ইরাকে মালিকির দিন শেষ?
ইরাকে শিয়া সম্প্রদায়ের সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতা আয়াতুল্লাহ আলী-সিস্তানি চার দিনের মধ্যে দেশে একজন নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করতে গত শুক্রবার রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি আহ্বান জািনয়েছেন। রাজনীতিতে তাঁর এই নাটকীয় হস্তক্ষেপের কারণে প্রধানমন্ত্রী নুরি আল-মালিকির আট বছরের শাসনাবসান ঘটতে পারে। আগামী মঙ্গলবার ইরাকের নতুন পার্লামেন্টের অধিবেশন বসছে। এর আগেই দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী, পার্লামেন্টের স্পিকার ও প্রেসিডেন্ট বাছাইয়ের ব্যাপারে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের একমত হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন সিস্তানি। চলমান পরিস্থিতিতে তাঁর এই হস্তক্ষেপের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান হিসেবে মালিকির বহাল থাকার বিষয়টি কঠিন হয়ে পড়েছে। গত এপ্রিলে পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে ওই পদে দায়িত্ব পালন করছেন মালিকি। নির্বাচনে তাঁর দল জয়ী হলেও সরকার গঠনের মতো প্রয়োজনীয় আসন পায়নি। ফলে তঁাকে এখন একটি জোট সরকার গড়তে হবে অথবা ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়াতে হবে। তাঁর নেতৃত্বাধীন জোট স্টেট অব ল এবং শিয়া সম্প্রদায়ের একটি অংশ ইতিমধ্যে একটি বৈঠক করলেও কাউকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করার ব্যাপারে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। এদিকে, আইএসআইএল জঙ্গিদের দমনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশ ইরাকে সব দল ও সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণের িভত্তিতে একটি সরকার যত শিগগির সম্ভব গঠনের আহ্বান জানিয়েছে। আর প্রধানমন্ত্রী মালিকি সহিংসতায় উসকানির অভিযোগ এনে তাঁর রাজনৈতিক বিরোধীদের দায়ী করছেন। তিনি সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে বলেন, বিরোধীরা নির্বাচন স্থগিত করার চেষ্টা করেছিল।
এখন তারা পার্লামেন্টের প্রথম অধিবেশন স্থগিত করার চেষ্টা করছে। ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড দ্য লেভান্টের (আইএসআইএল) জঙ্গিরা গত দুই সপ্তাহে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সুন্নি অধ্যুষিত বেশ কয়েকটি এলাকা দখল করে নিয়েছে। সেখানে সরকারি বাহিনী খুব সামান্যই প্রতিরোধ করতে পেরেছে। আর ওই জঙ্গিদের পরাজিত করতে সেনাবাহিনীকে সহায়তার জন্য সিস্তানির আগের আহ্বানে শিয়া সম্প্রদায়ের হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবী সাড়া দিয়ে অস্ত্র হাতে তুলে নিতে প্রশিক্ষণ নেন। ইরাকের সাবেক নেতা প্রয়াত সাদ্দাম হোসেনের পতনের পর প্রণীত শাসনব্যবস্থায় ইরাকের প্রধানমন্ত্রীর পদটি সব সময়ই একজন শিয়া ব্যক্তির জন্য নির্ধারিত। আর প্রেসিডেন্টের আলংকারিক পদটি একজন কুর্দি এবং স্পিকারের পদটি একজন সুন্নি মুসলমানের জন্য নির্ধারিত। ২০১০ সালের নির্বাচনের পর একটি জোট সরকার গঠনে প্রধানমন্ত্রী মালিকি প্রায় ১০ মাস সময় নিয়েছিলেন। সিস্তানির প্রস্তাব অনুযায়ী, নতুন সরকারে ইরাকের প্রধান তিনটি জাতিগোষ্ঠীর প্রাধান্য থাকতে হবে। মািলকির নেতৃত্বাধীন শিয়া সম্প্রদায়ের জোট গত এপ্রিলের পার্লামেন্ট নির্বাচনে অধিকাংশ আসনে জয়ী হয়েছিল। তিনি তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় আল-কায়েদা থেকে বিচ্যুত জঙ্গি সংগঠন আইএসআইএলের উত্থান। তিনি এখনো ক্ষমতায় থাকতে চান বলে তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে। কিন্তু সুন্নিদের অভিযোগ, তাদের ক্ষমতার বাইরে রেখে দমন-পীড়নের মুখে রাখতে চাইছেন মালিকি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পশ্চিমা একজন কূটনীতিক বলেন, মালিকির দিন ফুরিয়ে এসেছে। তাঁর জোট থেকে সম্ভবত তারেক নাজেম বা বাইরে থেকে অন্য কেউ এবার সরকারপ্রধানের দায়িত্ব নিতে পারেন। তবে মালিকি প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন না, এটা নিশ্চিত। কারণ, তিিন দেশ ও জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছেন। মালিকির রাজনৈতিক মিত্ররাও মনে করছেন, সিস্তানির আহ্বানে হয়তো এই মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী মালিকির বিদায় হচ্ছে না। তবে বিষয়টি নিয়ে তৎপর হতে সব রাজনৈতিক দলের ওপর এটি প্রভাব ফেরবে। কুর্দিরা এখনো প্রেসিডেন্ট পদে নিজেদের প্রার্থী নির্ধারণ করেনি আর সুন্নিরাও স্পিকার পদপ্রার্থী নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত। এদিকে, আইএসআইএলের জঙ্গিদের বেপরোয়া মানুষ হত্যায় আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। তাদের নৃশংসতার ছবি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ মানবাধিকার সংগঠনগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
No comments