আবাদিকে ঠেকাতে তৎপর মালিকি
ইরাকের প্রধানমন্ত্রী পদে হায়দার আল-আবাদির মনোনয়নকে ‘প্রতিশ্রুতিশীল পদক্ষেপ’ বলে অভিহিত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। আল-আবাদির সঙ্গে টেলিফোনে কথাও বলেছেন প্রেসিডেন্ট ওবামা ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সৌদি আরব, প্রতিবেশী ইরান ও তুরস্ক এবং ইসলামি দেশগুলোর জোট ইসলামি সম্মেলন সংস্থা (ওআইসি) আল-আবাদিকে অভিনন্দন জানিয়েছে। এ ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও ফ্রান্স তাঁর মনোনয়নকে স্বাগত জানিয়েছে। তবে সদ্য মনোনীত প্রধানমন্ত্রী পদে আবাদিকে ঠেকাতে জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী নুরি আল-মালিকি। প্রয়োজনে তিনি আদালতেও যেতে পারেন। তিনি বলছেন, আল-আবাদিকে প্রধানমন্ত্রী পদে মনোনয়ন দেওয়াটা ‘অর্থহীন’। খবর এএফপি, বিবিসি, রয়টার্স ও আল-জাজিরার। ইরাকে গত ৩০ এপ্রিল পার্লামেন্ট নির্বাচন হলেও এখনো সরকার গঠন করা সম্ভব হয়নি। এর মধ্যেই দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সুন্নিপন্থী সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) উত্থান ঘটে। তাদের দমনে কয়েক দিন আগে যুক্তরাষ্ট্র বিমান হামলা শুরু করে। বিশ্লেষকদের মতে, সব মিলিয়ে ইরাক যে সংকটে পড়েছে, তা থেকে সম্ভবত শিগগিরই মুক্তি মিলছে না।
ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের মার্থাস ভিনইয়ার্ড দ্বীপে ছুটিতে থাকা ওবামা সাংবাদিকদের বলেন, ইরাকের বর্তমান সংকটের দীর্ঘমেয়াদি সমাধানে সবাইকে নিয়ে একটি ঐক্যবদ্ধ সরকার গঠন করতে হবে। মালিকির সমালোচনা করে তিনি বলেন, মালিকি ক্ষমতায় থেকে শিয়া সম্প্রদায়ের সঙ্গে অন্য সবার বিভেদ সৃষ্টি করেছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, নতুন নেতৃত্বের কাজ হবে সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা ও বর্তমান সংকট থেকে উত্তরণে সচেষ্ট হওয়া। প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী আল-আবাদির সঙ্গে তিনি ও জো বাইডেন টেলিফোনে কথা বলেছেন। তাঁকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়ারও আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। ইরাকে আইএসের অবস্থানে মার্কিন বিমান হামলা প্রসঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, বিমান হামলা চালিয়ে আইএসকে প্রতিহত করার উদ্যোগ সফল হয়েছে। তবে ইরাকে জঙ্গি রুখতে মার্কিন হামলা কোনো সমাধান নয়। সব পক্ষকে নিয়ে গঠিত একটি ঐক্যবদ্ধ সরকার কেবল পারে এই জঙ্গিদের প্রতিহত করতে। ইরাকের সব পক্ষকে নিয়ে দ্রুত একটি সরকার গঠনের জন্য আল-আবাদির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। গতকাল মঙ্গলবার তিনি বলেন, আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নতুন সরকারকে সহায়তা দিতে প্রস্তুত ওয়াশিংটন। তবে ইরাকে সেনা পাঠানোর সম্ভাবনা নাকচ করে দেন কেরি। শিয়া জোট নিজেদের মধ্যে ভোটাভুটির মাধ্যমে মালিকিকে বাদ দিয়ে পার্লামেন্টের ডেপুটি স্পিকার আল-আবাদিকে প্রধানমন্ত্রী পদে মনোনয়ন দেন।
এর পরই প্রেসিডেন্ট ফুয়াদ মাসুম সরকার গঠনের জন্য আল-আবাদির প্রতি আহ্বান জানান। সংবিধান অনুযায়ী সরকার গঠনের জন্য তিনি ৩০ দিন সময় পাবেন। হাল ছাড়ছেন না মালিকিও। তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী থাকতে সব চেষ্টাই করে যাচ্ছেন তিনি। গত সোমবার মালিকি অভিযোগ করেন, আল-আবাদিকে সরকার গঠনের আহ্বান জানিয়ে প্রেসিডেন্ট সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি সবাইকে আশ্বস্ত করতে চাই, উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই। আজ যা হয়েছে, সবই অর্থহীন। আমরাই ক্ষমতায় থাকব।’ তবে পাশাপাশি রাজনৈতিক সংকটে হস্তক্ষেপ না করার জন্য সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন মালিকি। মার্কিন হামলার পরিসর বৃদ্ধির পরিকল্পনা নেই: মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগন গত সোমবার বলেছে, ইরাকের ইরবিল শহরে মার্কিন ও অবরুদ্ধ ইয়াজিদিদের সুরক্ষা দেওয়া ছাড়া দেশটিতে বিমান হামলার পরিসর বৃদ্ধির কোনো পরিকল্পনা ওয়াশিংটনের নেই। কুর্দিদের অস্ত্র দেওয়ার আহ্বান: ইরাকি কুর্দিদের অস্ত্র দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ইইউ নেতাদের দ্রুত বৈঠকে বসার আহ্বান জানিয়েছেন ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী লঁরা ফ্যাবিয়াস। ফরাসি বেতারকে তিনি বলেন, আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য কুর্দিদের অস্ত্র সহায়তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে জরুরি বৈঠকে বসতে হবে।
No comments