অর্থঋণ আদালত আইন ফের সংশোধন হচ্ছে by আবু সালেহ রনি
ব্যাংক
ও অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ আদায়ে আইন থাকলেও কাঠামোগত
সীমাবদ্ধতায় এর যথাযথ প্রয়োগ হচ্ছে না। আইনের নানা ফাঁকফোকর ও দুর্বলতায়
প্রকৃত অপরাধীরা যেমন পার পেয়ে যাচ্ছে, তেমনি হয়রানির শিকার হচ্ছেন
ভুক্তভোগীরা। দেশের বহুল আলোচিত সর্ববৃহৎ ব্যাংকঋণ কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত
হলমার্ক ও বিসমিল্লাহ গ্রুপের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হলেও
ঋণ জালিয়াতির বিরুদ্ধে ঋণ আদায়ে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে আইনের সীমাবদ্ধতা
রয়েছে। জনগণের অর্থ লুণ্ঠন রুখতে ফের অর্থঋণ আদালত আইন, ২০০৩ সংশোধনের
উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন
আইন কমিশন দীর্ঘমেয়াদি গবেষণার পর অর্থঋণ আদালত আইনের ৯০টি সমস্যা চিহ্নিত
করে তার সমাধান প্রস্তাব করে খসড়া একটি আইন (সংশোধিত) প্রস্তুত করেছে। এখন
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে এ বিষয়ে মতামত সংগ্রহ
করা হচ্ছে। এর পর চূড়ান্ত যাচাই-বাছাই শেষে শিগগিরই খসড়া আইনটি জাতীয়
সংসদে পাসের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সংশ্লিষ্ট আইনজ্ঞরা বলেন,
অর্থঋণ আদালত আইন ফের সংশোধন করা না হলে আর্থিক দুর্নীতি রুখতে আইনটি
কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে না। ২০০৩ সালে এ আইন প্রণয়নের পর ২০১০ সালেও
একবার সংশোধন করা হয়েছিল। কিন্তু নানা কারণে আইনটি ফের সংশোধনের প্রয়োজন।
আইনের দুর্বলতায় হলমার্কসহ সম্প্রতি বড় ধরনের যে ক'টি ঋণ জালিয়াতির ঘটনা
উন্মোচিত হয়েছে, তার বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাচ্ছে না। কত
বছরে ঋণের টাকা আদায় করা যাবে, আদৌ যাবে কি-না অথবা বিচার প্রক্রিয়া এক
যুগেও শেষ হবে কি-না, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। ফলে রাষ্ট্রায়ত্ত
প্রতিষ্ঠান সোনালীসহ ১৪টি ব্যাংক আইনটি সংশোধনের বিষয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছে।
ব্যাংকের মতামত :আইন কমিশনের সিনিয়র গবেষণা কর্মকর্তা মাকসুদুর রহমান সমকালকে বলেন, সোনালী, অগ্রণী, জনতা, এবি, ইসলামী, ঢাকা, আইএফআইসি, কমার্সসহ দেশের ১৪টি ব্যাংক অর্থঋণ আদালত আইন সংশোধনের বিষয়ে মতামত পাঠিয়েছে। কমিশন দীর্ঘ গবেষণার পর ৯০টি সমস্যা চিহ্নিত করে তার সমাধানও চূড়ান্ত করেছে। তিনি আরও বলেন, ব্যাংকঋণ জালিয়াতি ও খেলাপি আদায়ে আইনে ঋণ ও বিচার প্রক্রিয়া, ব্যাংকের কার্যক্রম সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া হবে, যাতে দুর্নীতিতে ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশ রোধ করা সম্ভব হয়। ব্যাংকগুলোর মতামত পর্যালোচনায় দেখা যায়, অর্থঋণ আদালত আইনের আওতায় সারাদেশে প্রায় দুই লাখ মামলা হয়েছে। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হওয়া ৮০ হাজার মামলা থেকে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা আদায় করাও সম্ভব হয়েছে। কিন্তু আইনে সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারকের অনুপস্থিতিতে বিকল্প বিচারকের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের সুযোগ না থাকা, উচ্চ আদালতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে রিট দায়ের, সমন জারি, ডিক্রি, আপসের বিষয়ে আইনের ত্রুটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এসব ক্ষেত্রে সংশোধিত আইনে সুনির্দিষ্ট বিধান উল্লেখ করার জন্য প্রস্তাবে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
মতামতে আরও বলা হয়, বর্তমান আইনে শুধু ব্যাংক ও অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ আদায়ের জন্য মোকদ্দমা দায়ের করতে পারে। বিনিয়োগ সুবিধা ও ঋণগ্রহীতা কোনো ব্যক্তি অথবা কোনো কোম্পানি এ আইনের বিধানবলে ঋণদাতা ব্যাংক বা অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে চুক্তিভঙ্গজনিত বিষয়ে বা অনিয়ম ও প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের প্রতিকার চেয়ে কোনো দাবি উত্থাপন করতে পারে না। এ জন্য তাকে (বিবাদীকে) উচ্চ আদালতে রিট বা দেওয়ানি আদালতে পৃথক ঘোষণার মামলাসহ প্রাসঙ্গিক আবেদন দায়ের করতে হয়। এ ছাড়া ২০১০ সালে সর্বশেষ সংশোধিত আইনে সেটেলমেন্ট কনফারেন্সের পরিবর্তে এডিআর (বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি) নিষ্পত্তির বিধান রাখা হলেও তা বাধ্যতামূলক করা হয়নি। এতে একদিকে যেমন মামলার আধিক্য বাড়ছে, অন্যদিকে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে অর্থঋণ আদালতে মামলার দ্রুত বিচার স্থবির হয়ে পড়েছে। ২০০৩ সালের ওই আইনে বিভিন্ন সময়ে কিছু পরিবর্তন আনা হলেও বাদী ব্যাংকের মামলা যদি আইন দ্বারা বারিত, অচল ও অরক্ষণীয় হয়, তা খারিজের কোনো ক্ষমতাও বিচারিক আদালতকে প্রদান করা হয়নি। ফলে ভুক্তভোগীদের ভোগান্তির সীমা-পরিসীমা থাকে না।
সমাধান :আইন কমিশনের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট আদালতের যুগ্ম জেলা জজ যদি কোনো কারণে অবর্তমান থাকেন, তা হলে জেলা জজ নিজে কিংবা যে কোনো অতিরিক্ত জেলা জজকে নিজ দায়িত্বে অতিরিক্ত হিসেবে দায়িত্ব দিতে পারবেন। ঋণ আদায়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তালিকাভুক্ত সার্ভেয়ার বা তদন্তের মাধ্যমে বন্ধকী সম্পত্তি সরেজমিন পরির্দশন ও যাচাই-বাছাই করে দলিল-তথ্যাদি সঠিক প্রমাণিত হলে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না করে মামলা করতে পারবেন। উচ্চ আদালতে রিট দায়ের প্রসঙ্গে বলা হয়, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে রিটে পক্ষভুক্ত করা হলে রুল ইস্যু/শুনানিকালে ব্যাংকের প্রতিনিধি/আইনজীবী উপস্থিতি বাধ্যতামূলক থাকতে হবে। পাশাপাশি আদালতের নির্দেশনা অনুসারে সংশ্লিষ্টরা ছয় মাসের মধ্যে রুল শুনানি করতে ব্যর্থ হলে মূল রিট খারিজ হয়ে যাবে। ফলে উচ্চ আদালতে মামলাজট যেমন কমবে, তেমনি ভুক্তভোগীরাও হয়রানি থেকে রেহাই পাবেন। এ ছাড়া প্রস্তাবিত খসড়ায় মামলা নিষ্পত্তিতে সমন জারি, রেজিস্ট্রি, ডিক্রি, তদন্ত প্রক্রিয়া, রুগ্ণ শিল্পের জন্য বিচার প্রক্রিয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে। এ ছাড়া হলমার্ক, বিসমিল্লাহ গ্রুপের মতো বড় ধরনের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে।
ব্যাংকের মতামত :আইন কমিশনের সিনিয়র গবেষণা কর্মকর্তা মাকসুদুর রহমান সমকালকে বলেন, সোনালী, অগ্রণী, জনতা, এবি, ইসলামী, ঢাকা, আইএফআইসি, কমার্সসহ দেশের ১৪টি ব্যাংক অর্থঋণ আদালত আইন সংশোধনের বিষয়ে মতামত পাঠিয়েছে। কমিশন দীর্ঘ গবেষণার পর ৯০টি সমস্যা চিহ্নিত করে তার সমাধানও চূড়ান্ত করেছে। তিনি আরও বলেন, ব্যাংকঋণ জালিয়াতি ও খেলাপি আদায়ে আইনে ঋণ ও বিচার প্রক্রিয়া, ব্যাংকের কার্যক্রম সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া হবে, যাতে দুর্নীতিতে ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশ রোধ করা সম্ভব হয়। ব্যাংকগুলোর মতামত পর্যালোচনায় দেখা যায়, অর্থঋণ আদালত আইনের আওতায় সারাদেশে প্রায় দুই লাখ মামলা হয়েছে। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হওয়া ৮০ হাজার মামলা থেকে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা আদায় করাও সম্ভব হয়েছে। কিন্তু আইনে সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারকের অনুপস্থিতিতে বিকল্প বিচারকের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের সুযোগ না থাকা, উচ্চ আদালতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে রিট দায়ের, সমন জারি, ডিক্রি, আপসের বিষয়ে আইনের ত্রুটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এসব ক্ষেত্রে সংশোধিত আইনে সুনির্দিষ্ট বিধান উল্লেখ করার জন্য প্রস্তাবে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
মতামতে আরও বলা হয়, বর্তমান আইনে শুধু ব্যাংক ও অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ আদায়ের জন্য মোকদ্দমা দায়ের করতে পারে। বিনিয়োগ সুবিধা ও ঋণগ্রহীতা কোনো ব্যক্তি অথবা কোনো কোম্পানি এ আইনের বিধানবলে ঋণদাতা ব্যাংক বা অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে চুক্তিভঙ্গজনিত বিষয়ে বা অনিয়ম ও প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের প্রতিকার চেয়ে কোনো দাবি উত্থাপন করতে পারে না। এ জন্য তাকে (বিবাদীকে) উচ্চ আদালতে রিট বা দেওয়ানি আদালতে পৃথক ঘোষণার মামলাসহ প্রাসঙ্গিক আবেদন দায়ের করতে হয়। এ ছাড়া ২০১০ সালে সর্বশেষ সংশোধিত আইনে সেটেলমেন্ট কনফারেন্সের পরিবর্তে এডিআর (বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি) নিষ্পত্তির বিধান রাখা হলেও তা বাধ্যতামূলক করা হয়নি। এতে একদিকে যেমন মামলার আধিক্য বাড়ছে, অন্যদিকে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে অর্থঋণ আদালতে মামলার দ্রুত বিচার স্থবির হয়ে পড়েছে। ২০০৩ সালের ওই আইনে বিভিন্ন সময়ে কিছু পরিবর্তন আনা হলেও বাদী ব্যাংকের মামলা যদি আইন দ্বারা বারিত, অচল ও অরক্ষণীয় হয়, তা খারিজের কোনো ক্ষমতাও বিচারিক আদালতকে প্রদান করা হয়নি। ফলে ভুক্তভোগীদের ভোগান্তির সীমা-পরিসীমা থাকে না।
সমাধান :আইন কমিশনের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট আদালতের যুগ্ম জেলা জজ যদি কোনো কারণে অবর্তমান থাকেন, তা হলে জেলা জজ নিজে কিংবা যে কোনো অতিরিক্ত জেলা জজকে নিজ দায়িত্বে অতিরিক্ত হিসেবে দায়িত্ব দিতে পারবেন। ঋণ আদায়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তালিকাভুক্ত সার্ভেয়ার বা তদন্তের মাধ্যমে বন্ধকী সম্পত্তি সরেজমিন পরির্দশন ও যাচাই-বাছাই করে দলিল-তথ্যাদি সঠিক প্রমাণিত হলে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না করে মামলা করতে পারবেন। উচ্চ আদালতে রিট দায়ের প্রসঙ্গে বলা হয়, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে রিটে পক্ষভুক্ত করা হলে রুল ইস্যু/শুনানিকালে ব্যাংকের প্রতিনিধি/আইনজীবী উপস্থিতি বাধ্যতামূলক থাকতে হবে। পাশাপাশি আদালতের নির্দেশনা অনুসারে সংশ্লিষ্টরা ছয় মাসের মধ্যে রুল শুনানি করতে ব্যর্থ হলে মূল রিট খারিজ হয়ে যাবে। ফলে উচ্চ আদালতে মামলাজট যেমন কমবে, তেমনি ভুক্তভোগীরাও হয়রানি থেকে রেহাই পাবেন। এ ছাড়া প্রস্তাবিত খসড়ায় মামলা নিষ্পত্তিতে সমন জারি, রেজিস্ট্রি, ডিক্রি, তদন্ত প্রক্রিয়া, রুগ্ণ শিল্পের জন্য বিচার প্রক্রিয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে। এ ছাড়া হলমার্ক, বিসমিল্লাহ গ্রুপের মতো বড় ধরনের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে।
No comments