আইএসের ওপর হামলা জোরদার
ইসলামিক স্টেট (আইএস) বিরোধী বিমান হামলা সম্প্রসারিত করেছে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট। সিরিয়ায় তুরস্কের সীমান্তবর্তী কুর্দি-অধ্যুষিত এলাকা কোবানিতে গত শনিবার আইএসের ওপর বিমান হামলা চালানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগন এই হামলার কথা জানায়। এদিকে আল-কায়েদার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জঙ্গিগোষ্ঠী আল-নুসরা ফ্রন্ট পশ্চিমা দেশ ও তাদের সঙ্গে হামলায় অংশ নেওয়া আরব রাষ্ট্রগুলোর ওপর হামলার হুমকি দিয়েছে। খবর বিবিসি ও নিউইয়র্ক টাইমসের। পেন্টাগন জানায়, জোট বাহিনী শনিবার কোবানিতে প্রথমবারের মতো হামলা চালায়। এতে জঙ্গিদের দুটি সাঁজোয়া যান ধ্বংস করা হয়। এই এলাকায় সপ্তাহজুড়ে আইএস ব্যাপক হামলা চালায়। তাদের হুমকির মুখে এই কোবানি থেকেই কমপক্ষে দেড় লাখ উদ্বাস্তু সীমান্ত পেরিয়ে তুরস্কে গিয়ে আশ্রয় নেয়। এর মাধ্যমে দৃশ্যত সিরিয়ায় হামলার একটি নতুন ক্ষেত্র তৈরি হলো মার্কিন বাহিনীর জন্য। এদিন আইএসের প্রধান ঘাঁটি বলে কথিত রাকায়ও বিমান হামলা চলে। সিরিয়া-তুরস্ক সীমান্তের কয়েক শ গজের ভেতরে ওই মাঝারি ধরনের হামলা হয়।
তুরস্ক অংশে পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে সেখানকার কুর্দিরা এই হামলার দৃশ্য দেখে। পাহাড়ের ওপর থেকে কুর্দি যোদ্ধারাও আইএস জঙ্গিদের লক্ষ্য করে ভারী মেশিনগানের গুলি বর্ষণ করে। কুর্দি যোদ্ধা মুস্তাফা এবদি বলেন, আইএসের কমান্ড পোস্ট, একটি ট্যাংক ও একটি কামান হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই হামলার পর আইএসের নিক্ষিপ্ত গোলায় কোবানির প্রধান শহরে দুজন নিহত হয়। মার্কিন বাহিনীর কেন্দ্রীয় কমান্ডের এক বিবৃতিতে বলা হয়, সৌদি আরব, জর্ডান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিমান বাহিনীর সহায়তায় শনিবারের ওই হামলা চালানো হয়। হামলায় প্রতিটি বিমান অক্ষত ছিল বলে জানানো হয়। তিনটি সুন্নি প্রধান দেশই হামলায় অংশ নেয়—এ বিষয়টি জানান দিতেই এভাবে তিন আরব রাষ্ট্রের নাম উল্লেখ করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এদিকে সিরিয়ার জঙ্গি সংগঠন আল-নুসরা ফ্রন্ট মার্কিন নেতৃত্বাধীন হামলাকে ‘ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ বলে আখ্যায়িত করেছে। আল-নুসরা এক অনলাইন বিবৃতিতে পশ্চিমা ও যেসব আরব রাষ্ট্র সিরিয়ায় হামলা চালাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে হামলার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ‘জিহাদিদের’ আহ্বান জানিয়েছে। উভয়েই কট্টরপন্থী হলেও আল-নুসরার সঙ্গে আইএসের বিরোধ আছে। সম্প্রতি দুটি গোষ্ঠী সংঘাতেও জড়িয়েছে। তবে শনিবার প্রথমবারের মতো আল-নুসরার মুখপাত্র আবু ফিরাস আল-সুরি সিরিয়ায় হামলার বিরোধিতা করে বিবৃতি দিলেন। আবু ফিরাস বলেন, যেসব রাষ্ট্র হামলা চালাচ্ছে, তারা বিশ্বব্যাপী জিহাদিদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র এখনো আল-নুসরাকে তাদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে এমন কথা বলেনি। তবে আল-নুসরার সহযোগী হিসেবে চিহ্নিত খোরাসান গ্রুপ নামের একটি স্বল্প পরিচিত তবে আরও ভয়ংকর হিসেবে কথিত জঙ্গিগোষ্ঠীর ওপর যুক্তরাষ্ট্র বিমান হামলা চালিয়েছে। এদিকে শনিবার সিরিয়ার মধ্যপন্থী বিরোধীদের জোট ফ্রি সিরিয়ান আর্মি আইএসের বিরুদ্ধে পরিচালিত হামলাকে সমর্থন দিয়েছে। তবে সাধারণ নাগরিকদের ওপর হামলার বিরোধিতা করেছে তারা। ফ্রি সিরিয়ান আর্মির হুসাম আল-মারি বলেছেন, পশ্চিমা দেশগুলোর উচিত সিরিয়া সরকারের বিরুদ্ধেও হামলা চালানো। তিনি বলেন, ‘আমরা সন্ত্রাস ও একনায়কমুক্ত সিরিয়া চাই। একনায়কের শাসন ও আইএসের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে আমাদের বিশ্বের অন্যান্য দেশের সহযোগিতা প্রয়োজন। আমরা উভয় শক্তির বিরুদ্ধেই যুদ্ধ করছি।’ আইএসের ওপর অব্যাহত বিমান হামলার আসলে কী ফল হয়েছে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের এক শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা শুক্রবার বলেন, চলমান হামলায় আইএস এর নেতৃত্ব, নিয়ন্ত্রণ ও রসদ সরবরাহ ব্যবস্থার ক্ষতি করতে সক্ষম হয়েছে। সমর কৌশলবিদ এবং অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা জেনারেল ডেভিড পেট্রাউস বলেছেন, কেবল বিমান হামলায় আইএসকে পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করা সম্ভব নয়। তিনি বলেছেন, শুধু বিমান হামলায় হয়তো কিছুদিন আইএসকে নিশ্চুপ রাখা যাবে, তবে তাদের প্রভাবাধীন এলাকায় পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। এর জন্য দরকার সমন্বিত স্থল অভিযান।
No comments