আধুনিক কবিতা হচ্ছে কালোপযোগী নতুন কবিতা by আবুল হোসেন
পূর্ব প্রকাশের পর
প্রশ্ন : আপনার প্রথম বই ‘নববসন্ত’ তো রবীন্দ্রনাথের জীবিতাবস্থায় প্রকাশিত হয়। রবীন্দ্রনাথকে দিয়েছিলেন কি?
আবুল হোসেন : রবীন্দ্রনাথের শরীর ভালো যাচ্ছিল না। আমি ডাকে পাঠাতে চাইনি, চেয়েছিলাম বইটা তাকে হাতে হাতে দেব। রবীন্দ্রনাথের সচিব জানালেন- কবির শরীর ভালো যাচ্ছে না, শরীর ভালো হলে তোমাকে জানাব। কিন্তু সে সুযোগ আমার আর হয়নি, রবীন্দ্রনাথ ১৯৪১ সালে মারা গেলেন।
প্রশ্ন : রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে কখন সাক্ষাৎ হয়?
আবুল হোসেন : আমার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘নববসন্ত’ প্রকাশিত হয় ১৯৪০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। তার কিছুদিন আগে ফেব্র“য়ারি মাসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ ঘটে। আমি তখন কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে ‘রবীন্দ্র পরিষদ’-এর সম্পাদক ছিলাম। সুবোধ সেনগুপ্ত ছিলেন সভাপতি। রবীন্দ্র পরিষদের প্রথম সম্পাদক ছিলেন হুমায়ুন কবীর। আমার যদ্দুর মনে পড়েÑ তখন মৈত্রেয়ী দেবীর বাবা সুরেন দাশগুপ্তই ছিলেন সভাপতি। তিনি রবীন্দ্রনাথের বন্ধু ছিলেন। ঘটনাক্রমে রবীন্দ্রনাথ বেঁচে থাকতেই আমি তার সম্পাদক হলাম। আমি রবীন্দ্রনাথকে চিঠি লিখেছিলাম এবং রবীন্দ্রনাথ আশীর্বাণী পাঠিয়েছিলেন। তা কলেজের নোটিশ বোর্ডেও টাঙিয়ে দেয়া হয়েছিল।
প্রশ্ন : সাহিত্যাঙ্গনে তখন কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিপুল প্রভাব, তার সঙ্গে কখন পরিচয় হয়?
আবুল হোসেন : কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় হয় কলকাতায়, যতদূর মনে পড়ে ১৯৩৮-৩৯ সালে দিকে । তিনি তখন শ্যামবাজারের একটা গলিতে থাকতেন। ‘বুলবুল’ পত্রিকার সম্পাদক হাবিবুল্লাহ বাহারের সঙ্গে গিয়েছিলাম নজরুলের সঙ্গে দেখা করতে। উনি গিয়েছিলেন ‘বুলবুল’ পত্রিকার জন্য লেখা আনতে। হাবিবুল্লাহ বাহার ছিলেন আমার প্রথম গ্রন্থ ‘নববসন্ত’-এর প্রকাশক। তিনি আমাকে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন। নজরুল তখন খুব ব্যস্ত। নিয়মিত ‘হিজ মাস্টার ভয়েস’-এ গান দিচ্ছেন- গান লিখছেন, তার সুর করছেন; আর শিল্পীদের গান শেখাচ্ছেন। আমরা যেদিন গেলাম-সেদিন বিখ্যাত গায়িকা শৈলদেবীকেও সেখানে বসে থাকতে দেখেছিলাম। নজরুল পান খেতেন খুব-একপাশে পানের বাটা, অন্যপাশে পিকদানি। দুুটোরই ব্যবহার চলছে ক্রমাগত।
প্রশ্ন : আধুনিক কবি হওয়ার জন্য অধ্যয়ন কিংবা আত্মপ্রেরণা-কোনটা বেশি দরকার বলে মনে করেন?
আবুল হোসেন : অধ্যয়ন করে কেউ কবি হতে পারে না। কবি হওয়া বিধাতার দান। কবিরা জন্মান-কবি তৈরি হওয়া যায় না। কোনো কোনো দেশে কবিতা লেখা শেখানো হয়, উপন্যাস লেখার কোর্স চালু আছে। তাতে লেখার প্রক্রিয়া শেখানো যায়, আবেগ জন্মানো যায় না। সৃষ্টিশীল প্রতিভা বা কবি জন্মগ্রহণ করেন- তৈরি হন না।
প্রশ্ন : আপনার সমসাময়িক কবিদের সম্পর্কে কিছু বলুন?
আবুল হোসেন : আমার সমসাময়িক কবিরা হলেন-আহসান হাবীব, ফররুখ আহমদ, সৈয়দ আলী আহসান ও গোলাম কুদ্দুস। গোলাম কুদ্দুস দেশভাগের পরও পশ্চিমবঙ্গে থেকে গেলেন। তার সঙ্গে আমার হৃদ্যতা ছিল বেশি। আমার সমকালে খুবই ভালো কবি হচ্ছেন-ফররুখ আহমদ। ভুল পথে গিয়েই তিনি বেশিদূর অগ্রসর হতে পারলেন না। আমি তাকে বেশ শক্তিশালী কবি মনে করি। আমার সময়ের সুকান্ত ভট্টাচার্য কিংবা সুভাষ মুখোপাধ্যায়েরও যে কোনো লেখা আলাদা করে চেনা যায়।
প্রশ্ন : কবির সামাজিক দায়িত্ব কী?
আবুল হোসেন : কবির আলাদা করে কোনো সামাজিক দায়িত্বের কথা আমি স্বীকার করি না। লেখকের দায়িত্ব তার বিবেকের কাছে, নিজের কাছে। কবিরা তো সমাজেরই লোক, যা তিনি লিখবেন সমাজের মানুষের জন্যই লিখবেন। সমাজের একজন হিসেবে মানুষের কথা, সমাজের কথাই তো লিখছি। যা বলার কবিতাতেই বলছি।
প্রশ্ন : কবিদের রাজনীতি সম্পৃক্ততা থাকা দরকার আছে বলে মনে করেন কি?
আবুল হোসেন : কবিদের রাজনীতি কেন, সবকিছু সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। কিন্তু প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে অংশ নেয়া কবির জন্য আত্মঘাতী কাজ। রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে কবিতার বদলে তিনি স্লোগান লিখতে শুরু করবেন। তবে কবিকে অবশ্যই সমাজ ও রাজনীতি সচেতন হতে হবে-সবকিছু জানা থাকতে হবে। সুভাষ কমিউনিস্ট পার্টির কর্মী ছিলেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত তাকেও পার্টি ছাড়তে হয়েছে। রাজনীতির মধ্যে গেলে দলীয় নির্দেশে চলতে হয়, নিজের বিবেকের নির্দেশ মতো চলতে পারেন না।
প্রশ্ন : আপনাদের পরবর্তী দশকের বাংলাদেশের কবিতা সম্পর্কে কিছু বলবেন কি?
আবুল হোসেন : আবহমান বাংলা কবিতার ধারায় ফররুখ, তালিম হোসেন ভিন্নধারায় গেলেও আমি মূলধারায় থেকেছি। আমাদের পরবর্তী সময়ে শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ, শহীদ কাদরীরা কিংবা তাদের পরের রফিক আজাদ, আবদুল মান্নান সৈয়দ ও অন্যরা তিরিশের নতুন কবিতার ধারায় কাব্যচর্চা করে যাচ্ছেন। বাংলা কবিতায় তিরিশের পরে আর কোনো নতুন বাঁকবদল হয়নি। শামসুর রাহমানের ব্যাপ্তি বেশ, আল মাহমুদের কবিতা জসীমউদ্দীনের আধুনিক সংস্করণ। তিনি জসীমউদ্দীন ও জীবনানন্দকে মেলাতে চেয়েছেন। কবিদের দশক ওয়ারি বিভাজনে আমার তেমন সায় নেই। পূর্বসূরিদের চেয়ে আলাদা কিছু করতে পারলে তাকে এমনিতেই চেনা যাবে।
প্রশ্ন : একজন কবি হিসেবে বয়সের শেষপ্রান্তে এসে আপনার প্রধান স্বপ্ন কি?
আবুল হোসেন : আমার সব স্বপ্নই কবিতা নিয়ে। কবিতার বাইরে আশা-আকাক্সক্ষা বিশেষ কিছু নেই। তবে যখনই সময়ের কথা ভাবি-তখন বিংশ শতাব্দীর বৈজ্ঞানিক, প্রকৌশলিক যেসব আবিষ্কার, তার যে অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে-তা থেকে মানুষের জীবনযাপনের মান বেড়েছে। এসব সত্ত্বেও আমার মনে হয়েছে-মানুষ যে আগের মানুষের চেয়ে ভালো মানুষ হচ্ছে, তা আমি দেখতে পাইনে। বর্তমান বিশ্বের যে অবস্থা দেখছি, সৎ ও বিবেকবান মানুষের বড় অভাববোধ করছি। আমার বরং মনে হয়েছে-এই সময়টি বিশ্বের জন্য বড় দুঃসময়।
প্রশ্ন : আমরা আলাপের শেষপর্যায়ে এসেছি। তরুণদের উদ্দেশ্যে কোনো উপদেশ দেবেন কি?
আবুল হোসেন : আমি কাউকে কোনো উপদেশ দিই না। তবে একথা বলব-তরুণরাই জাতির ভবিষ্যৎ, তাদের মধ্য থেকে আগামীতে নতুন কিছু সৃষ্টি হবে, নতুন কবিতাও হবে। তবে তাদের অধ্যবসায়, সাধনা ও প্রচেষ্টার ওপরই কবিতার ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে। এ খুব কঠিন কাজ। তবে তরুণরাই তো পথ দেখায়- আমি আশাবাদী।
প্রশ্নকর্তা : এই দীর্ঘ সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
আবুল হোসেন : তোমাদেরও ধন্যবাদ।
প্রশ্ন : আপনার প্রথম বই ‘নববসন্ত’ তো রবীন্দ্রনাথের জীবিতাবস্থায় প্রকাশিত হয়। রবীন্দ্রনাথকে দিয়েছিলেন কি?
আবুল হোসেন : রবীন্দ্রনাথের শরীর ভালো যাচ্ছিল না। আমি ডাকে পাঠাতে চাইনি, চেয়েছিলাম বইটা তাকে হাতে হাতে দেব। রবীন্দ্রনাথের সচিব জানালেন- কবির শরীর ভালো যাচ্ছে না, শরীর ভালো হলে তোমাকে জানাব। কিন্তু সে সুযোগ আমার আর হয়নি, রবীন্দ্রনাথ ১৯৪১ সালে মারা গেলেন।
প্রশ্ন : রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে কখন সাক্ষাৎ হয়?
আবুল হোসেন : আমার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘নববসন্ত’ প্রকাশিত হয় ১৯৪০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। তার কিছুদিন আগে ফেব্র“য়ারি মাসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ ঘটে। আমি তখন কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে ‘রবীন্দ্র পরিষদ’-এর সম্পাদক ছিলাম। সুবোধ সেনগুপ্ত ছিলেন সভাপতি। রবীন্দ্র পরিষদের প্রথম সম্পাদক ছিলেন হুমায়ুন কবীর। আমার যদ্দুর মনে পড়েÑ তখন মৈত্রেয়ী দেবীর বাবা সুরেন দাশগুপ্তই ছিলেন সভাপতি। তিনি রবীন্দ্রনাথের বন্ধু ছিলেন। ঘটনাক্রমে রবীন্দ্রনাথ বেঁচে থাকতেই আমি তার সম্পাদক হলাম। আমি রবীন্দ্রনাথকে চিঠি লিখেছিলাম এবং রবীন্দ্রনাথ আশীর্বাণী পাঠিয়েছিলেন। তা কলেজের নোটিশ বোর্ডেও টাঙিয়ে দেয়া হয়েছিল।
প্রশ্ন : সাহিত্যাঙ্গনে তখন কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিপুল প্রভাব, তার সঙ্গে কখন পরিচয় হয়?
আবুল হোসেন : কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় হয় কলকাতায়, যতদূর মনে পড়ে ১৯৩৮-৩৯ সালে দিকে । তিনি তখন শ্যামবাজারের একটা গলিতে থাকতেন। ‘বুলবুল’ পত্রিকার সম্পাদক হাবিবুল্লাহ বাহারের সঙ্গে গিয়েছিলাম নজরুলের সঙ্গে দেখা করতে। উনি গিয়েছিলেন ‘বুলবুল’ পত্রিকার জন্য লেখা আনতে। হাবিবুল্লাহ বাহার ছিলেন আমার প্রথম গ্রন্থ ‘নববসন্ত’-এর প্রকাশক। তিনি আমাকে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন। নজরুল তখন খুব ব্যস্ত। নিয়মিত ‘হিজ মাস্টার ভয়েস’-এ গান দিচ্ছেন- গান লিখছেন, তার সুর করছেন; আর শিল্পীদের গান শেখাচ্ছেন। আমরা যেদিন গেলাম-সেদিন বিখ্যাত গায়িকা শৈলদেবীকেও সেখানে বসে থাকতে দেখেছিলাম। নজরুল পান খেতেন খুব-একপাশে পানের বাটা, অন্যপাশে পিকদানি। দুুটোরই ব্যবহার চলছে ক্রমাগত।
প্রশ্ন : আধুনিক কবি হওয়ার জন্য অধ্যয়ন কিংবা আত্মপ্রেরণা-কোনটা বেশি দরকার বলে মনে করেন?
আবুল হোসেন : অধ্যয়ন করে কেউ কবি হতে পারে না। কবি হওয়া বিধাতার দান। কবিরা জন্মান-কবি তৈরি হওয়া যায় না। কোনো কোনো দেশে কবিতা লেখা শেখানো হয়, উপন্যাস লেখার কোর্স চালু আছে। তাতে লেখার প্রক্রিয়া শেখানো যায়, আবেগ জন্মানো যায় না। সৃষ্টিশীল প্রতিভা বা কবি জন্মগ্রহণ করেন- তৈরি হন না।
প্রশ্ন : আপনার সমসাময়িক কবিদের সম্পর্কে কিছু বলুন?
আবুল হোসেন : আমার সমসাময়িক কবিরা হলেন-আহসান হাবীব, ফররুখ আহমদ, সৈয়দ আলী আহসান ও গোলাম কুদ্দুস। গোলাম কুদ্দুস দেশভাগের পরও পশ্চিমবঙ্গে থেকে গেলেন। তার সঙ্গে আমার হৃদ্যতা ছিল বেশি। আমার সমকালে খুবই ভালো কবি হচ্ছেন-ফররুখ আহমদ। ভুল পথে গিয়েই তিনি বেশিদূর অগ্রসর হতে পারলেন না। আমি তাকে বেশ শক্তিশালী কবি মনে করি। আমার সময়ের সুকান্ত ভট্টাচার্য কিংবা সুভাষ মুখোপাধ্যায়েরও যে কোনো লেখা আলাদা করে চেনা যায়।
প্রশ্ন : কবির সামাজিক দায়িত্ব কী?
আবুল হোসেন : কবির আলাদা করে কোনো সামাজিক দায়িত্বের কথা আমি স্বীকার করি না। লেখকের দায়িত্ব তার বিবেকের কাছে, নিজের কাছে। কবিরা তো সমাজেরই লোক, যা তিনি লিখবেন সমাজের মানুষের জন্যই লিখবেন। সমাজের একজন হিসেবে মানুষের কথা, সমাজের কথাই তো লিখছি। যা বলার কবিতাতেই বলছি।
প্রশ্ন : কবিদের রাজনীতি সম্পৃক্ততা থাকা দরকার আছে বলে মনে করেন কি?
আবুল হোসেন : কবিদের রাজনীতি কেন, সবকিছু সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। কিন্তু প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে অংশ নেয়া কবির জন্য আত্মঘাতী কাজ। রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে কবিতার বদলে তিনি স্লোগান লিখতে শুরু করবেন। তবে কবিকে অবশ্যই সমাজ ও রাজনীতি সচেতন হতে হবে-সবকিছু জানা থাকতে হবে। সুভাষ কমিউনিস্ট পার্টির কর্মী ছিলেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত তাকেও পার্টি ছাড়তে হয়েছে। রাজনীতির মধ্যে গেলে দলীয় নির্দেশে চলতে হয়, নিজের বিবেকের নির্দেশ মতো চলতে পারেন না।
প্রশ্ন : আপনাদের পরবর্তী দশকের বাংলাদেশের কবিতা সম্পর্কে কিছু বলবেন কি?
আবুল হোসেন : আবহমান বাংলা কবিতার ধারায় ফররুখ, তালিম হোসেন ভিন্নধারায় গেলেও আমি মূলধারায় থেকেছি। আমাদের পরবর্তী সময়ে শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ, শহীদ কাদরীরা কিংবা তাদের পরের রফিক আজাদ, আবদুল মান্নান সৈয়দ ও অন্যরা তিরিশের নতুন কবিতার ধারায় কাব্যচর্চা করে যাচ্ছেন। বাংলা কবিতায় তিরিশের পরে আর কোনো নতুন বাঁকবদল হয়নি। শামসুর রাহমানের ব্যাপ্তি বেশ, আল মাহমুদের কবিতা জসীমউদ্দীনের আধুনিক সংস্করণ। তিনি জসীমউদ্দীন ও জীবনানন্দকে মেলাতে চেয়েছেন। কবিদের দশক ওয়ারি বিভাজনে আমার তেমন সায় নেই। পূর্বসূরিদের চেয়ে আলাদা কিছু করতে পারলে তাকে এমনিতেই চেনা যাবে।
প্রশ্ন : একজন কবি হিসেবে বয়সের শেষপ্রান্তে এসে আপনার প্রধান স্বপ্ন কি?
আবুল হোসেন : আমার সব স্বপ্নই কবিতা নিয়ে। কবিতার বাইরে আশা-আকাক্সক্ষা বিশেষ কিছু নেই। তবে যখনই সময়ের কথা ভাবি-তখন বিংশ শতাব্দীর বৈজ্ঞানিক, প্রকৌশলিক যেসব আবিষ্কার, তার যে অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে-তা থেকে মানুষের জীবনযাপনের মান বেড়েছে। এসব সত্ত্বেও আমার মনে হয়েছে-মানুষ যে আগের মানুষের চেয়ে ভালো মানুষ হচ্ছে, তা আমি দেখতে পাইনে। বর্তমান বিশ্বের যে অবস্থা দেখছি, সৎ ও বিবেকবান মানুষের বড় অভাববোধ করছি। আমার বরং মনে হয়েছে-এই সময়টি বিশ্বের জন্য বড় দুঃসময়।
প্রশ্ন : আমরা আলাপের শেষপর্যায়ে এসেছি। তরুণদের উদ্দেশ্যে কোনো উপদেশ দেবেন কি?
আবুল হোসেন : আমি কাউকে কোনো উপদেশ দিই না। তবে একথা বলব-তরুণরাই জাতির ভবিষ্যৎ, তাদের মধ্য থেকে আগামীতে নতুন কিছু সৃষ্টি হবে, নতুন কবিতাও হবে। তবে তাদের অধ্যবসায়, সাধনা ও প্রচেষ্টার ওপরই কবিতার ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে। এ খুব কঠিন কাজ। তবে তরুণরাই তো পথ দেখায়- আমি আশাবাদী।
প্রশ্নকর্তা : এই দীর্ঘ সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
আবুল হোসেন : তোমাদেরও ধন্যবাদ।
No comments