নেতা বটে মাসচেরানো!
দশে দশ পেতে পারেন সর্বোচ্চ। হাভিয়ের মাসচেরানো লড়েন এগারো পেতে। কখনও বারোর জন্য। কখনও বা তারও বেশি! লিওনেল মেসি আর্জেন্টিনার অধিনায়ক। কিন্তু মাসচেরানো দলের আধ্যাত্মিক নেতা! নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে শেষটায় এসে গোলকিপার রোমেরোকে বললেন, ‘যাও, নায়ক হয়ে ফিরে এসো!’ তাই করেছেন রোমেরো। ৯০ মিনিটে খেলা গোলশূন্য। কোয়ার্টার ফাইনালে অসম্ভব সুন্দর পারফরম্যান্সের পর এই ম্যাচেও জ্বলজ্বলে তারকা মাসচেরানো।
অতিরিক্ত সময়ের আগে বিশ্রামে দলের নেতা মাসচেরানো। উৎসাহ দেন সবাইকে। এরপর বিরতিতে। তারও পরে পেনাল্টি শুট আউটের আগে সবার নেতা তিনিই। জেফেসিতো বা ছোট নেতা পুরো দলকে নিয়ে গোল হয়ে দাঁড়ান। দলকে দেন প্রেরণা। এরপর সবার গোলকিপার রোমেরোর মুখোমুখি হন। অনেক জোরেই বলেন, ‘আজ গোটা বিশ্ব তোমার দিকে তাকিয়ে। আজ তোমার হিরো হওয়ার দিন। তোমাকে হিরো হতে হবে।’ তারপর হয় ইতিহাস। দলও তার দাবি ফেলেনি। ৪ শটের কোনোটি মিস হয়নি। গোলপোস্টে দাঁড়িয়ে মাসচেরানোর কথাটা তাতিয়ে দিয়েছিল? রোমেরো দুটি শট ঠেকিয়ে দিয়ে আর্জেন্টিনার জাতীয় বীর। তারই হাত ধরে ২৪ বছর পর আবার বিশ্বকাপের ফাইনালে দু’বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। মাসচেরানোর পরিচয়, মাঝমাঠের মেধাবী খেলোয়াড়। সেন্ট্রাল ডিফেন্ডারও একটা পরিচয় তার। এ কারণেই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে আরও বেশি ঝানু। দুটি অলিম্পিক পদক ঝুলেছে তার গলায়। খেলছেন তৃতীয় বিশ্বকাপ। গেল বিশ্বকাপে ছিলেন অধিনায়ক। ম্যারাডোনার যুগে দলের নেতা ছিলেন। পরে সাবেলা আর্মব্যান্ড দিয়েছেন মেসিকে। আর্জেন্টিনার হয়ে এই ৩০ বছর বয়সেই মাসচেরানো খেলে ফেলেছেন ঈর্ষণীয় ১০৪টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ। এখনও ফর্মের তুঙ্গে বার্সেলোনা তারকা। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে সেমিফাইনালে জান বাজি রেখেই খেলেছেন। একবার বাঁ-প্রান্ত থেকে ডিফেন্স ভেঙে ঢুকে পড়লেন আর্জেন রবেন। শেষ প্রহরী গোলকিপার আছেন। তাকেও হারিয়ে দিতে পারেন এমন জায়গা থেকে শট নিতে যাচ্ছেন। কিন্তু তার সঙ্গে লেগে থাকা মাসচেরানোর স্লাইডিং ট্যাকলে বাঁচালেন দলকে।
নিশ্চিত গোলের সুযোগ মিস ডাচদের। ম্যাচে মাঠের মাঝ থেকে নিচে, কখনও ওপরে কিছুটা রীতিমতো চষে বেড়িয়েছেন। ১২০ মিনিটে ১০৪ বার বল এসেছে পায়ে। ৮৮টি পাস দিয়েছেন। ৮৪ শতাংশ নির্ভুল ছিলেন পাসিংয়ে। ট্যাকল করেছেন ৪ বার। প্রতিবার সফল। ১টি ক্লিয়ারেন্স, ১টি ব্লক। বল দখলের দ্বন্দ্বযুদ্ধে ৮৫ শতাংশ সাফল্য। দখলের লড়াইয়ে লাফিয়ে উঠে উইনালদামের সঙ্গে মাথায় ব্যথা পেলেন। চোখে শর্ষে ফুল দেখেছেন। মাথা ঘুরে পড়েও গেছেন। আবার উঠেছেন মাসচেরানো। লড়েছেন ফাইনালে যেতে। তার এই লড়াকু মানসিকতা প্রশংসনীয় কোচ আলেসান্দ্রো সাবেলার কাছে। তবে রবেনকে যেভাবে ঠেকিয়ে দিয়েছেন গোলকিপারের সামনে ওয়ান টু ওয়ানে, তা নিয়ে উচ্ছ্বসিত সাবেলা, ‘মাসচেরানো একটি প্রতীক, একটি লোগো। আমরা সেমিফাইনাল পার হলাম। আর এই পথে নিজের কাঁধে অনেক ভার তুলে নিয়েছে মাসচেরানো। অসাধারণ খেলোয়াড় সে। অন্যরা তাকে নিতে চাইবে। মাঠ ও মাঠের বাইরে সে আর্জেন্টিনার জাতীয় দলের প্রতীক।’ এক ম্যাচে দু’জনকে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার দেয়া যায় না। নইলে রোমেরোর চেয়ে কোনো অংশে কম দাবিদার ছিলেন না মাসচেরানো!
No comments