নারায়ণগঞ্জে সাত খুন- তদন্ত থেকে সিআইডিকে বাদ দেয়ার আবেদন খারিজ
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ সাত খুনের মামলার তদন্ত থেকে সিআইডিকে বাদ দিতে সরকারের আবেদন খারিজ করে দিয়েছে হাইকোর্ট। তবে আদালত আগের আদেশ সংশোধন করে সিআইডিকে তদন্তের পরিবর্তে অনুসন্ধান করতে বলেছেন। বিচারপতি মো. রেজাউল হক ও বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুরের হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল এ আদেশ দেয়। আদালত বলেছেন, ডিবি এ মামলায় নিয়মিত তদন্ত করে চার্জশিট দেবে। তবে সিআইডিসহ অন্যরা অনুসন্ধান করে এ আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করবে। ওই প্রতিবেদন দেখে প্রয়োজনে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো, সেখানে যদি অতিরিক্ত কোন তথ্য বা ডকুমেন্ট থাকে তা সাক্ষ্য হিসেবে তদন্ত কর্মকর্তাকে মূল প্রতিবেদনের সঙ্গে যুক্ত করা যাবে কিনা। তবে সিআইডিকে বাদ দিতে সরকারের আবেদন খারিজ করে হাইকোর্টের দেয়া আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। গতকাল বেলা সোয়া এগারোটার দিকে শুনানির শুরুতেই এটর্নি জেনারেল সিআইডিকে তদন্ত কার্যক্রম থেকে বাদ দেয়ার আবেদন উপস্থাপন করতে চান। আদালত এ আবেদনের ওপর শুনানির আগে তাকে চারটি অগ্রগতি প্রতিবেদন উপস্থাপন করতে বলেন। এরপর এটর্নি জেনারেল পর্যায়ক্রমে র্যাব, পুলিশের আইজি, সিআইডি ও সরকারি তদন্ত কমিটি থেকে পাঠানো অগ্রগতি প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করেন। সিআইডির প্রতিবেদনে বলা হয়, এ মামলায় ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৪ জন ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এছাড়া, ৩ জন সাক্ষীও জবানবন্দি দিয়েছে। এ জবানবন্দি সংগ্রহের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। সরকারি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, এ পর্যন্ত ৩ শ’ ৫০ জনের বক্তব্য গ্রহণ করা হয়েছে। যে তিনজন র্যাব সদস্য ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন তাদের কারা ফটকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। প্রাপ্ত সব তথ্য যাচাইবাছাই করা হচ্ছে। আরো কিছু তথ্য জানার জন্য আরো সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন রয়েছে। এ জন্য চার সপ্তাহ সময় দরকার। অগ্রগতি প্রতিবেদন উপস্থাপনের পর এটর্নি জেনারেল সিআইডিকে তদন্ত থেকে বাদ দেয়ার আবেদন উপস্থাপন করেন। এসময় তিনি বলেন, আইন অনুযায়ী একটি মামলায় দু’টি সরকারি সংস্থা তদন্ত করতে পারে না। প্রধান আসামি চিহ্নিত হয়ে গেছে। তদন্ত চূড়ান্ত পর্যায়ে। তাই সিআইডিকে বাদ দেয়ার আবেদন করেছি। তিনি বলেন, আপনাদের নির্দেশনা মেনে ডিবি সব করছে। এসময় আদালত বলেন, কোন অগ্রগতি প্রতিবেদনেই সিআইডির অসুবিধা হচ্ছে তা বলা হয়নি। ডিবি আর সিআইডির প্রধানতো একই ব্যক্তি। তাই সমস্যা কোথায়। এসময় এটর্নি জেনারেল বলেন, আইনে দু’টি সংস্থা দিয়ে তদন্ত করার সুযোগ নেই। এতে মামলার অসুবিধা হবে। জবাবে আদালত বলেন, আমরা ডিবির তদন্তে বাধা দেইনি। কোন প্রতিবেদন দিতে বলিনি। এটর্নি জেনারেল বলেন, অতিরিক্ত তদন্তের সুযোগ নেই। সিআইডিকে তদন্তের জন্য প্রথম যখন আদালত আদেশ দেন সেই আদেশের বিরুদ্ধে আমরা আপিল বিভাগে গিয়েছিলাম। আপিল বিভাগ হাইকোর্টে আবেদন দিতে বলেন। সে অনুযায়ী আমরা আবেদন দিয়েছি। শুনানির এক পর্যায়ে আদালত এটর্নি জেনারেলের আবেদনের বিষয়ে আইনগত প্রশ্ন তোলেন। আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণকারী আইনজীবী এডভোকেট শামীম সরদার বলেন, আইনগতভাবে সিআইডি তদন্ত করতে পারে। আদালত তদন্ত কার্যক্রমকে আরো কার্যকর করার জন্য যেকোন আদেশ দিতে পারেন। তিনি বলেন, আদালতের আদেশ আইনগত হয়েছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাই বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য সিনিয়র আইনজীবীদের অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে নিয়োগ দিতে পারেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত আদেশ দেয়। গত ২৭শে এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম এবং আইনজীবী চন্দন কুমার সরকারসহ সাত জন অপহৃত হন। তিন দিন পর শীতলক্ষ্যায় তাদের লাশ ভেসে ওঠে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা নূর হোসেনের কাছ থেকে ছয় কোটি টাকা নিয়ে র্যাব এ হত্যাকা- ঘটায় বলে অভিযোগ করেন নজরুলের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম। এ অভিযোগ ওঠার পর র্যাব-১১ এর তখনকার অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন এবং লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এমএম রানাকে সশস্র বাহিনী থেকে অবসরে পাঠানো হয়। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে গ্রেপ্তারও করা হয় তাদের। তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন। অন্যদিকে, নূর হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে কলকাতার পুলিশ। সে এখন ভারতের কারাগারে বন্দি।
No comments