বিহারি ক্যাম্পে হত্যাযজ্ঞ : আতঙ্কে একমাসেও মামলা করেনি কেউ
রাজধানীর কুর্মিটোলা বিহারি ক্যাম্পে আগুন ও গুলিতে ১০ জন নিহতের ঘটনায় একমাসের বেশি সময় পার হলেও ক্ষতিগ্রস্তদের কেউ মামলা করেনি।
পল্লবী থানায় যে ছয়টি মামলা হয়েছে, তাতে আসামি করা হয়েছে আক্রান্ত ৩ হাজারের অধিক উর্দু ভাষা-ভাষীদের।
পল্লবী থানায় যে ছয়টি মামলা হয়েছে, তাতে আসামি করা হয়েছে আক্রান্ত ৩ হাজারের অধিক উর্দু ভাষা-ভাষীদের।
এর মধ্যে দুটি পুলিশ বাদী হয়ে এবং অপর চারটি বিভিন্ন ব্যক্তি বাদী হয়ে করেছেন। সবগুলোতেই আসামি করা হয়েছে হামলার শিকার ক্যাম্পের বাসিন্দাদের।
উল্লেখ্য, গত ১৪ জুন কালশীর বিহারি ক্যাম্পে বাইরে থেকে ঘরের দরজায় তালা দিয়ে আগুন দিলে একই পরিবারের আটজনসহ ৯ জন দগ্ধ হয়ে এবং পরে গুলিতে একজন (কারচুপি শ্রমিক আজাদ) নিহত হয়।
নির্মম এ হত্যাকাণ্ডে এখনো কেউ গ্রেফতার হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, ঢাকা-১৬ আসনের এমপি ইলিয়াস মোল্লার মদতে এই হামলার ঘটনা ঘটে। এ কারণে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করতে ভয় পাচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। এমনকি সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের আসামি করে যাতে কোনো মামলা না হয় সেজন্য বিহারিদেরই একটি অংশ তাদের হয়ে তত্পরতা চালাচ্ছে।
তবে শিগগিরই বিহারিরা এ বিষয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে একটি সংবাদ সম্মেলন করবেন বলে জানা গেছে। সংবাদ সম্মেলন করে সরকারের কাছে নিরাপত্তা দাবি করবেন উর্দু স্পিকিং পিপলস ইউথ রিহ্যাবিলিটেশনের নেতৃবৃন্দ।
এ ঘটনায় জড়িতদের আজ পর্যন্ত গ্রেফতার না করার বিষয়টিও এতে তুলে ধরা হবে। তবে ওই সংবাদ সম্মেলনের আগেই কুর্মিটোলা ক্যাম্পে হামলাকারীদের আসামি করে মামলা দায়ের করা হতে পারে।
সূত্র মতে, এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও জড়িতদের শাস্তি চাইলেও আতঙ্কে মামলার বাদী হতে চাইছেন না নিহতদের স্বজনেরা। হামলাকারীদের দেয়া আগুনে পুড়ে নিহত ৯ জনের পরিবারের সদস্য ইয়াসিন আলী জানান, হামলাকারীরা প্রভাবশালী। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করলে আমার বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে যাবে।
অগ্নিদগ্ধ হয়ে বেঁচে যাওয়া ইয়াসিনের মেয়ে ফারজানাকে নিয়েই এখন তিনি ব্যস্ত আছেন বলে জানান। একইভাবে মামলা করতে সাহস পাচ্ছেন না হামলায় নিহত আজাদের স্বজনরা।
সূত্র মতে, কূর্মিটোলা ক্যাম্পের বিহারিদের যে কেউ বাদী হয়ে মামলা করা হবে। বিষয়টি এমপি ইলিয়াস মোল্লা ও তার লোকজন ইতোমধ্যে টের পেয়েছেন। এ ক্ষেত্রে মোল্লার লোকজন ও মোল্লার পক্ষে অবস্থানকারী বিহারি নেতারা তত্পরতা চালাচ্ছেন। তারা চাইছেন মামলায় কোনোভাবেই যেন এমপি ইলিয়াস মোল্লা এবং যুবলীগের পল্লবী থানার সাধারণ সম্পাদক জুয়েল রানাসহ নেতৃবৃন্দ কাউকে আসামি করা না হয়।
তবে শেষ পর্যন্ত কি হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে খোদ বিহারিদের মধ্যেই। তবে মামলা দায়েরের বিষয়টি জানা নেই বলে জানান উর্দু স্পিকিং পিপলস ইউথ রিহ্যাবিলিটেশনের সাধারণ সম্পাদক শাহীদ আলী বাবলু।
তিনি বলেন, কে বাদী হয়ে মামলা করবে তা জানি না। তবে শিগগিরই এ বিষয়ে আমাদের অবস্থান প্রকাশ করে ও সরকারের সহযোগিতা চেয়ে একটি সংবাদ সম্মেলন করা হবে।
ঘটনার পর এমপি ইলিয়াস মোল্লা ও যুবলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হামলা ও হত্যার অভিযোগ তুলেন বিহারিরা। কিন্তু পরবর্তীতে বিহারিদের সংগঠন এসপিজিআরসির নেতারা ইলিয়াস মোল্লার পক্ষে সমঝোতার চেষ্টা চালান।
নানাভাবে হুমকি দেয়া হয় ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষে অবস্থানকারী বিহারি নেতাদের। গত ১৪ জুন সকালে রাজধানীর মিরপুরের কুর্মিটোলা ক্যাম্পে সশস্ত্র হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা।
ক্যাম্পবাসী অভিযোগ করেন, পার্শ্ববর্তী বাউনিয়াবাদ এলাকার যুবলীগ নেতাকর্মীরা এ হামলা চালায়। তাদের দেয়া আগুনে পুড়ে মারা যায় ইয়াসিনের পরিবারের শিশু-নারীসহ ৯ জন। গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান আজাদ।
ঘটনার আগে ১০ জুন রাতে নতুন ক্যাম্পের ট্রান্সফরমার থেকে রাজু বস্তির জন্য বিদ্যুত্ সংযোগ নিতে এসে লাঞ্ছিত হন এমপি ইলিয়াস মোল্লা। এ ঘটনার জের ধরেই কুর্মিটোলা ক্যাম্পে সশস্ত্র হামলার ঘটনা ঘটে বলে দাবি বিহারিদের।
No comments