গণতন্ত্রপন্থীদের আন্দোলনে হংকংয়ে অচলাবস্থা
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারের পরিকল্পনার প্রতিবাদে হংকংয়ে কয়েক দিন ধরে বিক্ষোভ করছেন গণতন্ত্রপন্থীরা। গতকাল সন্ধ্যায় শহরের প্রাণকেন্দ্র অ্যাডমিরালিটি এলাকায় বিক্ষোভ করেন তাঁরা। ছবি: এএফপি |
গণতান্ত্রিক নির্বাচনের দাবিতে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী হংকংয়ের কেন্দ্রস্থলে অবস্থান নেওয়ায় গতকাল সোমবারও বিশ্ব অর্থনীতির কেন্দ্র হংকং একেবারে অচল হয়ে পড়ে। পুলিশের ছোড়া কাঁদানে গ্যাস ও লাঠিপেটার পরও বিক্ষোভকারীরা অবস্থান ছেড়ে যায়নি। গত শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া আন্দোলন গতকাল আরও তীব্র রূপ নেয়। খবর গার্ডিয়ান ও বিবিসির। বিক্ষোভকারীদের অব্যাহত প্রতিবাদের ফলে হংকংয়ের মূল রাস্তাঘাট অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। বন্ধ হয়ে যায় স্কুল-কলেজ। তখন তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। এর ফলে আরও বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। মূল শহর ছাড়িয়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে কাউলুনের কসওয়ে বে ও মংককে। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যাওয়ার পর দুপুরের দিকে হঠাৎ করে দাঙ্গা পুলিশ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। পরে চীনা সরকারের পক্ষে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, রাস্তায় তৈরি করা প্রতিবন্ধকতা শান্ত হয়ে যাওয়ার কারণে দাঙ্গা পুলিশ উঠিয়ে নেওয়া হলো। বিক্ষোভকারীদের শান্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে শান্তিপূর্ণভাবে ‘যত দ্রুত সম্ভব’ এলাকা ছেড়ে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
দাঙ্গা পুলিশ প্রত্যাহারের পর বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় শুয়ে পড়ে। এক দেশ, দুই ব্যবস্থার হংকংয়ে একধরনের স্বায়ত্তশাসন আছে। হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী নির্বাচনের জন্য ২০১৭ সালে সেখানে ভোট অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে চীন সরকার। এর মধ্যে গত মাসে চীনা কর্তৃপক্ষ স্বাধীনভাবে প্রধান নির্বাহী নির্বাচন করার দাবিকে অগ্রাহ্য করে জানায়, কেবল সরকারের মনোনীত দু-তিনজন প্রার্থীর মধ্য থেকেই প্রধান নির্বাহী নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন। অর্থাৎ চীন সরকার চায়, তাদের প্রতি অনুগতরাই কেবল ওই নির্বাচনে প্রার্থী হোক। এর প্রতিবাদে বিক্ষোভে নামে হংকংবাসী। কিন্তু চীন সরকার মনে করছে, এখন হংকংয়ের এই দাবি মেনে নিলে ক্রমান্বয়ে গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন পুরো চীনে ছড়িয়ে পড়তে পারে। বিক্ষোভকারী ছাত্রদের একজন স্থানীয় ব্যাপটিস্ট ইউনিভার্সিটির ছাত্র নিকোলা চিয়াং বলেন, সেন্ট্রাল অ্যাডমিরালিটি জেলায় বিক্ষোভকারীরা এক হয়েছে। তারা পরিস্থিতি দেখে পরবর্তী কর্মসূচি কী হবে, তা নিয়ে পরিকল্পনা করছে। সাবেক ব্রিটিশ উপনিবেশ হংকংয়ে ১৯৯৭ সালে চীনা কর্তৃপক্ষের অধীনে যাওয়ার পর এটাই সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ। চলমান আন্দোলন নিয়ে জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হাং-হো-ফং বলেন, ‘আগের বিক্ষোভগুলো পুলিশের অনুমতি নিয়েই অনুষ্ঠিত হতো। এবার মানুষ অসহযোগ আন্দোলন শুরু করেছে। তারা প্রতিবন্ধকতাও তৈরি করছে। এবার আরও কিছু ধ্বংসাত্মক দিক আছে। আগের বিক্ষোভ চলাকালে জনজীবনে কোনো প্রভাব পড়ত না।
এবার বিক্ষোভকারীরা বেপরোয়া। হংকংয়ের ইতিহাসে এমন বিক্ষোভ দেখিনি।’ ১৯৮৯ সালে তিয়েনআনমেন স্কোয়ারে তীব্র বিক্ষোভের পর হংকংয়ের এই বিক্ষোভ সবচেয়ে বড়। চলমান বিক্ষোভ চীনা কর্তৃপক্ষকে বেশ ভাবনায় ফেলেছে বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক রাজনীতির পর্যবেক্ষকরা। টেলিভিশনে হংকংয়ের বিক্ষোভের চিত্র আশপাশের অনেক দেশেই উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। গণতান্ত্রিক তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট মা ইং-জিয়ো আল-জাজিরার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, তাওয়ানের জনগণ হংকংয়ের পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে লক্ষ করছে। এদিকে হংকংয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কনসুলেট জেনারেল এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে সবাইকে নতুন কোনো গোলযোগ সৃষ্টি করা থেকে বিরত থাকতে আহ্বান জানিয়েছেন। এসব বিৃবতি চীন সরকারকে বেশ ক্ষুব্ধ করেছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের এভাবে উদ্বেগ প্রকাশের বিষয়টি চীন আমলে নিয়েছে বলে গতকাল সকালে জানিয়েছেন চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনিয়াং। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি, এসব দেশ হংকং নিয়ে কোনো মন্তব্য করার আগে ভেবেচিন্ত করবে। আমাদের প্রত্যাশা, তারা কোনো ভুল বার্তা দেবে না। হুয়া আরও বলেন, ‘চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোনো দেশের হস্তক্ষেপকে আমরা দৃঢ়ভাবে বিরোধিতা করি।’
No comments