পাকিস্তান ছায়াযুদ্ধ চালিয়ে গেলেও সফল হবে না
কাশ্মীরে গিয়ে পাকিস্তানকে হুঁশিয়ার করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বললেন, সম্মুখসমরে জিততে পারবে না বলেই দেশটি ক্রমাগত ‘ছায়াযুদ্ধ’ চালিয়ে যাচ্ছে।কিন্তু তারা কোনো দিনই সফল হবে না। গতকাল মঙ্গলবার দুই দিনের সফরে মোদি জম্মু-কাশ্মীর যান। প্রথমে লে, তারপর আলোচিত কারগিল। জনসভা ছাড়াও সামরিক বাহিনীর জওয়ানদের সমাবেশেও বক্তব্য দেন মোদি। মোদির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ এসেছিলেন। দুই দেশের বন্ধ থাকা দ্বিপক্ষীয় আলোচনা শুরু হওয়ার সিদ্ধান্তও হয়েছে। চলতি মাসেই ভারতের পররাষ্ট্রসচিব সুজাতা সিংয়ের পাকিস্তান যাওয়ার কথা।
তবে ভারতীয় পক্ষের অভিযোগ, পাকিস্তান প্রায় নিয়মিতই কাশ্মীরে অস্ত্রবিরতি লঙ্ঘন করে চলেছে। মোদির সফরের এক দিন আগেই জম্মু সেক্টরে পাকিস্তানের গুলি চালনায় সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনীর দুই জওয়ান আহত হন। মোদি গতকাল তারই জবাব দেন নিজস্ব ভঙ্গিতে। এই সফরে মোদি ভারতীয় বাহিনীর মনোবল ধরে রাখার বিষয়েও সচেষ্ট ছিলেন। জওয়ানদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘দেশের অন্য প্রধানমন্ত্রীরা এই রাজ্যকে এড়িয়ে যেতেন। অথচ আপনাদের ভালোবাসা আমাকে দুবার এখানে নিয়ে এল।’ তবে প্রধানমন্ত্রী মোদির কাশ্মীর সফরের অন্য একটি উদ্দেশ্যও রয়েছে। এই বছরের শেষে ভারতের যে রাজ্যগুলোর বিধানসভা নির্বাচন হবে, জম্মু-কাশ্মীর সেগুলোর অন্যতম। বিজেপির নজরে এবার এই রাজ্যটি গুরুত্বের সঙ্গেই চলে এসেছে। মাত্র দুই দিন আগে বিজেপির কর্মসমিতির সম্মেলনে দলীয় সভাপতি অমিত শাহ স্পষ্ট করেই বলেছেন, মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা ও ঝাড়খন্ডের মতো জম্মু-কাশ্মীরও তাঁদের দখল করতে হবে। লোকসভার গত নির্বাচনে জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের ছয়টি আসনের মধ্যে তিনটি পায় বিজেপি, বাকি তিনটি মুফতি মহম্মদ সঈদের দল পিডিপি। কংগ্রেস-জাতীয় কনফারেন্স জোট একটি আসনও পায়নি। যে লাদাখ অঞ্চলে মোদি গতকাল গেলেন, সেখানকার লোকসভা আসন এই প্রথম বিজেপি পেল। ১৯৬৫ সাল থেকে একবারও এই রাজ্যে জাতীয় কনফারেন্স,
কংগ্রেস ও পিডিপি ছাড়া আর কোনো দল ক্ষমতায় আসেনি। অটল বিহারি বাজপেয়ির আমলে এই রাজ্যের বিধানসভার মোট ৮৭ আসনের মধ্যে বিজেপি সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছিল। ১১টি। সেই তুলনায় বিজেপির এবারের ডাক ৪৪-এর ওপরে। অর্থাৎ জাতীয় জোয়ারের ধারাবাহিকতায় ভারতের একমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্যেও ক্ষমতায় আসতে চাইছে আদর্শিকভাবে হিন্দু জাতীয়তাবাদী বিজেপি। মোদির এই সফরের অন্যতম উদ্দেশ্যও সেটাই। সেই কারণে পাকিস্তানকে যেমন মোদি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, তেমনই রাজ্যের অসমাপ্ত প্রকল্পগুলোর রূপায়ণে আট হাজার কোটি রুপির বাড়তি সাহায্যের কথাও ঘোষণা করেছেন। মোদি বলেছেন, এ রাজ্যের উন্নতিতে তিনটি বিষয়ে নজর দেওয়া দরকার। বিদ্যুৎ, পরিবেশ ও পর্যটন। এই তিন ক্ষেত্রে বিশেষ নজর দেওয়ার পাশাপাশি তিনি ঘরছাড়াদের ফিরিয়ে আনার ওপরেও জোর দিয়েছেন। ১৯৯০ সাল থেকে এই রাজ্যে সন্ত্রাসী কাজকর্ম শুরু হওয়ার পর ২০ শতাংশ মানুষ ঘরছাড়া হয়েছেন, যাঁদের অধিকাংশই কাশ্মীরি হিন্দু। এঁদের কাশ্মীর উপত্যকায় ফেরত নিয়ে যাওয়ার জন্য বিজেপি একটা বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েছে। কিন্তু কাশ্মীরি হিন্দুদের (পণ্ডিত) নিরাপত্তা, তাঁদের রোজগারের বন্দোবস্ত কী হবে, সে বিষয়ে বিজেপিকে নানা প্রশ্নের জবাব দিতে হচ্ছে। ইতিমধ্যে এই উদ্যোগকে ঘিরে রাজ্যে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।
No comments