সূর্যোদয়ের দেশে by অদিতি ঢালী ও তনুশ্রী দত্ত
জাপানিরা প্রতিদিন পৃথিবীর প্রথম সূর্য
দেখে। তারপর অন্যরা। প্রশান্ত মহাসাগরের পারে জাপানের অবস্থান। শুনেছি
জাপানের অনেক কথা। পড়েছি রবীন্দ্রনাথের 'জাপানযাত্রী'। মনে মনে ভাবতাম, যদি
ওদের কাছে যেতে পারতাম, ওদের সঙ্গে কথা বলতে পারতাম, ওদের দেশটা দেখতে
পারতাম! সৃষ্টিকর্তা আমাদের চাওয়াটা খুব তাড়াতাড়ি পূরণ করে দিয়েছেন।
জেনেসিস ২.০ প্রোগ্রামের কল্যাণে ৯ দিনের জন্য ঘুরে এলাম জাপান। আমাদের
টিমে ছিল দু'জন সুপারভাইজারসহ ৩৩ জন। এ টিমে ঢাকা ছাড়াও নড়াইল, রাজশাহী,
বরগুনা, মৌলভীবাজার, চট্টগ্রামের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী বন্ধুরা ছিল। ৯
ডিসেম্বর ভোর আমাদের জীবনে এসেছিল এক অনাবিল আনন্দ নিয়ে। প্লেনে বসেই
দেখলাম প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্য থেকে পৃথিবীর প্রথম সূর্য উঠছে। মুগ্ধ
দৃষ্টিতে মন ভরে তা দেখেছি। বারবার মনে হয়েছে আজ আমরাই সূর্যকে প্রথম
আহ্বান জানাতে পেরেছি। বিমানবন্দরের আনুষঙ্গিকতা শেষ করে বাসে করে হোটেল
স্প্রিংস মাকুহারি যেতে যেতে আমরা মুগ্ধ চোখে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাস্তা,
রাস্তার পাশের সুন্দর বৃক্ষরাজি দেখছিলাম। কেউ ট্রাফিক নিয়ম লঙ্ঘন করছে না।
তৃতীয় দিনে আমাদের নিয়ে যাওয়া হলো প্রশান্ত মহাসাগরের তীরে গড়ে ওঠা শান্ত
শহর মিয়াজাকিতে। দেখলাম জাপান কীভাবে পরিত্যক্ত বর্জ্য পদার্থ যেমন_ কোকের
ক্যান, পানির বোতল, পরিত্যক্ত জামা-কাপড় ইত্যাদি থেকে ব্যবহার উপযোগী
দ্রব্যাদি (চায়ের কাপ, থালা-বাটি, ডাইনিং টেবিল, চেয়ার, পুতুল, শোপিস
ইত্যাদি) উৎপাদন করে সেই পদ্ধতি। সৌরশক্তিকে কাজে লাগিয়ে সৌরবিদ্যুৎ
উৎপাদন করা হয়। অল্প সূর্যের আলো পেলেই তা দিয়ে অনেক সৌরবিদ্যুৎ উৎপন্ন
করছে। তাদের প্রযুক্তি উন্নত।
আমাদের নেওয়া হলো মিয়াজাকি নিশি হাইস্কুলে। সরকারি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল। এখানে ৩০টি ক্লাব আছে। প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে একাধিক ক্লাবের সদস্য হতে হয়। পাঠ্য বিষয়ের পাশাপাশি বাস্তব জ্ঞান অর্জনের ওপর বেশ জোর দেওয়া হয়। তাদের বিভিন্ন জাদুঘর, শিল্প-কারখানা, মন্দির পরিদর্শন করানো হয়। স্কুল ক্যাম্পাস পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। শিক্ষার্থীরা টিফিন টাইমের পরে নিজ উদ্যোগে স্কুল ক্যাম্পাস পরিষ্কার করে। জাপানিদের জীবনযাত্রা ভালোভাবে বোঝার জন্য আমাদের দু'জন করে শিক্ষার্থীকে একেকটি পরিবারের সঙ্গে প্রায় দু'দিন থাকার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল। আমরা দু'জন ছিলাম দুটি ভিন্ন পরিবারের সঙ্গে। দুটিই সচ্ছল মধ্যবিত্ত পরিবার। দুই পরিবারেই আমাদের সমবয়সী দুটি মেয়ে ছিল। বড় বোন কিছু বললেই ছোট ভাইবোনেরা ছোটাছুটি করতে থাকে আমাদের প্রয়োজন মেটাতে। ওদের আতিথেয়তা, সৌজন্য, সৌহার্দ্য, ভদ্রতা ও আন্তরিকতায় আমরা মুগ্ধ।
জাপানিদের আবাসিক এলাকা হাইওয়ে থেকে দূরে। বাড়িগুলো প্রায়ই কাঠের। একতলা-দোতলা। প্রতিটি বাড়ির আকার-আকৃতি ও নকশা প্রায় একই রকম। সামনে ফুলের বাগান। পার্ক, স্কুল আছে কাছাকাছি। ছেলেমেয়েরা নিজস্ব সাইকেল অথবা গাড়িতে করে স্কুলে যায়। জাপানিদের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির পরিচয় মেলে ওদের নিজস্ব স্টাইলের বাথরুম ও ওয়াশরুমে। পুরো পৃথিবী যখন কাঁটাচামচ দিয়ে খায়, জাপানিরা এখনও তাদের চপস্টিক (কাঠি) দিয়ে খাওয়ার ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। ঠিক যেমন বাঙালিরা হাত দিয়ে খেতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।
দু'দিনেই পরিবারের সবার সঙ্গে এক হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। হোটেলে ফেরার সময় ভাইবোনের চোখগুলো ছলছল করছে। ১৬ ডিসেম্বর টোকিওতে আমাদের প্রেজেন্টেশন দিতে হয়েছে। এখানে আমরা আমাদের জাপান ভ্রমণ থেকে অর্জিত শিক্ষা, অভিজ্ঞতা ও পরবর্তী কার্যক্রম সম্পর্কে আমাদের মতামত তুলে ধরেছিলাম। সৌভাগ্যক্রমে সেদিন ছিল আমাদের মহান বিজয় দিবস। আমরা সেখানে আমাদের জাতীয় সঙ্গীত পরম শ্রদ্ধায় গেয়েছিলাম। আরও গেয়েছিলাম পল্লীগীতি ও রণসঙ্গীত। বিদেশের মাটিতে নিজের দেশকে এভাবে তুলে ধরতে পেরে নিজেদের খুব গর্বিত মনে হচ্ছিল। জাপানে কেটে গেল নয়টি দিন। কখন যে শেষ হয়ে গেল বুঝতেই পারিনি। সারাদিনের ব্যস্ততা, রাতের আড্ডা, পরের দিনের মানসিক প্রস্তুতি আমাদের একটি ভিন্ন মাত্রায় নিয়ে গিয়েছিল। নতুন দেশ, নতুন বন্ধু, অনেক স্মৃতি। জাপান ভ্রমণের এসব স্মৃতি আমাদের হৃদয়পটে চিরজাগরূক হয়ে থাকবে।
শিক্ষার্থী, একাদশ শ্রেণী, ভিকারুনিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ
আমাদের নেওয়া হলো মিয়াজাকি নিশি হাইস্কুলে। সরকারি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল। এখানে ৩০টি ক্লাব আছে। প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে একাধিক ক্লাবের সদস্য হতে হয়। পাঠ্য বিষয়ের পাশাপাশি বাস্তব জ্ঞান অর্জনের ওপর বেশ জোর দেওয়া হয়। তাদের বিভিন্ন জাদুঘর, শিল্প-কারখানা, মন্দির পরিদর্শন করানো হয়। স্কুল ক্যাম্পাস পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। শিক্ষার্থীরা টিফিন টাইমের পরে নিজ উদ্যোগে স্কুল ক্যাম্পাস পরিষ্কার করে। জাপানিদের জীবনযাত্রা ভালোভাবে বোঝার জন্য আমাদের দু'জন করে শিক্ষার্থীকে একেকটি পরিবারের সঙ্গে প্রায় দু'দিন থাকার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল। আমরা দু'জন ছিলাম দুটি ভিন্ন পরিবারের সঙ্গে। দুটিই সচ্ছল মধ্যবিত্ত পরিবার। দুই পরিবারেই আমাদের সমবয়সী দুটি মেয়ে ছিল। বড় বোন কিছু বললেই ছোট ভাইবোনেরা ছোটাছুটি করতে থাকে আমাদের প্রয়োজন মেটাতে। ওদের আতিথেয়তা, সৌজন্য, সৌহার্দ্য, ভদ্রতা ও আন্তরিকতায় আমরা মুগ্ধ।
জাপানিদের আবাসিক এলাকা হাইওয়ে থেকে দূরে। বাড়িগুলো প্রায়ই কাঠের। একতলা-দোতলা। প্রতিটি বাড়ির আকার-আকৃতি ও নকশা প্রায় একই রকম। সামনে ফুলের বাগান। পার্ক, স্কুল আছে কাছাকাছি। ছেলেমেয়েরা নিজস্ব সাইকেল অথবা গাড়িতে করে স্কুলে যায়। জাপানিদের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির পরিচয় মেলে ওদের নিজস্ব স্টাইলের বাথরুম ও ওয়াশরুমে। পুরো পৃথিবী যখন কাঁটাচামচ দিয়ে খায়, জাপানিরা এখনও তাদের চপস্টিক (কাঠি) দিয়ে খাওয়ার ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। ঠিক যেমন বাঙালিরা হাত দিয়ে খেতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।
দু'দিনেই পরিবারের সবার সঙ্গে এক হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। হোটেলে ফেরার সময় ভাইবোনের চোখগুলো ছলছল করছে। ১৬ ডিসেম্বর টোকিওতে আমাদের প্রেজেন্টেশন দিতে হয়েছে। এখানে আমরা আমাদের জাপান ভ্রমণ থেকে অর্জিত শিক্ষা, অভিজ্ঞতা ও পরবর্তী কার্যক্রম সম্পর্কে আমাদের মতামত তুলে ধরেছিলাম। সৌভাগ্যক্রমে সেদিন ছিল আমাদের মহান বিজয় দিবস। আমরা সেখানে আমাদের জাতীয় সঙ্গীত পরম শ্রদ্ধায় গেয়েছিলাম। আরও গেয়েছিলাম পল্লীগীতি ও রণসঙ্গীত। বিদেশের মাটিতে নিজের দেশকে এভাবে তুলে ধরতে পেরে নিজেদের খুব গর্বিত মনে হচ্ছিল। জাপানে কেটে গেল নয়টি দিন। কখন যে শেষ হয়ে গেল বুঝতেই পারিনি। সারাদিনের ব্যস্ততা, রাতের আড্ডা, পরের দিনের মানসিক প্রস্তুতি আমাদের একটি ভিন্ন মাত্রায় নিয়ে গিয়েছিল। নতুন দেশ, নতুন বন্ধু, অনেক স্মৃতি। জাপান ভ্রমণের এসব স্মৃতি আমাদের হৃদয়পটে চিরজাগরূক হয়ে থাকবে।
শিক্ষার্থী, একাদশ শ্রেণী, ভিকারুনিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ
No comments