স্বামীর ঘরে গিয়ে সাবালিকা ডালিয়া by এমরান হাসান সোহেল
মো. নুরু মাতুব্বর। পেশায় কৃষক। ঠিকানা চর
দিয়ারাকচুয়া গ্রাম। এই গ্রামের অবস্থান পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার
তেঁতুলিয়া নদীর বুক ফুঁড়ে জেগে ওঠা চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়ন। তিন মেয়ে, এক ছেলে
এবং স্ত্রী জাহানারা বেগমসহ ছয় সদস্যের সংসার তাঁর। তিন মেয়ে ডালিয়া,
রোজিনা ও তানু। ছেলের নাম সুজন। তিন মেয়ের কেউই স্কুলে ভর্তি হয়নি। মেয়ে
হয়ে জন্ম নেওয়ার কারণে সংসারে তাদের বোঝা মনে করা হয়। তাই শিশু বয়সেই
ডালিয়ার বিয়ে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ডালিয়ার বয়স ১৫। এক সন্তানের জননী।
>>পটুয়াখালীর চর দিয়াকচুয়া গ্রামের আবদুস সালাম হাওলাদারের তিন মেয়ে ও দুই ছেলে। লেখাপড়ার দেখা পায়নি কোনো মেয়ে। গেল বছর বাল্যবিবাহ দেওয়া হয়েছে ১৪ বছরের মুক্তাকে। ছবি : কালের কণ্ঠ
ডালিয়া
জানায়, ৯ বছর বয়সে তার বিয়ে হয়। মেয়ে হয়ে জন্মানোর কারণে কোনো আয় করতে
পারে না সে। তাই বাবা পাশের চর ব্যারেটের যুবক শহীদুল বিশ্বাসের সঙ্গে বিয়ে
দেন। এক বছর পর ডালিয়া শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে সংসার শুরু করে। ডালিয়া বলে,
'আমি তহন স্বামী সংসার কিছুই বোঝদাম না। সাবালক অইছি ওই বাড়তে (শ্বশুরবাড়ি)
যাইয়া।' তার সন্তানের বয়স ৯ মাস।
ডালিয়ার ছোট দুই বোনকে ভর্তি করা না হলেও ভাই সুজনকে স্কুলে ভর্তি করা হয়েছে। সুজন স্থানীয় দিয়ারাকচুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র।
তিন মেয়েকে লেখাপড়া না শেখানো সম্পর্কে নুরু মাতুব্বর বলেন, 'আমরা চউরগা মানুষ। আমাগো গুরাগ্যারায় আবার কী ল্যাহাপড়া করবে। মাইয়াগো একটু বয়স অইলে-ই পরের বাড়ি (শ্বশুরবাড়ি) যাইতে অয়। অগো ল্যাহাপড়া করাইয়া কী অইবে।' অপ্রাপ্ত বয়সে ডালিয়ার বিয়ে দেওয়া সম্পর্কে বলেন, 'অরা তিনডা (ডালিয়া, রোজিনা ও তানু) বুইন (বোন) না অইয়া যদি তিনডা ভাই অইতে তাহেলে সংসারে আয় বাড়তে, অভাব কোমতে। অ্যাহন আল্লায় তিনউগা মাইয়া দেছে যত তাড়াতাড়ি পারমু বিয়া দিয়া দিমু। আমরা গরিব, আমাগো একটা ইজ্জত আছে। চরের মাইয়াগো একবার যদি কেলেঙ্কারি অইয়া যায়, তাহেলে আর বিয়া দেওন যায় না। এই লইগ্গা চরের সব মাইয়াগো কোম বয়সে বিয়া দেয় সবাই।'
পটুয়াখালীর গলাচিপা, রাঙ্গাবালী, দশমিনা ও বাউফল উপজেলার বিভিন্ন চর ঘুরে একই দৃশ্য দেখা গেছে। নুরু মাতুব্বরের পরিবারের মতো বৈষম্যের শিকার কন্যাসন্তানরা। চর দিয়ারাকচুয়া গ্রামের আরেক দম্পতি কৃষক ইউনুচ জোমাদ্দার ও মিনারা বেগম। ছেলে সন্তানের প্রত্যাশায় সাত কন্যাসন্তান তাঁদের। ডলি (১৭), ইরানি (১৩), রাহিমা (১১), জামিলা (১০), সুমি (৯), তানজিলা (৭) ও আছিয়া (৪)। ডলি ও ইরানিকে বিয়ে দেওয়া হয়েছে শিশু বয়সে। স্কুলে ভর্তিও হয়নি।
কৃষক ইউনুচ জোমাদ্দার বলেন, 'সাতটা মাইয়া না অইয়া দুইডা পোলা অইলে কামে লাগদে। বংশের বাতি দেতে পোলা থাকলে, মাইয়ারা তো বাহের (বাবা) বাড়ির লোক না। অরা পরের বাড়ির লইগ্গা জন্মাইছে। সবাইরে তাড়াতাড়ি বিয়া দিতে পারলে বাঁচি।'
দশমিনা উপজেলার চর শাহাজালালের রেহেনা বেগমকে (২৫) স্বামী কাজেম আলী তালাক দিয়েছেন। প্রায় ১২ বছর তাঁদের বিয়ে হয়। এ সময়ের মধ্যে চারটি কন্যাসন্তানের মা হন রেহেনা। একটি ছেলে সন্তান না হওয়ায় কাজেম ক্ষুব্ধ হয়ে তালাক দেন রেহেনাকে। রেহেনা বলেন, 'একটা পোলাও আমার গর্ভে অয় নাই, হেইয়ার লইগ্যা স্বামী আমারে তালাক দিয়া দেছে। মাতারিরা প্যাডে গুরাগ্যারা থোয় এডা তো নিয়ম, হে কয় (স্বামী) ওই প্যাডে মাইয়া অইতে পারলে পোলা অইতে পারবে না কিলোইগ্গা।'
জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা শাহিদা বেগম বলেন, '২০১৩ সালে ডিসেম্বরে জাতিসংঘের জনসংখ্যা বিষয়ক তহবিলের (ইউএনএফপি) সহায়তায় একটি প্রকল্প চালু করা হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ, বাল্যবিবাহ বন্ধ ও সমমর্যাদা প্রতিষ্ঠায় কাজ চলছে। প্রত্যেক উপজেলায় সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং দল গঠন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে মাঠপর্যায়ে দলগঠন করে সচেতনতামূলক কাজগুলো করা হবে। এ প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৬ সাল পর্যন্ত করা হয়েছে। এটি দীর্ঘমেয়াদি হলে ফলাফল সন্তোষজনক হবে।'
ডালিয়ার ছোট দুই বোনকে ভর্তি করা না হলেও ভাই সুজনকে স্কুলে ভর্তি করা হয়েছে। সুজন স্থানীয় দিয়ারাকচুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র।
তিন মেয়েকে লেখাপড়া না শেখানো সম্পর্কে নুরু মাতুব্বর বলেন, 'আমরা চউরগা মানুষ। আমাগো গুরাগ্যারায় আবার কী ল্যাহাপড়া করবে। মাইয়াগো একটু বয়স অইলে-ই পরের বাড়ি (শ্বশুরবাড়ি) যাইতে অয়। অগো ল্যাহাপড়া করাইয়া কী অইবে।' অপ্রাপ্ত বয়সে ডালিয়ার বিয়ে দেওয়া সম্পর্কে বলেন, 'অরা তিনডা (ডালিয়া, রোজিনা ও তানু) বুইন (বোন) না অইয়া যদি তিনডা ভাই অইতে তাহেলে সংসারে আয় বাড়তে, অভাব কোমতে। অ্যাহন আল্লায় তিনউগা মাইয়া দেছে যত তাড়াতাড়ি পারমু বিয়া দিয়া দিমু। আমরা গরিব, আমাগো একটা ইজ্জত আছে। চরের মাইয়াগো একবার যদি কেলেঙ্কারি অইয়া যায়, তাহেলে আর বিয়া দেওন যায় না। এই লইগ্গা চরের সব মাইয়াগো কোম বয়সে বিয়া দেয় সবাই।'
পটুয়াখালীর গলাচিপা, রাঙ্গাবালী, দশমিনা ও বাউফল উপজেলার বিভিন্ন চর ঘুরে একই দৃশ্য দেখা গেছে। নুরু মাতুব্বরের পরিবারের মতো বৈষম্যের শিকার কন্যাসন্তানরা। চর দিয়ারাকচুয়া গ্রামের আরেক দম্পতি কৃষক ইউনুচ জোমাদ্দার ও মিনারা বেগম। ছেলে সন্তানের প্রত্যাশায় সাত কন্যাসন্তান তাঁদের। ডলি (১৭), ইরানি (১৩), রাহিমা (১১), জামিলা (১০), সুমি (৯), তানজিলা (৭) ও আছিয়া (৪)। ডলি ও ইরানিকে বিয়ে দেওয়া হয়েছে শিশু বয়সে। স্কুলে ভর্তিও হয়নি।
কৃষক ইউনুচ জোমাদ্দার বলেন, 'সাতটা মাইয়া না অইয়া দুইডা পোলা অইলে কামে লাগদে। বংশের বাতি দেতে পোলা থাকলে, মাইয়ারা তো বাহের (বাবা) বাড়ির লোক না। অরা পরের বাড়ির লইগ্গা জন্মাইছে। সবাইরে তাড়াতাড়ি বিয়া দিতে পারলে বাঁচি।'
দশমিনা উপজেলার চর শাহাজালালের রেহেনা বেগমকে (২৫) স্বামী কাজেম আলী তালাক দিয়েছেন। প্রায় ১২ বছর তাঁদের বিয়ে হয়। এ সময়ের মধ্যে চারটি কন্যাসন্তানের মা হন রেহেনা। একটি ছেলে সন্তান না হওয়ায় কাজেম ক্ষুব্ধ হয়ে তালাক দেন রেহেনাকে। রেহেনা বলেন, 'একটা পোলাও আমার গর্ভে অয় নাই, হেইয়ার লইগ্যা স্বামী আমারে তালাক দিয়া দেছে। মাতারিরা প্যাডে গুরাগ্যারা থোয় এডা তো নিয়ম, হে কয় (স্বামী) ওই প্যাডে মাইয়া অইতে পারলে পোলা অইতে পারবে না কিলোইগ্গা।'
জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা শাহিদা বেগম বলেন, '২০১৩ সালে ডিসেম্বরে জাতিসংঘের জনসংখ্যা বিষয়ক তহবিলের (ইউএনএফপি) সহায়তায় একটি প্রকল্প চালু করা হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ, বাল্যবিবাহ বন্ধ ও সমমর্যাদা প্রতিষ্ঠায় কাজ চলছে। প্রত্যেক উপজেলায় সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং দল গঠন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে মাঠপর্যায়ে দলগঠন করে সচেতনতামূলক কাজগুলো করা হবে। এ প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৬ সাল পর্যন্ত করা হয়েছে। এটি দীর্ঘমেয়াদি হলে ফলাফল সন্তোষজনক হবে।'
No comments