ছেলে-মেয়েতে বন্ধুত্ব by ইরা ডি. কস্তা
‘হয়তো তোমার আলনায় থাকবে না আমার জামা, ঝুলবে না তোমার বারান্দায় আমার পাঞ্জাবি পাজামা। তবু মনের জানালায়, অবাধ আনাগোনা, দুজনায়।’
এই সময়ের ছেলে-মেয়ের মধ্যে প্রেম ছাড়াও শুধুই বন্ধুত্বের বন্ধন গড়ে ওঠে, তা কলকাতার শিল্পী অঞ্জন দত্তের গানের মধ্যেই প্রকাশ পায়।
অথচ ২০ বছর আগেও ব্যাপারটা এত খোলামেলা ছিল না। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুজীববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক শামছুন নাহারের ভাষায়, “ছাত্রজীবনে ছেলে বন্ধু ছিল। মেয়েদের চাইতে ছেলেদের সঙ্গে আমার মিলত ভালো। কারণ তারা বিভিন্ন রকম বিষয়ভিত্তিক গল্প করত। যা মেয়েদের মধ্যে দেখতাম না।”
স্মিত হেসে তিনি আরও বলেন, “তবে সেই বন্ধুত্বেও একটা সীমারেখা টানা থাকত। যেমন রাস্তা পার হব একসঙ্গে। আমার ছেলে বন্ধুদের একজন একটা গাছের ডাল নিয়ে এসে বলল, ‘নে এটা ধরে আমার সঙ্গে পার হ। যত যাই হোক একটা মেয়ের হাত তো আর ধরা যায় না।”
এই পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটেছে অনেকদিন হল। এখন ছেলে-মেয়ের বন্ধুত্বে হাত ধরা কোনো ব্যাপারই নয়। সেই সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্কের গভীরতা হিসেবে পিঠ চাপড়ানো থেকে দুষ্টুমি-- সবই চলে। তবে অনেক সময়ই আমাদের সমাজের দৃষ্টিভঙ্গীর কারণে সাধারণ বন্ধুত্বেও পোহাতে হয় যন্ত্রণা।
এ রকমই একটি কাহিনি। সঙ্গত কারণেই ছন্মনাম ব্যবহার করে তা বর্ণনা করা হল।
গার্লস স্কুল আর কলেজে পড়ার কারণে দিয়ার কখনও তেমন কোনো ছেলের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়নি। তবে কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর এক সহপাঠী তোহার সঙ্গে বেশ ভালো বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে তার। যাকে বলে ‘বেস্টফ্রেন্ড’। দিয়ার পারিবারে তোহার সঙ্গে তার বন্ধুত্ব নিয়ে তেমন কোনো সমস্যা ছিল না। তবে ঝামেলার শুরু হল, যখন দিয়ার এক আত্মীয় তোহার সঙ্গে তাকে (দিয়া) রিকশায় দেখে ফেলে। ক্লাস শেষ হতে সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় দিয়াকে বাসায় পৌঁছে দিতে এসেছিল তোহা। এরপর সেই আত্মীয় কোনো কিছু চিন্তা না করেই পরিচিত অনেকের কাছেই তোহাকে দিয়ার ‘প্রেমিক’ বানিয়ে নানান রকম গল্প বানিয়ে ফেলে। বিষয়টি দিয়ার কানে আসলেও সে হাজার চেষ্টার পরও তাদের ভুল ভাঙাতে পারেনি।
এখনও এমন পরিস্থিতিতে আমাদের সমাজের অনেক ছেলে-মেয়েকেই পড়তে হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশন অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক মেহতাব খানম। ছেলে-মেয়ের বন্ধুত্বকে বাঁকা চোখে দেখার পেছনে আমাদের সমাজব্যবস্থাকেই আসল কারণ হিসেবে মনে করেন তিনি।
অথচ ২০ বছর আগেও ব্যাপারটা এত খোলামেলা ছিল না। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুজীববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক শামছুন নাহারের ভাষায়, “ছাত্রজীবনে ছেলে বন্ধু ছিল। মেয়েদের চাইতে ছেলেদের সঙ্গে আমার মিলত ভালো। কারণ তারা বিভিন্ন রকম বিষয়ভিত্তিক গল্প করত। যা মেয়েদের মধ্যে দেখতাম না।”
স্মিত হেসে তিনি আরও বলেন, “তবে সেই বন্ধুত্বেও একটা সীমারেখা টানা থাকত। যেমন রাস্তা পার হব একসঙ্গে। আমার ছেলে বন্ধুদের একজন একটা গাছের ডাল নিয়ে এসে বলল, ‘নে এটা ধরে আমার সঙ্গে পার হ। যত যাই হোক একটা মেয়ের হাত তো আর ধরা যায় না।”
এই পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটেছে অনেকদিন হল। এখন ছেলে-মেয়ের বন্ধুত্বে হাত ধরা কোনো ব্যাপারই নয়। সেই সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্কের গভীরতা হিসেবে পিঠ চাপড়ানো থেকে দুষ্টুমি-- সবই চলে। তবে অনেক সময়ই আমাদের সমাজের দৃষ্টিভঙ্গীর কারণে সাধারণ বন্ধুত্বেও পোহাতে হয় যন্ত্রণা।
এ রকমই একটি কাহিনি। সঙ্গত কারণেই ছন্মনাম ব্যবহার করে তা বর্ণনা করা হল।
গার্লস স্কুল আর কলেজে পড়ার কারণে দিয়ার কখনও তেমন কোনো ছেলের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়নি। তবে কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর এক সহপাঠী তোহার সঙ্গে বেশ ভালো বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে তার। যাকে বলে ‘বেস্টফ্রেন্ড’। দিয়ার পারিবারে তোহার সঙ্গে তার বন্ধুত্ব নিয়ে তেমন কোনো সমস্যা ছিল না। তবে ঝামেলার শুরু হল, যখন দিয়ার এক আত্মীয় তোহার সঙ্গে তাকে (দিয়া) রিকশায় দেখে ফেলে। ক্লাস শেষ হতে সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় দিয়াকে বাসায় পৌঁছে দিতে এসেছিল তোহা। এরপর সেই আত্মীয় কোনো কিছু চিন্তা না করেই পরিচিত অনেকের কাছেই তোহাকে দিয়ার ‘প্রেমিক’ বানিয়ে নানান রকম গল্প বানিয়ে ফেলে। বিষয়টি দিয়ার কানে আসলেও সে হাজার চেষ্টার পরও তাদের ভুল ভাঙাতে পারেনি।
এখনও এমন পরিস্থিতিতে আমাদের সমাজের অনেক ছেলে-মেয়েকেই পড়তে হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশন অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক মেহতাব খানম। ছেলে-মেয়ের বন্ধুত্বকে বাঁকা চোখে দেখার পেছনে আমাদের সমাজব্যবস্থাকেই আসল কারণ হিসেবে মনে করেন তিনি।
মেহতাব
খানমের ভাষায়, “আমাদের সমাজের মানুষ একদম শুরু থেকেই মাইন্ড সেট করে
রেখেছে যে, ছেলে এবং মেয়ের একসঙ্গে মেলামেশা করা ঠিক নয়। ছোটবেলা থেকেই
ছেলে এবং মেয়েকে আলাদা রাখা হয়। তারা পড়াশোনা করে আলাদা স্কুলে বা কলেজে।
সমাজের অনুশাসণ অনুসারে ছেলে এবং মেয়ে একে অপরের জন্য নিষিদ্ধ। আর এ কারণেই
দেখা যায় ছেলে ও মেয়ে একে অপরের সঙ্গে সহজভাবে মিশতে পারে না।”
এখনও এমন হয়, প্রেমিকার ছেলেবন্ধু থাকার কারণে সম্পর্ক ভেঙে দিয়েছে তার প্রেমিক। একটি মেয়ের একাধিক ছেলে বন্ধু থাকলেই যেন সবকিছু রসাতলে গেল। এ ক্ষেত্রে ছেলের অনেক বান্ধবী থাকলেও তেমন সমস্যা পোহাতে হয় না।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পর্যটনে কর্মরত দুই সন্তানের মা মাসুমা মাহাতাব বলেন, “আমি ছেলে-মেয়ের বন্ধুত্বে বিশ্বাসী। যখন ছাত্র ছিলাম আমাদেরও ছেলে বন্ধু ছিল। আমি মনে করি, বন্ধুত্বের মধ্যে একটি সীমা থাকা উচিত। ছেলে-মেয়েদের নিজেদের এবং পরিবারের সম্মানের বিষয়টি মাথায় রেখে তবেই বন্ধুত্ব করতে হবে। আর মা-বাবারও উচিত ছেলেমেয়েদের বোঝানো তাদের কোনটা করা উচিত এবং কোনটা উচিত নয়।”
ছেলে-মেয়ের বন্ধুত্বের ক্ষেত্রেও কি বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণের বিষয়টি কাজ করে? এ রকম প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে আমেরিকার নিউ ইয়র্কের ভ্যালি স্ট্রিমের মনোবিজ্ঞানী লিন্ডা সাপাডিন এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “ধারণা করা হয়, অনেক যুগ আগে নারীরা ঘরে থাকত আর পুরুষরা বাইরে কাজ করত। একমাত্র মিলনের সময়ই পুরুষরা ঘরে আসত।”
সাইকোলজি ডটকমে প্রকাশিত ‘ক্যান মেন অ্যান্ড ওমেন বি ফ্রেন্ডস?’-বিষয়ক প্রতিবেদনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে লিন্ডা আরও ব্যাখ্যা করেন, “এখন নারীপুরুষ একসঙ্গে কাজ করছে, পড়ছে। খেলাধুলা নিয়ে আড্ডা থেকে শুরু করে নিজেদের আগ্রহের বিষয়গুলো ভাগাভাগি করছে।”
মনোবিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানী ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন সংস্কৃতির এই বিকাশ সমাজ ব্যবস্থাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। প্রতিবেদনে রোমান্টিক সম্পর্কের সহজ ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলা হয়েছে, “ফ্ল্যার্ট বা প্রেম প্রেম ভাব, ডেট বা প্রেম করা, বিয়ে করা এবং বাচ্চা নেওয়া। এই রকম সম্পর্কের বাইরে যদি কোনো সম্পর্ক হয় তবে ছেলে-মেয়ের বন্ধুত্ব হতেই পারে। যদিও নারী-পুরুষের সম্পর্কে প্লাটোনিক বা নিষ্কাম প্রেমের উদাহরণ খুবই কম।”
বাংলাদেশের ছেলেমেয়েরা এই ব্যাপারে কতটা উদার? ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে এই প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে বায়িং হাইজে কর্মরত কাজী শম্পা লায়লা বলেন, “স্কুলজীবনে আমরা ছেলেমেয়েরা একসঙ্গে লেখাপড়া করেছি। ছেলে-মেয়ে মিলিয়ে আমরা বেশ কয়েকজন খুবই ভালো বন্ধু ছিলাম, এখনও আছি। তবে আমরা বন্ধুদের মধ্যে কাউকে বিয়ে করিনি।”
অনেকেরই ধারণা একটি ছেলে আর একটি মেয়ের মধ্যে যদি ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে তা একসময় প্রেমের সম্পর্কে পরিণত হবেই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দেখা যায়, একই মানসিকতার ছেলে-মেয়ের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে। তাই সেখানে ব্যক্তিগত ঘনিষ্ঠতা কিছুটা কমই হয়। আবার ক্ষেত্রবিশেষে এটি মানানসইও নয়।
কাতার এয়ারওয়েজে কর্মরত কেভিন গোমেজ এ বিষয়ে বলেন, “ছেলে ও মেয়ের মধ্যে বন্ধুত্ব হতেই পারে। এমনকি আমার প্রেমিকার ‘বেস্টফ্রেন্ড’ ছেলে হলেও আমি কিছুই মনে করব না। এটি পুরোপুরি যার যার দৃষ্টিভঙ্গির উপর নির্ভর করে।”
আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশ-এর ইলেকট্রিকাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র রাকেশ পালমা অবশ্য ভিন্নমত প্রকাশ করেছেন। তার কথায়, “একটি ছেলে ও মেয়ের মধ্যে যদি খুববেশি ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব গড়ে উঠে তখন সেখানে অন্য ধরনের একটি ‘ইমোশন’ কাজ করবেই। তারা না চাইলেও তাদের মধ্যে বিশেষ সম্পর্ক গড়ে ওঠে।”
আবার এই সূত্রে অ্যাসোসিয়েশন অফ চার্টাড সার্টিফায়েড অ্যাকাউন্টস (এসিসিএ)-এর শিক্ষার্থী নওশিন সায়রা বলেন, “যে কোনো সম্পর্কের গড়ার মূল ভিত্তি হল মতের মিল এবং বিশ্বাস। এই দুটি বিষয় বন্ধুত্বকে পোক্ত করে তোলে। একটা পর্যায়ে ছেলে-মেয়ে দুজনই তাদের বন্ধুত্বকে আরও একটু সামনে এগিয়ে নিয়ে সারাজীবন একসঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। সে ক্ষেত্রেও বলা যাবে না, তারা ‘বেস্টফ্রেন্ড’ ছিল না।”
নওশিন আরও বলেন, “আমাকে এক বড় আপু এক আড্ডায় বলেছিলেন, বন্ধু বন্ধুই। এই সম্পর্কে লিঙ্গ নির্ধারণ করে দেওয়া উচিত নয়। আর এ বিষয়টিই আমার মনে গেঁথে আছে।”
তবে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে ছেলে-মেয়ের মাঝে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব হলেই, বেশিরভাগ সময় সেখানে অন্যরকম সম্পর্ক মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। এ ক্ষেত্রেও আমাদের সমাজ ব্যবস্থাই দায়ী। ছোটবেলা থেকেই ছেলে ও মেয়েশিশু বড় হয় ভিন্ন পরিবেশে। দুজনের জন্য রয়েছে আলাদা স্কুল ও কলেজ। স্বভাবতই যে জিনিস থেকে মানুষকে দূরে রাখা হয় সেই বস্তুর প্রতি একধরনের আকর্ষণ সৃষ্টি হয়। আর তাই বরাবরই ছেলেরা মেয়েদের প্রতি এবং মেয়েরা ছেলেদের প্রতি আকর্ষণবোধ করে। আর যদিও-বা বন্ধুত্ব হয় সেখানে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হতে বেশি সময় লাগে না।
মেহতাব খানম বলেন, “একটি মেয়েকে কখনও একটি ছেলেকে বিপরীত লিঙ্গের মানুষ হিসেবে দেখতে শেখানো ঠিক নয়। ছেলে বা মেয়ে যেই হোক না কোনো, তার প্রথম পরিচয় হল সে একজন মানুষ। তাই মা-বাবার উচিত সন্তানকে সেভাবেই বড় করে তোলা। যদি পরিবার থেকেই একটি ছেলে বা মেয়ে বিপরীত লিঙ্গের মানুষকে ছেলে বা মেয়ে হিসেবে না দেখে প্রথমেই তাকে মানুষ হিসেবে দেখতে শেখায়, তবে আর বন্ধুত্বে বাধা থাকে না।”
আমাদের সমাজে প্রতিটি মেয়ের মধ্যে তাদের জন্য ছেলেরা হল নিষিদ্ধ বা ছেলে মানেই খারাপ— এমন একটি মানসিকতা তৈরি করে দেওয়া হয় পরিবার থেকেই। ছেলে-মেয়ে কখনওই বন্ধু হতে পারে না, এমন ধারণাও শেকড় গেড়ে বসেছে তরুণ প্রজন্মের অনেকের মনে। তবে এসব কথার তেমন কোনো ভিত্তি নেই। শুধু দরকার দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন।
এ ব্যাপারে ইউনিভার্সিটি অফ ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ-এর কমিউনিকেশন অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজের শিক্ষক মাহমুদা খান কাকলী বলেন, “সমাজের এ ধরনের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হয়ে আসছে আসলে পরিবার থেকেই। একটি পরিবার যখন তাদের সন্তানকে সম্পর্কের পার্থক্যগুলো সম্পর্কে নির্ভুল শিক্ষা দেয় তখন আর এমন পরিস্থিতি তৈরি হয় না। পরিবারের উচিত তাদের ছেলে এবং মেয়েকে ছোট থেকেই শেখানো যে, একটি ছেলে ও মেয়ে বন্ধুও হতে পারে।”
এখনও এমন হয়, প্রেমিকার ছেলেবন্ধু থাকার কারণে সম্পর্ক ভেঙে দিয়েছে তার প্রেমিক। একটি মেয়ের একাধিক ছেলে বন্ধু থাকলেই যেন সবকিছু রসাতলে গেল। এ ক্ষেত্রে ছেলের অনেক বান্ধবী থাকলেও তেমন সমস্যা পোহাতে হয় না।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পর্যটনে কর্মরত দুই সন্তানের মা মাসুমা মাহাতাব বলেন, “আমি ছেলে-মেয়ের বন্ধুত্বে বিশ্বাসী। যখন ছাত্র ছিলাম আমাদেরও ছেলে বন্ধু ছিল। আমি মনে করি, বন্ধুত্বের মধ্যে একটি সীমা থাকা উচিত। ছেলে-মেয়েদের নিজেদের এবং পরিবারের সম্মানের বিষয়টি মাথায় রেখে তবেই বন্ধুত্ব করতে হবে। আর মা-বাবারও উচিত ছেলেমেয়েদের বোঝানো তাদের কোনটা করা উচিত এবং কোনটা উচিত নয়।”
ছেলে-মেয়ের বন্ধুত্বের ক্ষেত্রেও কি বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণের বিষয়টি কাজ করে? এ রকম প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে আমেরিকার নিউ ইয়র্কের ভ্যালি স্ট্রিমের মনোবিজ্ঞানী লিন্ডা সাপাডিন এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “ধারণা করা হয়, অনেক যুগ আগে নারীরা ঘরে থাকত আর পুরুষরা বাইরে কাজ করত। একমাত্র মিলনের সময়ই পুরুষরা ঘরে আসত।”
সাইকোলজি ডটকমে প্রকাশিত ‘ক্যান মেন অ্যান্ড ওমেন বি ফ্রেন্ডস?’-বিষয়ক প্রতিবেদনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে লিন্ডা আরও ব্যাখ্যা করেন, “এখন নারীপুরুষ একসঙ্গে কাজ করছে, পড়ছে। খেলাধুলা নিয়ে আড্ডা থেকে শুরু করে নিজেদের আগ্রহের বিষয়গুলো ভাগাভাগি করছে।”
মনোবিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানী ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন সংস্কৃতির এই বিকাশ সমাজ ব্যবস্থাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। প্রতিবেদনে রোমান্টিক সম্পর্কের সহজ ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলা হয়েছে, “ফ্ল্যার্ট বা প্রেম প্রেম ভাব, ডেট বা প্রেম করা, বিয়ে করা এবং বাচ্চা নেওয়া। এই রকম সম্পর্কের বাইরে যদি কোনো সম্পর্ক হয় তবে ছেলে-মেয়ের বন্ধুত্ব হতেই পারে। যদিও নারী-পুরুষের সম্পর্কে প্লাটোনিক বা নিষ্কাম প্রেমের উদাহরণ খুবই কম।”
বাংলাদেশের ছেলেমেয়েরা এই ব্যাপারে কতটা উদার? ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে এই প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে বায়িং হাইজে কর্মরত কাজী শম্পা লায়লা বলেন, “স্কুলজীবনে আমরা ছেলেমেয়েরা একসঙ্গে লেখাপড়া করেছি। ছেলে-মেয়ে মিলিয়ে আমরা বেশ কয়েকজন খুবই ভালো বন্ধু ছিলাম, এখনও আছি। তবে আমরা বন্ধুদের মধ্যে কাউকে বিয়ে করিনি।”
অনেকেরই ধারণা একটি ছেলে আর একটি মেয়ের মধ্যে যদি ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে তা একসময় প্রেমের সম্পর্কে পরিণত হবেই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দেখা যায়, একই মানসিকতার ছেলে-মেয়ের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে। তাই সেখানে ব্যক্তিগত ঘনিষ্ঠতা কিছুটা কমই হয়। আবার ক্ষেত্রবিশেষে এটি মানানসইও নয়।
কাতার এয়ারওয়েজে কর্মরত কেভিন গোমেজ এ বিষয়ে বলেন, “ছেলে ও মেয়ের মধ্যে বন্ধুত্ব হতেই পারে। এমনকি আমার প্রেমিকার ‘বেস্টফ্রেন্ড’ ছেলে হলেও আমি কিছুই মনে করব না। এটি পুরোপুরি যার যার দৃষ্টিভঙ্গির উপর নির্ভর করে।”
আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশ-এর ইলেকট্রিকাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র রাকেশ পালমা অবশ্য ভিন্নমত প্রকাশ করেছেন। তার কথায়, “একটি ছেলে ও মেয়ের মধ্যে যদি খুববেশি ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব গড়ে উঠে তখন সেখানে অন্য ধরনের একটি ‘ইমোশন’ কাজ করবেই। তারা না চাইলেও তাদের মধ্যে বিশেষ সম্পর্ক গড়ে ওঠে।”
আবার এই সূত্রে অ্যাসোসিয়েশন অফ চার্টাড সার্টিফায়েড অ্যাকাউন্টস (এসিসিএ)-এর শিক্ষার্থী নওশিন সায়রা বলেন, “যে কোনো সম্পর্কের গড়ার মূল ভিত্তি হল মতের মিল এবং বিশ্বাস। এই দুটি বিষয় বন্ধুত্বকে পোক্ত করে তোলে। একটা পর্যায়ে ছেলে-মেয়ে দুজনই তাদের বন্ধুত্বকে আরও একটু সামনে এগিয়ে নিয়ে সারাজীবন একসঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। সে ক্ষেত্রেও বলা যাবে না, তারা ‘বেস্টফ্রেন্ড’ ছিল না।”
নওশিন আরও বলেন, “আমাকে এক বড় আপু এক আড্ডায় বলেছিলেন, বন্ধু বন্ধুই। এই সম্পর্কে লিঙ্গ নির্ধারণ করে দেওয়া উচিত নয়। আর এ বিষয়টিই আমার মনে গেঁথে আছে।”
তবে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে ছেলে-মেয়ের মাঝে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব হলেই, বেশিরভাগ সময় সেখানে অন্যরকম সম্পর্ক মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। এ ক্ষেত্রেও আমাদের সমাজ ব্যবস্থাই দায়ী। ছোটবেলা থেকেই ছেলে ও মেয়েশিশু বড় হয় ভিন্ন পরিবেশে। দুজনের জন্য রয়েছে আলাদা স্কুল ও কলেজ। স্বভাবতই যে জিনিস থেকে মানুষকে দূরে রাখা হয় সেই বস্তুর প্রতি একধরনের আকর্ষণ সৃষ্টি হয়। আর তাই বরাবরই ছেলেরা মেয়েদের প্রতি এবং মেয়েরা ছেলেদের প্রতি আকর্ষণবোধ করে। আর যদিও-বা বন্ধুত্ব হয় সেখানে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হতে বেশি সময় লাগে না।
মেহতাব খানম বলেন, “একটি মেয়েকে কখনও একটি ছেলেকে বিপরীত লিঙ্গের মানুষ হিসেবে দেখতে শেখানো ঠিক নয়। ছেলে বা মেয়ে যেই হোক না কোনো, তার প্রথম পরিচয় হল সে একজন মানুষ। তাই মা-বাবার উচিত সন্তানকে সেভাবেই বড় করে তোলা। যদি পরিবার থেকেই একটি ছেলে বা মেয়ে বিপরীত লিঙ্গের মানুষকে ছেলে বা মেয়ে হিসেবে না দেখে প্রথমেই তাকে মানুষ হিসেবে দেখতে শেখায়, তবে আর বন্ধুত্বে বাধা থাকে না।”
আমাদের সমাজে প্রতিটি মেয়ের মধ্যে তাদের জন্য ছেলেরা হল নিষিদ্ধ বা ছেলে মানেই খারাপ— এমন একটি মানসিকতা তৈরি করে দেওয়া হয় পরিবার থেকেই। ছেলে-মেয়ে কখনওই বন্ধু হতে পারে না, এমন ধারণাও শেকড় গেড়ে বসেছে তরুণ প্রজন্মের অনেকের মনে। তবে এসব কথার তেমন কোনো ভিত্তি নেই। শুধু দরকার দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন।
এ ব্যাপারে ইউনিভার্সিটি অফ ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ-এর কমিউনিকেশন অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজের শিক্ষক মাহমুদা খান কাকলী বলেন, “সমাজের এ ধরনের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হয়ে আসছে আসলে পরিবার থেকেই। একটি পরিবার যখন তাদের সন্তানকে সম্পর্কের পার্থক্যগুলো সম্পর্কে নির্ভুল শিক্ষা দেয় তখন আর এমন পরিস্থিতি তৈরি হয় না। পরিবারের উচিত তাদের ছেলে এবং মেয়েকে ছোট থেকেই শেখানো যে, একটি ছেলে ও মেয়ে বন্ধুও হতে পারে।”
“ছেলে-মেয়ের
মধ্যে অনেক ধরনের সম্পর্ক রয়েছে। তার মধ্যে বন্ধুত্বও একটি। নতুন একজন
মেয়ে বা ছেলের সঙ্গে পরিচয় হলেই তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠবে এই
ধারণাটা নতুন প্রজন্মের মনে হওয়ার পিছনেও রয়েছে সমাজ এবং পরিবারের প্রভাব।
ছেলের সঙ্গে ছেলে বা মেয়ের সঙ্গে মেয়ের যেমন বন্ধুত্ব হয়, সেটি একটি ছেলে
এবং একটি মেয়ের মধ্যেও হওয়া সম্ভব— এই চিন্তাধারা পরিবার থেকেই শেখানো
উচিত।” বললেন কাকলী।
অনেক মা-বাবাই মনে করেন যে, ছেলে মেয়ের মধ্যে বন্ধুত্ব হলে বা তাদের মধ্যে যদি নিয়মিত মেলামেশা থাকে তাহলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আবার সমাজে ধর্ষণ, ‘ইভটিজিং’ এবং ‘সেক্সচুয়াল হ্যারাসমেন্ট’-এর জন্যও অনেকক্ষেত্রে ছেলে-মেয়েদের অবাধ বন্ধুত্বকেই দায়ী করেন অনেকেই।
এ বিষয়ে মাহমুদা খান কাকলী বলেন, “একজন মানুষ যখন অসুস্থ মানসিকতার মধ্যে বড় হয়, তখনই সে এ ধরনের অনৈতিক কাজে লিপ্ত হয়। তাই একজন সুশিক্ষিত এবং স্বশিক্ষিত ছেলে কখনও একটি মেয়ের সঙ্গে অসম্মানজনক আচরণ করতে পারবে না।”
এ বিষয়ে মেহতাব খানম বলেন, “আমি মনে করি যেসব ছেলে বা মেয়ে বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে লিঙ্গ বিভেদের সমস্যায় পড়ে না তারা অন্যদের চাইতে উদারমনের হয়। তাছাড়া একটি ছেলে তার মেয়ে বন্ধুর কাছ থেকে অনেক কিছুই শিখতে পারে। যেমন, যে ছেলেটির মেয়ে বন্ধু থাকে সে বিয়ের পর তার স্ত্রীকে ভালোভাবে বুঝতে পারবে। একইভাবে একটি মেয়েও যদি ছেলে বন্ধুর সঙ্গে মেশে তাহলে ভবিষ্যতে তার স্বামীর সঙ্গে জীবনযাপন করা সহজ হবে।”
তাহলে ছেলে-মেয়ের মধ্যে যেমন হতে পারে নির্মল বন্ধুত্ব। তেমনি সেই বন্ধুত্ব থেকে হতে পারে জীবনসঙ্গী। যদিও এই ব্যাপারটি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে মনমানসিকার উপর।
তারপরও যারা ছেলে-মেয়ের মধ্যে নির্মল বন্ধুত্বটাই সারাজীবন উপভোগ করতে চান, তাদের জন্য সাধারণ কয়েকটি টিপস প্রকাশ করেছে অ্যাবাউট ডটকম। ‘ক্যান গাইজ অ্যান্ড গার্লস বি জাস্ট ফ্রেন্ডস?’ প্রতিবেদনে প্রকাশিত পরামর্শগুলি আপনিও চাইলে অনুসরণ করে বন্ধুত্বের বন্ধন অটুট রাখতে পারেন।
* অন্যরকম সম্পর্কের দিকে মোড় নিতে পারে সে বিষয়ে না বুঝে বন্ধুত্বের সীমারেখা কখনও অতিক্রম করবেন না।
* যদি বোঝেন আপনার বন্ধুর মনে আপনার জন্য বিশেষ অনুভূতি কাজ করে, তবে কখনও সেই অনুভূতির সুযোগ নিবেন না।
* বন্ধুত্বের সম্পর্ক পাল্টিয়ে যেতে পারে এ রকম কোনো শারীরিক আকর্ষণ থেকে দূরে থাকুন।
* নারী-পুরুষের বন্ধুত্ব নিয়ে ব্যঙ্গ করার লোকের অভাব নেই, তাদের থেকে সতর্ক থাকুন।
ছবির মডেল : নাবীল, মৌ, তন্বী ও সালমা।
ছবি : সাকিব-উল-ইসলাম
অনেক মা-বাবাই মনে করেন যে, ছেলে মেয়ের মধ্যে বন্ধুত্ব হলে বা তাদের মধ্যে যদি নিয়মিত মেলামেশা থাকে তাহলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আবার সমাজে ধর্ষণ, ‘ইভটিজিং’ এবং ‘সেক্সচুয়াল হ্যারাসমেন্ট’-এর জন্যও অনেকক্ষেত্রে ছেলে-মেয়েদের অবাধ বন্ধুত্বকেই দায়ী করেন অনেকেই।
এ বিষয়ে মাহমুদা খান কাকলী বলেন, “একজন মানুষ যখন অসুস্থ মানসিকতার মধ্যে বড় হয়, তখনই সে এ ধরনের অনৈতিক কাজে লিপ্ত হয়। তাই একজন সুশিক্ষিত এবং স্বশিক্ষিত ছেলে কখনও একটি মেয়ের সঙ্গে অসম্মানজনক আচরণ করতে পারবে না।”
এ বিষয়ে মেহতাব খানম বলেন, “আমি মনে করি যেসব ছেলে বা মেয়ে বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে লিঙ্গ বিভেদের সমস্যায় পড়ে না তারা অন্যদের চাইতে উদারমনের হয়। তাছাড়া একটি ছেলে তার মেয়ে বন্ধুর কাছ থেকে অনেক কিছুই শিখতে পারে। যেমন, যে ছেলেটির মেয়ে বন্ধু থাকে সে বিয়ের পর তার স্ত্রীকে ভালোভাবে বুঝতে পারবে। একইভাবে একটি মেয়েও যদি ছেলে বন্ধুর সঙ্গে মেশে তাহলে ভবিষ্যতে তার স্বামীর সঙ্গে জীবনযাপন করা সহজ হবে।”
তাহলে ছেলে-মেয়ের মধ্যে যেমন হতে পারে নির্মল বন্ধুত্ব। তেমনি সেই বন্ধুত্ব থেকে হতে পারে জীবনসঙ্গী। যদিও এই ব্যাপারটি সম্পূর্ণ নির্ভর করছে মনমানসিকার উপর।
তারপরও যারা ছেলে-মেয়ের মধ্যে নির্মল বন্ধুত্বটাই সারাজীবন উপভোগ করতে চান, তাদের জন্য সাধারণ কয়েকটি টিপস প্রকাশ করেছে অ্যাবাউট ডটকম। ‘ক্যান গাইজ অ্যান্ড গার্লস বি জাস্ট ফ্রেন্ডস?’ প্রতিবেদনে প্রকাশিত পরামর্শগুলি আপনিও চাইলে অনুসরণ করে বন্ধুত্বের বন্ধন অটুট রাখতে পারেন।
* অন্যরকম সম্পর্কের দিকে মোড় নিতে পারে সে বিষয়ে না বুঝে বন্ধুত্বের সীমারেখা কখনও অতিক্রম করবেন না।
* যদি বোঝেন আপনার বন্ধুর মনে আপনার জন্য বিশেষ অনুভূতি কাজ করে, তবে কখনও সেই অনুভূতির সুযোগ নিবেন না।
* বন্ধুত্বের সম্পর্ক পাল্টিয়ে যেতে পারে এ রকম কোনো শারীরিক আকর্ষণ থেকে দূরে থাকুন।
* নারী-পুরুষের বন্ধুত্ব নিয়ে ব্যঙ্গ করার লোকের অভাব নেই, তাদের থেকে সতর্ক থাকুন।
ছবির মডেল : নাবীল, মৌ, তন্বী ও সালমা।
ছবি : সাকিব-উল-ইসলাম
No comments