বাংলাদেশ–ভারত সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে চাই- প্রথম আলোর সঙ্গে সাক্ষাৎকারে সুষমা স্বরাজ by সোহরাব হাসান ও রাহীদ এজাজ
নয়াদিল্লির নতুন সরকার বাংলাদেশ-ভারত
সম্পর্ক যেখানে আছে সেখান থেকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে চায়৷ ঢাকা সফরকালে
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ
অভিমত প্রকাশ করেন৷ এই সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে তিস্তার পানি বণ্টন, সীমান্ত
প্রটোকল, ‘অবৈধ অনুপ্রবেশ’, বািণজ্য বৈষম্য, ট্রানজিট ও উপ-আঞ্চলিক
সহযোগিতা, ভারতে ক্ষমতার পালাবদল, বাংলাদেশে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন
ইত্যাদি৷ সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সোহরাব হাসান ও রাহীদ এজাজ
প্রথম আলো >> আপনার মতে বাংলাদেশ সফরের প্রাপ্তি কী?
সুষমা স্বরাজ >> ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে এটাই আমার প্রথম বিদেশ সফর৷ আমি ভারতের নবনির্বাচিত সরকারের তরফ থেকে বন্ধুত্বের বারতা নিয়ে এসেছিলাম৷ এ সফরে আমি বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ নেতৃত্বের সঙ্গে ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করেছি৷ বাংলাদেশের নেতাদের সঙ্গে আমার আলোচনা অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে৷ আন্তরিক ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে আমাদের আলোচনা হয়েছে, এ আলোচনা থেকে আমরা ভবিষ্যৎ সহযোগিতার িভত রচনা করতে পারি৷ আমাদের আলোচনার ভিত্তিতে দুই দেশের বাণিজ্য, সংযোগ, বিদ্যুৎ খাতের সহযোগিতা ও জনগণের সঙ্গে জনগণের আরও যোগাযোগ বাড়বে বলে আশা করছি৷
আমার মনে হয়, ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি গুণগত পরিবর্তন আনার সময় এসেছে৷ আমরা এ অঞ্চলে যেসব সমস্যার মুখোমুখি হই, সে প্রেক্ষাপটে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভারত-বাংলাদেশ সহযোগিতা আরও দৃঢ় হওয়া উচিত: দারিদ্র্য দূরীকরণ, নিরক্ষরতা দূরীকরণ, সন্ত্রাস, চরমপন্থা ও মৌলবাদ মোকাবিলায়৷
প্রথম আলো >> সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে বেশ কিছু অগ্রগতি হলেও তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি ও সীমান্ত প্রটোকল বাস্তবায়ন এখনো হয়নি৷ গত ইউপিএ সরকারের দোদুল্যমান রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে তা হয়েছে৷ কেন্দ্রে এবার বিজেপি বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে৷ বাংলাদেশ কি তাহলে দ্রুত এসব সমস্যার সমাধান আশা করতে পারে?
সুষমা স্বরাজ >> ভারতের বিগত সরকারের আমলে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক যে জায়গায় ছিল, আমরা সেটাকে শুধু বজায় রাখতে চাই তা নয়, সেটাকে আমরা নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে চাই৷ তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে আমরা আমাদের দেশে অভ্যন্তরীণ ঐকমত্য গড়ে তুলতে চাইছি৷ স্থল সীমানা চুক্তি করার জন্য সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধনীর জন্য রাজ্যসভায় বিল পেশ করা হয়েছে৷ এ মর্মে রাজনৈতিক ঐকমত্যে পৌঁছানোর জন্যও আলোচনা হচ্ছে৷
প্রথম আলো >> লোকসভা নির্বাচনের প্রচারণায় বিজেপি ভারতে বসবাসরত অবৈধ বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে খুব সোচ্চার ছিল৷ বিজেপির নেতারা এখনো এ নিয়ে উচ্চবাচ্য করছেন৷ অন্যদিকে, বিজেপি সরকার ভারতের প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে আগ্রহী৷ এটা কি স্ববিরোধিতা নয়? এ ক্ষেত্রে কোনো একটি দেশ যদি তার প্রতিবেশী দেশের নাগরিকদের বিরুদ্ধে এরূপ কঠোর অবস্থান নেয়, তাহলে কি তা দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না?
সুষমা স্বরাজ >>অবৈধ অভিবাসন যেকোনো দেশের জন্যই খুবই স্পর্শকাতর একটি সমস্যা, খুব সতর্কতার সঙ্গে এটা সামলানো উচিত৷ সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা এ সমস্যা মোকাবিলা করতে চাই৷ এর মধ্য দিয়ে সীমান্তের উন্নততর ব্যবস্থাপনার দিকটিও উঠে এসেছে, এটা নিশ্চিত করা উভয় পক্ষেরই দায়িত্ব৷ যে কয়টি দেশের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত রয়েছে, তার মধ্যে বাংলাদেশের সঙ্গেই তার সীমান্ত দীর্ঘতম৷ এ সীমান্ত নিশ্ছিদ্র নয়৷ এ সীমান্তে বসবাসকারী মানুষ দরিদ্র, পুরো এলাকা খুবই ঘনবসতিপূর্ণ৷ সে কারণে এখানে অনেক অবৈধ কাজ হয়৷ আমরা মনে করি, ভারত ও বাংলাদেশের নিরাপত্তা একই সূত্রে গাঁথা৷ দুই দেশেরই উচিত একত্রে কাজ করে সীমান্ত এলাকায় এসব অবৈধ কাজের রাশ টেনে ধরা৷ নিরাপদ হলেই আমাদের সীমান্ত এলাকা সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে, তার জন্য আইনের শাসন জোরদার করতে হবে৷ অসহায় ও নির্দোষ মানুষদের বিবেকহীন কাজের শিকার হতে দেওয়া যাবে না৷
প্রথম আলো >> অনেকের মতে, ভারত আওয়ামী লীগ সরকারের কাছ থেকে অনেক কিছু পেয়েছে, কিন্তু প্রতিদানে তেমন কিছু দেয়নি৷ এ সম্পর্ক ছিল মূলত একপক্ষীয়৷ আপনার বক্তব্য কী?
সুষমা স্বরাজ >> এ ধারণা ঠিক নয়৷ ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক দ্বিমুখী সড়ক৷
আমাদের সম্পর্কের কিছু ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট অগ্রগতি হয়েছে৷ পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতেই আমরা এগিয়েছি৷ বাণিজ্য, বাজার সুবিধা, বিদ্যুৎ, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, উন্নয়ন সহযোগিতা, অবকাঠামো, তরুণদেরসহ দুই দেশের জনগণের সম্পর্ক, সংবাদকর্মীদের মধ্যকার যোগাযোগ প্রভৃতি ক্ষেত্রে আমরা নতুন রেকর্ড স্থাপন করেছি৷ কিছু বিষয়ের ওপর আলোকপাত করা যাক:
প্রাতিষ্ঠানিক আয়োজনের মাধ্যমে আমরা সীমান্ত ব্যবস্থাপনা উন্নত করেছি: সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা, বন্দী বিনিময় চুক্তি, সীমান্ত হাট স্থাপন, ডিসি/ডিএম পর্যায়ের আলোচনা পুনরায় শুরু, সীমান্ত অবকাঠামোব্যবস্থার উন্নয়ন প্রভৃতি৷
বাণিজ্য-ঘাটতি মোকাবিলায় ২৫টি পণ্য ছাড়া আর সব বাংলাদেশি পণ্যের জন্য ভারতীয় বাজার উন্মুক্ত করা হয়েছে৷ গত বছর বাংলাদেশ ভারতে রেকর্ড পরিমাণ রপ্তানি করেছে৷ আর ভারতীয় বিনিয়োগের জন্যও বাংলাদেশ একটি সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র হয়ে উঠছে৷
বাণিজ্য অবকাঠামোয় সুনির্দিষ্ট উন্নতি হয়েছে৷ নতুন যৌথ চেকপোস্ট গড়ে তোলা হচ্ছে৷
নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশের মধ্যে সড়ক ও রেল ট্রানজিটের জন্য স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর-সংক্রান্ত চুক্তি হয়েছে৷
বাংলাদেশকে দেওয়া এক বিলিয়ন ডলারের একটি ঋণের আওতায় ১৫টিসহ আরও নানা প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে৷ এর মধ্যে ২০০ মিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ ঋণ সাহায্যে রূপান্তরিত হয়েছে৷
সামাজিক ক্ষেত্র, যেমন: আইটি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ ও ক্ষুদ্র উন্নয়ন প্রকল্পে গৃহীত নতুন পদক্ষেপ বাস্তবায়নাধীন রয়েছে৷
এই প্রথমবারের মতো ভারত থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সংযুক্ত গ্রিডের মাধ্যমে বাংলাদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে৷ এটা কার্যকর রয়েছে৷ আরও কিছু বিদ্যুৎ ও জ্বলানিসংক্রান্ত উদ্যোগের বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে, কিছু কিছু বাস্তবায়নাধীনও রয়েছে৷
উপাঞ্চলিক সহযোগিতাসংক্রান্ত আলোচনাও শুরু হয়েছে৷
রেলওয়েতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক সংহত হয়েছে৷ মৈত্রী এক্সপ্রেস যোগাযোগ সহজতর করেছে, আরও নানা আয়োজনের মাধ্যমে তা আরও সহজ করার চেষ্টা চলছে৷
উপকূলীয় অঞ্চলগুলোর মধ্যে জাহাজ যোগাযোগ স্থাপনে আলোচনা শুরু হয়েছে৷ আর বাংলাদেশের বিভিন্ন বন্দর ও ভারতের পূর্বাঞ্চলের বন্দরগুলোর মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হয়েছে৷
জনগণ-জনগণ পর্যায়ের সম্পর্ক জোরদার হয়েছে৷ এটা অনেকটা সাধারণ হয়ে এসেছে৷ প্রশিক্ষণ, সক্ষমতা সৃষ্টি ও দক্ষতা উন্নয়নসংক্রান্ত দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার ক্ষেত্রে প্রভূত উন্নতি হয়েছে৷ সাংস্কৃতিক বিনিময়ও বেড়েছে, দ্বিপক্ষীয়ভাবে৷
আমি জানি, আরও অনেক কিছু করার আছে৷ যা হয়েছে, তা নিয়ে আত্মসন্তুষ্টির কোনো সুযোগ নেই৷
প্রথম আলো >> বিভিন্ন সময় নানা পদক্ষেপ নেওয়া সত্ত্বেও ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্য-ঘাটতি মোকাবিলায় যথেষ্ট অগ্রগতি হয়নি৷ এ ক্ষেত্রে শুল্ক ও অশুল্ক বাধা ছাড়া মনস্তাত্ত্বিক বাধাও একটি বড় বাধা৷ ভারতের নতুন সরকার কি এ প্রেক্ষাপটে কোনো পদক্ষেপ নেবে?
সুষমা স্বরাজ >> বাণিজ্য-ঘাটতি নিয়ে বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে আমরা সংবেদনশীল৷
২০১২-১৩ অর্থবছরে সার্ক অঞ্চলে বাংলাদেশ ভারতের বৃহত্তর বাণিজ্য সহযোগীতে পরিণত হয়েছে৷ আগের বছরের তুলনায় এ বছর বাংলাদেশ থেকে ভারতে রপ্তানির পরিমাণ ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৬৩ দশমিক ৯৬ মিলিয়ন ডলারে৷
জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ অন ট্রেড, জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ অন কাস্টমসসহ আরও নানা আয়োজনের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্য বাধা দূর করার চেষ্টা করা হচ্ছে৷ এসব কমিটি বছরে একবার বসে৷ সাম্প্রতিক সময়ে এসব বৈঠকের কিছু ফলাফল দেখা যাচ্ছে, যেমন বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্ত ও আগরতলা-আখাউড়া স্থলবন্দরে সাত দিনব্যাপী বাণিজ্য হওয়া৷ আরও ১৬টি স্থলসীমান্ত বন্দরে এরূপ বাণিজ্যের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷ এদিকে, আমরা বিএসটিআইয়ের সঙ্গে কাজ করছি সংস্থাটির পরীক্ষা ও মানদণ্ড নির্ধারণের সক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে৷
বাংলাদেশ থেকে ভারতে পণ্য রপ্তানির প্রবৃদ্ধি ভারত থেকে বাংলাদেশে পণ্য রপ্তানির প্রবৃদ্ধির চেয়ে বেশি৷ ভারত থেকে বাংলাদেশে যেসব পণ্য রপ্তানি হয়, সেগুলোর মধ্যে অনেকগুলোই বাংলাদেশের রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পের কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী পণ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়৷
এদিকে ভারত তার বাংলাদেশ সীমান্তের ১৬টি প্রধান স্থলবন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ঘটিয়ে সেগুলোকে সমন্বিত চেকপোস্টে উন্নীত করতে চায়৷ সেখানে কাস্টমস থেকে শুরু করে অভিবাসন, পার্কিং, হিমাগার, অসুস্থদের জন্য পৃথক নিবাসসহ নানা ধরনের সুবিধা একটি স্থানেই পাওয়া যাবে৷ আগরতলায় এই যৌথ চেকপোস্টের কাজ ২০১৩ সালের নভেম্বরে শেষ হয়েছে, সেখানে এখন কাজও হচ্ছে৷
মেঘালয় সীমান্তে দুটি সীমান্ত হাট রয়েছে৷ এটা শুনে আমি খুশি হয়েছি যে এরূপ আরও দুটি হাট ত্রিপুরা সীমান্তে শুরু হতে যাচ্ছে৷ আর এ বছরের মার্চে অনুষ্ঠিত জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ অন ট্রেডের বৈঠকে আরও চারটি হাট স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷
বাংলাদেশ যাতে আরও রপ্তানি উদ্বৃত্ত তৈরি করতে পারে, সে মর্মে ভারত মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগ করতে আগ্রহী৷ এর ফলে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ভান্ডারে আরও পণ্য যুক্ত হবে৷ আর বাংলাদেশ তার প্রতিবেশী ও অন্যান্য দেশের বাজারে প্রবেশ করতে সক্ষম হবে৷
প্রথম আলো >> বাংলাদেশের মানুষ মনে করে, আওয়ামী লীগ ও কংগ্রেসের মধ্যে এক ‘বিশেষ সম্পর্ক’ রয়েছে৷ ভারতের সরকার পরিবর্তন হওয়ায় এ দুই দেশের সম্পর্কের মধ্যে কি কোনো গুণগত পরিবর্তন ঘটবে?
সুষমা স্বরাজ >> সেটা আপনাদের ধারণা৷ আমাদের সরকার বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির চেষ্টা করবে৷ দুটি দেশের মধ্যকার সম্পর্ক নির্ভর করে দুই দেশের জনগণ ও সরকারের মধ্যকার সম্পর্কের ওপর৷ আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে একটি ব্যাপকভিত্তিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অংশীদারত্ব তৈরি করার ইচ্ছা রাখি, আর সেটা সমাজের সবাইকে নিয়েই আমরা করতে চাই৷
প্রথম আলো >> বাংলাদেশের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রতিনিধিত্বমূলক ছিল না৷ তবু ইউপিএ সরকার সেটাকে সমর্থন করেছিল৷ বিজেপি সরকার কি এটাকে ঠিক মনে করে?
সুষমা স্বরাজ >> দেখুন, বাংলাদেশের নির্বাচনের ওপর আমাদের রায় দেওয়ার কিছু নেই৷ বাংলাদেশে রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কী হবে, তা এই দেশের জনগণই নির্ধারণ করবেন৷ আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি ভবিষ্যৎমুখী৷ ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক এই দুই দেশের ভবিতব্য নির্ধারণে যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে, সেটাকে বিবেচনায় নিয়েই আমরা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি নির্ধারণ করি৷
প্রথম আলো >> দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে জনগণের মধ্যকার নৈকট্য খুব গুরুত্বপূর্ণ৷ কিন্তু অভিযোগ আছে যে বাংলাদেশিরা ভারতে ভ্রমণ করতে চাইলে ভিসা সমস্যার মুখোমুখি হন৷ ভিসা-প্রক্রিয়া সহজ করতে আপনারা কি কোনো পদক্ষেপ নেবেন?
সুষমা স্বরাজ >> বাংলাদেশ আমাদের বন্ধু ও প্রতিবেশী৷ জনগণের মধ্যকার সম্পর্ক জোরদার করতে আমরা তরুণদের মধ্যকার ভাবনা বিনিময়, ব্যবসা-বাণিজ্য, সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান, সংবাদকর্মীদের আসা-যাওয়া, সুশীল সমাজের প্রিতনিধিদের আসা-যাওয়া প্রভৃতি বাড়াতে চাই৷
ভিসার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্টভাবে কী সমস্যা হচ্ছে, আমরা তা খতিয়ে দেখব৷ ইতিমধ্যে ভারত ভ্রমণে আসা পর্যটকদের মধ্যে বাংলাদেশিরা সংখ্যার দিক থেকে তৃতীয় স্থানে পৌঁছে গেছে৷
প্রথম আলো >> আপনাকে ধন্যবাদ৷
সুষমা স্বরাজ >> ধন্যবাদ৷
সুষমা স্বরাজ >> ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে এটাই আমার প্রথম বিদেশ সফর৷ আমি ভারতের নবনির্বাচিত সরকারের তরফ থেকে বন্ধুত্বের বারতা নিয়ে এসেছিলাম৷ এ সফরে আমি বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ নেতৃত্বের সঙ্গে ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করেছি৷ বাংলাদেশের নেতাদের সঙ্গে আমার আলোচনা অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে৷ আন্তরিক ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে আমাদের আলোচনা হয়েছে, এ আলোচনা থেকে আমরা ভবিষ্যৎ সহযোগিতার িভত রচনা করতে পারি৷ আমাদের আলোচনার ভিত্তিতে দুই দেশের বাণিজ্য, সংযোগ, বিদ্যুৎ খাতের সহযোগিতা ও জনগণের সঙ্গে জনগণের আরও যোগাযোগ বাড়বে বলে আশা করছি৷
আমার মনে হয়, ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি গুণগত পরিবর্তন আনার সময় এসেছে৷ আমরা এ অঞ্চলে যেসব সমস্যার মুখোমুখি হই, সে প্রেক্ষাপটে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভারত-বাংলাদেশ সহযোগিতা আরও দৃঢ় হওয়া উচিত: দারিদ্র্য দূরীকরণ, নিরক্ষরতা দূরীকরণ, সন্ত্রাস, চরমপন্থা ও মৌলবাদ মোকাবিলায়৷
প্রথম আলো >> সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে বেশ কিছু অগ্রগতি হলেও তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি ও সীমান্ত প্রটোকল বাস্তবায়ন এখনো হয়নি৷ গত ইউপিএ সরকারের দোদুল্যমান রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে তা হয়েছে৷ কেন্দ্রে এবার বিজেপি বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে৷ বাংলাদেশ কি তাহলে দ্রুত এসব সমস্যার সমাধান আশা করতে পারে?
সুষমা স্বরাজ >> ভারতের বিগত সরকারের আমলে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক যে জায়গায় ছিল, আমরা সেটাকে শুধু বজায় রাখতে চাই তা নয়, সেটাকে আমরা নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে চাই৷ তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে আমরা আমাদের দেশে অভ্যন্তরীণ ঐকমত্য গড়ে তুলতে চাইছি৷ স্থল সীমানা চুক্তি করার জন্য সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধনীর জন্য রাজ্যসভায় বিল পেশ করা হয়েছে৷ এ মর্মে রাজনৈতিক ঐকমত্যে পৌঁছানোর জন্যও আলোচনা হচ্ছে৷
প্রথম আলো >> লোকসভা নির্বাচনের প্রচারণায় বিজেপি ভারতে বসবাসরত অবৈধ বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে খুব সোচ্চার ছিল৷ বিজেপির নেতারা এখনো এ নিয়ে উচ্চবাচ্য করছেন৷ অন্যদিকে, বিজেপি সরকার ভারতের প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে আগ্রহী৷ এটা কি স্ববিরোধিতা নয়? এ ক্ষেত্রে কোনো একটি দেশ যদি তার প্রতিবেশী দেশের নাগরিকদের বিরুদ্ধে এরূপ কঠোর অবস্থান নেয়, তাহলে কি তা দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না?
সুষমা স্বরাজ >>অবৈধ অভিবাসন যেকোনো দেশের জন্যই খুবই স্পর্শকাতর একটি সমস্যা, খুব সতর্কতার সঙ্গে এটা সামলানো উচিত৷ সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা এ সমস্যা মোকাবিলা করতে চাই৷ এর মধ্য দিয়ে সীমান্তের উন্নততর ব্যবস্থাপনার দিকটিও উঠে এসেছে, এটা নিশ্চিত করা উভয় পক্ষেরই দায়িত্ব৷ যে কয়টি দেশের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত রয়েছে, তার মধ্যে বাংলাদেশের সঙ্গেই তার সীমান্ত দীর্ঘতম৷ এ সীমান্ত নিশ্ছিদ্র নয়৷ এ সীমান্তে বসবাসকারী মানুষ দরিদ্র, পুরো এলাকা খুবই ঘনবসতিপূর্ণ৷ সে কারণে এখানে অনেক অবৈধ কাজ হয়৷ আমরা মনে করি, ভারত ও বাংলাদেশের নিরাপত্তা একই সূত্রে গাঁথা৷ দুই দেশেরই উচিত একত্রে কাজ করে সীমান্ত এলাকায় এসব অবৈধ কাজের রাশ টেনে ধরা৷ নিরাপদ হলেই আমাদের সীমান্ত এলাকা সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে, তার জন্য আইনের শাসন জোরদার করতে হবে৷ অসহায় ও নির্দোষ মানুষদের বিবেকহীন কাজের শিকার হতে দেওয়া যাবে না৷
প্রথম আলো >> অনেকের মতে, ভারত আওয়ামী লীগ সরকারের কাছ থেকে অনেক কিছু পেয়েছে, কিন্তু প্রতিদানে তেমন কিছু দেয়নি৷ এ সম্পর্ক ছিল মূলত একপক্ষীয়৷ আপনার বক্তব্য কী?
সুষমা স্বরাজ >> এ ধারণা ঠিক নয়৷ ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক দ্বিমুখী সড়ক৷
আমাদের সম্পর্কের কিছু ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট অগ্রগতি হয়েছে৷ পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতেই আমরা এগিয়েছি৷ বাণিজ্য, বাজার সুবিধা, বিদ্যুৎ, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, উন্নয়ন সহযোগিতা, অবকাঠামো, তরুণদেরসহ দুই দেশের জনগণের সম্পর্ক, সংবাদকর্মীদের মধ্যকার যোগাযোগ প্রভৃতি ক্ষেত্রে আমরা নতুন রেকর্ড স্থাপন করেছি৷ কিছু বিষয়ের ওপর আলোকপাত করা যাক:
প্রাতিষ্ঠানিক আয়োজনের মাধ্যমে আমরা সীমান্ত ব্যবস্থাপনা উন্নত করেছি: সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা, বন্দী বিনিময় চুক্তি, সীমান্ত হাট স্থাপন, ডিসি/ডিএম পর্যায়ের আলোচনা পুনরায় শুরু, সীমান্ত অবকাঠামোব্যবস্থার উন্নয়ন প্রভৃতি৷
বাণিজ্য-ঘাটতি মোকাবিলায় ২৫টি পণ্য ছাড়া আর সব বাংলাদেশি পণ্যের জন্য ভারতীয় বাজার উন্মুক্ত করা হয়েছে৷ গত বছর বাংলাদেশ ভারতে রেকর্ড পরিমাণ রপ্তানি করেছে৷ আর ভারতীয় বিনিয়োগের জন্যও বাংলাদেশ একটি সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র হয়ে উঠছে৷
বাণিজ্য অবকাঠামোয় সুনির্দিষ্ট উন্নতি হয়েছে৷ নতুন যৌথ চেকপোস্ট গড়ে তোলা হচ্ছে৷
নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশের মধ্যে সড়ক ও রেল ট্রানজিটের জন্য স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর-সংক্রান্ত চুক্তি হয়েছে৷
বাংলাদেশকে দেওয়া এক বিলিয়ন ডলারের একটি ঋণের আওতায় ১৫টিসহ আরও নানা প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে৷ এর মধ্যে ২০০ মিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ ঋণ সাহায্যে রূপান্তরিত হয়েছে৷
সামাজিক ক্ষেত্র, যেমন: আইটি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ ও ক্ষুদ্র উন্নয়ন প্রকল্পে গৃহীত নতুন পদক্ষেপ বাস্তবায়নাধীন রয়েছে৷
এই প্রথমবারের মতো ভারত থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সংযুক্ত গ্রিডের মাধ্যমে বাংলাদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে৷ এটা কার্যকর রয়েছে৷ আরও কিছু বিদ্যুৎ ও জ্বলানিসংক্রান্ত উদ্যোগের বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে, কিছু কিছু বাস্তবায়নাধীনও রয়েছে৷
উপাঞ্চলিক সহযোগিতাসংক্রান্ত আলোচনাও শুরু হয়েছে৷
রেলওয়েতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক সংহত হয়েছে৷ মৈত্রী এক্সপ্রেস যোগাযোগ সহজতর করেছে, আরও নানা আয়োজনের মাধ্যমে তা আরও সহজ করার চেষ্টা চলছে৷
উপকূলীয় অঞ্চলগুলোর মধ্যে জাহাজ যোগাযোগ স্থাপনে আলোচনা শুরু হয়েছে৷ আর বাংলাদেশের বিভিন্ন বন্দর ও ভারতের পূর্বাঞ্চলের বন্দরগুলোর মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হয়েছে৷
জনগণ-জনগণ পর্যায়ের সম্পর্ক জোরদার হয়েছে৷ এটা অনেকটা সাধারণ হয়ে এসেছে৷ প্রশিক্ষণ, সক্ষমতা সৃষ্টি ও দক্ষতা উন্নয়নসংক্রান্ত দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার ক্ষেত্রে প্রভূত উন্নতি হয়েছে৷ সাংস্কৃতিক বিনিময়ও বেড়েছে, দ্বিপক্ষীয়ভাবে৷
আমি জানি, আরও অনেক কিছু করার আছে৷ যা হয়েছে, তা নিয়ে আত্মসন্তুষ্টির কোনো সুযোগ নেই৷
প্রথম আলো >> বিভিন্ন সময় নানা পদক্ষেপ নেওয়া সত্ত্বেও ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্য-ঘাটতি মোকাবিলায় যথেষ্ট অগ্রগতি হয়নি৷ এ ক্ষেত্রে শুল্ক ও অশুল্ক বাধা ছাড়া মনস্তাত্ত্বিক বাধাও একটি বড় বাধা৷ ভারতের নতুন সরকার কি এ প্রেক্ষাপটে কোনো পদক্ষেপ নেবে?
সুষমা স্বরাজ >> বাণিজ্য-ঘাটতি নিয়ে বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে আমরা সংবেদনশীল৷
২০১২-১৩ অর্থবছরে সার্ক অঞ্চলে বাংলাদেশ ভারতের বৃহত্তর বাণিজ্য সহযোগীতে পরিণত হয়েছে৷ আগের বছরের তুলনায় এ বছর বাংলাদেশ থেকে ভারতে রপ্তানির পরিমাণ ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৬৩ দশমিক ৯৬ মিলিয়ন ডলারে৷
জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ অন ট্রেড, জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ অন কাস্টমসসহ আরও নানা আয়োজনের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্য বাধা দূর করার চেষ্টা করা হচ্ছে৷ এসব কমিটি বছরে একবার বসে৷ সাম্প্রতিক সময়ে এসব বৈঠকের কিছু ফলাফল দেখা যাচ্ছে, যেমন বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্ত ও আগরতলা-আখাউড়া স্থলবন্দরে সাত দিনব্যাপী বাণিজ্য হওয়া৷ আরও ১৬টি স্থলসীমান্ত বন্দরে এরূপ বাণিজ্যের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷ এদিকে, আমরা বিএসটিআইয়ের সঙ্গে কাজ করছি সংস্থাটির পরীক্ষা ও মানদণ্ড নির্ধারণের সক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে৷
বাংলাদেশ থেকে ভারতে পণ্য রপ্তানির প্রবৃদ্ধি ভারত থেকে বাংলাদেশে পণ্য রপ্তানির প্রবৃদ্ধির চেয়ে বেশি৷ ভারত থেকে বাংলাদেশে যেসব পণ্য রপ্তানি হয়, সেগুলোর মধ্যে অনেকগুলোই বাংলাদেশের রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পের কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী পণ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়৷
এদিকে ভারত তার বাংলাদেশ সীমান্তের ১৬টি প্রধান স্থলবন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ঘটিয়ে সেগুলোকে সমন্বিত চেকপোস্টে উন্নীত করতে চায়৷ সেখানে কাস্টমস থেকে শুরু করে অভিবাসন, পার্কিং, হিমাগার, অসুস্থদের জন্য পৃথক নিবাসসহ নানা ধরনের সুবিধা একটি স্থানেই পাওয়া যাবে৷ আগরতলায় এই যৌথ চেকপোস্টের কাজ ২০১৩ সালের নভেম্বরে শেষ হয়েছে, সেখানে এখন কাজও হচ্ছে৷
মেঘালয় সীমান্তে দুটি সীমান্ত হাট রয়েছে৷ এটা শুনে আমি খুশি হয়েছি যে এরূপ আরও দুটি হাট ত্রিপুরা সীমান্তে শুরু হতে যাচ্ছে৷ আর এ বছরের মার্চে অনুষ্ঠিত জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ অন ট্রেডের বৈঠকে আরও চারটি হাট স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷
বাংলাদেশ যাতে আরও রপ্তানি উদ্বৃত্ত তৈরি করতে পারে, সে মর্মে ভারত মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগ করতে আগ্রহী৷ এর ফলে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ভান্ডারে আরও পণ্য যুক্ত হবে৷ আর বাংলাদেশ তার প্রতিবেশী ও অন্যান্য দেশের বাজারে প্রবেশ করতে সক্ষম হবে৷
প্রথম আলো >> বাংলাদেশের মানুষ মনে করে, আওয়ামী লীগ ও কংগ্রেসের মধ্যে এক ‘বিশেষ সম্পর্ক’ রয়েছে৷ ভারতের সরকার পরিবর্তন হওয়ায় এ দুই দেশের সম্পর্কের মধ্যে কি কোনো গুণগত পরিবর্তন ঘটবে?
সুষমা স্বরাজ >> সেটা আপনাদের ধারণা৷ আমাদের সরকার বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির চেষ্টা করবে৷ দুটি দেশের মধ্যকার সম্পর্ক নির্ভর করে দুই দেশের জনগণ ও সরকারের মধ্যকার সম্পর্কের ওপর৷ আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে একটি ব্যাপকভিত্তিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অংশীদারত্ব তৈরি করার ইচ্ছা রাখি, আর সেটা সমাজের সবাইকে নিয়েই আমরা করতে চাই৷
প্রথম আলো >> বাংলাদেশের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রতিনিধিত্বমূলক ছিল না৷ তবু ইউপিএ সরকার সেটাকে সমর্থন করেছিল৷ বিজেপি সরকার কি এটাকে ঠিক মনে করে?
সুষমা স্বরাজ >> দেখুন, বাংলাদেশের নির্বাচনের ওপর আমাদের রায় দেওয়ার কিছু নেই৷ বাংলাদেশে রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কী হবে, তা এই দেশের জনগণই নির্ধারণ করবেন৷ আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি ভবিষ্যৎমুখী৷ ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক এই দুই দেশের ভবিতব্য নির্ধারণে যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে, সেটাকে বিবেচনায় নিয়েই আমরা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি নির্ধারণ করি৷
প্রথম আলো >> দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে জনগণের মধ্যকার নৈকট্য খুব গুরুত্বপূর্ণ৷ কিন্তু অভিযোগ আছে যে বাংলাদেশিরা ভারতে ভ্রমণ করতে চাইলে ভিসা সমস্যার মুখোমুখি হন৷ ভিসা-প্রক্রিয়া সহজ করতে আপনারা কি কোনো পদক্ষেপ নেবেন?
সুষমা স্বরাজ >> বাংলাদেশ আমাদের বন্ধু ও প্রতিবেশী৷ জনগণের মধ্যকার সম্পর্ক জোরদার করতে আমরা তরুণদের মধ্যকার ভাবনা বিনিময়, ব্যবসা-বাণিজ্য, সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান, সংবাদকর্মীদের আসা-যাওয়া, সুশীল সমাজের প্রিতনিধিদের আসা-যাওয়া প্রভৃতি বাড়াতে চাই৷
ভিসার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্টভাবে কী সমস্যা হচ্ছে, আমরা তা খতিয়ে দেখব৷ ইতিমধ্যে ভারত ভ্রমণে আসা পর্যটকদের মধ্যে বাংলাদেশিরা সংখ্যার দিক থেকে তৃতীয় স্থানে পৌঁছে গেছে৷
প্রথম আলো >> আপনাকে ধন্যবাদ৷
সুষমা স্বরাজ >> ধন্যবাদ৷
No comments