঙ্ঘন করে নির্মাণ করা হচ্ছিল। একপর্যায়ে ভারতীয় বাহিনী সেখানে গিয়ে নির্মাণসামগ্রী জব্দ করে ও নির্মাণাধীন রাস্তাটি ধ্বংস করে। সেখানে এখন চীনা বাহিনীর এক হাজারের মতো এবং ভারতীয় বাহিনীর প্রায় দুই হাজার সেনা মোতায়েন রয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, রাজনৈতিক পর্যায়েই বিষয়টির মীমাংসা করতে হবে। এ নিয়ে উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে ভারতের সেনাপ্রধান দলবীর সিং তাঁর ভুটান সফর স্থগিত করেছেন।
No comments