এবার ‘ঈশ্বরের দুই হাত’ by উৎপল শুভ্র
বড় খবর! বড় খবর!!
>>২৪ বছর পর বিশ্বকাপ ফাইনালে আর্জেন্টিনা। মেসি, ডেমিচেলিস, রোহো, বিগলিয়া, প্যালাসিওরা এমন বাঁধভাঙা উল্লাসেই তো মাতবেন। পরশু টাইব্রেকারে হল্যান্ডকে হারিয়েই দুই যুগের অপেক্ষার অবসান হয়েছে আর্জেন্টিনার l ছবি: এএফপি
আলেসান্দ্রো সাবেলা
হেসেছেন। বিশ্বকাপে অভূতপূর্ব এই ঘটনা গত পরশু রাতে অ্যারেনা করিন্থিয়ানসে
সংবাদ সম্মেলনে। অভূতপূর্ব না বলে অবশ্য বিরল বলাই ভালো। সংবাদ সম্মেলনে
না হলেও এই বিশ্বকাপে অন্য কোনো সময় কখনো না কখনো নিশ্চয়ই হেসে থাকবেন
আর্জেন্টিনার কোচ।
এদিন অবশ্য হাসারই কথা। আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ ফাইনালে! সাবেলার হাসির মতো অভূতপূর্ব না হলেও বিরল তো বটেই। সেই কবে ১৯৯০ ইতালি বিশ্বকাপ, এর পর এই প্রথম। মাঝখানে দুই যুগ, পাঁচটি বিশ্বকাপ। সাবেলার হাসিটা অবশ্য ফাইনালে ওঠার আনন্দের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত ছিল না। যে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ম্যাচ নিয়ে বিশ্বকাপ শুরুর আগে থেকে এত কথা, সেমিফাইনালে হারলে সেটিই হতো এই বিশ্বকাপের তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচ। এ সম্পর্কিত একটা প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়েই সাবেলার ওই হাসি।
মাঠে অবশ্য হাসি-আনন্দের চূড়ান্ত করেছে আর্জেন্টিনা দল। দুই যুগ পর ফাইনালে ওঠার আনন্দে এমনই আত্মহারা হয়ে গেছে যে, ম্যাচ শেষে প্রায় বাধ্যতামূলক সাধারণ সৌজন্যটুকু দেখাতেও ভুলে গেছে। ডাচ খেলোয়াড়েরা মাঠের অন্য প্রান্তে বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষায় ছিল। কিন্তু আর্জেন্টাইনরা গ্যালারির সমর্থকদের সঙ্গে ছন্দ মিলিয়ে মাথার ওপর জার্সি ঘোরাতে এমনই ব্যস্ত হয়ে পড়ল, প্রতিপক্ষের সঙ্গে হাত মেলানোর কথা মনেই থাকল না। ব্যাপারটা এমনই দৃষ্টিকটু ছিল যে, ম্যান অব দ্য ম্যাচের সংবাদ সম্মেলনের জন্য বরাদ্দ তিনটি প্রশ্নের মধ্যে একটি হলো এ নিয়েই। সেটি করলেন বাংলাদেশেরই এক তরুণ সাংবাদিক। যা শুনে আর্জেন্টিনাকে ফাইনালে তোলার নায়ক যারপরনাই বিব্রত, ‘আসলে আমরা এত বছর পর ফাইনালে উঠেছি তো, সবাই তাই আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে গিয়েছিলাম। নইলে এর আগে সব ম্যাচের পরই তো আমরা প্রতিপক্ষের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় করেছি।’
দুই যুগ আগে-পরে আর্জেন্টিনার ফাইনালে ওঠায় বড় একটা মিলও পাওয়া যাচ্ছে এই সার্জিও রোমেরোর কল্যাণেই। ইতালি বিশ্বকাপে জঘন্য নেতিবাচক ফুটবল খেলেও আর্জেন্টিনা ফাইনালে উঠেছিল টাইব্রেকারে এক গোলরক্ষকের বীরত্বে। কোয়ার্টার ফাইনালের পর সেমিফাইনালেও যিনি টাইব্রেকারে জিতিয়ে দিয়েছিলেন, তাঁর নামের প্রথম অংশটাও ‘সার্জিও’-ই। সেই সার্জিও গয়কোচিয়ার বয়স এখন পঞ্চাশ পেরিয়েছে এবং এদিন তিনি টেলিভিশন ধারাভাষ্যকারের ভূমিকায় মিডিয়া ট্রিবিউনে উপস্থিত। রোমেরোর বুক থাপড়ানো উল্লাস দেখতে দেখতে যিনি ফিরে গেছেন নেপলসের ওই রাতে।
অথচ গয়কোচিয়ার ওই বিশ্বকাপে খেলারই কথা ছিল না। গ্রুপপর্বে আর্জেন্টিনার এক নম্বর গোলরক্ষক নেরি পাম্পিডো আহত হওয়ায় সুযোগ মেলে এবং ম্যারাডোনাকেও ছাপিয়ে গয়কোচিয়া হয়ে যান আর্জেন্টিনার ‘জাতীয় বীর’। যুগোস্লাভিয়ার সঙ্গে কোয়ার্টার ফাইনালে গয়কোচিয়ার বীরত্বে প্ররোচিত হয়েই ইতালির বিপক্ষে সেমিফাইনালটিকেও কোনোমতে টাইব্রেকারে টেনে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যেই খেলেছিল আর্জেন্টিনা। পরশু হল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিফাইনালে অবশ্যই তা নয়। তবে দুই দলই যেমন হিসাব কষে সাবধানী খেলা খেলল, সেটি যত না ফুটবল, তার চেয়ে বেশি ‘দাবা’! সেমিফাইনালে কোনো দলই হারতে চাইবে না জানা কথাই। কিন্তু জয়ের জন্য ঝাঁপানোর চেয়ে পরাজয় এড়ানোর চেষ্টাটা এমনই চোখে লাগল যে, মিডিয়া ট্রিবিউনে কে যেন রসিকতা করলেন, ‘আসলে কোনো দলই ফাইনালে জার্মানির মুখোমুখি হতে চাইছে না!’
শেষ পর্যন্ত ফাইনালে ওঠায় জীবনের প্রথম বিশ্বকাপ সেমিফাইনালটি অবশ্যই স্মরণীয় হয়ে থাকবে লিওনেল মেসির মনে। কিন্তু ‘মেসি-জাদু’তে ম্যাচটিকে দর্শকদের মনে স্মরণীয় করে রাখতে তিনিও ব্যর্থ। খেলার একেবারে শেষ দিকে ম্যাক্সি রদ্রিগেজকে বাড়ানো স্বর্গীয় ওই পাসের মতো দু-একটি মুহূর্ত বাদ দিলে খুঁজেই পাওয়া যায়নি তাঁকে। ডাচদের বিশেষ মনোযোগ ছিল তাঁর প্রতি। তা সেটি কোন ম্যাচে থাকে না? তাই বলে ১২০ মিনিটের খেলায় একবারও বক্সের মধ্যে বলে তাঁর পায়ের ছোঁয়া লাগবে না! শেষ পর্যন্ত সেই ছোঁয়া লাগল টাইব্রেকারে এবং পেনাল্টিতে মেসির গোলটিই ফাইনালের পথে আর্জেন্টিনার প্রথম ধাপ।
না, ভুল বলা হলো। আসলে দ্বিতীয় ধাপ। এর আগেই হল্যান্ডের প্রথম শটটিই যে ঠেকিয়ে দিয়েছেন রোমেরো। পরে স্নাইডারের নেওয়া তৃতীয় শটটিও ঠেকিয়ে টাইব্রেকারের শেষ শট দুটির আর প্রয়োজনই রাখেননি।
অসহায় চোখে তাকিয়ে তা দেখতে হলো টিম ক্রালকে। কোয়ার্টার ফাইনালে হল্যান্ডের জয়ের নায়ক এদিন টাইব্রেকার-নাটকের অসহায় দর্শক। কোস্টারিকার ম্যাচে অতিরিক্ত সময় শেষ হওয়ার ঠিক আগে শুধু টাইব্রেকারের জন্যই ক্রালকে নামিয়ে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন লুই ফন গাল। এদিন আগেই তিনটি পরিবর্তন করে ফেলায় তুরুপের তাস আর খেলাই হলো না। আর্জেন্টিনা ম্যাচটি কি ওখানেই জিতে গেল? সিলেসেন হল্যান্ডের এক নম্বর গোলরক্ষক ঠিক আছে, কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, পেশাদার ক্যারিয়ারেই তাঁর পেনাল্টি ঠেকানোর কোনো ঘটনা নেই।
আর্জেন্টিনা ম্যাচ জেতেনি, জিতেছে টাইব্রেকার—সংবাদ সম্মেলনে লুই ফন গাল এটি মনে করিয়ে দেবেন স্বাভাবিক। আশ্চর্য হলো, ফন গাল নন, তা মনে করিয়ে দিলেন কি না আলেসান্দ্রো সাবেলাই। ‘আমরা হয়তো পরিষ্কার সুযোগ বেশি পেয়েছি, তবে ম্যাচটা ছিল সমানে সমান। সত্যিকার ড্র বলতে যা বোঝায়। অন্য কোনো ফল হলেও আমি এ কথাই বলতাম।’
রেকর্ড বইয়েও ড্র-ই লেখা থাকবে। তবে তা নিয়ে আর্জেন্টাইনদের মাথা ঘামাতে বয়েই গেছে। সাবেলার সংবাদ সম্মেলন শুরুর আগেই খবর এল, আর্জেন্টিনার রাস্তায় মানুষের ঢল নেমেছে। চলছে উৎসব এবং সেই উৎসবে রোমেরোর নামে জয়ধ্বনি।
আর্জেন্টাইনদের কারণে-অকারণে ঈশ্বরকে টেনে আসার একটা প্রবণতা আছে। ‘ঈশ্বরের হাত’ বলে ম্যারাডোনার মাধ্যমেই এটির শুরু কি না কে জানে! সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় রাউন্ডে এই অ্যারেনা করিন্থিয়ানসের একটা পোস্টের মালিকানাও ঈশ্বরকে দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বল সেখানে লেগে ফিরেছে বলে সেটি ‘ঈশ্বরের পোস্ট’।
আর্জেন্টিনাকে ফাইনালে তুলে দেওয়া সার্জিও রোমেরোর হাত দুটিও আর শুধুই তাঁর থাকছে না। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যারাডোনার হাতে করা ওই গোলটির নাম হয়ে গেছে—‘লা মানো দে দিওস’। ‘মানো’ মানে হাত। রোমেরোর ক্ষেত্রে সেটি শুধু বহুবচন হয়ে যাচ্ছে—লা মানোস দে দিওস। ঈশ্বরের দুই হাত।
সেমিফাইনালে টাইব্রেকার যদি দুই যুগ আগে-পরের দুই বিশ্বকাপকে মিলিয়ে দিয়ে থাকে, মিল আছে আরেকটি। এবারও ফাইনালে প্রতিপক্ষ সেই জার্মানরা। আর্জেন্টিনা অবশ্য চাইবে, মিলটা যেন ওখানেই শেষ হয়!
এদিন অবশ্য হাসারই কথা। আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ ফাইনালে! সাবেলার হাসির মতো অভূতপূর্ব না হলেও বিরল তো বটেই। সেই কবে ১৯৯০ ইতালি বিশ্বকাপ, এর পর এই প্রথম। মাঝখানে দুই যুগ, পাঁচটি বিশ্বকাপ। সাবেলার হাসিটা অবশ্য ফাইনালে ওঠার আনন্দের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত ছিল না। যে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ম্যাচ নিয়ে বিশ্বকাপ শুরুর আগে থেকে এত কথা, সেমিফাইনালে হারলে সেটিই হতো এই বিশ্বকাপের তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচ। এ সম্পর্কিত একটা প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়েই সাবেলার ওই হাসি।
মাঠে অবশ্য হাসি-আনন্দের চূড়ান্ত করেছে আর্জেন্টিনা দল। দুই যুগ পর ফাইনালে ওঠার আনন্দে এমনই আত্মহারা হয়ে গেছে যে, ম্যাচ শেষে প্রায় বাধ্যতামূলক সাধারণ সৌজন্যটুকু দেখাতেও ভুলে গেছে। ডাচ খেলোয়াড়েরা মাঠের অন্য প্রান্তে বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষায় ছিল। কিন্তু আর্জেন্টাইনরা গ্যালারির সমর্থকদের সঙ্গে ছন্দ মিলিয়ে মাথার ওপর জার্সি ঘোরাতে এমনই ব্যস্ত হয়ে পড়ল, প্রতিপক্ষের সঙ্গে হাত মেলানোর কথা মনেই থাকল না। ব্যাপারটা এমনই দৃষ্টিকটু ছিল যে, ম্যান অব দ্য ম্যাচের সংবাদ সম্মেলনের জন্য বরাদ্দ তিনটি প্রশ্নের মধ্যে একটি হলো এ নিয়েই। সেটি করলেন বাংলাদেশেরই এক তরুণ সাংবাদিক। যা শুনে আর্জেন্টিনাকে ফাইনালে তোলার নায়ক যারপরনাই বিব্রত, ‘আসলে আমরা এত বছর পর ফাইনালে উঠেছি তো, সবাই তাই আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে গিয়েছিলাম। নইলে এর আগে সব ম্যাচের পরই তো আমরা প্রতিপক্ষের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় করেছি।’
দুই যুগ আগে-পরে আর্জেন্টিনার ফাইনালে ওঠায় বড় একটা মিলও পাওয়া যাচ্ছে এই সার্জিও রোমেরোর কল্যাণেই। ইতালি বিশ্বকাপে জঘন্য নেতিবাচক ফুটবল খেলেও আর্জেন্টিনা ফাইনালে উঠেছিল টাইব্রেকারে এক গোলরক্ষকের বীরত্বে। কোয়ার্টার ফাইনালের পর সেমিফাইনালেও যিনি টাইব্রেকারে জিতিয়ে দিয়েছিলেন, তাঁর নামের প্রথম অংশটাও ‘সার্জিও’-ই। সেই সার্জিও গয়কোচিয়ার বয়স এখন পঞ্চাশ পেরিয়েছে এবং এদিন তিনি টেলিভিশন ধারাভাষ্যকারের ভূমিকায় মিডিয়া ট্রিবিউনে উপস্থিত। রোমেরোর বুক থাপড়ানো উল্লাস দেখতে দেখতে যিনি ফিরে গেছেন নেপলসের ওই রাতে।
অথচ গয়কোচিয়ার ওই বিশ্বকাপে খেলারই কথা ছিল না। গ্রুপপর্বে আর্জেন্টিনার এক নম্বর গোলরক্ষক নেরি পাম্পিডো আহত হওয়ায় সুযোগ মেলে এবং ম্যারাডোনাকেও ছাপিয়ে গয়কোচিয়া হয়ে যান আর্জেন্টিনার ‘জাতীয় বীর’। যুগোস্লাভিয়ার সঙ্গে কোয়ার্টার ফাইনালে গয়কোচিয়ার বীরত্বে প্ররোচিত হয়েই ইতালির বিপক্ষে সেমিফাইনালটিকেও কোনোমতে টাইব্রেকারে টেনে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যেই খেলেছিল আর্জেন্টিনা। পরশু হল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিফাইনালে অবশ্যই তা নয়। তবে দুই দলই যেমন হিসাব কষে সাবধানী খেলা খেলল, সেটি যত না ফুটবল, তার চেয়ে বেশি ‘দাবা’! সেমিফাইনালে কোনো দলই হারতে চাইবে না জানা কথাই। কিন্তু জয়ের জন্য ঝাঁপানোর চেয়ে পরাজয় এড়ানোর চেষ্টাটা এমনই চোখে লাগল যে, মিডিয়া ট্রিবিউনে কে যেন রসিকতা করলেন, ‘আসলে কোনো দলই ফাইনালে জার্মানির মুখোমুখি হতে চাইছে না!’
শেষ পর্যন্ত ফাইনালে ওঠায় জীবনের প্রথম বিশ্বকাপ সেমিফাইনালটি অবশ্যই স্মরণীয় হয়ে থাকবে লিওনেল মেসির মনে। কিন্তু ‘মেসি-জাদু’তে ম্যাচটিকে দর্শকদের মনে স্মরণীয় করে রাখতে তিনিও ব্যর্থ। খেলার একেবারে শেষ দিকে ম্যাক্সি রদ্রিগেজকে বাড়ানো স্বর্গীয় ওই পাসের মতো দু-একটি মুহূর্ত বাদ দিলে খুঁজেই পাওয়া যায়নি তাঁকে। ডাচদের বিশেষ মনোযোগ ছিল তাঁর প্রতি। তা সেটি কোন ম্যাচে থাকে না? তাই বলে ১২০ মিনিটের খেলায় একবারও বক্সের মধ্যে বলে তাঁর পায়ের ছোঁয়া লাগবে না! শেষ পর্যন্ত সেই ছোঁয়া লাগল টাইব্রেকারে এবং পেনাল্টিতে মেসির গোলটিই ফাইনালের পথে আর্জেন্টিনার প্রথম ধাপ।
না, ভুল বলা হলো। আসলে দ্বিতীয় ধাপ। এর আগেই হল্যান্ডের প্রথম শটটিই যে ঠেকিয়ে দিয়েছেন রোমেরো। পরে স্নাইডারের নেওয়া তৃতীয় শটটিও ঠেকিয়ে টাইব্রেকারের শেষ শট দুটির আর প্রয়োজনই রাখেননি।
অসহায় চোখে তাকিয়ে তা দেখতে হলো টিম ক্রালকে। কোয়ার্টার ফাইনালে হল্যান্ডের জয়ের নায়ক এদিন টাইব্রেকার-নাটকের অসহায় দর্শক। কোস্টারিকার ম্যাচে অতিরিক্ত সময় শেষ হওয়ার ঠিক আগে শুধু টাইব্রেকারের জন্যই ক্রালকে নামিয়ে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন লুই ফন গাল। এদিন আগেই তিনটি পরিবর্তন করে ফেলায় তুরুপের তাস আর খেলাই হলো না। আর্জেন্টিনা ম্যাচটি কি ওখানেই জিতে গেল? সিলেসেন হল্যান্ডের এক নম্বর গোলরক্ষক ঠিক আছে, কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, পেশাদার ক্যারিয়ারেই তাঁর পেনাল্টি ঠেকানোর কোনো ঘটনা নেই।
আর্জেন্টিনা ম্যাচ জেতেনি, জিতেছে টাইব্রেকার—সংবাদ সম্মেলনে লুই ফন গাল এটি মনে করিয়ে দেবেন স্বাভাবিক। আশ্চর্য হলো, ফন গাল নন, তা মনে করিয়ে দিলেন কি না আলেসান্দ্রো সাবেলাই। ‘আমরা হয়তো পরিষ্কার সুযোগ বেশি পেয়েছি, তবে ম্যাচটা ছিল সমানে সমান। সত্যিকার ড্র বলতে যা বোঝায়। অন্য কোনো ফল হলেও আমি এ কথাই বলতাম।’
রেকর্ড বইয়েও ড্র-ই লেখা থাকবে। তবে তা নিয়ে আর্জেন্টাইনদের মাথা ঘামাতে বয়েই গেছে। সাবেলার সংবাদ সম্মেলন শুরুর আগেই খবর এল, আর্জেন্টিনার রাস্তায় মানুষের ঢল নেমেছে। চলছে উৎসব এবং সেই উৎসবে রোমেরোর নামে জয়ধ্বনি।
আর্জেন্টাইনদের কারণে-অকারণে ঈশ্বরকে টেনে আসার একটা প্রবণতা আছে। ‘ঈশ্বরের হাত’ বলে ম্যারাডোনার মাধ্যমেই এটির শুরু কি না কে জানে! সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় রাউন্ডে এই অ্যারেনা করিন্থিয়ানসের একটা পোস্টের মালিকানাও ঈশ্বরকে দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বল সেখানে লেগে ফিরেছে বলে সেটি ‘ঈশ্বরের পোস্ট’।
আর্জেন্টিনাকে ফাইনালে তুলে দেওয়া সার্জিও রোমেরোর হাত দুটিও আর শুধুই তাঁর থাকছে না। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যারাডোনার হাতে করা ওই গোলটির নাম হয়ে গেছে—‘লা মানো দে দিওস’। ‘মানো’ মানে হাত। রোমেরোর ক্ষেত্রে সেটি শুধু বহুবচন হয়ে যাচ্ছে—লা মানোস দে দিওস। ঈশ্বরের দুই হাত।
সেমিফাইনালে টাইব্রেকার যদি দুই যুগ আগে-পরের দুই বিশ্বকাপকে মিলিয়ে দিয়ে থাকে, মিল আছে আরেকটি। এবারও ফাইনালে প্রতিপক্ষ সেই জার্মানরা। আর্জেন্টিনা অবশ্য চাইবে, মিলটা যেন ওখানেই শেষ হয়!
No comments