ক্ষমতাসীন দল একদলীয় শাসনের দিকে ধাবিত হচ্ছে by উইলিয়াম বি মাইলাম
রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য প্রচুর রক্তপাত ও সহায় সম্পদ ব্যয় হয়েছে। কিন্তু সফলতার সঙ্গে মুক্তি সংগ্রামের মাধ্যমে বাংলাদেশ আত্মপ্রকাশ করলেও সেই সফলতা এমন নিশ্চয়তা দিতে পারে না যে, পরে তারা পুরনো কর্তৃত্বপরায়ণতায় ফিরে যাবে না। সম্ভবত বাংলাদেশ একটি উদাহরণ, একটি শিক্ষা। রক্তপাতের মাধ্যমে স্বাধীনতার ৪৩ বছরেরও বেশি পরে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল দৃশ্যত একদলীয় কর্তৃত্বপরায়ণ শাসন ব্যবস্থার দিকে ধাবিত হচ্ছে। মিডিয়ার ওপর কড়াকড়ি বিষয়ক আইন প্রণয়ন হলো সে লক্ষ্যে সর্বশেষ পদক্ষেপ। এনজিওগুলোকে চাপে রাখার আইন করা হয়েছে। বিরোধী কণ্ঠ নীরব করে দেয়া হয়েছে। যদি সব বিরোধী ঐক্যবদ্ধ না হয় তাহলে এক সময় তাদের সিদ্ধান্ত নেয়ার আর সুযোগই থাকবে না। আমি কিছু একটা ইঙ্গিতের অপেক্ষায় আছি এখন। লন্ডনের ফিন্যান্সিয়াল টাইমস গত সপ্তাহে চমৎকার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সম্প্রতি আমি যে বিষয় নিয়ে লিখেছি তার সঙ্গে এটি যথার্থই মিলে যায়। হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক এক বক্তব্য নিয়ে প্রকাশ করা হয়েছে ওই প্রতিবেদন। ওই বক্তব্যে তিনি হাঙ্গেরিতে ‘উদার’ গণতন্ত্র বাদ দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। বলেছেন, দেশকে ‘অনুদার একটি রাষ্ট্র’ হিসেবে গড়ে তুলতে। রাশিয়া, তুরস্ক ও চীনা সরকারের মডেলের প্রশংসা করেন তিনি। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত একটি সদস্য রাষ্ট্রের একজন নেতার কাছ থেকে এমন বক্তব্য নিঃসন্দেহে বিস্ময়কর। বিশেষ করে এমন একটি দেশের পক্ষ থেকে যারা ৬০ বছর আগে সোভিয়েত ইউনিয়নের কর্র্তৃত্ববাদী শাসন থেকে বেরিয়ে আসতে জোর লড়াই করেছে, অনেক মূল্য দিয়েছে। দ্রুততার সঙ্গে তারা নিজেকে গণতন্ত্র, পার্লামেন্টারি প্রজাতন্ত্রের লেবাসে নতুন করে তুলে ধরে উদযাপন করেছে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন। তারা যোগ দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নে। অবশ্যই আমাদেরকে হাঙ্গেরির জনগণের কথা শুনতে হবে। যা হোক, অনেক দেশে প্রচণ্ড চাপে থাকা নেতারা ১৯৮০’র দশক ও ১৯৯০-এর দশকে গণতন্ত্রের তথাকথিত ‘তৃতীয় প্রবাহে’র সময় তাদের দেশে গণতন্ত্র ঘোষণা করেন। কিন্তু তারাই এখন ফিরে যাচ্ছেন কর্তৃত্বপরায়ণতার দিকে। প্রকৃত গণতন্ত্র অনেক কঠিন বিষয়। বৃটিশ সাবেক প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল সতর্ক বার্তায় বলেছিলেন যে, অন্যান্য সরকার ব্যবস্থার কথা বাদ দিলে গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা হলো সবচেয়ে খারাপ, যা এখন বৈশ্বিক নানা সমস্যার চাপে তার আকর্ষণ হারাচ্ছে।
এই প্রবণতার একটি নেতিবাচক প্রভাবের প্রতিফলন ঘটেছে বর্তমানে পূর্ব ইউরোপ সঙ্কটে। আমাকে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ১৯৯০-এর দশকে রাশিয়া উন্মুক্ত হচ্ছিল, আধুনিক হচ্ছিল। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও সাবেক গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবিতে থাকা তার ঘনিষ্ঠজনদের অধীনে এ দেশটি আবার একটি কর্তৃত্বপরায়ণ সমাজে পরিণত হয়েছে। মাত্র ২৩ বছর আগে কর্তৃত্বপরায়ণ রাষ্ট্রের জন্মদাত্রী সোভিয়েত ইউনিয়নকে এখন তারা ছাড়িয়ে গেছে। বর্তমানে অতিমাত্রায় জাতীয়তাবাদী নীতি দিয়ে তারা পূর্ব ইউরোপে নতুন করে প্রভাব সৃষ্টির চেষ্টা করছে। এ চেষ্টার মূলেই রয়েছে কর্তৃত্বপরায়ণতা।
রাশিয়ার পশ্চিম সীমান্তে যে জায়মান গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র রয়েছে তা তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের হুমকিতে পড়তে পারে- এমন ধারণা রয়েছে ভ্লাদিমির পুতিনের। অতীতের কল্পিত যশ নিয়ে পুতিন যে নস্টালজিয়ায় রয়েছেন তা পূর্ব ইউরোপে রাজনৈতিক সঙ্কট সৃষ্টি করেছে। এমনটা ১৯৩৯ সালের পর আর দেখা যায় নি। রাশিয়ার বর্তমান নীতি এবং নগ্ন আগ্রাসী মনোভাব, প্রতিশোধপরায়ণতা, ৭৫ থেকে ৮০ বছর আগের দিনগুলোর অবস্থায় দেশকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়াকে একই সমান্তরালে দেখছেন পশ্চিমা অনেক কূটনীতিক। ৭৫ থেকে ৮০ বছর আগের ওই ঘটনাগুলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুতে নিয়ামক ভূমিকা রেখেছিল। এ যুদ্ধে কমপক্ষে ৩ কোটি বেসামরিক মানুষ নিহত হন।
১৯১৪ সালের গ্রীষ্মে শুরু হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। শতাব্দী প্রাচীন ওই ঘটনার সঙ্গে যুগপৎ মিলে যাচ্ছে ইউক্রেন সঙ্কট। এ ঘটনা বিতর্কিত ও সৃষ্টিশীল অর্থনৈতিক ইতিহাসবিদ নাইঅল ফারগুসনকে প্ররোচিত করেছে বর্তমানের এই সঙ্কটের সঙ্গে ওই সময়কার ঘটনার মধ্যে সাদৃশ্য খুঁজতে, এটা ইকোনমিক টাইমসেও প্রকাশিত হয়েছে। তিনি দেখিয়েছেন বর্তমান সঙ্কটে যখন জ্বলছে সব তখন ইউরোপীয় নেতারা পরিণতি জেনেও ঘুমিয়ে আছেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে নিহত হন কমপক্ষে ১ কোটি ৭০ লাখ মানুষ। মাঝে মাঝে ধরা হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ইঙ্গিত দিয়ে গিয়েছিল যে, ১৯৩০-এর পরে আগ্রাসী মনোভাব, প্রতিশোধপরায়ণতা, অতিমাত্রায় জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্রের উত্থান এবং ১৯৩৯-৪৫ সময়কালের রক্তপাত অপরিহার্য হয়ে উঠবে।
গণতন্ত্রায়নের পশ্চাৎযাত্রা দেখা গিয়েছিল বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে ও একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে। আমাদের প্রশ্ন করা উচিত- কেন গণতন্ত্রায়ন এ সময়টাতে পশ্চাৎমুখী হয়েছে? কেউ কেউ যুক্তি দেখাতে পারেন যে, এতে অর্থনৈতিক যে প্রতিবন্ধকতা ছিল তারই প্রতিফলন ঘটেছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত বেশির ভাগ গণতন্ত্রে রয়েছে দৃশ্যত রুগ্ণ অবস্থা। এর কারণ, রাজনৈতিক অপরিপক্বতা। এ জন্য তারা তাদের নাগরিকদের কাঙ্ক্ষিত অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে না। কিন্তু আমার জানা মতে, রাশিয়া, চীন বা তুরস্কে উচ্চাকাঙ্ক্ষী অভিবাসীর বিশাল প্রবাহ নেই। সেখানে অভিবাসীর যে স্রোত দেখা যায় তা হলো গণতন্ত্র। লাখ লাখ মানুষ স্বাধীনতা ও আইনের শাসন খোঁজেন।
উইলিয়াম বি মাইলাম, ওয়াশিংটনে উড্র উইলসনের সিনিয়র স্কলার। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ছিলেন।
গতকাল প্রকাশিত দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউনে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ- মেটাফোর অর অ্যালিগোরি?’ শীর্ষক লেখার অনুবাদ।
এই প্রবণতার একটি নেতিবাচক প্রভাবের প্রতিফলন ঘটেছে বর্তমানে পূর্ব ইউরোপ সঙ্কটে। আমাকে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ১৯৯০-এর দশকে রাশিয়া উন্মুক্ত হচ্ছিল, আধুনিক হচ্ছিল। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও সাবেক গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবিতে থাকা তার ঘনিষ্ঠজনদের অধীনে এ দেশটি আবার একটি কর্তৃত্বপরায়ণ সমাজে পরিণত হয়েছে। মাত্র ২৩ বছর আগে কর্তৃত্বপরায়ণ রাষ্ট্রের জন্মদাত্রী সোভিয়েত ইউনিয়নকে এখন তারা ছাড়িয়ে গেছে। বর্তমানে অতিমাত্রায় জাতীয়তাবাদী নীতি দিয়ে তারা পূর্ব ইউরোপে নতুন করে প্রভাব সৃষ্টির চেষ্টা করছে। এ চেষ্টার মূলেই রয়েছে কর্তৃত্বপরায়ণতা।
রাশিয়ার পশ্চিম সীমান্তে যে জায়মান গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র রয়েছে তা তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের হুমকিতে পড়তে পারে- এমন ধারণা রয়েছে ভ্লাদিমির পুতিনের। অতীতের কল্পিত যশ নিয়ে পুতিন যে নস্টালজিয়ায় রয়েছেন তা পূর্ব ইউরোপে রাজনৈতিক সঙ্কট সৃষ্টি করেছে। এমনটা ১৯৩৯ সালের পর আর দেখা যায় নি। রাশিয়ার বর্তমান নীতি এবং নগ্ন আগ্রাসী মনোভাব, প্রতিশোধপরায়ণতা, ৭৫ থেকে ৮০ বছর আগের দিনগুলোর অবস্থায় দেশকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়াকে একই সমান্তরালে দেখছেন পশ্চিমা অনেক কূটনীতিক। ৭৫ থেকে ৮০ বছর আগের ওই ঘটনাগুলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুতে নিয়ামক ভূমিকা রেখেছিল। এ যুদ্ধে কমপক্ষে ৩ কোটি বেসামরিক মানুষ নিহত হন।
১৯১৪ সালের গ্রীষ্মে শুরু হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। শতাব্দী প্রাচীন ওই ঘটনার সঙ্গে যুগপৎ মিলে যাচ্ছে ইউক্রেন সঙ্কট। এ ঘটনা বিতর্কিত ও সৃষ্টিশীল অর্থনৈতিক ইতিহাসবিদ নাইঅল ফারগুসনকে প্ররোচিত করেছে বর্তমানের এই সঙ্কটের সঙ্গে ওই সময়কার ঘটনার মধ্যে সাদৃশ্য খুঁজতে, এটা ইকোনমিক টাইমসেও প্রকাশিত হয়েছে। তিনি দেখিয়েছেন বর্তমান সঙ্কটে যখন জ্বলছে সব তখন ইউরোপীয় নেতারা পরিণতি জেনেও ঘুমিয়ে আছেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে নিহত হন কমপক্ষে ১ কোটি ৭০ লাখ মানুষ। মাঝে মাঝে ধরা হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ইঙ্গিত দিয়ে গিয়েছিল যে, ১৯৩০-এর পরে আগ্রাসী মনোভাব, প্রতিশোধপরায়ণতা, অতিমাত্রায় জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্রের উত্থান এবং ১৯৩৯-৪৫ সময়কালের রক্তপাত অপরিহার্য হয়ে উঠবে।
গণতন্ত্রায়নের পশ্চাৎযাত্রা দেখা গিয়েছিল বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে ও একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে। আমাদের প্রশ্ন করা উচিত- কেন গণতন্ত্রায়ন এ সময়টাতে পশ্চাৎমুখী হয়েছে? কেউ কেউ যুক্তি দেখাতে পারেন যে, এতে অর্থনৈতিক যে প্রতিবন্ধকতা ছিল তারই প্রতিফলন ঘটেছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত বেশির ভাগ গণতন্ত্রে রয়েছে দৃশ্যত রুগ্ণ অবস্থা। এর কারণ, রাজনৈতিক অপরিপক্বতা। এ জন্য তারা তাদের নাগরিকদের কাঙ্ক্ষিত অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে না। কিন্তু আমার জানা মতে, রাশিয়া, চীন বা তুরস্কে উচ্চাকাঙ্ক্ষী অভিবাসীর বিশাল প্রবাহ নেই। সেখানে অভিবাসীর যে স্রোত দেখা যায় তা হলো গণতন্ত্র। লাখ লাখ মানুষ স্বাধীনতা ও আইনের শাসন খোঁজেন।
উইলিয়াম বি মাইলাম, ওয়াশিংটনে উড্র উইলসনের সিনিয়র স্কলার। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ছিলেন।
গতকাল প্রকাশিত দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউনে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ- মেটাফোর অর অ্যালিগোরি?’ শীর্ষক লেখার অনুবাদ।
No comments