বাজেট বাস্তবায়ন নিয়ে বিভ্রান্ত অর্থনীতিবিদেরা
ভালো দিনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি প্রথম বাজেটে কতটা সুদিনের সম্ভাবনা জাগাতে পারলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার দিনভর দেশজুড়ে চলল তারই চর্চা। এর প্রতিফলন ঘটল শেয়ারবাজারেও। শেয়ার-সূচক সারাটা দিন পেন্ডুলামের মতো এপাশ-ওপাশ ঘোরাফেরা করল। নিরপেক্ষ অর্থনীতিবিদেরাও বাজেট প্রস্তাব কতটা কার্যকর বা বাস্তবায়ন করা যাবে, তা নিয়ে বিভ্রান্ত। সব মিলিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রথম বাজেট সৃষ্টি করল এক মিশ্র প্রতিক্রিয়ার। জেটলির সামনে চ্যালেঞ্জ ছিল বহুমুখী। সাধারণ মানুষ যাঁরা সমর্থনের ভান্ডার উপুড় করে বিজেপিকে ক্ষমতায় এনেছেন, তাঁদের ‘আচ্ছে দিন’ উপহার দেওয়া ছিল তাঁর প্রথম কাজ। সে জন্য জরুরি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা ও মধ্যবিত্তের আর্থিক সুরাহা দেওয়া। দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ, প্রবৃদ্ধির সামান্য হারকে ক্রমশ ওপরের দিকে টেনে তুলতে শিল্প মহল ও বাজার অর্থনীতিকে চাঙা করা। সে জন্য অবকাঠামো নির্মাণের দিকে বিশেষ নজরদান ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে কর-সংক্রান্ত বিরোধের অবসান জরুরি, যাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ে এবং বিনিয়োগে উৎসাহ আসে। কৃষি খাতে বিশেষ নজর দেওয়াও ছিল প্রয়োজনীয়। কারণ, এবার অনাবৃষ্টির কারণে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। তৃতীয়ত, কোষাগার ঘাটতি কমানো সব সময়ই একটা বড় সমস্যা। আগের সরকার এ নিয়ে জেরবার হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, প্রয়োজনীয় সংস্কারের দিকে অর্থমন্ত্রী কতটা এগোতে পারেন সে দিকে নজর রেখেছিল দেশ-বিদেশের লগ্নিকারীরা। জেটলি এই প্রতিটি সমস্যার সুরাহা করতে চেয়েছেন তাঁর মতো করে। প্রত্যক্ষ করে কিছুটা বিন্যাস ঘটিয়ে আয়করে ৫০ হাজার রুপি অতিরিক্ত ছাড় দিয়েছেন, ভবিষ্য তহবিলের নিম্নসীমা দুই গুণের বেশি বাড়িয়েছেন এবং প্রত্যেকের পেনশন অন্তত এক হাজার রুপি নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
প্রত্যক্ষ কর-কাঠামোয় বিন্যাসের ফলে সরকারের বার্ষিক আয় ২২ হাজার ২০০ কোটি রুপি কম হবে। পরোক্ষ করে শুল্ক-বিন্যাস ঘটিয়ে সাড়ে সাত হাজার কোটি অতিরিক্ত আয় হবে। কিন্তু বিদেশি লগ্নিকারীদের আস্থা অর্জনে কর বিরোধ দূর করে নির্দিষ্ট বিধি প্রণয়নের যে দাবি বড় হয়ে উঠেছিল, তার সরাসরি নিষ্পত্তি না ঘটিয়ে জেটলি একটি কমিশন গঠনের প্রস্তাব রেখেছেন। শিল্প মহল এতে কিছুটা আশাহত হলেও অর্থনতিবিদেরা অর্থমন্ত্রীর পদক্ষেপে ভতুর্কি কমানোর আশা দেখছেন। প্রবৃদ্ধির জন্য শিল্প-বান্ধব পরিস্থিতি সৃষ্টিতে জেটলি অবকাঠামোর দিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। একাধিক স্থলবন্দর ও ছোট শহরে বিমানবন্দর গড়া, এক শ ‘স্মার্ট শহর’ তৈরির সিদ্ধান্ত ঘোষণা, বিদ্যুৎ সড়ক পরিবহন প্রকল্প, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্বদান, ছয় রাজ্যে এইমস ধাঁচে হাসপাতাল গড়া এবং ক্রমশ সব রাজ্যে একটি করে এমন হাসপাতাল সার্বিক স্বাস্থ্য পরিষেবায় লগ্নি উল্লেখযোগ্য। এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে সরকারের প্রতিশ্রুতি পালনের প্রচেষ্টা রয়েছে। তবে এসব ছাপিয়ে বড় হয়ে ওঠে প্রতিরক্ষা উৎপাদন ও বিমা ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ ২৬ থেকে বাড়িয়ে ৪৯ শতাংশ করা। গ্রামীণ কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে পূর্বতন সরকারের ১০০ দিনের কাজের যে প্রকল্প যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে, তা রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জেটলি। তবে এ ক্ষেত্রে সম্পদ সৃষ্টির ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, এই বাজেট মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে বিশ্বাসে পরিণত করবে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বলেন, রেল বাজেটের মতোই এই বাজেটে নির্দিষ্ট কিছু নেই। অর্থের জোগানই বা কী করে হবে, তার ইঙ্গিত নেই। সোনিয়া গান্ধীর মতে, এই বাজেট নিতান্তই ইউপিএ সরকারের কর্মকাণ্ডগুলোর ধারাবাহিকতা রক্ষা করেছে। রাহুলের মতে, এতে অর্থনীতি বেগবান হবে না। বরং আরও ঢিমে হয়ে যাবে।
No comments