ঘটন-অঘটনের ফাইনাল by নাইর ইকবাল
সবার চোখ এখন বিশ্বকাপ ফাইনালের দিকে।
ফুটবলের সবচেয়ে মর্যাদাকর ম্যাচ বলে কথা! এই লড়াইয়ে মাঠের ফুটবলকে ছাপিয়েও
মূর্ত হয়ে ওঠে আরও নানা ঘটন-অঘটন। বিশ্বকাপ ফুটবলের ৮৪ বছরের ইতিহাসের
১৯টি ফাইনাল থেকে বেছে নেওয়া এমনই সাতটি ঘটনা জানাচ্ছেন নাইর ইকবাল
বল নিয়ে ফ্যাসাদ
১৯৩০ সালে উরুগুয়েতে অনুষ্ঠিত ইতিহাসের প্রথম বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলেছিল আর্জেন্টিনা ও স্বাগতিক উরুগুয়ে। ফাইনালে প্রতিবেশী দেশকে হারিয়ে বিশ্বকাপ ফুটবলের প্রথম শিরোপাটি জিতে নিয়েছিল উরুগুয়ে। কিন্তু অনিশ্চয়তাকে সঙ্গী করেই মাঠে গড়িয়েছিল বিশ্বকাপ ইতিহাসের প্রথম ফাইনালটি। সমস্যা হয়েছিল বল নিয়ে। আর্জেন্টিনা দাবি করেছিল, তাদের বল দিয়ে খেলাটি হোক, উরুগুয়ের দাবিও ছিল নিজেদের বল নিয়ে। মহাফ্যাসাদে পড়ে গিয়েছিলেন বেলজিয়ান রেফারি জন ল্যাংগেনাস। শেষে সমস্যাটা মেটে ওই ল্যাংগেনাসেরই বুদ্ধিমত্তায়। সিদ্ধান্ত হয়, দুই অর্ধে দুই দলের বল দিয়েই অনুষ্ঠিত হবে ইতিহাসের প্রথম ফাইনালটা।
মারাকানাজো
সে এক ‘ভুতুড়ে অধ্যায়’—অন্তত ব্রাজিলের মানুষের জন্য। ১৯৫০ বিশ্বকাপের ফাইনালটা কোনো দিনও ভুলতে পারবে না ব্রাজিলের মানুষ। ভুলতে পারার কথাও নয়। সেদিন তাদের এমন এক ট্র্যাজিডির মুখোমুখি হতে হয়েছিল, যা এক করে দিয়েছিল লাতিন আমেরিকার এই দেশটির জাতীয় ইতিহাসও। শিরোপা-নির্ধারণী খেলায় উরুগুয়ের বিপক্ষে দুর্দান্ত দল নিয়েও হেরে যেতে হয়েছিল ব্রাজিলকে। যে ম্যাচ ড্র করলেই চ্যাম্পিয়ন, সে ম্যাচ হেরে শিরোপা হারানোটা তো ট্র্যাজিক ঘটনাই। রিও ডি জেনিরোর বিখ্যাত মারাকানা স্টেডিয়াম ওই দুঃখের সাক্ষী বলেই ইতিহাসে এর নামকরণ করা হয়েছে মারাকানার দুঃখ। পর্তুগিজে ‘মারাকানাজো’ মানে মারাকানার দুঃখই।
‘মারাকানাজো’র ব্যাপারে বলতে গেলে ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত সেবারের বিশ্বকাপের ফরম্যাটটা নিয়ে একটু আলোচনা করা ভালো। ১৩ দলের অংশগ্রহণে আয়োজিত ওই বিশ্বকাপের শিরোপা-নির্ধারণী রাউন্ডে খেলেছিল চারটি দেশ। ব্রাজিল-উরুগুয়ে ছিল ওই চারটি দলের মধ্যে শীর্ষ দুই দল। লিগ-পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত ওই রাউন্ডে একে অন্যের সঙ্গে খেলার পর শেষ ম্যাচটি ছিল ব্রাজিল-উরুগুয়ের মধ্যেই। পয়েন্টের ব্যবধানে এগিয়ে থাকায় ব্রাজিলের শিরোপা জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল কেবল একটি পয়েন্ট। অর্থাৎ ড্র করলেই শিরোপা নিশ্চিত হয়ে যেত তাদের। এমন পরিস্থিতিতে এক গোলে এগিয়ে গিয়েও উরুগুয়ের কাছে ২-১ গোলে হেরে গিয়েছিল ব্রাজিল। ফুটবলপাগল ব্রাজিলীয়দের কাছে এর চেয়ে ট্র্যাজিক ঘটনা আর কী হতে পারে!
বার্নের ‘অলৌকিকতা’
১৯৫৪ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালে সে সময়কার দুর্দান্ত দল হাঙ্গেরির বিপক্ষে রীতিমতো এক অলৌকিক ঘটনাই ঘটিয়েছিল পশ্চিম জার্মানি। পুরো বিশ্বকাপে অন্য গ্রহের ফুটবল খেলে অবিসংবাদিত সেরা হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছিল ফেরেঙ্ক পুসকাসের হাঙ্গেরি। গ্রুপপর্বে পশ্চিম জার্মানিকে ৮-৩ গোলে হারানো হাঙ্গেরি সবাইকে অবাক করে দিয়ে ফাইনালে হেরে যায় ৩-২ গোলে। তাও আবার দুই গোলে এগিয়ে থাকার পর। ফুটবল ইতিহাসে এই ম্যাচে জার্মানির ঘুরে দাঁড়ানোর সঙ্গে ‘অলৌকিক’ ব্যাপারটি খুব ভালো মিলে যায়।
জিওফ হার্স্টের সেই গোল
১৯৬৬-র বিশ্বকাপ ফাইনালে ইংল্যান্ড ৪-২ গোলে পশ্চিম জার্মানিকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল। ফুটবলের জনক ইংলিশদের ওটাই প্রথম এবং এখন পর্যন্ত শেষবারের মতো বিশ্বকাপ জয়। কিন্তু ইংলিশদের সেই গৌরবকে কিছুটা ম্লান করে দিয়েছে এক বিতর্কিত গোল। এতটাই বিতর্কিত যে আজ ৪৮ বছর পরেও ইংলিশ ফুটবলের সবচেয়ে গৌরবের মুহূর্তটির গল্প শোনাতে গেলেই মূল আলোচনার বিষয় হয়ে পড়ে সেটি।
অথচ ওই গোলটি ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ জয়ের মূল নিয়ামক ছিল না। অতিরিক্ত সময়ের একেবারে শেষ মুহূর্তে (১২০ মিনিট) গোল হওয়ার আগে ইংল্যান্ড এগিয়ে ছিল ৩-২ গোলে। শেষ বাঁশি বাজার আগ মুহূর্তে ওই বিতর্কিত গোলটিই কিন্তু এনে দিয়েছিল জিওফ হার্স্টের হ্যাটট্রিক। হার্স্ট বিশ্বকাপের ইতিহাসে ফাইনালে হ্যাটট্রিক করা একমাত্র ফুটবলার।
গোলটির ব্যাপারে মূল বিতর্ক হলো হার্স্টের শটটি গোলরক্ষককে পরাভূত করলেও তা ক্রসবারে লেগে গোললাইনের বাইরে পড়েছিল। অথচ, তাতেই গোলের বাঁশি বাজিয়ে রেফারি জন্ম দিয়েছিলেন বিশ্বকাপের ইতিহাসের সবচেয়ে আলোচিত ও বিতর্কিত মুহূর্তের।
তারদেল্লির ভোঁ-দৌড়
শিরোনামটি দেখলে একটু অবাক হওয়ারই কথা। বিশ্বকাপ ফাইনালে ফুটবল-নৈপুণ্য বাদ দিয়ে একটি দৌড়ের ঘটনা কেন ইতিহাসে স্থান পাবে। কিন্তু ১৯৮২ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালে ইতালির মার্কো তারদেল্লির একটি দৌড়ই স্থান পেয়ে গেছে বিশ্বকাপের অন্যতম আইকনিক দৃশ্যে। ব্যাপারটা আর কিছুই নয়, পশ্চিম জার্মানির বিপক্ষে ফাইনালে সেদিন তাঁর গোলেই ২-০ গোলে এগিয়ে গিয়েছিল ইতালি। দুর্দান্ত ওই গোলটির পর বাঁধভাঙা আবেগে তারদেল্লি চিৎকার করতে করতে শুরু করেছিলেন এক দৌড়। বিশ্বকাপের আর্কাইভ থেকে ছবি দেখানো হবে আর তারদেল্লির দৌড় দেখানো হবে না—এমনটা খুবই বিরল।
লাল কার্ড দেখে ইতিহাসে
পেদ্রো মনজনের নামটি ইতিহাসে খোদাই হয়ে আছে চিরদিনের জন্যই। আর্জেন্টাইন এই ফুটবলারের দুর্ভাগ্য তিনি তাঁর খেলোয়াড়ি যোগ্যতায় নন, নেতিবাচক কারণেই স্থান করে নিয়েছেন বিশ্বকাপের ইতিহাসে। তিনি বিশ্বকাপের ফাইনালে সরাসরি লালকার্ড দেখা প্রথম খেলোয়াড়। আর্জেন্টিনা ও পশ্চিম জার্মানির মধ্যকার ওই মাথা গরমের ফাইনালে জার্মান ফুটবলার ইয়ুর্গেন ক্লিন্সমানকে পেছন থেকে ফাউল করার জন্য লাল কার্ড দেখেছিলেন তিনি। এই ম্যাচের মেক্সিকান রেফারি কোডেশাল মেনদেজ মনজনের সঙ্গে আরও একজন আর্জেন্টাইন ফুটবলারকে লাল কার্ড দেখিয়েছিলেন। গুস্তাভো দেজোত্তির ওই লাল কার্ডটি অবশ্য ছিল ওই ম্যাচে তাঁর দ্বিতীয় হলুদ কার্ড।
টাইব্রেকারে ভাগ্য-নির্ধারণ
১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালে শিরোপা-নির্ধারিত হয়েছিল টাইব্রেকারে। ওটাই পেনাল্টি-লটারিতে নির্ধারিত প্রথম শিরোপা। ব্রাজিল-ইতালির মধ্যকার ওই ফাইনালটি নির্ধারিত ৯০ ও অতিরিক্ত ৩০ মিনিট গোলশূন্য থাকার পর ব্রাজিল টাইব্রেকারে ম্যাচটি জিতে নেয় ৩-২ ব্যবধানে। ওই বিশ্বকাপে ইতালির ফাইনালে ওঠার নায়ক রবার্তো ব্যাজ্জিওর পেনাল্টি মিসকে বিশ্বকাপের ইতিহাসে এক ট্র্যাজিক ঘটনা হিসেবেই অভিহিত করা যেতে পারে। ব্যাজ্জিও একা নন। তাঁর পাশাপাশি পেনাল্টি মিস করেছিলেন ইতালির অধিনায়ক ফ্রাঙ্কো বারেসি আর ড্যানিয়েল মাসারো। ব্রাজিলের হয়ে পেনাল্টি মিস করেছিলেন মার্সিও সান্তোস।
বল নিয়ে ফ্যাসাদ
১৯৩০ সালে উরুগুয়েতে অনুষ্ঠিত ইতিহাসের প্রথম বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলেছিল আর্জেন্টিনা ও স্বাগতিক উরুগুয়ে। ফাইনালে প্রতিবেশী দেশকে হারিয়ে বিশ্বকাপ ফুটবলের প্রথম শিরোপাটি জিতে নিয়েছিল উরুগুয়ে। কিন্তু অনিশ্চয়তাকে সঙ্গী করেই মাঠে গড়িয়েছিল বিশ্বকাপ ইতিহাসের প্রথম ফাইনালটি। সমস্যা হয়েছিল বল নিয়ে। আর্জেন্টিনা দাবি করেছিল, তাদের বল দিয়ে খেলাটি হোক, উরুগুয়ের দাবিও ছিল নিজেদের বল নিয়ে। মহাফ্যাসাদে পড়ে গিয়েছিলেন বেলজিয়ান রেফারি জন ল্যাংগেনাস। শেষে সমস্যাটা মেটে ওই ল্যাংগেনাসেরই বুদ্ধিমত্তায়। সিদ্ধান্ত হয়, দুই অর্ধে দুই দলের বল দিয়েই অনুষ্ঠিত হবে ইতিহাসের প্রথম ফাইনালটা।
মারাকানাজো
সে এক ‘ভুতুড়ে অধ্যায়’—অন্তত ব্রাজিলের মানুষের জন্য। ১৯৫০ বিশ্বকাপের ফাইনালটা কোনো দিনও ভুলতে পারবে না ব্রাজিলের মানুষ। ভুলতে পারার কথাও নয়। সেদিন তাদের এমন এক ট্র্যাজিডির মুখোমুখি হতে হয়েছিল, যা এক করে দিয়েছিল লাতিন আমেরিকার এই দেশটির জাতীয় ইতিহাসও। শিরোপা-নির্ধারণী খেলায় উরুগুয়ের বিপক্ষে দুর্দান্ত দল নিয়েও হেরে যেতে হয়েছিল ব্রাজিলকে। যে ম্যাচ ড্র করলেই চ্যাম্পিয়ন, সে ম্যাচ হেরে শিরোপা হারানোটা তো ট্র্যাজিক ঘটনাই। রিও ডি জেনিরোর বিখ্যাত মারাকানা স্টেডিয়াম ওই দুঃখের সাক্ষী বলেই ইতিহাসে এর নামকরণ করা হয়েছে মারাকানার দুঃখ। পর্তুগিজে ‘মারাকানাজো’ মানে মারাকানার দুঃখই।
‘মারাকানাজো’র ব্যাপারে বলতে গেলে ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত সেবারের বিশ্বকাপের ফরম্যাটটা নিয়ে একটু আলোচনা করা ভালো। ১৩ দলের অংশগ্রহণে আয়োজিত ওই বিশ্বকাপের শিরোপা-নির্ধারণী রাউন্ডে খেলেছিল চারটি দেশ। ব্রাজিল-উরুগুয়ে ছিল ওই চারটি দলের মধ্যে শীর্ষ দুই দল। লিগ-পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত ওই রাউন্ডে একে অন্যের সঙ্গে খেলার পর শেষ ম্যাচটি ছিল ব্রাজিল-উরুগুয়ের মধ্যেই। পয়েন্টের ব্যবধানে এগিয়ে থাকায় ব্রাজিলের শিরোপা জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল কেবল একটি পয়েন্ট। অর্থাৎ ড্র করলেই শিরোপা নিশ্চিত হয়ে যেত তাদের। এমন পরিস্থিতিতে এক গোলে এগিয়ে গিয়েও উরুগুয়ের কাছে ২-১ গোলে হেরে গিয়েছিল ব্রাজিল। ফুটবলপাগল ব্রাজিলীয়দের কাছে এর চেয়ে ট্র্যাজিক ঘটনা আর কী হতে পারে!
বার্নের ‘অলৌকিকতা’
১৯৫৪ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালে সে সময়কার দুর্দান্ত দল হাঙ্গেরির বিপক্ষে রীতিমতো এক অলৌকিক ঘটনাই ঘটিয়েছিল পশ্চিম জার্মানি। পুরো বিশ্বকাপে অন্য গ্রহের ফুটবল খেলে অবিসংবাদিত সেরা হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছিল ফেরেঙ্ক পুসকাসের হাঙ্গেরি। গ্রুপপর্বে পশ্চিম জার্মানিকে ৮-৩ গোলে হারানো হাঙ্গেরি সবাইকে অবাক করে দিয়ে ফাইনালে হেরে যায় ৩-২ গোলে। তাও আবার দুই গোলে এগিয়ে থাকার পর। ফুটবল ইতিহাসে এই ম্যাচে জার্মানির ঘুরে দাঁড়ানোর সঙ্গে ‘অলৌকিক’ ব্যাপারটি খুব ভালো মিলে যায়।
জিওফ হার্স্টের সেই গোল
১৯৬৬-র বিশ্বকাপ ফাইনালে ইংল্যান্ড ৪-২ গোলে পশ্চিম জার্মানিকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল। ফুটবলের জনক ইংলিশদের ওটাই প্রথম এবং এখন পর্যন্ত শেষবারের মতো বিশ্বকাপ জয়। কিন্তু ইংলিশদের সেই গৌরবকে কিছুটা ম্লান করে দিয়েছে এক বিতর্কিত গোল। এতটাই বিতর্কিত যে আজ ৪৮ বছর পরেও ইংলিশ ফুটবলের সবচেয়ে গৌরবের মুহূর্তটির গল্প শোনাতে গেলেই মূল আলোচনার বিষয় হয়ে পড়ে সেটি।
অথচ ওই গোলটি ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ জয়ের মূল নিয়ামক ছিল না। অতিরিক্ত সময়ের একেবারে শেষ মুহূর্তে (১২০ মিনিট) গোল হওয়ার আগে ইংল্যান্ড এগিয়ে ছিল ৩-২ গোলে। শেষ বাঁশি বাজার আগ মুহূর্তে ওই বিতর্কিত গোলটিই কিন্তু এনে দিয়েছিল জিওফ হার্স্টের হ্যাটট্রিক। হার্স্ট বিশ্বকাপের ইতিহাসে ফাইনালে হ্যাটট্রিক করা একমাত্র ফুটবলার।
গোলটির ব্যাপারে মূল বিতর্ক হলো হার্স্টের শটটি গোলরক্ষককে পরাভূত করলেও তা ক্রসবারে লেগে গোললাইনের বাইরে পড়েছিল। অথচ, তাতেই গোলের বাঁশি বাজিয়ে রেফারি জন্ম দিয়েছিলেন বিশ্বকাপের ইতিহাসের সবচেয়ে আলোচিত ও বিতর্কিত মুহূর্তের।
তারদেল্লির ভোঁ-দৌড়
শিরোনামটি দেখলে একটু অবাক হওয়ারই কথা। বিশ্বকাপ ফাইনালে ফুটবল-নৈপুণ্য বাদ দিয়ে একটি দৌড়ের ঘটনা কেন ইতিহাসে স্থান পাবে। কিন্তু ১৯৮২ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালে ইতালির মার্কো তারদেল্লির একটি দৌড়ই স্থান পেয়ে গেছে বিশ্বকাপের অন্যতম আইকনিক দৃশ্যে। ব্যাপারটা আর কিছুই নয়, পশ্চিম জার্মানির বিপক্ষে ফাইনালে সেদিন তাঁর গোলেই ২-০ গোলে এগিয়ে গিয়েছিল ইতালি। দুর্দান্ত ওই গোলটির পর বাঁধভাঙা আবেগে তারদেল্লি চিৎকার করতে করতে শুরু করেছিলেন এক দৌড়। বিশ্বকাপের আর্কাইভ থেকে ছবি দেখানো হবে আর তারদেল্লির দৌড় দেখানো হবে না—এমনটা খুবই বিরল।
লাল কার্ড দেখে ইতিহাসে
পেদ্রো মনজনের নামটি ইতিহাসে খোদাই হয়ে আছে চিরদিনের জন্যই। আর্জেন্টাইন এই ফুটবলারের দুর্ভাগ্য তিনি তাঁর খেলোয়াড়ি যোগ্যতায় নন, নেতিবাচক কারণেই স্থান করে নিয়েছেন বিশ্বকাপের ইতিহাসে। তিনি বিশ্বকাপের ফাইনালে সরাসরি লালকার্ড দেখা প্রথম খেলোয়াড়। আর্জেন্টিনা ও পশ্চিম জার্মানির মধ্যকার ওই মাথা গরমের ফাইনালে জার্মান ফুটবলার ইয়ুর্গেন ক্লিন্সমানকে পেছন থেকে ফাউল করার জন্য লাল কার্ড দেখেছিলেন তিনি। এই ম্যাচের মেক্সিকান রেফারি কোডেশাল মেনদেজ মনজনের সঙ্গে আরও একজন আর্জেন্টাইন ফুটবলারকে লাল কার্ড দেখিয়েছিলেন। গুস্তাভো দেজোত্তির ওই লাল কার্ডটি অবশ্য ছিল ওই ম্যাচে তাঁর দ্বিতীয় হলুদ কার্ড।
টাইব্রেকারে ভাগ্য-নির্ধারণ
১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালে শিরোপা-নির্ধারিত হয়েছিল টাইব্রেকারে। ওটাই পেনাল্টি-লটারিতে নির্ধারিত প্রথম শিরোপা। ব্রাজিল-ইতালির মধ্যকার ওই ফাইনালটি নির্ধারিত ৯০ ও অতিরিক্ত ৩০ মিনিট গোলশূন্য থাকার পর ব্রাজিল টাইব্রেকারে ম্যাচটি জিতে নেয় ৩-২ ব্যবধানে। ওই বিশ্বকাপে ইতালির ফাইনালে ওঠার নায়ক রবার্তো ব্যাজ্জিওর পেনাল্টি মিসকে বিশ্বকাপের ইতিহাসে এক ট্র্যাজিক ঘটনা হিসেবেই অভিহিত করা যেতে পারে। ব্যাজ্জিও একা নন। তাঁর পাশাপাশি পেনাল্টি মিস করেছিলেন ইতালির অধিনায়ক ফ্রাঙ্কো বারেসি আর ড্যানিয়েল মাসারো। ব্রাজিলের হয়ে পেনাল্টি মিস করেছিলেন মার্সিও সান্তোস।
No comments