পাকিস্তানে সেনা ‘হস্তক্ষেপ’ নিয়ে পাল্টাপাল্টি দাবি

রাহেল শরিফ,ইমরান খান
পাকিস্তানে চলমান রাজনৈতিক সংকট সমাধানে সেনাবাহিনীর কথিত হস্তক্ষেপ নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ এবং তাঁর বিরুদ্ধে আন্দোলনরত বিরোধী রাজনৈতিক দল তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) ও পাকিস্তান আওয়ামী তেহরিকের (পিএটি) নেতারা পরস্পরবিরোধী অভিযোগ করছেন। বিরোধীরা বলছেন, রাজনৈতিকভাবে সংকট সমাধানে ব্যর্থ হয়ে সরকার নিজেই সামরিক বাহিনীকে ডেকে আনছে। অন্যদিকে নওয়াজ শরিফ গতকাল শুক্রবার পার্লামেন্টে বলেন, তিনি নিজে মধ্যস্থতার জন্য সেনাবাহিনীকে ডাকেননি। পিটিআই ও পিএটির অনুরোধেই সেনাপ্রধানকে দল দুটির নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে অনুরোধ করেছেন তিনি। এ অবস্থায় গতকাল সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সরকারের নির্দেশেই তারা মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করছে। খবর ডন, এনডিটিভি ও এএফপির। গতকাল পার্লামেন্টে নওয়াজ শরিফ বলেন, ‘মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করার জন্য আমরা সেনাবাহিনীকে বলিনি। কিন্তু সেনাবাহিনী এটি যেকোনোভাবেই করতে পারে। কারণ ইসলামাবাদের এ অঞ্চলের নিরাপত্তার দায়িত্ব সেনাবাহিনীর।’ পিটিআই ও পিএটির নেতা-কর্মীরা ইসলামবাদে ‘মার্চ’ করে এসে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে অবস্থান করছেন। সরকার রাজধানীর কঠোর নিরাপত্তাধীন এলাকা ‘রেড জোনের’ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনীর পাশাপাশি কিছুসংখ্যক সেনাসদস্য মোতায়েন করে। পার্লামেন্টে নওয়াজের বক্তব্যের পরপরই পিএটির প্রধান তাহির-উল-কাদরি বলেন, ‘সরকার পুরো জাতির সঙ্গে মিথ্যাচার করেছে।
তারা জাতিকে ধোঁকা দিয়েছে।’ পিটিআইয়ের নেতা ইমরান খানও পিএটি নেতার বক্তব্যের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, সংকট মোকাবিলায় মধ্যস্থতা করার জন্য তাঁর দলও সেনাবাহিনীর সঙ্গে বৈঠক চায়নি। এর আগে বৃহস্পতিবার সেনাপ্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ইমরান খান ও তাহির-উল-কাদরি। সংকট কাটাতে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালনে সেনাপ্রধানের দেওয়া প্রস্তাব এ দুই নেতা মেনে নেন। ইমরান ও কাদরির নেতৃত্বে তাঁদের অনুসারীরা ১৫ আগস্ট থেকে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। তাঁদের অভিযোগ, ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত পার্লামেন্ট নির্বাচনে নওয়াজ ভোট জালিয়াতি করেছেন। সেনাপ্রধানের সঙ্গে বৈঠকের পর অনুসারীদের উদ্দেশে ইমরান খান বলেন, ‘সরকার সেনাবাহিনীকে বলছে আমাদের সঙ্গে কথা বলতে। এর অর্থ হলো, এই সংকট থেকে উত্তরণের কোনো রাজনৈতিক সমাধান আছে বলে সরকার মনে করে না।’ সেনাবাহিনীর মুখপাত্র মেজর জেনারেল আসিম বাজওয়া বলেন, ইমরান ও কাদরি উভয়েই সেনাপ্রধানের সঙ্গে পৃথকভাবে দেখা করেছেন। তাঁরা দুজনই চলমান সংকট নিরসনে সরকারের সঙ্গে আলোচনা শুরুর ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণে রাজি। এদিকে আজ শনিবার রাজধানী ইসলামাবাদের বাইরে করাচি, লাহোর, মুলতান ও ফয়সালাবদ শহরে বিক্ষোভের ঘোষণা দিয়েছেন ইমরান খান। গতকাল রাজধানীতে পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে অবস্থান কর্মসূচিতে ভাষণ দেওয়ার সময় তিনি এ ঘোষণা দেন।

No comments

Powered by Blogger.