বিএনপির আন্দোলনের ডাক ও বাস্তবতা by মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন
রাজনীতি হচ্ছে রক্তপাতহীন এক যুদ্ধ, আর যুদ্ধ হচ্ছে রাজনীতির বিকৃত রূপ। আমরা সুস্থ রাজনীতির পক্ষে, আমরা গণতন্ত্রের পক্ষে। আমরা সংলাপের পক্ষে, আমরা চাই সংলাপের মাধ্যমে রাজনৈতিক সংকটের সমাধান। আমরা আন্দোলন চাই না, কেননা আন্দোলন ও জ্বালাও-পোড়াও সহ্য করার সক্ষমতা বাংলাদেশের নেই। এমনিতেই বাংলাদেশের অর্থনীতির রক্তক্ষরণ হচ্ছে, অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে। এটা একজন রাজনীতিকের চিন্তায় থাকতে হবে। যদি না থাকে তাহলে তিনি কিসের রাজনীতিক। একজন সৎ রাজনীতিকের কাছে রাষ্ট্র, সমাজকর্ম কিংবা সমাজ সংস্কারের সর্বোচ্চ অবলম্বন হচ্ছে রাজনীতি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক, এ রাজনীতি এখন অনেকটা জনগণের কাঠগড়ায়। এর জন্য কিন্তু রাজনীতি দায়ী নয়, দায়ী নেতৃত্ব। মুষ্টিমেয় কিছু লোকের উচ্চাভিলাস ও অপ-আকাক্সক্ষার জন্য রাজনীতি বিতর্কের মুখোমুখি হয়েছে। রাজনীতি দিয়ে রাজনীতিকে বিতর্কিত করার হোতাদের সংখ্যা খুব বেশি নয়। এরা রাজনীতির মূলধারাও নয়। রাজনীতিতে মেধা যোগ হলে পিছু হটে যাবে তারা। পিছু হটে যাবে পেশিশক্তি, দুর্বৃত্তায়ন ও কালো টাকার দাপট। রাজনীতিকরা পাবেন মিশনারির মর্যাদা।
দেশের বড় দুটি রাজনৈতিক দল এখন ভেতরে ভেতরে দুর্বল। যার জন্য এক দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক সংকট গ্রাস করেছে বাংলাদেশকে। রাজনৈতিক দুর্বলতা থেকেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল এবং ৫ জানুয়ারির একতরফা ও বিতর্কিত নির্বাচনের পথে পা বাড়ায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে বিএনপি এ নির্বাচন বর্জন করে। এক্ষেত্রেও একটা রাজনৈতিক দুর্বলতা কাজ করেছে। বিএনপি শক্তিশালী হলে আওয়ামী লীগ একতরফা নির্বাচন করার সাহস পেত না বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
বিএনপির চেয়ারপারসন ঈদের পর সরকারবিরোধী আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। এর জন্য তার দলের নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকারও নির্দেশ দিয়েছেন। অধিকার আদায়ের জন্য রাজনৈতিক দল আন্দোলন করবে- এতে দোষের কিছু নেই। আর বিএনপি দেশের প্রধান একটি রাজনৈতিক শক্তি। গণআন্দোলন গড়ে তোলার শক্তি-সামর্থ্যও বিএনপির আছে। কিন্তু বিএনপির কাছে মানুষ চায় দায়িত্বশীল আচরণ। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর আন্দোলন স্থগিত করে বিএনপি সেই আচরণ দেখিয়েছেও।
কিন্তু সরকারের দায়িত্বশীল আচরণ নিয়ে প্রশ্ন আছে সর্বমহলে। সরকারি দলের নেতারা বলছেন, বিএনপির সঙ্গে কোনো সংলাপে তারা আর বসবেন না। এমনটি হলে দেশের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা কাটবে কী করে? আর রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা না কাটলে দেশইবা ঠিকভাবে চলবে কী করে? রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কুফল তো ভালোভাবেই পড়তে শুরু করেছে সর্বক্ষেত্রে। ব্যবসায়ীরা তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন। সব ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্যতেই মন্দাভাব বিরাজ করছে। এর জন্য রাজনৈতিক সংকট ও অনিশ্চয়তাই দায়ী বলে ব্যবসায়ীরা মনে করেন। এ অবস্থায় বিএনপিকে আন্দোলনের দিকে ঠেলে দেয়া সরকারের কোনোভাবেই উচিত হবে না। আমরা সরকারের কাছে দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশা করি। বিএনপির সঙ্গে সংলাপে বসব না- এ ধরনের উক্তি মোটেও দায়িত্বশীল আচরণ নয়। এমন উক্তিতে মানুষ ভরসা হারিয়ে ফেলে ও আতংকিত হয়। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা দূর করতে সংলাপের বিকল্প নেই- এটি সরকারকে অনুধাবন করতে হবে।
খালেদা জিয়া ১৩ জুন এক ইফতার মাহফিলে সরকারকে আবার সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছেন। এর আগেও বেশ কয়েকবার তিনি এ আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি এও বলেছেন, সংলাপে না বসলে আন্দোলন ছাড়া আমাদের আর কোনো বিকল্প থাকবে না। আমরা জানি খালেদা জিয়া অত্যন্ত দৃঢ় ব্যক্তিত্বের অধিকারী। দেশের রাজনীতিকে যে কোনো দিকে ঘুরিয়ে দেয়ার সক্ষমতাও তার রয়েছে। সরকারের উচিত তার আহ্বানের গুরুত্ব দেয়া। তাকে আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসা। তাতে সরকারের লাভ, বিএনপির লাভ এবং দেশের লাভ।
সরকারকে অনুধাবন করতে হবে সুশাসন উপহার দিতে তারা শুধু ব্যর্থই নয়, অত্যন্ত চরমভাবেই ব্যর্থ হয়েছেন। তাদের আমলে শেয়ার মার্কেট লুট হয়েছে, পথে বসেছে লাখো পরিবার। রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক লুট হয়েছে। এমএলএম ব্যবসার নামে লাখ লাখ মানুষ নিঃস্ব ও সর্বস্বান্ত হয়েছে। ৬ বার বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুতের দাম, যা মানুষকে ক্ষুব্ধ করেছে। স্বপ্নের পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন গত ৬ বছরে সরকার করতে পারেনি, যা ব্যর্থতার একটি নজির। আর আইনশৃংখলার অবস্থা বলতে গেলে সামনে এসে যায় নারায়ণগঞ্জের লোমহর্ষক ও নজিরবিহীন হত্যাকাণ্ড, ফেনীর বর্বরতা, মীরপুরের নৃশংসতা এবং দেশব্যাপী অব্যাহত গুম-খুন-অপহরণসহ নানা ঘটনা।
এত কিছুর পরও কি বিএনপি সরকারকে বিন্দুমাত্র বেকায়দায় ফেলেছে? অংশগ্রহণবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেও কি আওয়ামী লীগ অত্যন্ত শান্তি ও স্বস্তির সঙ্গে দেশ পরিচালনা করছে না? বিএনপির সহযোগিতা ছাড়া সরকার কি এটি করতে পারত? কাজেই বিএনপির দুর্বলতার সুযোগ নেয়া সরকারের মোটেও উচিত হবে না। কারণ এতে শুধু রাষ্ট্রই ক্ষতির সম্মুখীন হবে না, ক্ষতিগ্রস্ত হবে আওয়ামী লীগও। সুতরাং সরকারের উচিত সংলাপের মাধ্যমে সব দলের অংশগ্রহণে দেশে দ্রুত একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা। একটি মন্দ কাজ ১০টি ভালো কাজকে ক্ষতিগ্রস্ত করে- ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য তেমনই একটি মন্দ কাজ। দ্রুত নতুন নির্বাচনের ব্যবস্থা করলে দল হিসেবে আওয়ামী লীগ আরও শক্তিশালী হবে। চূড়ান্তভাবে জনগণ আবার আওয়ামী লীগকেই বেছে নিতে পারে।
জাতির বৃহত্তর স্বার্থে প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো যদি ন্যূনতম ঐকমত্যে আসতে না পারে, তাহলে রাজনীতির পরাজয় হবে। গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পাওয়া ব্যাহত হবে। কাজেই রাজনীতিকে ঐক্যের ইতিবাচক ধারায় ফিরে আসতেই হবে। তাহলেই দেশ পৌঁছতে পারবে অভীষ্ট লক্ষ্যে।
রাজনৈতিক বিভাজন সব দেশেই আছে, আছে আদর্শগত বিরোধও। কিন্তু দেশের স্বার্থের প্রশ্নে সবাই এক। কারণ দেশ বাঁচলে তবেই রাজনীতি, দেশই যদি না থাকে তাহলে রাজনীতি কার জন্য? দেশের রফতানি বন্ধ হয়ে গেলে, বৈদেশিক মুদ্রা না এলে দেশ চলবে কী করে? বাংলাদেশ রফতানি আয় ও রেমিটেন্সের ওপর নির্ভশীল একটি দেশ। এটি নির্ভর করে বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তির ওপর। প্রকৃত গণতন্ত্রকে দূরে সরিয়ে রেখে দেশের ভাবমূর্তি ধরে রাখা অসম্ভব।
রাজনৈতিক অস্থিরতা অব্যাহত থাকলে দেশে নেমে আসবে বিপর্যয়। তখন বাইরের হস্তক্ষেপ অনিবার্য হয়ে উঠতে পারে। এমনটি হোক আমরা তা চাই না। দেশকে রক্ষা করতে হবে বিপর্যয় থেকে। আর এ দায়িত্ব নিতে হবে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে। গড়ে তুলতে হবে জাতীয় ঐক্য। সেজন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ অপরিহার্য। সেই সংলাপ শুরু করতে হবে এখনই। এজন্য নিয়ামকের ভূমিকা পালন করতে হবে সরকারকেই। বিএনপি সংলাপের জন্য এক পায়ে দাঁড়িয়ে। কিন্তু প্রতিপক্ষ কোনো সাড়া দিচ্ছে না। তারা বলছে ঠিক উল্টো কথা। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। তাহলে কি সরকার সংলাপ চায় না? সরকার দেশে অস্থিরতা চায়? চায় উগ্র রাজনীতির প্রসার? সরকারকে বুঝতে হবে, দেশের জনগণসহ বিদেশীরাও সংলাপ চায়। সরকার এটি উপেক্ষা করতে পারে না। সংলাপ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার পূর্বশর্ত। আমরা চাই, বিবদমান রাজনৈতিক পক্ষগুলোর মধ্যে অতি দ্রুত সংলাপ শুরু হোক। দেশে আসুক রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, কেটে যাক রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা।
মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
belayet-1@yahoo.com
দেশের বড় দুটি রাজনৈতিক দল এখন ভেতরে ভেতরে দুর্বল। যার জন্য এক দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক সংকট গ্রাস করেছে বাংলাদেশকে। রাজনৈতিক দুর্বলতা থেকেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল এবং ৫ জানুয়ারির একতরফা ও বিতর্কিত নির্বাচনের পথে পা বাড়ায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে বিএনপি এ নির্বাচন বর্জন করে। এক্ষেত্রেও একটা রাজনৈতিক দুর্বলতা কাজ করেছে। বিএনপি শক্তিশালী হলে আওয়ামী লীগ একতরফা নির্বাচন করার সাহস পেত না বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
বিএনপির চেয়ারপারসন ঈদের পর সরকারবিরোধী আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। এর জন্য তার দলের নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকারও নির্দেশ দিয়েছেন। অধিকার আদায়ের জন্য রাজনৈতিক দল আন্দোলন করবে- এতে দোষের কিছু নেই। আর বিএনপি দেশের প্রধান একটি রাজনৈতিক শক্তি। গণআন্দোলন গড়ে তোলার শক্তি-সামর্থ্যও বিএনপির আছে। কিন্তু বিএনপির কাছে মানুষ চায় দায়িত্বশীল আচরণ। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর আন্দোলন স্থগিত করে বিএনপি সেই আচরণ দেখিয়েছেও।
কিন্তু সরকারের দায়িত্বশীল আচরণ নিয়ে প্রশ্ন আছে সর্বমহলে। সরকারি দলের নেতারা বলছেন, বিএনপির সঙ্গে কোনো সংলাপে তারা আর বসবেন না। এমনটি হলে দেশের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা কাটবে কী করে? আর রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা না কাটলে দেশইবা ঠিকভাবে চলবে কী করে? রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কুফল তো ভালোভাবেই পড়তে শুরু করেছে সর্বক্ষেত্রে। ব্যবসায়ীরা তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন। সব ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্যতেই মন্দাভাব বিরাজ করছে। এর জন্য রাজনৈতিক সংকট ও অনিশ্চয়তাই দায়ী বলে ব্যবসায়ীরা মনে করেন। এ অবস্থায় বিএনপিকে আন্দোলনের দিকে ঠেলে দেয়া সরকারের কোনোভাবেই উচিত হবে না। আমরা সরকারের কাছে দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশা করি। বিএনপির সঙ্গে সংলাপে বসব না- এ ধরনের উক্তি মোটেও দায়িত্বশীল আচরণ নয়। এমন উক্তিতে মানুষ ভরসা হারিয়ে ফেলে ও আতংকিত হয়। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা দূর করতে সংলাপের বিকল্প নেই- এটি সরকারকে অনুধাবন করতে হবে।
খালেদা জিয়া ১৩ জুন এক ইফতার মাহফিলে সরকারকে আবার সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছেন। এর আগেও বেশ কয়েকবার তিনি এ আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি এও বলেছেন, সংলাপে না বসলে আন্দোলন ছাড়া আমাদের আর কোনো বিকল্প থাকবে না। আমরা জানি খালেদা জিয়া অত্যন্ত দৃঢ় ব্যক্তিত্বের অধিকারী। দেশের রাজনীতিকে যে কোনো দিকে ঘুরিয়ে দেয়ার সক্ষমতাও তার রয়েছে। সরকারের উচিত তার আহ্বানের গুরুত্ব দেয়া। তাকে আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসা। তাতে সরকারের লাভ, বিএনপির লাভ এবং দেশের লাভ।
সরকারকে অনুধাবন করতে হবে সুশাসন উপহার দিতে তারা শুধু ব্যর্থই নয়, অত্যন্ত চরমভাবেই ব্যর্থ হয়েছেন। তাদের আমলে শেয়ার মার্কেট লুট হয়েছে, পথে বসেছে লাখো পরিবার। রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক লুট হয়েছে। এমএলএম ব্যবসার নামে লাখ লাখ মানুষ নিঃস্ব ও সর্বস্বান্ত হয়েছে। ৬ বার বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুতের দাম, যা মানুষকে ক্ষুব্ধ করেছে। স্বপ্নের পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন গত ৬ বছরে সরকার করতে পারেনি, যা ব্যর্থতার একটি নজির। আর আইনশৃংখলার অবস্থা বলতে গেলে সামনে এসে যায় নারায়ণগঞ্জের লোমহর্ষক ও নজিরবিহীন হত্যাকাণ্ড, ফেনীর বর্বরতা, মীরপুরের নৃশংসতা এবং দেশব্যাপী অব্যাহত গুম-খুন-অপহরণসহ নানা ঘটনা।
এত কিছুর পরও কি বিএনপি সরকারকে বিন্দুমাত্র বেকায়দায় ফেলেছে? অংশগ্রহণবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেও কি আওয়ামী লীগ অত্যন্ত শান্তি ও স্বস্তির সঙ্গে দেশ পরিচালনা করছে না? বিএনপির সহযোগিতা ছাড়া সরকার কি এটি করতে পারত? কাজেই বিএনপির দুর্বলতার সুযোগ নেয়া সরকারের মোটেও উচিত হবে না। কারণ এতে শুধু রাষ্ট্রই ক্ষতির সম্মুখীন হবে না, ক্ষতিগ্রস্ত হবে আওয়ামী লীগও। সুতরাং সরকারের উচিত সংলাপের মাধ্যমে সব দলের অংশগ্রহণে দেশে দ্রুত একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা। একটি মন্দ কাজ ১০টি ভালো কাজকে ক্ষতিগ্রস্ত করে- ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য তেমনই একটি মন্দ কাজ। দ্রুত নতুন নির্বাচনের ব্যবস্থা করলে দল হিসেবে আওয়ামী লীগ আরও শক্তিশালী হবে। চূড়ান্তভাবে জনগণ আবার আওয়ামী লীগকেই বেছে নিতে পারে।
জাতির বৃহত্তর স্বার্থে প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো যদি ন্যূনতম ঐকমত্যে আসতে না পারে, তাহলে রাজনীতির পরাজয় হবে। গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পাওয়া ব্যাহত হবে। কাজেই রাজনীতিকে ঐক্যের ইতিবাচক ধারায় ফিরে আসতেই হবে। তাহলেই দেশ পৌঁছতে পারবে অভীষ্ট লক্ষ্যে।
রাজনৈতিক বিভাজন সব দেশেই আছে, আছে আদর্শগত বিরোধও। কিন্তু দেশের স্বার্থের প্রশ্নে সবাই এক। কারণ দেশ বাঁচলে তবেই রাজনীতি, দেশই যদি না থাকে তাহলে রাজনীতি কার জন্য? দেশের রফতানি বন্ধ হয়ে গেলে, বৈদেশিক মুদ্রা না এলে দেশ চলবে কী করে? বাংলাদেশ রফতানি আয় ও রেমিটেন্সের ওপর নির্ভশীল একটি দেশ। এটি নির্ভর করে বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তির ওপর। প্রকৃত গণতন্ত্রকে দূরে সরিয়ে রেখে দেশের ভাবমূর্তি ধরে রাখা অসম্ভব।
রাজনৈতিক অস্থিরতা অব্যাহত থাকলে দেশে নেমে আসবে বিপর্যয়। তখন বাইরের হস্তক্ষেপ অনিবার্য হয়ে উঠতে পারে। এমনটি হোক আমরা তা চাই না। দেশকে রক্ষা করতে হবে বিপর্যয় থেকে। আর এ দায়িত্ব নিতে হবে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে। গড়ে তুলতে হবে জাতীয় ঐক্য। সেজন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ অপরিহার্য। সেই সংলাপ শুরু করতে হবে এখনই। এজন্য নিয়ামকের ভূমিকা পালন করতে হবে সরকারকেই। বিএনপি সংলাপের জন্য এক পায়ে দাঁড়িয়ে। কিন্তু প্রতিপক্ষ কোনো সাড়া দিচ্ছে না। তারা বলছে ঠিক উল্টো কথা। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। তাহলে কি সরকার সংলাপ চায় না? সরকার দেশে অস্থিরতা চায়? চায় উগ্র রাজনীতির প্রসার? সরকারকে বুঝতে হবে, দেশের জনগণসহ বিদেশীরাও সংলাপ চায়। সরকার এটি উপেক্ষা করতে পারে না। সংলাপ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার পূর্বশর্ত। আমরা চাই, বিবদমান রাজনৈতিক পক্ষগুলোর মধ্যে অতি দ্রুত সংলাপ শুরু হোক। দেশে আসুক রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, কেটে যাক রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা।
মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
belayet-1@yahoo.com
No comments