ঐতিহাসিক অবিচার by তন্ময় হক
১৯৭৬ সালের ২১ জুলাই। সামরিক আদালতে বিচারের পর ভোর রাতে কার্যকর করা হয় কর্নেল তাহেরের মৃত্যুদণ্ড। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার পর সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থান চলে। এর এক পর্যায়ে সেনানিবাসে আটক জিয়াউর রহমান যুদ্ধাহত সেক্টর কমান্ডার কর্নেল তাহেরের সহায়তায় মুক্তি পান। কিন্তু ক্ষমতায় যাওয়ার পর কর্নেল তাহেরসহ ১৭ জনকে সামরিক আদালতে গোপন বিচারের মুখোমুখি করা হয়। ১৯৭৬ সালের ১৭ জুলাই রায় প্রদান করা হয়। এর চার দিনের মধ্যেই তাড়াহুড়া করে রায় কার্যকর করা হয়। এ ঘটনার অনেক বছর পরে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ এক রায়ে কর্নেল তাহেরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করাকে ঠাণ্ডামাথার মৃত্যুদণ্ড হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
সামরিক আইন আদেশের মাধ্যমে সামরিক ট্রাইব্যুনাল গঠন, ট্রাইব্যুনালে তাহেরসহ অন্য ব্যক্তিদের গোপন বিচার এবং তাদের দেওয়া সাজার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে চারটি রিট করা হয় ২০১০ সালের ২৩ আগস্ট। শুনানি শেষে ২০১১ সালের ২২ মার্চ বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বিভাগের বেঞ্চ রায় ঘোষণা করেন। ২০১৩ সালের ২০ মে ১৯৮ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়।
পূর্ণাঙ্গ রায়ে বেশ কিছু বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। বিচার প্রক্রিয়ার যেসব ত্রুটি ছিল তা রায়ে তুলে ধরা হয়েছে। হাইকোর্ট বিভাগের রায়ে বলা হয়েছে, কর্নেল তাহেরের মৃত্যুদণ্ড হত্যাকাণ্ড। কারণ, ট্র্রাইব্যুনাল গঠনের অনেক আগেই জেনারেল জিয়াউর রহমান কর্নেল তাহেরকে মৃত্যুদণ্ড প্রদানে মনস্থির করেন। এটি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড । যেহেতু জেনারেল জিয়া জীবিত নেই, আইন অনুযায়ী তার বিচার সম্ভব নয়। তাই দণ্ডবিধি অনুযায়ী তার বিচার করার সুযোগ নেই। কিন্তু এ হত্যার জন্য দায়ী কেউ জীবিত থাকলে সরকারের উচিত হবে তাদের খুঁজে বের করে বিচারের আওতায় আনা। রায়ে আরও বলা হয়েছে, এটা পরিষ্কার যে সামরিক আদালতে বিচার হয়েছে, সে আদালতের বিচারের এখতিয়ার ছিল না। যে আইনে তাহেরকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, তখন সে আইনে মৃত্যুদণ্ডের কোনো বিধান ছিল না। তাহেরের ফাঁসির রায় কার্যকর করার পর ১৯৭৬ সালের ৩১ জুলাই বিধান করা হয়।
ফৌজদারি বিচার প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত আরও কিছু প্রয়োজনীয় বিষয়ের অনুপস্থিতির কথা রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। রায়ে বলা হয়েছে, বিচারের সময় আদালতের সামনে এজাহার বা অভিযোগপত্রও ছিল না। আসামিরা জানতেন না, তাদের বিরুদ্ধে কী অভিযোগ। তাদের পক্ষে বক্তব্য দিতে কোনো আইনজীবী নিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়নি। তাই উক্ত বিচার কার্যক্রম ছিল অবৈধ। এ কারণে বিচার-সংক্রান্ত সব নথিপত্র ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। আদালত উল্লেখ করেছেন, বিচার হয়েছে জেলখানার অন্ধকার প্রকোষ্ঠে। ট্রাইব্যুনালের অন্য সদস্যদের সামনে কোনো নথি উপস্থাপন করা হয়নি। অপরাধ আমলে নেওয়ার বিধান ছিল না। একটি ফৌজদারি মামলায় যেসব প্রক্রিয়া বাধ্যতামূলক তার কোনোটিই অনুসরণ করা হয়নি।
হাইকোর্ট বিভাগ কর্নেল তাদের হত্যা মামলার রায় শেষ করেছেন প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস 'দেয়াল' থেকে কিছু অংশ উদ্ধৃত করে_ 'প্রহসনের এক বিচার শুরু হলো ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। মামলার নাম রাষ্ট্র বনাম মেজর জলিল গং। কর্নেল তাহেরসহ অভিযুক্ত সর্বমোট ৩৩ জন। মামলার প্রধান বিচারকের নাম কর্নেল ইউসুফ হায়দার। মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময়টা এই বাঙালি অফিসার বাংলাদেশেই ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে যোগদান না করে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর খেদমত করে গেছেন। মামলা চলাকালীন এক পর্যায়ে কর্নেল তাহের প্রধান বিচারকের দিকে তাকিয়ে আঙুল উঁচিয়ে বিস্ময়ের সঙ্গে বলেন, 'আমি আমার জীবনে অনেক ক্ষুদ্র মানুষ দেখেছি, আপনার মতো ক্ষুদ্র মানুষ দেখিনি।'
সামরিক আইন আদেশের মাধ্যমে সামরিক ট্রাইব্যুনাল গঠন, ট্রাইব্যুনালে তাহেরসহ অন্য ব্যক্তিদের গোপন বিচার এবং তাদের দেওয়া সাজার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে চারটি রিট করা হয় ২০১০ সালের ২৩ আগস্ট। শুনানি শেষে ২০১১ সালের ২২ মার্চ বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বিভাগের বেঞ্চ রায় ঘোষণা করেন। ২০১৩ সালের ২০ মে ১৯৮ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়।
পূর্ণাঙ্গ রায়ে বেশ কিছু বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। বিচার প্রক্রিয়ার যেসব ত্রুটি ছিল তা রায়ে তুলে ধরা হয়েছে। হাইকোর্ট বিভাগের রায়ে বলা হয়েছে, কর্নেল তাহেরের মৃত্যুদণ্ড হত্যাকাণ্ড। কারণ, ট্র্রাইব্যুনাল গঠনের অনেক আগেই জেনারেল জিয়াউর রহমান কর্নেল তাহেরকে মৃত্যুদণ্ড প্রদানে মনস্থির করেন। এটি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড । যেহেতু জেনারেল জিয়া জীবিত নেই, আইন অনুযায়ী তার বিচার সম্ভব নয়। তাই দণ্ডবিধি অনুযায়ী তার বিচার করার সুযোগ নেই। কিন্তু এ হত্যার জন্য দায়ী কেউ জীবিত থাকলে সরকারের উচিত হবে তাদের খুঁজে বের করে বিচারের আওতায় আনা। রায়ে আরও বলা হয়েছে, এটা পরিষ্কার যে সামরিক আদালতে বিচার হয়েছে, সে আদালতের বিচারের এখতিয়ার ছিল না। যে আইনে তাহেরকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, তখন সে আইনে মৃত্যুদণ্ডের কোনো বিধান ছিল না। তাহেরের ফাঁসির রায় কার্যকর করার পর ১৯৭৬ সালের ৩১ জুলাই বিধান করা হয়।
ফৌজদারি বিচার প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত আরও কিছু প্রয়োজনীয় বিষয়ের অনুপস্থিতির কথা রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। রায়ে বলা হয়েছে, বিচারের সময় আদালতের সামনে এজাহার বা অভিযোগপত্রও ছিল না। আসামিরা জানতেন না, তাদের বিরুদ্ধে কী অভিযোগ। তাদের পক্ষে বক্তব্য দিতে কোনো আইনজীবী নিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়নি। তাই উক্ত বিচার কার্যক্রম ছিল অবৈধ। এ কারণে বিচার-সংক্রান্ত সব নথিপত্র ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। আদালত উল্লেখ করেছেন, বিচার হয়েছে জেলখানার অন্ধকার প্রকোষ্ঠে। ট্রাইব্যুনালের অন্য সদস্যদের সামনে কোনো নথি উপস্থাপন করা হয়নি। অপরাধ আমলে নেওয়ার বিধান ছিল না। একটি ফৌজদারি মামলায় যেসব প্রক্রিয়া বাধ্যতামূলক তার কোনোটিই অনুসরণ করা হয়নি।
হাইকোর্ট বিভাগ কর্নেল তাদের হত্যা মামলার রায় শেষ করেছেন প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস 'দেয়াল' থেকে কিছু অংশ উদ্ধৃত করে_ 'প্রহসনের এক বিচার শুরু হলো ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। মামলার নাম রাষ্ট্র বনাম মেজর জলিল গং। কর্নেল তাহেরসহ অভিযুক্ত সর্বমোট ৩৩ জন। মামলার প্রধান বিচারকের নাম কর্নেল ইউসুফ হায়দার। মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময়টা এই বাঙালি অফিসার বাংলাদেশেই ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে যোগদান না করে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর খেদমত করে গেছেন। মামলা চলাকালীন এক পর্যায়ে কর্নেল তাহের প্রধান বিচারকের দিকে তাকিয়ে আঙুল উঁচিয়ে বিস্ময়ের সঙ্গে বলেন, 'আমি আমার জীবনে অনেক ক্ষুদ্র মানুষ দেখেছি, আপনার মতো ক্ষুদ্র মানুষ দেখিনি।'
No comments