উৎসবের নির্বাচন হয়নি by শামস রাশীদ জয়
(দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সমকালের ফেসবুক পাতা ও ব্যক্তিগত টাইমলাইনে প্রকাশিত মতামত)
ভোটদানে কোথাও কোনো সরকারি বাধার খবর পেলাম না। সরকারি পক্ষপাতিত্বের খবরও
না। বাধা যা আসছে তা সবই মানুষ পোড়ানো, স্কুল জ্বালানো, বই পোড়ানো, শিক্ষক
খুন করা সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে। তাহলে যে সংখ্যালঘুরা 'একতরফা ভোট. হায়
হায় হায়' বলে মাতম করছে, তারা কি সেই সন্ত্রাসীদের পক্ষাবলম্বনই করছে না?
ব্যালট পেপারে শিবিরের মার্কা ও শিবিরের অর্থে লালিত দলের মার্কা থাকা না
থাকায় গণতন্ত্রের কী আসে যায়?
মেহেদী হাসান সুমন
কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করার সঙ্গে সঙ্গেই ভোট কারে দিমু সেই বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়ে গেছে। সেই সিদ্ধান্ত প্রয়োগের কোনো সুযোগই পাইলাম না। আজ (গতকাল) সারাদেশে ভোট হচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন প্রতিবেশীর বাড়িতে পিকনিক হচ্ছে।
সুব্রত দেবনাথ
এই নির্বাচন হয়তো সাংবিধানিকভাবে গ্রহণযোগ্য; কিন্তু রাজনৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। সেটা ঠেকানোর জন্য যে জ্বালাও-পোড়াও শুরু হয়েছে, সেটা গ্রহণযোগ্য তো নয়ই, বরং ঘৃণ্য ছাড়া আর কোনো শব্দ মাথায় আসে না।
নুরুদ্দীন আহমেদ বাপ্পী
শেখ ফজলে নূর তাপস আমার এলাকা থেকে আবার নির্বাচিত হলেন। অভিনন্দন। এ জন্য আপনাকে বিন্দুমাত্রও কষ্ট করতে হয়নি! গত ৫ বছরে যেমন এলাকার কাজে কোনো কষ্ট করতে হয়নি, তেমনি জয়ী হতেও কষ্ট করতে হয়নি। এই যে আপনার সম্পদের পরিমাণ ৯১ গুণ হয়ে গেল, এটাও তো তারই ইচ্ছা। আপনার এলাকার একজন আম আদমি হিসেবে খুশি হলাম। এলাকার উন্নতি হয়নি তো কী হয়েছে? এলাকার অন্তত একটা পরিবারের তো আয় বাড়ছে!
একুশ তপাদার
আমি সিলেট-১ আসনের ভোটার। অর্থমন্ত্রী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে গেছেন। ভোট দেওয়ার ইচ্ছা থাকলেও দরকার না থাকায় আফসোস হচ্ছে। যে ১৫৩ আসনে নির্বাচনের দরকার হচ্ছে না_ সহজ চিন্তা যদি করি, তাহলে দায় কার? যারা নির্বাচনে এসেছে তাদের? নাকি যারা আসেনি তাদের? যারা নির্বাচনে আসেনি তারা এলেই তো আর একতরফা হতো না।
শেরিফ আল সায়ার
বিএনপি টিভি দেখতেছে আর হাসতেছে। আওয়ামী লীগও হাসতেছে। জনগণ 'হাঁ' হয়ে তামাশা দেখতাছে। আর বিদেশিরা ঘটনা অবজারভ করতেছে। জামায়াত তাদের রশি ছাইড়া লোহার শিকল রেডি করতেছে। পল্গ্যান করতেছে কেমনে আরও শক্ত কইরা বিএনপিরে বাইন্ধা রাখা যায়।
আরিফ আর হোসেন
'তান্ত্রিক নির্বাচন'। 'গণ' তো বাসাতেই বসে আছে।
সাইফুল ওয়াদেদ হেলাল
সালটা '৭৭ কিনা মনে নেই, খুবই ছোট ছিলাম। জিয়াউর রহমানের হ্যাঁ/না ভোট। জীবনে প্রথম নিজ হাতে দুইখান ভোট দিছিলাম! আদমজী জুট মিলের এক নম্বর ক্যান্টিনের ভোটকেন্দ্রে ভোট হইছিল। ভোটকেন্দ্রের কাছে গিয়ে দারোয়ান কিসিমের একজনের কাছে গিয়ে ভোট দেওয়ার আবদার ধরলাম। কতক্ষণ ঘ্যানঘ্যান করার পর ধমক দিয়ে হাতে ব্যালট ধরিয়ে দিয়ে বলল, যা যা তাড়াতাড়ি দিয়ে আয়। ছালার চট দিয়ে ঘেরা বুথের ভেতরটা দেখতে কেমন সেটাই আবিষ্কার করা ছিল উদ্দেশ্য। ভোট ছিল হ্যাঁ/না; কিন্তু বাক্স ছিল একটা, আরেকটা বাক্সা খুঁজে পাইনি। একবার ভোট দেওয়ার পর কতক্ষণ ঘুরেটুরে আরও কয়েক বন্ধু মিলে আবারও ভোট দিতে গেলাম।
আমাদের ছোটবেলায় ভোট ছিল ঈদের মতো আনন্দের। সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হতো বিটিভিতে ননস্টপ ভোটের অনুষ্ঠান। আহা কী যে আনন্দ! প্রায় তিন দিন ধরে ডাবল দৈর্ঘ্যের ছায়াছন্দ, দুই দুইটা বাংলা সিনেমা, ইংরেজি সিনেমা, ভোট উপলক্ষে পূর্ণ দৈর্ঘ্য বিশেষ নাটক, আধুনিক গান, ব্যান্ড শো ও বাচ্চাদের বিশেষ অনুষ্ঠান। হায়রে মজার ভোট! মনে আছে, এ ধরনের বেশ কয়েকটা ভোটের অনুষ্ঠানের ভেতর দিয়ে আমাদের শৈশব আনন্দময় হয়ে উঠেছিল। বড় হয়ে জানলাম, ভোট আসলেই বাঙালির জীবনে উৎসবের মতো। পুরনো সেই ভোটের কথা বলব কিরে ভাই, সেই রাত জেগে টিভি দেখা সে কি ভোলা যায়।
সবাইকে ভোটের দিনে অনেক অনেক শুভেচ্ছা। মনের আনন্দে সবাই ভোটকেন্দ্রে যান আর দুই হাতে ভোট দিয়ে আসুন। ভোট আনন্দে একে অন্যকে আলিঙ্গন করুন। মনে রাখবেন, দল যার তার ভোট সবার। সবাইকে প্রাণঢালা (জানি না কার প্রাণ যাবে আর কারটা থাকবে!) ভোট মোবারক!
আরাফাত শান্ত
একদলীয় ভোট আমাদের দেশে নতুন না, কমবেশি সবাই করেছে নানা উছিলায়। খালেদা জিয়ার চাটুকাররাও তার নামের আগে বলে তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, মইন ইউরা না এলে হতো চারবার। এখন শেখ হাসিনাও দানে দানে তিনবার! তবে অনেক দিন পর টিভি দেখে বুঝলাম এবার সাচ্চা আওয়ামী লীগের ভোটার ও কর্মীরাও ভোট দিতে কেন্দ্রে যায়নি। দল হিসেবে এটাই আওয়ামী লীগের বড় ব্যর্থতা!
নুরুন্নবী চৌধুরী হাছিব
আজকে থাকার কথা ছিল গ্রামের বাড়িতে. উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দেওয়ার কথা ছিল। হলো না। আমার জেলা চাঁদপুরের কোনো আসনেই নির্বাচনের প্রয়োজন হয়নি। ভাগ্যিস সব আসনে অন্তত একজন করে প্রার্থী ছিলেন. যদি অন্তত একজনও না থাকতেন? কী যে হতো. বলা হতো অমুক আসনে কোনো প্রার্থীই নেই।
এইচ এম বাবুল চৌধুরী
হাজারো বাধা সৃষ্টি করেও নির্বাচন ঠেকানো গেল না_ এটাই শেষ কথা। কে বা কারা ভোটদানে বাধা দিয়েছে জনগণ দেখেছে। তারপরও নির্বাচন হচ্ছে এটাই সরকারের বড় জয়।
প্রবীর শিকদার
বিচ্ছিন্ন সহিংসতার মধ্যেও মানুষ ভোট দিতে কেন্দ্রে আসছেন। এই মানুষগুলো যেন একেকজন যোদ্ধা। স্যালুট ওই মহান মানুষদের।
গোলাম মুর্তজা
বিএনপির নির্বাচন প্রতিহত করার ক্ষমতা কতটুকু আছে, সেটা তো বোঝাই গেল। আবার এই ক্ষমতা দিয়েই ভোটারশূন্য এবং কিছুটা রক্তাক্ত নির্বাচন করতে বাধ্য হলো সরকার। নির্বাচনটিকে সত্যিকার অর্থে হাস্যকর করে দিলেন আসলে এরশাদ। জাতীয় পার্টি যদি নাটক ছাড়া নির্বাচনে থাকত, তবে এতটা হাস্যকর হতো না নির্বাচন। এরশাদ সাহেব হাসপাতালের ফাইভ স্টার মানের ভিভিআইপি কেবিনে অবসরযাপন করছেন। আছে বিনোদনের সব ব্যবস্থা। গলফ খেলছেন নিয়মিত। তিনি নিজে কমপক্ষে একশ' কোটি টাকা ইতিমধ্যে পেয়ে গেছেন। তারপরও জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে তাকে রাজি করানো গেল না। তার মাঠের নেতারা যারা এখনও প্রার্থী আছেন, একেকজন ২৫ লাখ থেকে এক কোটি টাকা পেয়েছেন। ভোট নেই, ভোটার নেই, আছে শুধু টাকা। বেশ ভালো নির্বাচনই করল আওয়ামী লীগ সরকার। নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে থাকল। বিএনপি প্রমাণ করল, ভোট থাকলেও আন্দোলনে তার অবস্থা বড়ই করুণ। জামায়াত যে সন্ত্রাসী শক্তি, সেটা আর একবার প্রমাণ হলো।
যে কোনো সময়, যে কোনো দিকে যাওয়ার পথ খোলা রেখে, আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে, স্বৈরাচার এরশাদ তার গ্রহণযোগ্যতা কিছুটা বাড়িয়ে নিলেন আওয়ামী লীগের কাঁধে বন্দুক রেখে। হায়! ২০০৮-এর সেই আওয়ামী লীগ, আর ২০১৪'র এই আওয়ামী লীগ!
জিয়াউদ্দিন সরকার
আমার ভোট আমার অধিকার, যাকে খুশি তাকে দেব! কিন্তু... গতবার 'না' ভোট দিয়েছিলাম যোগ্য প্রার্থীর অভাবে আর এবার সেই কষ্টটুকুও করতে হয়নি।
হাসিবুল হাসান শারদ
বিএনপি নির্বাচনে আসেনি, এক হিসেবে ভালোই হয়েছে: দেশের গুরুত্বপূর্ণ কিছু স্বার্থের বিবেচনায় দলটি অবাঞ্ছিতই। এই দলটি নির্বাচনে এলে নির্বোধদের ভোটে জিতে যেত খুব সম্ভবত, যা দেশের ভালো বয়ে আনত না, বরং অনেক বেশি খারাপির কারণ হতো। বিএনপি ক্ষমতায় আসা মানে জামায়াতসহ মৌলবাদী জঙ্গিদের অভয়ারণ্যে পরিণত হতো দেশ এবং আহমদ শফী-জাতীয় লোকজনও হয়ে যেত দেশের নীতিনির্ধারক স্থানীয় ধর্মীয় নেতা, যা কোনোমতেই ভালো হতো না। বিশেষত দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী যেখানে নারী, সেখানে শফীদের উত্থান নারীর জন্য যারপরনাই ভয়ঙ্কর হতো। বিএনপি বলেছিল, হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা তারা বাস্তবায়ন করবে। যদি মধ্যযুগীয় ওই ১৩ দফা বাস্তবায়ন করে বসার সুযোগ পেত তারা, দেশ কত বছর পেছাত জানতে আসিফ নজরুল হওয়া লাগে না। আর মোল্লাতন্ত্রের বলি হতো আমাদের বাঙালি সংস্কৃতি ও সৃজনশীল সব শিল্পকলা। সংস্কৃতি ও শিল্পকলা ধ্বংসে এবং সব পাঠ্যপুস্তক থেকে বাঙালির ঐতিহ্য ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তুলে দিতে বিএনপি একটুও কুণ্ঠিত হতো না। হেফাজতের চাপে হয়তো দেশের অসংখ্য শহীদ মিনার ও ভাস্কর্য ভাংচুর হতো এবং পাকিস্তানপন্থি নানা উদ্ভট, আপত্তিকর ও স্বাধীনতাবিরোধী কথাবার্তায় ছেয়ে যেত মোল্লাদের মাইক। দল বেঁধে বেরিয়ে আসত একেকটি জঙ্গিচক্র, যুদ্ধাপরাধী চক্র এবং হত্যাকাণ্ডের শিকার হতেন দেশের অসংখ্য মুক্তবুদ্ধিসম্পন্ন লেখক ও সংস্কৃতিকর্মী।
মাইনুদ্দিন ফিরোজ
আমি একটি শব্দ খুঁজছিলাম, যা সবকিছুকে সংজ্ঞায়িত করে। উন্মুক্ত রাস্তায় একটি গাড়ি হাতের কাছে পেয়ে হঠাৎ করে নিজেকে মহাবীর একিলিস মনে করা, জনগণের ভোটাধিকার রক্ষার মহান ব্রত নিয়ে ট্রাকচালকের গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেওয়ার ব্যাপারগুলো তখন ঘটে, যখন মানুষের আর কোনো চক্ষুলজ্জা অবশিষ্ট থাকে না। আমরা যথেষ্ট বেশরম হয়ে পড়েছি প্রতিটি গোষ্ঠী, প্রতিটি শ্রেণী এবং প্রায় প্রতিটি মানুষ। আগামীতে হয়তো নির্লজ্জতা মানে হবে বিরোধী দলের কোনো কাণ্ড। অথবা এ কথাটি খালেদা জিয়ার বক্তব্যের নিচে লিখলে নির্লজ্জতার মানে হতো ইংরেজি না জানা। কিন্তু ৫ জানুয়ারি বলে নির্লজ্জতা শব্দটা নির্বাচনকে সংজ্ঞায়ন করে ফেলে। হয়তো আমিও নিরপেক্ষ নই বলেই বেছে বেছে ৫ জানুয়ারি দুপুরেই কথাটা লিখেছি। যতই আড়াল করতে চাই, একচক্ষুবিশিষ্ট চরিত্র আমাদের জাহান্নামে নিয়ে ছাড়বে।
মাসুদা ভাট্টি
নির্বাচন বর্জন করেছি, নির্বাচন প্রতিহত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি, এখন সকলে মিলে নির্বাচনের ছিদ্র খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি_ সন্ধ্যার সময় রায় দেব, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি! আমরা বিএনপি-জামায়াত, আমরা সুশীল, আমরা বিদেশি পর্যবেক্ষক, আমরা কূটনীতিক।
মশিউর রহমান
নওগাঁ শান্তিপ্রিয় একটি রাজনৈতিক এলাকা, এখানে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে দূরত্ব খুব বেশি নেই বললেই চলে আর এই শান্তিপ্রিয় রাজনৈতিক চর্চার গুরু প্রয়াত জননেতা আ. জলিল। নওগাঁ সদর আসনে প্রয়াত জননেতা আ. জলিলের দুই শিষ্যের মধ্যে লড়াই চলছে। নওগাঁ সদর আসনে ভোট শান্তিপূর্ণভাবেই চলছে, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটারের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমি ভোট দিয়ে এলাম।
প্রশান্ত রায়
পাবনায় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সন্ত্রাসী বাহিনীর ফিল্মি স্টাইলে ভোট ছিনতাই। এ ধরনের নির্বাচনেও ফিল্মি স্টাইলের দরকার হয়?
মেহেদী হাসান সুমন
কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করার সঙ্গে সঙ্গেই ভোট কারে দিমু সেই বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়ে গেছে। সেই সিদ্ধান্ত প্রয়োগের কোনো সুযোগই পাইলাম না। আজ (গতকাল) সারাদেশে ভোট হচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন প্রতিবেশীর বাড়িতে পিকনিক হচ্ছে।
সুব্রত দেবনাথ
এই নির্বাচন হয়তো সাংবিধানিকভাবে গ্রহণযোগ্য; কিন্তু রাজনৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। সেটা ঠেকানোর জন্য যে জ্বালাও-পোড়াও শুরু হয়েছে, সেটা গ্রহণযোগ্য তো নয়ই, বরং ঘৃণ্য ছাড়া আর কোনো শব্দ মাথায় আসে না।
নুরুদ্দীন আহমেদ বাপ্পী
শেখ ফজলে নূর তাপস আমার এলাকা থেকে আবার নির্বাচিত হলেন। অভিনন্দন। এ জন্য আপনাকে বিন্দুমাত্রও কষ্ট করতে হয়নি! গত ৫ বছরে যেমন এলাকার কাজে কোনো কষ্ট করতে হয়নি, তেমনি জয়ী হতেও কষ্ট করতে হয়নি। এই যে আপনার সম্পদের পরিমাণ ৯১ গুণ হয়ে গেল, এটাও তো তারই ইচ্ছা। আপনার এলাকার একজন আম আদমি হিসেবে খুশি হলাম। এলাকার উন্নতি হয়নি তো কী হয়েছে? এলাকার অন্তত একটা পরিবারের তো আয় বাড়ছে!
একুশ তপাদার
আমি সিলেট-১ আসনের ভোটার। অর্থমন্ত্রী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে গেছেন। ভোট দেওয়ার ইচ্ছা থাকলেও দরকার না থাকায় আফসোস হচ্ছে। যে ১৫৩ আসনে নির্বাচনের দরকার হচ্ছে না_ সহজ চিন্তা যদি করি, তাহলে দায় কার? যারা নির্বাচনে এসেছে তাদের? নাকি যারা আসেনি তাদের? যারা নির্বাচনে আসেনি তারা এলেই তো আর একতরফা হতো না।
শেরিফ আল সায়ার
বিএনপি টিভি দেখতেছে আর হাসতেছে। আওয়ামী লীগও হাসতেছে। জনগণ 'হাঁ' হয়ে তামাশা দেখতাছে। আর বিদেশিরা ঘটনা অবজারভ করতেছে। জামায়াত তাদের রশি ছাইড়া লোহার শিকল রেডি করতেছে। পল্গ্যান করতেছে কেমনে আরও শক্ত কইরা বিএনপিরে বাইন্ধা রাখা যায়।
আরিফ আর হোসেন
'তান্ত্রিক নির্বাচন'। 'গণ' তো বাসাতেই বসে আছে।
সাইফুল ওয়াদেদ হেলাল
সালটা '৭৭ কিনা মনে নেই, খুবই ছোট ছিলাম। জিয়াউর রহমানের হ্যাঁ/না ভোট। জীবনে প্রথম নিজ হাতে দুইখান ভোট দিছিলাম! আদমজী জুট মিলের এক নম্বর ক্যান্টিনের ভোটকেন্দ্রে ভোট হইছিল। ভোটকেন্দ্রের কাছে গিয়ে দারোয়ান কিসিমের একজনের কাছে গিয়ে ভোট দেওয়ার আবদার ধরলাম। কতক্ষণ ঘ্যানঘ্যান করার পর ধমক দিয়ে হাতে ব্যালট ধরিয়ে দিয়ে বলল, যা যা তাড়াতাড়ি দিয়ে আয়। ছালার চট দিয়ে ঘেরা বুথের ভেতরটা দেখতে কেমন সেটাই আবিষ্কার করা ছিল উদ্দেশ্য। ভোট ছিল হ্যাঁ/না; কিন্তু বাক্স ছিল একটা, আরেকটা বাক্সা খুঁজে পাইনি। একবার ভোট দেওয়ার পর কতক্ষণ ঘুরেটুরে আরও কয়েক বন্ধু মিলে আবারও ভোট দিতে গেলাম।
আমাদের ছোটবেলায় ভোট ছিল ঈদের মতো আনন্দের। সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হতো বিটিভিতে ননস্টপ ভোটের অনুষ্ঠান। আহা কী যে আনন্দ! প্রায় তিন দিন ধরে ডাবল দৈর্ঘ্যের ছায়াছন্দ, দুই দুইটা বাংলা সিনেমা, ইংরেজি সিনেমা, ভোট উপলক্ষে পূর্ণ দৈর্ঘ্য বিশেষ নাটক, আধুনিক গান, ব্যান্ড শো ও বাচ্চাদের বিশেষ অনুষ্ঠান। হায়রে মজার ভোট! মনে আছে, এ ধরনের বেশ কয়েকটা ভোটের অনুষ্ঠানের ভেতর দিয়ে আমাদের শৈশব আনন্দময় হয়ে উঠেছিল। বড় হয়ে জানলাম, ভোট আসলেই বাঙালির জীবনে উৎসবের মতো। পুরনো সেই ভোটের কথা বলব কিরে ভাই, সেই রাত জেগে টিভি দেখা সে কি ভোলা যায়।
সবাইকে ভোটের দিনে অনেক অনেক শুভেচ্ছা। মনের আনন্দে সবাই ভোটকেন্দ্রে যান আর দুই হাতে ভোট দিয়ে আসুন। ভোট আনন্দে একে অন্যকে আলিঙ্গন করুন। মনে রাখবেন, দল যার তার ভোট সবার। সবাইকে প্রাণঢালা (জানি না কার প্রাণ যাবে আর কারটা থাকবে!) ভোট মোবারক!
আরাফাত শান্ত
একদলীয় ভোট আমাদের দেশে নতুন না, কমবেশি সবাই করেছে নানা উছিলায়। খালেদা জিয়ার চাটুকাররাও তার নামের আগে বলে তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, মইন ইউরা না এলে হতো চারবার। এখন শেখ হাসিনাও দানে দানে তিনবার! তবে অনেক দিন পর টিভি দেখে বুঝলাম এবার সাচ্চা আওয়ামী লীগের ভোটার ও কর্মীরাও ভোট দিতে কেন্দ্রে যায়নি। দল হিসেবে এটাই আওয়ামী লীগের বড় ব্যর্থতা!
নুরুন্নবী চৌধুরী হাছিব
আজকে থাকার কথা ছিল গ্রামের বাড়িতে. উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দেওয়ার কথা ছিল। হলো না। আমার জেলা চাঁদপুরের কোনো আসনেই নির্বাচনের প্রয়োজন হয়নি। ভাগ্যিস সব আসনে অন্তত একজন করে প্রার্থী ছিলেন. যদি অন্তত একজনও না থাকতেন? কী যে হতো. বলা হতো অমুক আসনে কোনো প্রার্থীই নেই।
এইচ এম বাবুল চৌধুরী
হাজারো বাধা সৃষ্টি করেও নির্বাচন ঠেকানো গেল না_ এটাই শেষ কথা। কে বা কারা ভোটদানে বাধা দিয়েছে জনগণ দেখেছে। তারপরও নির্বাচন হচ্ছে এটাই সরকারের বড় জয়।
প্রবীর শিকদার
বিচ্ছিন্ন সহিংসতার মধ্যেও মানুষ ভোট দিতে কেন্দ্রে আসছেন। এই মানুষগুলো যেন একেকজন যোদ্ধা। স্যালুট ওই মহান মানুষদের।
গোলাম মুর্তজা
বিএনপির নির্বাচন প্রতিহত করার ক্ষমতা কতটুকু আছে, সেটা তো বোঝাই গেল। আবার এই ক্ষমতা দিয়েই ভোটারশূন্য এবং কিছুটা রক্তাক্ত নির্বাচন করতে বাধ্য হলো সরকার। নির্বাচনটিকে সত্যিকার অর্থে হাস্যকর করে দিলেন আসলে এরশাদ। জাতীয় পার্টি যদি নাটক ছাড়া নির্বাচনে থাকত, তবে এতটা হাস্যকর হতো না নির্বাচন। এরশাদ সাহেব হাসপাতালের ফাইভ স্টার মানের ভিভিআইপি কেবিনে অবসরযাপন করছেন। আছে বিনোদনের সব ব্যবস্থা। গলফ খেলছেন নিয়মিত। তিনি নিজে কমপক্ষে একশ' কোটি টাকা ইতিমধ্যে পেয়ে গেছেন। তারপরও জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে তাকে রাজি করানো গেল না। তার মাঠের নেতারা যারা এখনও প্রার্থী আছেন, একেকজন ২৫ লাখ থেকে এক কোটি টাকা পেয়েছেন। ভোট নেই, ভোটার নেই, আছে শুধু টাকা। বেশ ভালো নির্বাচনই করল আওয়ামী লীগ সরকার। নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে থাকল। বিএনপি প্রমাণ করল, ভোট থাকলেও আন্দোলনে তার অবস্থা বড়ই করুণ। জামায়াত যে সন্ত্রাসী শক্তি, সেটা আর একবার প্রমাণ হলো।
যে কোনো সময়, যে কোনো দিকে যাওয়ার পথ খোলা রেখে, আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে, স্বৈরাচার এরশাদ তার গ্রহণযোগ্যতা কিছুটা বাড়িয়ে নিলেন আওয়ামী লীগের কাঁধে বন্দুক রেখে। হায়! ২০০৮-এর সেই আওয়ামী লীগ, আর ২০১৪'র এই আওয়ামী লীগ!
জিয়াউদ্দিন সরকার
আমার ভোট আমার অধিকার, যাকে খুশি তাকে দেব! কিন্তু... গতবার 'না' ভোট দিয়েছিলাম যোগ্য প্রার্থীর অভাবে আর এবার সেই কষ্টটুকুও করতে হয়নি।
হাসিবুল হাসান শারদ
বিএনপি নির্বাচনে আসেনি, এক হিসেবে ভালোই হয়েছে: দেশের গুরুত্বপূর্ণ কিছু স্বার্থের বিবেচনায় দলটি অবাঞ্ছিতই। এই দলটি নির্বাচনে এলে নির্বোধদের ভোটে জিতে যেত খুব সম্ভবত, যা দেশের ভালো বয়ে আনত না, বরং অনেক বেশি খারাপির কারণ হতো। বিএনপি ক্ষমতায় আসা মানে জামায়াতসহ মৌলবাদী জঙ্গিদের অভয়ারণ্যে পরিণত হতো দেশ এবং আহমদ শফী-জাতীয় লোকজনও হয়ে যেত দেশের নীতিনির্ধারক স্থানীয় ধর্মীয় নেতা, যা কোনোমতেই ভালো হতো না। বিশেষত দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী যেখানে নারী, সেখানে শফীদের উত্থান নারীর জন্য যারপরনাই ভয়ঙ্কর হতো। বিএনপি বলেছিল, হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা তারা বাস্তবায়ন করবে। যদি মধ্যযুগীয় ওই ১৩ দফা বাস্তবায়ন করে বসার সুযোগ পেত তারা, দেশ কত বছর পেছাত জানতে আসিফ নজরুল হওয়া লাগে না। আর মোল্লাতন্ত্রের বলি হতো আমাদের বাঙালি সংস্কৃতি ও সৃজনশীল সব শিল্পকলা। সংস্কৃতি ও শিল্পকলা ধ্বংসে এবং সব পাঠ্যপুস্তক থেকে বাঙালির ঐতিহ্য ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তুলে দিতে বিএনপি একটুও কুণ্ঠিত হতো না। হেফাজতের চাপে হয়তো দেশের অসংখ্য শহীদ মিনার ও ভাস্কর্য ভাংচুর হতো এবং পাকিস্তানপন্থি নানা উদ্ভট, আপত্তিকর ও স্বাধীনতাবিরোধী কথাবার্তায় ছেয়ে যেত মোল্লাদের মাইক। দল বেঁধে বেরিয়ে আসত একেকটি জঙ্গিচক্র, যুদ্ধাপরাধী চক্র এবং হত্যাকাণ্ডের শিকার হতেন দেশের অসংখ্য মুক্তবুদ্ধিসম্পন্ন লেখক ও সংস্কৃতিকর্মী।
মাইনুদ্দিন ফিরোজ
আমি একটি শব্দ খুঁজছিলাম, যা সবকিছুকে সংজ্ঞায়িত করে। উন্মুক্ত রাস্তায় একটি গাড়ি হাতের কাছে পেয়ে হঠাৎ করে নিজেকে মহাবীর একিলিস মনে করা, জনগণের ভোটাধিকার রক্ষার মহান ব্রত নিয়ে ট্রাকচালকের গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেওয়ার ব্যাপারগুলো তখন ঘটে, যখন মানুষের আর কোনো চক্ষুলজ্জা অবশিষ্ট থাকে না। আমরা যথেষ্ট বেশরম হয়ে পড়েছি প্রতিটি গোষ্ঠী, প্রতিটি শ্রেণী এবং প্রায় প্রতিটি মানুষ। আগামীতে হয়তো নির্লজ্জতা মানে হবে বিরোধী দলের কোনো কাণ্ড। অথবা এ কথাটি খালেদা জিয়ার বক্তব্যের নিচে লিখলে নির্লজ্জতার মানে হতো ইংরেজি না জানা। কিন্তু ৫ জানুয়ারি বলে নির্লজ্জতা শব্দটা নির্বাচনকে সংজ্ঞায়ন করে ফেলে। হয়তো আমিও নিরপেক্ষ নই বলেই বেছে বেছে ৫ জানুয়ারি দুপুরেই কথাটা লিখেছি। যতই আড়াল করতে চাই, একচক্ষুবিশিষ্ট চরিত্র আমাদের জাহান্নামে নিয়ে ছাড়বে।
মাসুদা ভাট্টি
নির্বাচন বর্জন করেছি, নির্বাচন প্রতিহত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি, এখন সকলে মিলে নির্বাচনের ছিদ্র খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি_ সন্ধ্যার সময় রায় দেব, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি! আমরা বিএনপি-জামায়াত, আমরা সুশীল, আমরা বিদেশি পর্যবেক্ষক, আমরা কূটনীতিক।
মশিউর রহমান
নওগাঁ শান্তিপ্রিয় একটি রাজনৈতিক এলাকা, এখানে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে দূরত্ব খুব বেশি নেই বললেই চলে আর এই শান্তিপ্রিয় রাজনৈতিক চর্চার গুরু প্রয়াত জননেতা আ. জলিল। নওগাঁ সদর আসনে প্রয়াত জননেতা আ. জলিলের দুই শিষ্যের মধ্যে লড়াই চলছে। নওগাঁ সদর আসনে ভোট শান্তিপূর্ণভাবেই চলছে, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটারের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমি ভোট দিয়ে এলাম।
প্রশান্ত রায়
পাবনায় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সন্ত্রাসী বাহিনীর ফিল্মি স্টাইলে ভোট ছিনতাই। এ ধরনের নির্বাচনেও ফিল্মি স্টাইলের দরকার হয়?
No comments