ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক- দুর্ভোগ চরমে by ইকবাল আহমদ সরকার
মহাসড়কের গাজীপুর অংশের এক ঘণ্টার পথ পাড়ি
দিতে চলে যাচ্ছে কয়েক ঘণ্টা। হরতালেও গাজীপুরের শালনা থেকে মাওনা চৌরাস্তা
পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে যানজট লেগে থাকে। টানা বৃষ্টিতে পুরনো সড়কে গর্ত
আর খানাখন্দ বেড়ে যাওয়ায় ও চার লেনের সমপ্রসারণের কাজ চলতে থাকায় এ যানজট
সৃষ্টি হয়। অবশ্য হরতালের কারণে সকালে দূরপাল্লার যানবাহন কম থাকলেও বিকালে
যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় আবারও লম্বা হয়ে যায় যানজট। সড়কের বর্তমান
অবস্থার দ্রুত উন্নতি না হলে এবার ঈদে ময়মনসিংহ, জামালপুর, কিশোরগঞ্জ,
শেরপুর, নেত্রকোনাসহ উত্তরাঞ্চরের বিভিন্ন রুটের ঘরমুখো মানুষ চরম দুর্ভোগে
পড়বেন বলে মনে করছেন যাত্রী ও চালক সবাই।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর অংশ ঘুরে দেখা গেছে, গাজীপুর চান্দনা চৌরাস্তা থেকে মাওনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার জুড়ে পুরানো সড়কে বিভিন্ন জায়গায় অসংখ্য গর্ত ও খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে। ওই মহাসড়কের তেলিপাড়া, সালনা, পোড়াবাড়ি, ন্যাশনাল পার্ক, মাস্টারবাড়ি, বাঘের বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে রয়েছে ছোট বড় অসংখ্য খানাখন্দ। এছাড়া মহাসড়কের অনেক স্থানেই দুইপাশেই জমে আছে পানি। এসব কারণে লেগেই থাকছে দীর্ঘ যানজট। গত রোজার ঈদের আগে জোড়াতালি দিয়ে যোগাযোগ স্বাভাবিক রাখতে মহাসড়কের যেসব স্থানের গর্ত, খানাখন্দ বালি আর খোয়া দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছিল, সেসব স্থানের আবরণ গত ক’দিনের বৃষ্টিতে উঠে গিয়ে পুরনো চেহারা ভেসে ওঠেছে। চার লেনের নির্মাণ কাজ চলতে থাকায়ও টানা বৃষ্টিতে সড়কের বিভিন্ন স্থানে কাদা-পানি জমে বেহাল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। মাত্র এক ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে সময় লেগে যাচ্ছে কয়েক ঘণ্টা। বৃষ্টিতে মহাসড়কের অনেক অংশেই যানবাহন চলাচলের জন্য অনুপযোগী হয়ে পড়ে। যানজটে আটকে থাকে কয়েক হাজার যাত্রীসহ বাস। অবশ্য যান চলাচলের উপযোগী করার জন্য সেনাবাহিনীর সদস্যরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বৃষ্টি আর যানবাহনের চাপের কারণে স্বাভাবিক গতিতে মেরামত কাজ অনেকটাই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে মাওনা চৌরাস্তা পর্যন্ত চার লেনের কাজ করছে সেনাবাহিনী। তারা সড়কের পুরাতন কার্পেটিং তুলে সেখানে নতুন করে কাজ করছে। সড়কের এক পাশ দিয়ে যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা রেখে অন্য লেনে নির্মাণ কাজ চলছে। পোড়াবাড়ি এলাকার বাসিন্দা আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, হরতাল উপেক্ষা করে অনেকেই ফাঁকা সড়কে তাড়াতাড়ি গন্তব্যে যাবার আশায় গাড়ি নিয়ে বের হয়েছে। কিন্তু সড়কের নাজুক অবস্থায় কারনে গন্তব্যে যেতে সময় লেগে যাচ্ছে। লেগুনা সার্ভিসের চালক হামিদ জানান, গাজীপুরের মাওনা চৌরাস্তা থেকে গাজীপুর চৌরাস্তার পথ এক ঘন্টার। গাজীপুরের ভাওরাইদ এলাকা থেকে ওই মহাসড়কে নিয়মিত আসা যাওয়া করে অফিস করেন শ্রীপুর উপজেলার গড়গড়িয়া মাষ্টারবাড়ি এলাকার এসএম নিটওয়্যার কারখানার ডিজিএম আলী হোসেন। তিনি জানান, সড়কে বেহাল অবস্থার কারণে প্রতিদিন অফিসে আসা যাওয়ার পথে ভোগান্তি থাকলেও গত ক’দিন ধরে দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। সময় লাগছে ৩ ঘণ্টা। ওই মহাসড়কে গাজীপুর সদর উপজেলার বাঘেরবাজার থেকে শ্রীপুর উপজেলার জৈনাবাজার পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত গত ক’দিন ধরে লেগে থাকছে যানজট। পরিবহন শ্রমিকরা জানিয়েছে, মহাসড়কে মাওনা চৌরাস্তায় নির্মাণ হচ্ছে উড়াল সড়ক। আর উড়াল সড়কের দুই পাশের সরু ভাঙাচুরা সড়ক দিয়ে চলতে হচ্ছে দূরপাল্লার যানবাহন। এ কারণে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন লেগে যাচ্ছে।
গাজীপুর সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মহিবুল হক জানান, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কটির জয়দেবপুরের অংশ ২০১২ সালে ফোর লেন প্রকল্পের জন্য সেনাবাহিনীর সংশ্লিষ্টদের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। তাই এ মহাসড়কের খানাখন্দ হলে বা অন্য কোন সমস্যার দায় গাজীপুর সড়ক বিভাগের নয়। গাজীপুরের নাওজোড় হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই কামাল পাশা জানান, বৃষ্টির কারণে গর্তে পানি জমে যাওয়ায় এবং সৃষ্ট খানাখন্দে গাড়ি আটকে গিয়ে গাড়ি চলছে ধীরগতিতে। তবে যানবাহন একেবারে থেমে থাকেনি। চাকা ঘুরেছে। এদিকে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত ৮৮ কিলোমিটার সড়ক তিনটি প্যাকেজের মাধ্যমে ১৮শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। জয়দেবপুর চান্দনা চৌরাস্তা থেকে মাওনার নয়নপুর পর্যন্ত অংশের ৩৫ কিলোমিটার সড়কের প্রথম অংশের কাজ করছে সেনাবাহিনী। চার লেনের প্রথম প্যাকেজের কাজের ৫০ ভাগেরও বেশি কাজ শেষ হয়ে এসেছে।
No comments