ভোটার কম :সহিংসতায় নিহত ২২
(বগুড়ার গাবতলীর একটি ভোটকেন্দ্র থেকে ব্যালট বাক্স ছিনতাই করে ভাংচুর ও আগুন দেয় নির্বাচনবিরোধীরা এএফপি)
কম ভোটারের উপস্থিতি আর নজিরবিহীন নাশকতা ও বিরোধী জোটের হরতাল-অবরোধের
মধ্যে শেষ হয়েছে চরম উৎকণ্ঠার দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। গতকাল
রোববার নির্বাচনকে ঘিরে বোমাবাজি, সংঘর্ষ, আগুন আর গুলিতে সারাদেশে নিহত
হয়েছেন ২২ জন। তাদের মধ্যে একজন সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও একজন আনসার
সদস্যও রয়েছেন। সংঘর্ষের ঘটনায় আহত হয়েছেন প্রায় ৫০০। নির্বাচনের আগের দুই
রাতে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা ১১১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আগুন দেয় নির্বাচন
বর্জন করা ১৮ দলীয় জোটের কর্মীরা। ঠাকুরগাঁওয়ে একজন সহকারী প্রিসাইডিং
অফিসারকে প্রথমে আগুনে জ্বালিয়ে ও পরে ইট দিয়ে মাথা থেঁতলে হত্যা করেছে
জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা। এ ছাড়া সাতকানিয়ায় একজন প্রিসাইডিং অফিসারের
দুই হাত ভেঙে দেয় শিবিরকর্মীরা। ৪৩৬টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করেছে
নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ১৪৭ আসনে মোট কেন্দ্রের সংখ্যা ছিল ১৮ হাজার ২০৮টি।
গত ১৩ ডিসেম্বর মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিনেই বিরোধী জোটের বর্জন করা এ
নির্বাচনে ১৫৩ আসনের একক প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।
সার্বিক ফলাফলে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ
দিকে কম ভোটারের এ নির্বাচনে জাল ভোট, কারচুপি, ভোটারের উপস্থিতির চেয়ে ভোট
গণনায় ভোটের পরিমাণে অসঙ্গতিও দেখা গেছে। ভোট গ্রহণ শুরুর পরপরই অনিয়মের
অভিযোগ এনে ঢাকার মিরপুরসহ বিভিন্ন জেলার ৩১টি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা
নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। নির্বাচন প্রতিহত করতে গতকাল বিএনপি
নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের হরতাল ও অবরোধ ছিল। এদিকে নির্বাচন শেষ হওয়ার
পরও নির্বাচনকে ঘিরে সারাদেশে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। রোববার রাতেও
বিভিন্ন স্থান থেকে সংঘর্ষ ও নাশকতার খবর আসে। ঘোষিত ফলে আওয়ামী লীগ
নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে।
সব মিলিয়ে দেশের বিতর্কিত নির্বাচনের ইতিহাসে ৫ জানুয়ারি নতুন একটি সংযোজন হয়ে থাকল। এর আগে ১৯৮৮ সালে এরশাদের স্বৈরশাসনের আমলে নির্বাচন এবং ১৯৯৬ সালে বিএনপি সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক ও সমালোচনার ঝড় ওঠে। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে ২ হাজার ৬০০ কেন্দ্রের ফল সহিংসতার কারণে স্থগিত হয়েছিল। ওই নির্বাচনে দেশের ইতিহাসে সর্বনিম্ন ২৬ দশমিক ৬ ভাগ ভোট পড়ে। ঢাকার রিটার্নিং অফিসারের তথ্য অনুযায়ী, এবার ঢাকা মহানগরীতে ভোট পড়ার হার ২২ দশমিক ৮১ শতাংশ এবং ঢাকা জেলায় ৪৪ দশমিক ৫১ শতাংশ। কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে সারাদেশের ভোটের হার গতকাল রাত পর্যন্ত জানাতে পারেনি। সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশন সবিচালয় সূত্র জানিয়েছিল, রোববারের নির্বাচনে শতকরা ৩৩ শতাংশ ভোট পড়ার প্রাথমিক হিসাব পাওয়া গেছে। তবে রাতে নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ সাংবাদিকদের জানান, তারা ভোটের হার ৪০ শতাংশ পেরোলেই খুশি। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নতুন একটি রেকর্ড হচ্ছে ৪২টি কেন্দ্রে একটি ভোটও পড়েনি। ভোটারের উপস্থিতির হার কম হলেও ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার কিছু সময় পর নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ এ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ার কথা জানিয়েছেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট নির্বাচন বর্জনের ডাক দিলেও জনগণ তা প্রত্যাখ্যান করে ভোটে অংশ নিয়েছে। এটা গণতন্ত্রের বিজয় বলে তিনি উল্লেখ করেছেন। নির্বাচন কমিশন জানায়, স্থগিত হয়ে যাওয়া কেন্দ্রগুলোতে ২৪ জানুয়ারির আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
অন্যদিকে, ১৮ দলীয় জোটের পক্ষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভোট বর্জন করায় এক বিবৃতিতে দেশবাসীকে অভিনন্দন জানান। পরে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ওসমান ফারুক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, জনগণ এ নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে ১৮ দলীয় জোটের নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিকে সমর্থন করেছে। এ দাবিতে তিনি চলমান অনির্দিষ্টকালের অবরোধের সঙ্গে সোমবার ভোর ৬টা থেকে বুধবার ভোর ৬টা পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ডাকেন।
নাশকতার আগুন :দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে গত ২৫ অক্টোবর দিন গণনার শুরু থেকেই সহিংসতা শুরু হয়। একপর্যায়ে একের পর এক বাসে বিরোধী জোটের কর্মীদের ছুড়ে দেওয়া পেট্রোল বোমার আগুনে নিরীহ মানুষ জীবন্ত দগ্ধ হতে শুরু করলে নাশকতা আর বর্বরতা অতীতের সব সীমা ছাড়িয়ে যায়। নির্বাচনের আগের দু'দিন এ নাশকতা আরও ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে। নির্বাচনের আগের রাতেই ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের সেফরিপুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা। এ সময় অগি্নদগ্ধ সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার জোবায়দুর রহমানকে ছুরিকাঘাত এবং ইট দিয়ে মাথা থেঁতলে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে উল্লাস করে জামায়াত-শিবিরের সশস্ত্র ক্যাডাররা। পরে পুলিশ নিথর প্রিসাইডিং অফিসারকে উদ্ধার করতে গেলে তাদের ওপরও হামলা চালায় জামায়াত-শিবির। এতে পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হন।
রোববার নির্বাচনের প্রথম মুহূর্ত থেকে ভোট গ্রহণ শেষ হওয়া পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে অব্যাহতভাবে নাশকতা ও সংঘর্ষে ২২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দিনাজপুরে ৪, ফেনীতে ২, রংপুরে ২, নীলফামারীতে ২ ও ঠাকুরগাঁওয়ে ৩ জন নিহত হন। এ ছাড়া নওগাঁ, লালমনিরহাট, লক্ষ্মীপুর, মুন্সীগঞ্জ, গাইবান্ধা, যশোর, ঝিনাইদহ ও চট্টগ্রামে একজন করে নিহত হন।
দিনাজপুরের পার্বতীপুরের উত্তর সালন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে হামলা চালিয়ে ১৮ দলের কর্মীরা আনসার সদস্য ওয়াহেদকে পিটিয়ে হত্যা করে। পরে ১৮ দলের একই কর্মীরা পাশের মন্মথপুর কো-অপারেটিভ উচ্চ বিদ্যালয়ে হামলা চালাতে গেলে পুুলিশ গুলি চালালে মাসুদ রায়হান নামে এক জাগপা কর্মী নিহত হন। এ ছাড়া নশিপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আগুন দেওয়ার চেষ্টার সময় পুলিশ ১৮ দলীয় জোটের কর্মীদের ওপর হামলা চালালে বাবুল হোসেন নামে স্থানীয় বিএনপি নেতা নিহত হন। এ ছাড়া জেলার বীরগঞ্জ উপজেলায় ভুগিরহাট কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ-বিএনপি সংঘর্ষে সালাহউদ্দিন নামে একজন নিহত হন। তার রাজনৈতিক পরিচয় পাওয়া যায়নি।
ঠাকুরগাঁওয়ে রোববার সকালে বাসুদেবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে হামলার সময় পুুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে বিএনপি কর্মী হারুন ও জয়নাল নিহত হন। এ ছাড়া শিমুলতলী গ্রামে ভোট দিয়ে ফেরার পথে দুর্বৃত্তদের হামলায় নিহত হন হানিফ।
রংপুরের পীরগাছায় ২৫টি কেন্দ্রে ১৮ দলীয় জোটের ব্যানারে আগুন দেয় জামায়াত-শিবির। উপজেলার দেউতি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ভাংচুর, লুটপাট এবং পুলিশ সদস্যদের ওপর ব্যাপক মারধরের পর পুলিশ গুলি ছুড়তে বাধ্য হয়। এতে স্থানীয় জামায়াত নেতা মেরাজুল ও হাদিউজ্জামান নিহত হন।
চট্টগ্রামের লোহাগাড়া কেন্দ্রে হামলার সময় জামায়াত-শিবিরের ক্যাডারদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে এনামুল নামে এক শিবিরকর্মী নিহত হন।
লালমনিরহাটের পাটগ্রামে আওয়ামী লীগ-বিএনপির সংঘর্ষে স্থানীয় বিএনপি নেতা মোবারক হোসেন নিহত হন।
নওগাঁর মান্দায় চকদেবীরাম গ্রামে ভোটারদের মারধর করার সময় বিএনপি কর্মীদের র্যাব বাধা দিলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে বাবুল হোসেন নামে এক বিএনপি কর্মী নিহত হন।
নীলফামারীর জলঢাকায় কাচারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও আলিম মাদ্রাসা কেন্দ্রে সংঘর্ষে জামায়াত কর্মী মমতাজ ও জাহাঙ্গীর নিহত হন। লক্ষ্মীপুরের রায়গঞ্জের মাসিপুর কেন্দ্রে আগুন দেওয়ার চেষ্টার সময় পুলিশের গুলিতে রুবেল হোসেন নামে এক বিএনপি কর্মী নিহত হন। ফেনীর সোনাগাজীতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সংঘর্ষে স্থানীয় বিএনপি কর্মী জমসেদ ও শহীদুল আলম নিহত হন। গাইবান্ধার বামনডাঙ্গা এমএন উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে এক জামায়াত কর্মী নিহত হন। দিনভর সংঘর্ষ হয়েছে দেশের প্রায় প্রতিটি এলাকাতেই।
নরসিংদী জেলার শিবপুরের একটি কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের সাংসদ জহিরুল হক ভূঁইয়া মোহন ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ আলম ভূঁইয়াকে এক ঘণ্টা আটকে রাখেন ভোটাররা। কুমিল্লার মনোহরগঞ্জে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়ে নির্বাচনী সরঞ্জাম লুট করেছে বিএনপি-জামায়াতের কর্মীরা।
রাজশাহীতে শ্যামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ব্যালট ছিনতাই করে পালানোর সময় পুলিশ তিনজনকে গ্রেফতার করে এবং ব্যালট উদ্ধার করে।
ভোট গ্রহণ সম্পন্ন :নির্বাচনে ১৫৩ প্রার্থী ভোটের আগেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে গেছেন। বাকি ১৪৭ আসনে ৪ কোটি ৩৯ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৮ ভোটারের ভোট দেওয়ার সুযোগ ছিল। রোববার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ চলে। ভোটারের উপস্থিতি ছিল কম। যারা ভোট দিতে এসেছেন, তাদের মধ্যে ছিল এক ধরনের আতঙ্ক। সিলেটের বিশ্বনাথ, বগুড়া, সাতক্ষীরা ও চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে বিকেল ৩টা পর্যন্ত কেউই ভোট দিতে যাননি। বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের অলস সময় কাটাতে দেখা গেছে। দুপুরে রাজধানীর একটি কেন্দ্র পরিদর্শনের পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদও স্বীকার করেছেন, কয়েকটি দল নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় ভোটারের উপস্থিতি কম। নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার আরও বলেছেন, নির্বাচনের দুটি দিকের একটি কমিশনের হাতে, অন্যটি রাজনীতিকদের হাতে। কারিগরি ও স্বচ্ছতার দিক থেকে কমিশনের কোনো ঘাটতি নেই। তবে ভোটারের উপস্থিতি ও সহিংসতার বিষয়টি পুরোপুরি রাজনৈতিক বিষয়। স্থগিত হওয়া কেন্দ্রগুলোতে ২৪ জানুয়ারির আগেই পুনরায় ভোট গ্রহণের ব্যবস্থা করা হবে বলেও ঘোষণা দেন তিনি। রাজধানীর মিরপুরে ভোটকেন্দ্রে ককটেলের বিস্ফোরণ এবং ঢাকা-১৬ আসনের প্রার্থী বর্তমান এমপি ইলিয়াস মোল্লা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সরদার আবদুল মান্নানের সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। শ্যামপুরে জাতীয় পার্টির সমর্থকরা ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজিমপুরে ভোটকেন্দ্রের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ঢাকা-১৫ আসনের প্রার্থী ও বর্তমান এমপি কামাল আহমেদ মজুমদারের বিরুদ্ধে কেন্দ্র দখলের অভিযোগে স্বতন্ত্র প্রার্থী এখলাস উদ্দিন মোল্লা দুপুরের আগেই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি নির্বাচন কমিশনে লিখিত অভিযোগও করেন।
১৪৭ আসনে ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন ১২টি রাজনৈতিক দলের ৩৯০ প্রার্থী। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ১২০, স্বতন্ত্র ১০৪, জাতীয় পার্টির ৬৬, জেপির ২৭, বিএনএফের ২২, জাসদের ২১ ও ওয়ার্কার্স পার্টির ১৬ জন। এ ছাড়া ন্যাপের ৬, তরীকত ফেডারেশনের ৩, খেলাফত মজলিসের ২, গণতন্ত্রী পার্টির ১, গণফ্রন্টের ১ ও বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের ১ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ১৫৩ জনের মধ্যে ১২৭ জন আওয়ামী লীগের, ২০ জন জাতীয় পার্টির, ৩ জন জাসদের, ২ জন ওয়ার্কার্স পার্টির ও ১ জন জেপির।
১৪৭ আসনে মোট ভোটার ছিল ৪ কোটি ৩৯ লাখ ৮ হাজার ৭২৪। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ কোটি ২০ লাখ ৬ হাজার ৮২৬ জন। নারী ভোটার ছিল ২ কোটি ১৯ লাখ ১ হাজার ৯২৮। ১৪৭ আসনে ভোটকেন্দ্র ছিল ১৮ হাজার ২০৮টি। ভোটকক্ষ ছিল ৯১ হাজার ২১৩টি। নির্বাচন কমিশন ৪৩৬ কেন্দ্রে ভোট স্থগিতের সিদ্ধান্ত জানায়। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে আরও খবর আসে, ৪২ কেন্দ্রে একটি ভোটও পড়েনি।
নির্বাচন কমিশন কার্যালয় থেকে ভোট গ্রহণের নানা দিক পর্যবেক্ষণে সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন অন্য চার কমিশনারের মধ্যে দায়িত্ব ভাগ করে দেন। সে অনুযায়ী ঢাকা বিভাগে মো. আবদুল মোবারক, সিলেট ও চট্টগ্রামে মো. শাহনেওয়াজ, খুলনা ও বরিশাল বিভাগে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জাবেদ আলী এবং রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন মো. আবু হাফিজ। সকাল ১১টার দিকে চার কমিশনারকে নিয়ে বৈঠকে বসেন সিইসি। এরপর দুপুরে তিনি আকস্মিক ঢাকার বকশীবাজারে একটি কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। এরপর ইসি কার্যালয়ের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করেন। বিকেল ৪টায় ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি আবারও চার কমিশনারকে নিয়ে বৈঠকে বসেন। ভোটের ফল ঘোষণার সময় গভীর রাত অবধি তারা সবাই কমিশনে নিজ নিজ কক্ষে অবস্থান করছিলেন।
সব মিলিয়ে দেশের বিতর্কিত নির্বাচনের ইতিহাসে ৫ জানুয়ারি নতুন একটি সংযোজন হয়ে থাকল। এর আগে ১৯৮৮ সালে এরশাদের স্বৈরশাসনের আমলে নির্বাচন এবং ১৯৯৬ সালে বিএনপি সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক ও সমালোচনার ঝড় ওঠে। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে ২ হাজার ৬০০ কেন্দ্রের ফল সহিংসতার কারণে স্থগিত হয়েছিল। ওই নির্বাচনে দেশের ইতিহাসে সর্বনিম্ন ২৬ দশমিক ৬ ভাগ ভোট পড়ে। ঢাকার রিটার্নিং অফিসারের তথ্য অনুযায়ী, এবার ঢাকা মহানগরীতে ভোট পড়ার হার ২২ দশমিক ৮১ শতাংশ এবং ঢাকা জেলায় ৪৪ দশমিক ৫১ শতাংশ। কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে সারাদেশের ভোটের হার গতকাল রাত পর্যন্ত জানাতে পারেনি। সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশন সবিচালয় সূত্র জানিয়েছিল, রোববারের নির্বাচনে শতকরা ৩৩ শতাংশ ভোট পড়ার প্রাথমিক হিসাব পাওয়া গেছে। তবে রাতে নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ সাংবাদিকদের জানান, তারা ভোটের হার ৪০ শতাংশ পেরোলেই খুশি। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নতুন একটি রেকর্ড হচ্ছে ৪২টি কেন্দ্রে একটি ভোটও পড়েনি। ভোটারের উপস্থিতির হার কম হলেও ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার কিছু সময় পর নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ এ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ার কথা জানিয়েছেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট নির্বাচন বর্জনের ডাক দিলেও জনগণ তা প্রত্যাখ্যান করে ভোটে অংশ নিয়েছে। এটা গণতন্ত্রের বিজয় বলে তিনি উল্লেখ করেছেন। নির্বাচন কমিশন জানায়, স্থগিত হয়ে যাওয়া কেন্দ্রগুলোতে ২৪ জানুয়ারির আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
অন্যদিকে, ১৮ দলীয় জোটের পক্ষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভোট বর্জন করায় এক বিবৃতিতে দেশবাসীকে অভিনন্দন জানান। পরে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ওসমান ফারুক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, জনগণ এ নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে ১৮ দলীয় জোটের নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিকে সমর্থন করেছে। এ দাবিতে তিনি চলমান অনির্দিষ্টকালের অবরোধের সঙ্গে সোমবার ভোর ৬টা থেকে বুধবার ভোর ৬টা পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ডাকেন।
নাশকতার আগুন :দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে গত ২৫ অক্টোবর দিন গণনার শুরু থেকেই সহিংসতা শুরু হয়। একপর্যায়ে একের পর এক বাসে বিরোধী জোটের কর্মীদের ছুড়ে দেওয়া পেট্রোল বোমার আগুনে নিরীহ মানুষ জীবন্ত দগ্ধ হতে শুরু করলে নাশকতা আর বর্বরতা অতীতের সব সীমা ছাড়িয়ে যায়। নির্বাচনের আগের দু'দিন এ নাশকতা আরও ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে। নির্বাচনের আগের রাতেই ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের সেফরিপুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা। এ সময় অগি্নদগ্ধ সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার জোবায়দুর রহমানকে ছুরিকাঘাত এবং ইট দিয়ে মাথা থেঁতলে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে উল্লাস করে জামায়াত-শিবিরের সশস্ত্র ক্যাডাররা। পরে পুলিশ নিথর প্রিসাইডিং অফিসারকে উদ্ধার করতে গেলে তাদের ওপরও হামলা চালায় জামায়াত-শিবির। এতে পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হন।
রোববার নির্বাচনের প্রথম মুহূর্ত থেকে ভোট গ্রহণ শেষ হওয়া পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে অব্যাহতভাবে নাশকতা ও সংঘর্ষে ২২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দিনাজপুরে ৪, ফেনীতে ২, রংপুরে ২, নীলফামারীতে ২ ও ঠাকুরগাঁওয়ে ৩ জন নিহত হন। এ ছাড়া নওগাঁ, লালমনিরহাট, লক্ষ্মীপুর, মুন্সীগঞ্জ, গাইবান্ধা, যশোর, ঝিনাইদহ ও চট্টগ্রামে একজন করে নিহত হন।
দিনাজপুরের পার্বতীপুরের উত্তর সালন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে হামলা চালিয়ে ১৮ দলের কর্মীরা আনসার সদস্য ওয়াহেদকে পিটিয়ে হত্যা করে। পরে ১৮ দলের একই কর্মীরা পাশের মন্মথপুর কো-অপারেটিভ উচ্চ বিদ্যালয়ে হামলা চালাতে গেলে পুুলিশ গুলি চালালে মাসুদ রায়হান নামে এক জাগপা কর্মী নিহত হন। এ ছাড়া নশিপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আগুন দেওয়ার চেষ্টার সময় পুলিশ ১৮ দলীয় জোটের কর্মীদের ওপর হামলা চালালে বাবুল হোসেন নামে স্থানীয় বিএনপি নেতা নিহত হন। এ ছাড়া জেলার বীরগঞ্জ উপজেলায় ভুগিরহাট কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ-বিএনপি সংঘর্ষে সালাহউদ্দিন নামে একজন নিহত হন। তার রাজনৈতিক পরিচয় পাওয়া যায়নি।
ঠাকুরগাঁওয়ে রোববার সকালে বাসুদেবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে হামলার সময় পুুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে বিএনপি কর্মী হারুন ও জয়নাল নিহত হন। এ ছাড়া শিমুলতলী গ্রামে ভোট দিয়ে ফেরার পথে দুর্বৃত্তদের হামলায় নিহত হন হানিফ।
রংপুরের পীরগাছায় ২৫টি কেন্দ্রে ১৮ দলীয় জোটের ব্যানারে আগুন দেয় জামায়াত-শিবির। উপজেলার দেউতি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ভাংচুর, লুটপাট এবং পুলিশ সদস্যদের ওপর ব্যাপক মারধরের পর পুলিশ গুলি ছুড়তে বাধ্য হয়। এতে স্থানীয় জামায়াত নেতা মেরাজুল ও হাদিউজ্জামান নিহত হন।
চট্টগ্রামের লোহাগাড়া কেন্দ্রে হামলার সময় জামায়াত-শিবিরের ক্যাডারদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে এনামুল নামে এক শিবিরকর্মী নিহত হন।
লালমনিরহাটের পাটগ্রামে আওয়ামী লীগ-বিএনপির সংঘর্ষে স্থানীয় বিএনপি নেতা মোবারক হোসেন নিহত হন।
নওগাঁর মান্দায় চকদেবীরাম গ্রামে ভোটারদের মারধর করার সময় বিএনপি কর্মীদের র্যাব বাধা দিলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে বাবুল হোসেন নামে এক বিএনপি কর্মী নিহত হন।
নীলফামারীর জলঢাকায় কাচারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও আলিম মাদ্রাসা কেন্দ্রে সংঘর্ষে জামায়াত কর্মী মমতাজ ও জাহাঙ্গীর নিহত হন। লক্ষ্মীপুরের রায়গঞ্জের মাসিপুর কেন্দ্রে আগুন দেওয়ার চেষ্টার সময় পুলিশের গুলিতে রুবেল হোসেন নামে এক বিএনপি কর্মী নিহত হন। ফেনীর সোনাগাজীতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সংঘর্ষে স্থানীয় বিএনপি কর্মী জমসেদ ও শহীদুল আলম নিহত হন। গাইবান্ধার বামনডাঙ্গা এমএন উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে এক জামায়াত কর্মী নিহত হন। দিনভর সংঘর্ষ হয়েছে দেশের প্রায় প্রতিটি এলাকাতেই।
নরসিংদী জেলার শিবপুরের একটি কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের সাংসদ জহিরুল হক ভূঁইয়া মোহন ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ আলম ভূঁইয়াকে এক ঘণ্টা আটকে রাখেন ভোটাররা। কুমিল্লার মনোহরগঞ্জে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়ে নির্বাচনী সরঞ্জাম লুট করেছে বিএনপি-জামায়াতের কর্মীরা।
রাজশাহীতে শ্যামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ব্যালট ছিনতাই করে পালানোর সময় পুলিশ তিনজনকে গ্রেফতার করে এবং ব্যালট উদ্ধার করে।
ভোট গ্রহণ সম্পন্ন :নির্বাচনে ১৫৩ প্রার্থী ভোটের আগেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে গেছেন। বাকি ১৪৭ আসনে ৪ কোটি ৩৯ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৮ ভোটারের ভোট দেওয়ার সুযোগ ছিল। রোববার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ চলে। ভোটারের উপস্থিতি ছিল কম। যারা ভোট দিতে এসেছেন, তাদের মধ্যে ছিল এক ধরনের আতঙ্ক। সিলেটের বিশ্বনাথ, বগুড়া, সাতক্ষীরা ও চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে বিকেল ৩টা পর্যন্ত কেউই ভোট দিতে যাননি। বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের অলস সময় কাটাতে দেখা গেছে। দুপুরে রাজধানীর একটি কেন্দ্র পরিদর্শনের পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদও স্বীকার করেছেন, কয়েকটি দল নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় ভোটারের উপস্থিতি কম। নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার আরও বলেছেন, নির্বাচনের দুটি দিকের একটি কমিশনের হাতে, অন্যটি রাজনীতিকদের হাতে। কারিগরি ও স্বচ্ছতার দিক থেকে কমিশনের কোনো ঘাটতি নেই। তবে ভোটারের উপস্থিতি ও সহিংসতার বিষয়টি পুরোপুরি রাজনৈতিক বিষয়। স্থগিত হওয়া কেন্দ্রগুলোতে ২৪ জানুয়ারির আগেই পুনরায় ভোট গ্রহণের ব্যবস্থা করা হবে বলেও ঘোষণা দেন তিনি। রাজধানীর মিরপুরে ভোটকেন্দ্রে ককটেলের বিস্ফোরণ এবং ঢাকা-১৬ আসনের প্রার্থী বর্তমান এমপি ইলিয়াস মোল্লা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সরদার আবদুল মান্নানের সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। শ্যামপুরে জাতীয় পার্টির সমর্থকরা ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজিমপুরে ভোটকেন্দ্রের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ঢাকা-১৫ আসনের প্রার্থী ও বর্তমান এমপি কামাল আহমেদ মজুমদারের বিরুদ্ধে কেন্দ্র দখলের অভিযোগে স্বতন্ত্র প্রার্থী এখলাস উদ্দিন মোল্লা দুপুরের আগেই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি নির্বাচন কমিশনে লিখিত অভিযোগও করেন।
১৪৭ আসনে ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন ১২টি রাজনৈতিক দলের ৩৯০ প্রার্থী। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ১২০, স্বতন্ত্র ১০৪, জাতীয় পার্টির ৬৬, জেপির ২৭, বিএনএফের ২২, জাসদের ২১ ও ওয়ার্কার্স পার্টির ১৬ জন। এ ছাড়া ন্যাপের ৬, তরীকত ফেডারেশনের ৩, খেলাফত মজলিসের ২, গণতন্ত্রী পার্টির ১, গণফ্রন্টের ১ ও বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের ১ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ১৫৩ জনের মধ্যে ১২৭ জন আওয়ামী লীগের, ২০ জন জাতীয় পার্টির, ৩ জন জাসদের, ২ জন ওয়ার্কার্স পার্টির ও ১ জন জেপির।
১৪৭ আসনে মোট ভোটার ছিল ৪ কোটি ৩৯ লাখ ৮ হাজার ৭২৪। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ কোটি ২০ লাখ ৬ হাজার ৮২৬ জন। নারী ভোটার ছিল ২ কোটি ১৯ লাখ ১ হাজার ৯২৮। ১৪৭ আসনে ভোটকেন্দ্র ছিল ১৮ হাজার ২০৮টি। ভোটকক্ষ ছিল ৯১ হাজার ২১৩টি। নির্বাচন কমিশন ৪৩৬ কেন্দ্রে ভোট স্থগিতের সিদ্ধান্ত জানায়। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে আরও খবর আসে, ৪২ কেন্দ্রে একটি ভোটও পড়েনি।
নির্বাচন কমিশন কার্যালয় থেকে ভোট গ্রহণের নানা দিক পর্যবেক্ষণে সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন অন্য চার কমিশনারের মধ্যে দায়িত্ব ভাগ করে দেন। সে অনুযায়ী ঢাকা বিভাগে মো. আবদুল মোবারক, সিলেট ও চট্টগ্রামে মো. শাহনেওয়াজ, খুলনা ও বরিশাল বিভাগে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জাবেদ আলী এবং রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন মো. আবু হাফিজ। সকাল ১১টার দিকে চার কমিশনারকে নিয়ে বৈঠকে বসেন সিইসি। এরপর দুপুরে তিনি আকস্মিক ঢাকার বকশীবাজারে একটি কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। এরপর ইসি কার্যালয়ের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করেন। বিকেল ৪টায় ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি আবারও চার কমিশনারকে নিয়ে বৈঠকে বসেন। ভোটের ফল ঘোষণার সময় গভীর রাত অবধি তারা সবাই কমিশনে নিজ নিজ কক্ষে অবস্থান করছিলেন।
No comments