একতরফা নির্বাচন সমাধান নয়- তারানকোর সফর
বাংলাদেশের প্রত্যেক শান্তিকামী মানুষেরই প্রত্যাশা ছিল, জাতিসংঘের মহাসচিবের বিশেষ দূত অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর উদ্যোগটি সফল হবে। বিশেষ করে তিনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল বিএনপির নেতাদের যখন একসঙ্গে বসাতে পেরেছেন,
তখন নির্বাচন নিয়ে তাঁরা একটি মীমাংসায় আসতে পারবেন। কিন্তু তারানকো তাঁর বিদায়ী প্রেস ব্রিফিংয়ে দুই দলকে একসঙ্গে বসানো ছাড়া কোনো আশার খবর শোনাতে পারেননি। এটি দেশ ও জনগণের জন্য চরম হতাশাজনক।জাতিসংঘের বিশেষ দূত যথার্থই বলেছেন, বাংলাদেশের সমস্যা বাংলাদেশের রাজনীতিকদেরই সমাধান করতে হবে। কিন্তু রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রধান দুই প্রতিযোগী যদি কোনো বিষয়েই একমত না হতে পারেন এবং পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধংদেহী মনোভাব পোষণ করেন, তাহলে সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান আশা করা কঠিন।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে যে অচলাবস্থা চলে আসছিল, তার সহিংস রূপ দেশবাসী প্রত্যক্ষ করছে। দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য অচল এবং জনজীবন স্থবির হয়ে পড়লেও রাজনৈতিক নেতৃত্বের চৈতন্যোদয় হয়েছে বলে মনে হয় না। সরকার যেমন সংবিধান রক্ষার নামে ঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী একটি যেনতেন নির্বাচন করার ব্যাপারে কৃতসংকল্প, তেমনি বিরোধী দলও সেই নির্বাচন ঠেকাতে সর্বশক্তি নিয়োগ করছে। আর দুই পক্ষের এই কাজিয়ার শরিক না হয়েও সাধারণ মানুষকে তার শিকার হতে হচ্ছে। আরও দুর্ভাগ্যজনক যে, রাজনৈতিক বিবাদের সুযোগে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, বিশেষভাবে আবদুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার বিরুদ্ধে জামায়াত-শিবির সারা দেশে সন্ত্রাস, সহিংসতা ও নৈরাজ্য চালানোর দুঃসাহস দেখাচ্ছে। তাদের সাঁড়াশি ও সর্বাত্মক আক্রমণ থেকে রেহাই পাচ্ছেন না স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও। প্রশ্ন হলো, যে সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নিরাপত্তা দিতে পারে না, সেই সরকার কীভাবে জনগণের নিরাপত্তা দেবে?
দুর্ভাগ্যজনক যে দুই প্রধান দলই তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করতে এমন শক্তির সঙ্গে আঁতাত করছে, যাদের এ দেশের মানুষ একাত্তরে পরাজিত করেছিল মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এবং নব্বইয়ে উৎখাত করেছিল স্বৈরাচারের পতনের মাধ্যমে।
জাতিসংঘসহ সব আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশের মানুষ অংশগ্রহণমূলক, বিশ্বাসযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষপাতী। কিন্তু ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী নির্বাচন হলে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির তাতে অংশগ্রহণের সুযোগ নেই। ইতিমধ্যে বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নির্দলীয় সরকারের দাবি মানা হলেই কেবল আন্দোলনের চলমান কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হবে। অন্যদিকে, সরকার বিরোধী দলের কর্মসূচি প্রত্যাহারের জন্য চাপ দিলেও কীভাবে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় তারা অংশ নিতে পারবে, সে ব্যাপারে কিছুই বলছে না।
এই অবস্থায় সংঘাত অনিবার্য এবং তা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আশঙ্কাই বেশি। দেশ ও জনগণের হেফাজতকারী হিসেবে সরকার এই সংঘাতের দায় এড়াতে পারে না। তাই একতরফা নির্বাচনের চিন্তা বাদ দিয়ে সরকারের উচিত সবার অংশগ্রহণে একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করা।
No comments